আলোয় অন্ধকার পর্ব-২৯

0
1688

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 29
২ দিন পর,
থাই গ্লাসে আবৃত একটি রুমে কোণায় টিয়া হাটুতে মুখ গুঁজে অনবরত কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে। তার পড়নে বিয়ের ভারী লাল টকটকে লেহেঙ্গা যাতে শুকনো ছোপ ছোপ রক্ত লেগে খরখরে হয়ে কালো হয়ে আছে। তাই লাল রঙে’ও রক্ত স্পষ্ট। মাথার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কাধে পিঠে পরে আছে! হাতের চুরি গুলো বেশকিছু বেঙে গেছে যার ফলস্বরূপ টিয়ার হাত কেটে রক্ত ঝরে সেগুলোও শুকিয়ে আছে! একরকম বিভৎস অবস্থা টিয়া’র।

টিয়া আজ ১দিন হবে এভাবেই বসে। চোখের অশ্রু সবাই দেখতে পেলেও টিয়ার মনে যে হাজার ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেগুলো থেকে অনবরত তাজা রক্ত এর বন্যা বইছে তা কেও দেখতে পাচ্ছেনা! টিয়া হঠাৎ কারোর কণ্ঠস্বর শুনে কাঁপা কাঁপা দুর্বল শরীরে মাথা তুলে ! চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে টিয়া’র অধিক সময় কাঁদা’র ফলে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। চোখে ঝাপসা দেখছে সব। বেশ কিছু সময় সামনে তাকিয়ে থাকতে’ই স্পষ্ট দেখতে পায় টিয়া। হ্যাঁ যাকে আশা করছিলো সেই! যে অকালে তার ঘুমের মধ্যেই কালবৈশাখী ঝরের রূপে এসে তাকে স্তব্ধের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। সব কিছু থেকে দূর করে দিয়েছে। তার জীবনের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাকে। দ্যা ডেনিয়াল গ্লোবার দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সেই ঈগল এর মতো তীব্র তীক্ষ্ণ চাহুনি ডেনিয়াল এর” যা দেখে টিয়া’র চোখে, মুখে, মনে, ঘৃণা ক্ষোভে বিষিয়ে গেলো। সে দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিলো অন্যদিকে। তার ডেনিয়ালের ছায়াও সহ্য হচ্ছে না। ডেনিয়াল যেভাবে টিয়া জীবন টা শেষ করে দিয়েছে। সেভাবেই ডেনিয়াল’কে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। কিন্তু নারী মানে’ই যে নিরুপায় অসহায়। না কখনও এই কথা টিয়া’র মনে হয়নি নারী মানে অসহায় নিরুপায়। কিন্ত আজ মনে হচ্ছে খুব করে মনে হচ্ছে। নিজেকে একটা পুতুল বলে মনে হচ্ছে যাকে নিয়ে ডেনিয়াল টানাটানি করছে। যেমন টিয়া একটা পুতুল তার মন বলতে কিছু নেই। চাওয়া পাওয়া ইচ্ছে কিছু নেই৷ সে স্তব্ধ’কে ভালোবাসে কেনো বুঝেনা ডেনিয়াল? কেনো? কেনো জোর করছে তাকে! কেনো স্তব্ধ’কে….

টিয়া আর ভাবতে পারলোনা। লাল লাল ফোলা ফোলা চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে আবার তাকালো ডেনিয়াল এর দিকে। ডেনিয়াল পা দুটো এক্টু ফাঁক করে দাঁড়িয়ে হাত বুকে গুঁজে টিয়া’র দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে! চোখ মুখ অসম্ভব শক্ত।

টিয়া ডেনিয়াল’কে খুব করে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু মুখে যেনো কথা ফুরিয়ে গেছে শুধু চোখ দিয়ে গরিয়ে পানি পরছে৷
ডেনিয়াল এর কাধে কেও হাত রাখতেই। ডেনিয়াল পিছনে না তাকিয়েই বলে উঠে,
— ” থ্যাংক ইউ ড্যাড! ”

রাইজিং মাথা দুলিয়ে বলে উঠে,
— ” ওয়েল কাম! এন্ড ডোন্ট ওয়ারি স্তব্ধ আর তোমাদের মধ্যে আসবে না। হিজ ডেড! ”

ডেনিয়াল তার বাবা’কে ধন্যবাদ দিলে এই কাজের জন্য! তিনি চলে যায়৷ ডেনিয়াল পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে টিয়া ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। স্তব্ধ ডেড এই কথাটা শুনে’ই টিয়া জ্ঞান হারিয়েছে! ডেনিয়াল টিয়া’কে কোলে তুলে নিজের বেড রুমে নিয়ে যায়! টিয়া’কে বেডে শুইয়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে একের পর এক স্মোক করতে থাকে!

ডেনিয়াল এর আজ যেনো খুবি শান্তি লাগছে। এতটা প্রশান্তি আগে কখনও ফিল হয়নি ডেনিয়ালে’র। টিয়া দেখার পর থেকে’ই সেটা ফিল করছে ডেনিয়াল। যদিও টিয়া’কে আজ এভাবে দেখা সম্ভব ছিলোনা তার বাবা’র হেল্প ছাড়া। সত্যি বাপ বাপি হয়৷ সন্তান যতই শিয়ানা হোন না কেনো। ডেনিয়ালের প্রচুর ক্ষমতা থাকলেও। ডেনিয়াল কিছুতে স্তব্ধ’কে ট্রেক করতে পারছিলোনা। কিন্তু তার বাবা ঠিকি পেরেছে। কিন্তু ডেনিয়ালের মতে স্তব্ধ বেঁচে থাকা অবস্থাতেই। টিয়া তার কাছে থাকলে সে আরও দিগুণ প্রশান্তি পেতো। তাও আজ ডেনিয়াল খুবি অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে। তাও প্রথম এটাও কম কিসে? কিন্তু কোথায় আবার একটা খারাপ লাগছে টিয়া বিভৎস অবস্থা দেখে।

ডেনিয়াল গভীর ভাবে তাকালো টিয়া’র দিকে। সাদা বেড কভারে উপর নিশতেজ লাল লেহেঙ্গা পরহিত টিয়া’কে মোহনীয় লাগছে। অদ্ভুত সৌন্দর্যের প্রকাশ পাচ্ছে এলোমেলো অবস্থাতেও। লম্বা সিল্কি চুল গুলো বালিশে এলোমেলো হয়ে পরে আছে৷ কান্নার ফলস্বরূপ আরও মায়াবী হয়েছে টিয়া’র ছোট্ট মুখটা!

ডেনিয়াল সেই প্রথম দিন টিয়া’কে এই লাল শাড়ি পরিহিত’ই দেখেছিলো। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মনে কিছু সৃষ্টি হয়েছিলো তার! আর সেই সৃষ্টিতেই সব কেমন ঘোলাটে হয়ে গেলো যেখানে স্তব্ধ’কে হাত করা তার দরকার ছিলো। সেখানে সে এই মেয়ে’টাকে নিজের কাছে বন্দি করে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠলো সে। আর সেই সৃষ্টিতে সেই মরিয়া হওয়াতেই টিয়া আজ আবারও এখানে! কি আছে এই বাঙালি নারীর মধ্যে?? জানে না ডেনিয়াল শুধু জানে তার এই সৃষ্টির জন্য আজ এই মেয়ে’টা কষ্ট ও পাচ্ছে প্রচুর…

ডেনিয়াল মাথা ঘুরিয়ে নেয় টিয়া’র দিক থেকে। একদিকে প্রচুর শান্তি অন্যদিকে টিয়া’র কষ্ট দেখে মুহুর্তে এক বিচলিত ভাব সৃষ্টি হয় ডেনিয়ালের মনে। কিন্তু সে তার ভাবনায় রূঢ়। টিয়া তার কাছেই থাকবে। সে জিতবে টিয়া’কে। ডেনিয়াল নিয়ের মনেই গেইম খেলার মেতে আছে আর সেই খালায় জিতাটাই যেনো সব ডেনিয়ালের। …ডেনিয়াল মুখ শক্ত করে মনে শান্তি নিয়ে স্মোক করতে থাকে অনবরত। টিয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! সে এখন একদম চিন্তা মুক্ত। শান্ত কিন্তু সে জানে না তার জীবন আরও একবার বদলে গেছে!

আস্ফি অনবরত স্তব্ধ, টনির সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে আজ দুদিন হলো কিন্তু কিছু’ই হচ্ছে না। কবির আস্ফি’র পাশে বসে তিনি নড়ছে না। কবিরে’র মনে একটা’ই ভয় তার ওভার কনফিডেন্সে’র জন্য নিজের ছেলেকে হারাবেনা তো। কবির ইতি মধ্যে আমেরিকায় তার বন্ধুকে জানিয়ে দিয়েছে স্তব্ধকে খুজতে! কিন্তু তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে কিছু জানাতে পারছেনা কবিরকে!

কবির তার ফোনে তাকিয়ে আছে। স্তব্ধের পাঠানো লাস্ট ম্যাসেজ টা একনজরে দেখে যাচ্ছে। ম্যাসেজ টায় তার শক্ত রূঢ় ছেলেটার কিছু আবেগে ভরা কথা লিখেছে তাকে। কবিরের বড্ড অসহায় লাগছে বড্ড অসহায়।

আস্ফি কবিরের এর অবস্থা বুঝে কবিরকে জরিয়ে ধরলো। আস্ফির মুখ শক্ত হয়ে আছে দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে। চোখের নিচে লাল হয়ে আছে। মানুষ যখন অতিরিক্ত কষ্টেও কাদতে কষ্ট গুলো প্রকাশ করতে পারেনা তখনি সাধারণত এমন হয়৷ আস্ফি ও না নিজেকে সামলাতে পারছে না। না চিৎকার করে কাদতে পারছে ভাইয়ের নিখোঁজে৷ তাই সে শক্ত হয়ে আছে। কবিরকে যে তাকেই সামলাতে হবে। পাশে মুগ্ধ চিন্তিত অবস্থায় দাড়িয়ে।

পোর্টার নির্লিপ্ত নির্বাক ভাবে তাকিয়ে আছে। কবির আস্ফির দিকে। পশু হলেও যে বুঝতে পারছে কিছু হয়েছে। কিন্তু সেতো জানেনা তার বন্ধুর কিছু হয়েছে। জানতে হয়তো কুকুরটাও হাত পা ছরিয়ে শুধু কাদতো। কবির আস্ফি’কে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে পোর্টার’কে কোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। পোর্টার আজ একদম শান্ত.. অন্যদিন কোলে উঠা পছন্দ না তার।

কবির চলে গেলে মুগ্ধ আস্ফি’কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আস্ফি বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। এতটা অন্ধকার চোখে পৃথিবী দেখেনি আস্ফি৷ যখন খবর পেয়েছে স্তব্ধ নিখোঁজ। আস্ফির পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। যেখানে দুদিন আগেও আলোয় আলোয় ভরা ছিলো যখন আস্ফি শুনেছে টিয়া এবার সত্যি তার ভাবি হতে চলেছে। কিন্তু আজ সব অন্ধকার এবারও কিছু হলোনা। আলাদা হয়ে গেলো দুজন। আলোয় অন্ধকার হয়ে গেলো সব। আস্ফি ভাবতে পারছেনা টিয়া কি অবস্থায় আছে? বেঁচে আছে তো?? ভাবতে’ই আস্ফির ফোনটা বেজে উঠে। চোখ মুখ একটু হাত দিয়ে মুছে নিজেকে সামলে। ফোন পকেট থেকে বের করে আস্ফি। স্ক্রিনে পিউ নাম’টা ঝলঝল করছে। আস্ফির বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে…

চলবে!

[ ৫০০০k কমেন্ট ত করতে পারোনি তাই ছোট্ট বললে একটা দিবো বেদ্দব 😝🌚। আর হ্যাঁ রেসপন্স করবেন না হয় ছাটাই করতে বাধ্য হবো ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here