আলোয় অন্ধকার পর্ব-২৬

0
1368

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 26
আস্ফি কবিরের কথায় লজ্জায় রাগে মুগ্ধের রুমে গিয়ে তাকে বেদম পিটিয়ে নিজের রুমে এসে জোরে শ্বাস নিলো। মুগ্ধকে আস্ফি যতক্ষণ মেরেছে মুগ্ধ, দিয়ান দুজনি খ্যাকখ্যাক করে হেসেই যাচ্ছিলো। সেই হাসির শব্দ যেনো আস্ফির কান ফালাফালা হয়ে যাচ্ছিলো। তাই সে রেগে বেরিয়ে আসে মুগ্ধের রুম থেকে। মুগ্ধ মার খেয়েও ব্যাথা নিয়ে হেসেই যাচ্ছে সাথে আছে দিয়ান৷

আস্ফির বিচ্ছিরি ফিলিং হচ্ছে। কবির তার চাচ্চু হলেও সম্পর্কে। মা বাবা মারা যাওয়ার পড় থেকে আস্ফি দুনিয়া হচ্ছে স্তব্ধ, কবির। আর কেউ আছে কিনা তার সে ভাবেনি। কবির নিজেকে সব সময় আস্ফির বন্ধুই দাবি করেছে। তাই সে তার চাচ্চুকে নাম ধরেই ডাকে। নিজেও বন্ধুই ভাবে কবিরকে। আস্ফির সবি কবিরের জানা আর আস্ফিরো কবিরের সব জানা। কিন্তু তাই বলে সে সম্পর্ক ভুলে যায় নি। নিজের প্রেমলীলার কথা চাচ্চু নামক বন্ধুকে বলার সাহস পায়নি৷ আর মুগ্ধ কিনা কাল রাতের কথা বলে দিয়েছে কবিরকে। কবিরও সব শুনে খ্যাকখ্যাক করে হেসেই যাচ্ছিলো। আস্ফির ভীষণ রাগ আর বিচ্ছিরি ওড ফিলিং হচ্ছে। আস্ফি মুড ঠিক করতে বেডে শুয়ে পিউকে কল লাগালো। এই মুহূর্তে পিউ ছাড়া আস্ফির গতি নেই। দুই বার কল দেওয়ার পর পিউ রিসিভ করলো৷

পিউ ভাঙা গলায় বললো,
— হ্যালো, কে বলছেন?

আস্ফির রাগ গায়াব হয়ে গেলো মুহুর্তে পিউ এর কথায়। আস্ফির মুখে হাসির আভা ফুটে উঠেছে। পিউ এর এমন ভদ্র ব্যাবহারে৷ পিউ আস্ফির নিউ নাম্বার চিনেনা তাই এমন ভদ্র ব্যাবহার করছে বুঝলো আস্ফি সে ভাবছে। এখুনি যখন আস্ফিকে চিনে ফেলবে আর শুরু হবে পিউ এর ঝগড়া। আস্ফির আবার রাগ হলো এটা ভেবে পিউ অপরিচিত দের সাথেও ভালো ব্যাবহার করে তাহলে তার সাথে ঝগড়া কেনো? ভেবেই ঝাযালো কণ্ঠে আস্ফি বলে উঠে,
— আমি আস্ফি!

কথাটা বলতেই আস্ফিকে অবাক করে দিয়ে পিউ ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়। কান্নার জন্য পিউ কথা বলতে পারছে না! আস্ফি তৎক্ষনাৎ শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠে,
— তুই কাদতেও পারিস পিউ? আমিতো জানতাম না হলোটা কি আজ হাহ ?

পিউ কটমট করে বললো,
— মন চাইছে তোর উপর গরম পানি ঢেলেদি স্টুপিড ছেলে কোথাকার! তোর জন্য কাদতে হচ্ছে।

আস্ফির হেসে বললো,
— আচ্ছা ঢেলেদিস এখন বল হয়েছেটা কি? কাদছিস কেনো আমি কি করলাম আবার?

পিউ নাক টেনে বললো,
— আমি ধরা পড়ে গেছি! কাল রাতে বাইরে গিয়ে.. মা খুব বোকেছে। একা রাতে বাইরে যাওয়ার জন্য৷ বাবাও আমার সাথে কথা বলেনি। আর সব তোর জন্য হয়েছে! মা বাবা কিনা কি ভেবেছে সব তোর জন্য।

আস্ফি ঠাট্টার স্বরে বললো,
— তুই বললেই হতো তুই তোর হবু বরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি! দেখতি আর বোকা দিতনা! আরো বলতেন জামাইকে ভেতরে নিয়ে আসলিনা কেনো!

আস্ফির ঠাট্টামার্কা কথা পিউ ভীষণ রেগে বললো,
— হবু বর? লাইক সিরিয়াসলি? আমি তোকে কখনও বিয়ে করবো? না কখনই না। তুই আর আমায় কল দিবি না শুনতে পেরেছিস??

পিউ এর এই কথা এই মুহূর্তে আস্ফি মাইন্ড খারাপ করে দিলো৷ আস্ফি রেগে গম্ভীর গলায় বললো,
— অনেক হয়েছে পিউ। অনেক হয়েছে। জাস্ট অফ যা… এখনও! এখনও এই কথা বলছিস তুই? আমার ভালো রূপটাই তুই দেখেছিস! খারাপ রূপটা দেখাতে আমায় বাধ্য করিস না! এতে তোর খুব একটা ভালো হবে না। মনে রাখিস আমি ভালো বাট আমার রক্তটা ভয়ংকর। তাই আমার খারাপ রূপটা তুই নিতে পারবিনা৷

পিউ ভীষণ ভয় পেলো আস্ফির হঠাৎ পরির্বতন হওয়া গম্ভীর গলায়। আস্ফি এভাবে কখনও তার সাথে কথা বলে না। বলেছে মানে আস্ফি রেগে গেছে বুঝতে পেরে পিউ কথা পাল্টে আমতাআমতা করে বললো,
— ম…মানে, টিয়া…. স্তব্ধ ভাইয়া কোথায়? টিয়ার ফ্যামিলির অবস্থা ওর জন্য ভালো নেই!

পিউ এর কথায় আস্ফি বুঝলো পিউ ভয় পেয়েছে তার কথায়! আস্ফি পিউকে ভয় দেখাতে চায়না। তাহলে তারি ক্ষতি সেটা আস্ফি জানে। সে এই চঞ্চল পিউ কেই চায় ভীতু পিউকে নয়। তাই আস্ফি জোরে শ্বাস নিলো। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে শান্ত স্বরে বললো,
— আই নো এভ্রিথিং! তুই আর কিছুদিন আন্টি আংকেল অদের সামলা। টিয়া স্তব্ধ ভাই কোথায় সেটা তো বলতে পারবোনা। এইটুকু বলতে পারবো টিয়া নাও সেফ আছে ভাইয়ার সাথে আছে। বাট কতক্ষণ থাকবে সেটা শিওর না।

পিউ দ্রুত বললো,
— টিয়া যদি স্তব্ধ ভাইয়ার সাথেই থাকে৷ তাহলে উনি টিয়াকে তার বাসায় নিয়ে আসছেনা কেনো!

আস্ফি চুপ করে রইলো৷ কি বলবে? বাকি টুকু বলার ওয়ে নেই। বললে পিউ শুধু শুধু আরো বেশী টেন্স হয়ে যাবে। আর সে বলতে পারবেনা। আর আস্ফির জবাব না পেলেএই মুহূর্তে পিউ একি কথা বারবার জিজ্ঞেস করবে। আস্ফি না বললেও। তাই আস্ফি কথা ঘুরিয়ে বললো,
— কাল রাতের কিস কেমন লেগেছে তোর?

পিউ অতি উৎসুক আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলো আস্ফির উত্তর শুনতে। কিন্তু আস্ফির এই প্রশ্ন শুনে পিউ বোকার মতন বসে রইলো। তার চোখ বড়বড় হয়ে গেছে অটোমেটিক। আস্ফি ফোনের ঐপাশে মিটমিট করে হাসছে। আস্ফির বুঝতে বাকি নেই পিউ এই প্রশ্ন এখনি আশা করেনি মোটেও। পিউ লজ্জায় পড়ে গেছে। আস্ফি পিউ এর লজ্জা বাড়াতে আবার বললো,
— কথা বলছিস না কেনো? আমার তো মন চাইছিলো না তোর ঠোঁট ছাড়তে! সো সুইট ইউ নো…

পিউ ঠাস করে ফোন কেটে দিলো। আস্ফির কথার উপর বাকি টুকু শোনার শক্তি যেনো পিউ এর নেই। তার গাল লজ্জা কাশ্মিরি মরিচের মতন লাল হয়ে গেছে। পিউ বিরবির করে কিছু গালি দিলো আস্ফিকে! পিউ ভেবেই পাচ্ছেনা এতো সিরিয়াস কথার মধ্যে আস্ফি এই প্রশ্ন করলো কিভাবে? মনে মনে বললো,
— অসভ্য ছেলে একটা !

.

টিয়া বেডে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। সে খায়নি খুব খুদা ফিল হচ্ছে পেটে তবুও খেতে ইচ্ছে করছে না। সার্ভেন্ট খাবার যদিও দিয়ে গেছে তার রুমে। খুব সুন্দর স্মেল পাচ্ছে টিয়া সেই খাবারের তবুও খেতে ইচ্ছে করছে না তার। বুক ভয়ে ধুরু ধুরু করছে। কেনো এই ভয় জানা নেই টিয়ার। তবে টিয়ার মন বলছে খুবি বাজে কিছু ঘটবে কিন্তু কি? সেটা ভেবে পাচ্ছেনা টিয়া তার এই মুহূর্তে স্তব্ধকে কাছে চাই। কিন্তু কোথায় একটা বাধা দিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে মনে স্তব্ধকে কাছে চাইতেও। হয়তো সেই স্তব্ধের বৌ আছে কথাটাই টিয়ার মনে দিধা দ্বন্দ্ব তৈরি করে রেখেছে। স্তব্ধের বিবাহিত এটা বিশ্বাস করবে নাকি বিবাহিত নয় এটা বিশ্বাস করবে টিয়া বুঝে পায় না। সত্যি মিথ্যার কনফিউশান এ পড়ে। টিয়া বালিশে মুখ গুজে কাদতে কাদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সাদা চোখ গুলো লাল আভা ফুটে উঠেছে। ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।

দরজার ভীষণ জোরে শ্বব্দ হতেই টিয়া ভয়ে লাফিয়ে উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে তাকায় অশ্রু সিক্ত চোখে। স্তব্ধ টিয়ার দেখা সকালের অবস্থাতেই আছে। কিন্তু সকালের মতো শান্ত নিষ্পাপ মোটেও লাগছেনা। শান্ত মুখ এখন শক্ত এলোমেলো চুল, পড়নের শার্ট ঠিক নেই৷ টিয়া স্তব্ধের এই অবস্থা দেখে স্তব্ধের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই স্তব্ধের কাটা হাতে রক্ত শুকিয়ে আছে দেখতে পায়। অন্য হাতে একটা শপিং ব্যাগ। টিয়া স্তব্ধের হাত দেখে স্তব্ধের চোখের দিকে তাকায়। স্তব্ধ নিজেও টিয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অসম্ভব লাল হয়ে আছে স্তব্ধের চোখ৷ টিয়ার বুকে মোচড় দিয়ে উঠে স্তব্ধকে এলোমেলো রক্তাক্ত দেখে। টিয়া দ্রুত হেটে স্তব্ধকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠে ফুপিয়ে!

স্তব্ধ হাত থেকে শপিং ব্যাগ টা ফেলে নিজের জরিয়ে ধরে টিয়াকে শক্ত করে নিজের সাথে। টিয়ার কান্না দিগুণ বেড়ে যায় তাতে৷ স্তব্ধ টিয়াকে আটকায় না কাদতে বরং শান্ত স্বরে বলে উঠে,
— ডু ইউ লাভ মি টিয়া ?

স্তব্ধের এই প্রশ্নে টিয়ার কি হয়েছে কে জানে সে দ্রুত কান্নাতোর অবস্থায় জবাব দেয়,
— ইয়েস আই লাভ ইউ, লাভ ইউ সো ম্যাচ স্তব্ধ… প্লিজ ডোন্ট লিভ মি প্লিজ!

স্তব্ধ চোখ বন্ধ করে ফেলে টিয়ার উত্তর পেয়ে। কিছু বলেনা সে। টিয়া কেদেই যাচ্ছে। এভাবেই কিছু সময় চলে যায়৷ হঠাৎ টিয়া জেনো স্তব্ধ নামক ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। আর দুই হাতে স্তব্ধকে ঠেলে দূরে সরাতে চায় নিজের থেকে। কিন্তু স্তব্ধ এক চুনও সরাতে ব্যার্থ টিয়া। টিয়া যতই ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চায় স্তব্ধ ততই শক্ত করে ধরছে টিয়াকে৷ স্তব্ধের বিহেভিয়ার ধীরে ধীরে অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। স্তব্ধ পারছেনা টিয়াকে নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়৷ স্তব্ধের এই বিহেভিয়ার এ টিয়ার এবার ভয় করছে। টিয়া না পেরে বলে উঠে,
— স্তব্ধ কি করছো? আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো ছাড়ো!

স্তব্ধ টিয়াকে না ছেড়ে চিৎকার করে বলে উঠে,
— আমি তোমাকে ধরতে চাইনি তুমি বাধ্য করেছো!

টিয়া স্তব্ধের চিৎকার ভয়ে স্তব্ধকেই আরো শক্ত করে ধরে৷ টিয়া হতভম্ব স্তব্ধের বিহেভিয়ারে৷ টিয়ার মাথায় ঢুকছেনা কিছু৷ হলোকি স্তব্ধের? টিয়াকে আরো অবাক করে দিয়ে স্তব্ধ..

চলবে?

[ আই নো আজ ছোট্ট হইছে বাট নেক্সট পার্টে পুষিয়ে দিব কেমন! আর হ্যাঁ নেক্সট পার্ট থেকে গল্প নতুন মোড় নিবে 😋 আই হোপ আপনাদের ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ সাইলেন্ট দেখতে চাইনা রেসপন্স করুণ। ধন্যবাদ ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here