আলোয় অন্ধকার পর্ব-৩৭

0
1408

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 37
ছাদের ছোট ঘরে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দেখছে পিউ! বৃষ্টির হাল্কা শব্দ হচ্ছে টিনের চাল থেকে ! নিরাপদ স্থানে দাঁড়ালেও প্রচুর বাতাসের সাথে হাল্কা বৃষ্টির পানির ঝাপটা চোখে মুখে পরছে! অন্যসময় হলে এই চমৎকার বৃষ্টি উপভোগ করতো পিউ কিন্তু আজ বৃষ্টির পানির মতো ওর ও কেঁদে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে! যদিও আর কান্না আসে না। যেন শুকিয়ে গেছে চোখের পানি গুলো! আজ ১০ দিন হয়ে গেছে আস্ফি ভোরে তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। শুধু চলে যায়নি বিষাক্ত কিছু কথা ধারা সব সম্পর্ক ওর সাথে শেষ করে গেছে। বাবা মার ভয়ে ভেঙে পরা পিউ আস্ফির তিক্ত কথা সহ্য করতে না পেরে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো। না আস্ফি দাঁড়ায়নি সে ভাবেই ওকে ফেলে চলে গেছে! অসহায় পিউ সেদিকে তাকিয়ে ছিলো কিছু ক্ষণ। কিন্তু কতক্ষণ? এক সময় বাসায় ঢুকতেই ওর মা গালে পরপর কতগুলো চড় লাগিয়েছে তার হিসেব নেই। মেয়ের চিন্তায় বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। পিউয়ের মা বাবা তারা আস্ফির বলা প্রত্যেকটা শুনেছে। তাই পিউকে কোথায় ছিলো কি করছিলো সেগুলো জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পরেনি! কিন্তু সেদিন থেকে দুজনের একজন ও ওর সাথে আর কথা বলেনি! পিউ বাসায় ঢুকে বুঝেছিলো সেদিন হয়তো মেহমান এসেছিল। কিন্তু ও না আসায় বাবা মা হয়তো অপমানিত হয়েছে! পিউয়ের জন্য ওরা কষ্ট পেয়েছে! পিউ রুমে ঢুকে চিৎকার করেই কাঁদছিলো কেউ আসেনি মাথায় হাত রাখতে! ঐদিন থেকেই ওর জীবন অভিশপ্ত হয়ে গেছে! একা একা রুমে পরে থাকে। ওর মা ওকে ডাকতে আসেনা খেতেও রুমে দিয়ে চলে যায়। ও খেলে খায় না খেলে সেভাবেই থাকে! সেদিন থেকেই জ্বরে ভুগছে পিউ কিন্তু বুঝতে দেয়নি কাউকে। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টি দেখে ছাদে যেতে মন চাইছিলো ওর! তাই ফোন হাতে ছাদে এসেছে আস্ফিকে বেশকিছু কল দিয়েছে। আস্ফি কেটে দিচ্ছে বারবার।

পিউ ফোনের স্ক্রিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে! ওর চোখের কোনা বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে!

আস্ফি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে আর বাদাম ভাজা খাচ্ছে। ওর ফোন লাগাতার বাজছে আর ও শুধু কল গুলো কেটে কেটে দিচ্ছে! কিন্তু ওর মনোযোগ সম্পূর্ণ ফোনের দিকেই আসলে। ক্ষনে ক্ষনে টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ও ফোনের দিকে লক্ষ্য রাখছে। কখন ফোন আসবে আর ও কেটে দিবে! ব্যাপারটা লক্ষ্য করে কিয়াশা ভ্রু কুঁচকালো! পরক্ষণেই একটা প্রশ্নের সৃষ্টি হলো মনে! আস্ফির সাথে মুটামুটি ভালোই কথা হয়েছে ওর! অনেকটা বন্ধু সুলভ আচরণ করে ওর সাথে আস্ফি! তাই ও প্রশ্নটা চেপে গেলোনা। হুট করেই বলল,
–” গালফ্রেন্ড?”

আস্ফি চমকে গেলো! ওর দু হাতের মাঝে থাকা বাদামের বাটি ঠুস করে পরে গেলো। আস্ফির খেয়ালি ছিলোনা কেউ ওর পাশে বসে আছে। ও এতটাই ডুবে গিয়েছিলো ফোনে! আস্ফি নুইয়ে বাটিটা টেবিলের উপরে রেখে কিয়াশার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো। কিয়াশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এখন উত্তর শুনার জন্য! আস্ফি কপালে হাত ঘষে বলল,
–” ছিলো এখন নেই! এক্স হয়ে গিয়েছে!”

কিয়াশা আস্ফির কথা শুনে হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
–” তাহলে আমার চান্স আছে হয়তো!”

কিয়াশার কথায় প্রথমে আস্ফি মাথা দুলালো। ২ সেকেন্ড পরেই ও বিস্ফোরিত নয়নে কিয়াশার দিকে তাকালো। কি বলল মেয়েটা? কিয়াশাকে পায় কে? কিয়াশা দ্রুত উপরে চলে যাচ্ছে! আস্ফি বিস্ময়ে বসা হতে দাঁড়িয়েই গেলো। তখনি আবার পিউ এর কল এলো। আস্ফির মনটা যেন পাথর হয়ে গেছে! পাথর আর গলার নয়! ও আবারো কেটে দিলো কলটা এবং নিজের ফোন ও বন্ধ করে দিলো! ড্রয়িং রুমে ঘটা এসব কিচেনে চা বানাতে বানাতে টিয়ার চোখ এড়ালোনা! ও কপালে গভীর চিন্তার ভাজ পরলো! ওর পিউয়ের সাথে কথা বলা দরকার! কিন্তু স্তব্ধ না ফিরলে কি করে? কবে ফিরবে স্তব্ধ? ওর ওতো দেখতে ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে সেদিন অদ্ভুত ভয়ংকর এক রূপ দেখিয়ে কোথায় যে আবার হারালো কে জানে! ওর সাথে এমনি হয় হয়তো ও হারিয়ে যায় নয় স্তব্ধ! ওর লাভ স্টোরির নাম ঠিক করলো মনে মনে টিয়া। হাইড এন সেক লাভ স্টোরি! ভেবেই মুখে অদ্ভুত শব্দ করে বলল,
–” ধূর!”

পিউ আস্ফির ফোন বন্ধ পেয়ে এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ফোনটা বুকে চেপে ধরে! আস্ফির এত রাগ জেদ ঠিক কবে থেকে হলো পিউয়ের মাথায় ঢুকছেনা। আস্ফি তার নিজের বলা কথা গুলোতেই কি অটুট থাকবে। অদের সম্পর্কে বলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ওর কি কোনও অধিকার নেই? আস্ফি বললেই হলো সব শেষ? না আস্ফিকে এর উত্তর দিতে হবে। কিন্তু পাবে কোথায় আস্ফিকে? ওর এখুনি আস্ফির বুকে ঝাপিয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। সেটা না পারায় বুকে অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। সব ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে! ওর কান্না থামছেওনা!

সকাল সকাল অদ্ভুত কারণে টিয়ার ঘুম ছুটে গেছে! আমেরিকার সময় আর বাংলাদেশ সময় একটু ডিফারেন্স থাকায় প্রথম ১ সাপ্তাহ বেশ প্রবলেম হয়েছিলো ওর ঘুম নিয়ে! কিন্তু লাস্ট কিছু দিন যাবত সব ঠিক হয়ে আসে। ১২ টায় ঘুমুলে ৮ টায় উঠে যায় ও কিন্তু আজ ভোর ৪ টায় ঘুম হুট করে ভেঙে গিয়েছে এখন বিছায় গরাগরি করছে ও। বিছানা ছেড়ে উঠে যেতেও আবার মন চাইছে না একি যন্ত্রণা? কপাল হাল্কা কুঁচকে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো ও। কিন্তু কিছুই হলোনা। তখনি ওর কানে দরজার লক খোলার শব্দ হলো এবং মুহূর্তে দরজা লাগানোর বিকট শব্দ হলো ঠাস করে। টিয়া কেঁপে উঠে লাফ দিয়ে বসে দরজার দিকে তাকালো! সাথে সাথেই স্তব্ধের চোখে চোখ পরে গেলো! ও বিস্ময়ে চোখ ফেরাতে ভুলে গেলো। স্তব্ধ নিজের দৃষ্টি ফিরালো না। টিয়াকে বিস্মিত হতে দেখে ও ম্লান হাসলো। টিয়ার চোখে চোখে রেখেই ওর দিকে এগিয়ে গেল। বেডের ঠিক মধ্যে বসে ছিলো টিয়া। স্তব্ধ ওর মুখোমুখি হয়ে ওর চোখে চোখ রেখেই মুখ বাড়িয়ে কপালে আলতো চুমু খেলো সময় নিয়ে! টিয়া নিবিড় ভাবে চোখ বন্ধ করে স্তব্ধের উষ্ণতা অনুভব করলো। স্তব্ধ চুমু খেয়ে টিয়ার স্নিগ্ধতায় মোড়ানো মুখশ্রিতে তাকাতেই। টিয়া স্তব্ধের বুকে ঝাপিয়ে পরলো। দুহাতে স্তব্ধকে জরিয়ে ধরে ঠোঁট ভেঙে হু হু করে কেঁদে উঠলো ও! স্তব্ধ আদুহাতে নিজের বাহুতে জরিয়ে নিলো ওকে মাথায় পর পর অনেক গুলো চুমু খেলো। বেশ কিছু ক্ষণ টিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে কেঁদে হাল্কা হতে দিলো! টিয়া যেন এই কান্না ধারা কত শত অভিযোগ, অভিমানের সমাপ্তি ঘটাচ্ছে! স্তব্ধের মনে হচ্ছে ওর কান্না থামারি নয়। টিয়ার এভাবে কান্না স্তব্ধের মনে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। এই যন্ত্রণা ও সহ্য করতে না পেরে টিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–” ডোন্ট ক্রায়… প্লিজ!”

স্তব্ধের কণ্ঠে কিছু একটা ছিলো! যা টিয়া আজ আর আটকে থাকতে দেয়নি ভালোবাসা গুলো প্রকাশ করতে ! টিয়া ওকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠে! ভাঙা গলায় মৃদু চিৎকার করে বলল,
–” আই লাভ ইউ স্তব্ধ.. ভালো.. বাসি! ”

স্তব্ধের ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি এবং মনে মুহূর্তে প্রশান্তি বয়ে গেলো! এত দিনের সকল কষ্ট, অপেক্ষা সব ফিকে হয়ে গেলো এই প্রশান্তির কাছে। টিয়ার মুখের কিছু শব্দ যেন স্তব্ধ বিমোহিত হয়ে গেলো! ও নিজেও আরও শক্ত করে টিয়াকে জরিয়ে ধরলো! টিয়া কাঁদতে কাঁদতে এক সময় স্তব্ধের বুকে ঢোলে পরলো! স্তব্ধ ওকে নিয়ে জরিয়ে ধরা অবস্থায় শুয়ে গেলো। বেশকিছু ক্ষণ পর ও খেয়াল করলো টিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে! ও মুখ তুলে তাকালো টিয়ার কান্নার ফলস্বরূপ লাল লাল মুখে। ভেজা চোখের পাপড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু ক্ষণ। তারপর হুট করেই কি যেন হলো। ভেজা পাপড়ি গুলোতে ঠোঁট বসাতে বসাতে বিরবির করলো!

–” ভালোবাসি…! ”

চলবে?

[ আমি একটু ব্যাস্ত আছি শুক্রবার পর্যন্ত তাই সময় নিয়ে গুছিয়ে লিখে লেখা আগাতে পারছিনা! আর একটু ধৈর্য ধরুন দ্রুত শেষ করে দিয়ে নতুন গল্প দেওয়া হবে! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here