#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 41
রাত তখন ১টা বাজে। স্তব্ধ স্পীডে বাইক চালিয়ে টিলার উপর বাড়ির সামনে বাইক রেখেই উপরে উঠে টিয়ার রুমে চলে গেলো এক প্রকার ছুঁটে। আস্ফি রেলিং বসে ঘোলা চোখে ছাদ থেকে সেটা দেখে দ্রুত নিচে এলো। দু হাতে চোখ, মুখ মুছে! আস্ফি টিয়ার রুমে উঁকি দিতেই বুঝলো টিয়ার প্রচন্ড ফিভার হয়েছে হয়তো। গোঙড়াচ্ছে মেয়েটা রীতিমতো। কিন্তু ডিনারের সময়ও তো দিব্বি মেয়েটা ভালো ছিলো। জ্বরে ওর পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে। স্তব্ধ ওর কপালে হাত রাখতেই স্তব্ধের সাথে আবলতাবল বোকছে মেয়েটা। যেহেতু স্তব্ধ আছে তাই আস্ফি আস্তে করে চলে গেলো সেখান থেকে! বাকিটা স্তব্ধ দেখে নিবে তাই চিন্তা নেই।
স্তব্ধ টিয়াকে উঠিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়েছে । টিয়া তোতাপাখির মতো জ্বরের ঘোরে বারবার একটা কথা বলছে,
–” ঐ বৌ এর কাছে গিয়েছিলেন আপনি? বলুন না? ”
স্তব্ধ ওর কথার পিঠে কোনও কথা বলছেনা। শান্ত ভাবে বসে প্যাকেট হতে ঔষধ বের করে হাতে নিচ্ছে এক এক করে। চোখে মুখে কোন প্রকাশ রিআ্যক্টে করার আভাস নেই। সেগুলো দেখার পরিস্থিতিতেও অবশ্য টিয়া নিজেও নেই! ও এক কথা বার বার বলছে শুধু। টিয়াকে কিছুটা জোর করেই ঔষধ খাওয়ালো স্তব্ধ! ও বারবার মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছিলো। স্তব্ধ এক পর্যায়ে গাল চেপে ধরে ঔষধ মুখে পুরে দিলো। তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে নিজে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে নিলো। রাত করে উড়াধুরা বাইক চালিয়ে রাস্তার সব গুলো ধূলো ও নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। তবে ভাগ্য এতটুকুই ভালো এতো রাতে ডক্টর পেয়েছে কোনও রকম একটা! সব শেষে মগ ভর্তি পানি আর রুমাল নিয়ে টিয়ার মাথার কাছে বসে ওর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো! টিয়ার দিকে বেশিক্ষণ স্থির দৃষ্টি মেলে রাখতে পারলো না স্তব্ধ। অজান্তেই কয়েকটা ঢোক গিলল। জ্বরে বুদ মেয়েটা কি জানে কতটা মাদকাসক্ত লাগছে তাকে দেখতে এই মূহুর্তে। সে কি জানে তার এই মোহনীয় রূপ তার প্রিয়োর বুকে যে ঝড় উঠে যাচ্ছে? স্তব্ধযে আশক্ত হয়ে পরছে সেই মাদকাসক্ততে! এত মোহনীয়তা ছরাতে কে বলেছে তাকে? জ্বরে ফোলা লাল লাল মুখ, বড়বড় চোখে পাঁপড়ি গুলো হাল্কা ভিজে, চোখের আশেপাশে মৃদু লাল আভার ছড়াছড়ি গুলো যেন ফর্সা লালচে মুখে কয়েকগুণ মায়াময়ী করে তুলেছে। ঠোঁট গুলো ক্রমাগত কেঁপে উঠছে জ্বরের তোরে! দ্রুত অন্যদিকে তাকিয়ে রুমাল পানিতে ভিজিয়ে টিয়ার মাথায় জলপট্টি দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো স্তব্ধ। আর একটিবার তাকালোনা ওর হৃদমোহিনীর দিকে! কি করে তাকাবে। ওর হৃদমোহিনী যে ওর ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়।
ঘণ্টা দুয়েক লাগাতার জলপট্টি দেওয়ার পরও কিছুতেই জ্বর নামছেনা দেখে স্তব্ধ অস্থির হয়ে উঠলো। জ্বর একশোর উপরে প্রায় রাত থেকে এভাবে এতক্ষণ জ্বল থাকলে তো প্রবলেম। সেটা ভেবেই স্তব্ধ ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো। টেনশনে কপালে ভাজ পরেছে ওর। কিন্তু এত রাতে অন্যকিছু করার উপায় ও নেই অপেক্ষা করা ছাড়া স্তব্ধ জলপট্টি দিতেই থাকলো। এভাবে ফজরের আজান পরতেই টিয়ার শরীর একটা ঘাম দিলো। ঘেমে-নেয়ে জিবজিবে হয়ে গেলো শরীর স্তব্ধ কাপলে হাত রেখে বুঝলো জ্বর এখন একদম নেই। ও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। জ্বর কমতেই টিয়া নড়েচড়ে একটা ঘুম দিলো আরাম করে। স্তব্ধ হাল্কা হাসলো। যতটুকু পারে ঘাম মুছে দিলো।
১০ টার দিকে টিয়ার ঘুম ভাঙতে আড়মোড়া ভেঙে চোখে হাত বুলাতে বুলাতে আশেপাশে তাকাতেই স্তব্ধকে বেলকনিতে দেখতে পায়। দূর্বল পায়ে নিজেও বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ওর জ্বর না থাকলেও শরীর প্রচণ্ড দূর্বল লাগছে! এতটুকু এসেই যেমন হাপাচ্ছে মনে হচ্ছে! স্তব্ধ বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছু একটা দেখছে! টিয়া কাঁপা কাঁপা, ঘুমঘুম কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠে,
–” কি দেখছেন?”
হঠাৎ টিয়ার এহেন কথায় স্তব্ধ দ্রুত পিছনে ফিরে অস্থির দৃষ্টিতে টিয়াকে একবার পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিলো। স্তব্ধদের দৃষ্টি বুঝে নিজেও নিজেও দিকে চোখ বুলালো টিয়া। তারপর পাশে জানালার থাইয়ে নিজেকে দেখে চমকে উঠলো ও। কি বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে ওকে? জীন শীর্ণ শরীর ফ্যাকাসে মুখ বিষন্নতায় ভরা চোখগুলো লাল লাল হয়ে আছে কণ্ঠস্বর টাও কেমন মোটা শোনাচ্ছে নিজের কাছেই! স্তব্ধ টিয়ার হাবভাব দেখে বুঝলো ওর মনেই নেই রাতে ওর কি পরিমাণ জ্বর ছিলো। স্তব্ধ টিয়ার কাছে গিয়ে ওর কোমরে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে কপালে চুমু খেলো। কপালে হাত দিয়ে চ্যাক ও করলো জ্বর আছে কী না! জ্বর নেই দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো! ম্লানমুখে বলল,
–” খুব কষ্ট হচ্ছে টিয়া পাখি? ”
টিয়া স্মিত হাসলো মাথা দুলিয়ে বলল,
–” আমি ঠিক আছি তবে শরীর খুব ভারী ভারী লাগছে! কাল রান্না করেছি জীবনের প্রথম তাই হয়তো… ঠিক হয়ে যাবে! ডোন্ট ওয়ারি হাসবেন্ড! ”
টিয়া শান্ত কথা গুলো যেন স্তব্ধের পছন্দ হলো না! গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–” নিজের খেয়াল না রেখে রেখে অসুস্থ হয়ে পরছো তুমি টিয়া! এরকম কিন্তু চলবে না! লিসেন, আমি তোমার পাশে সব সময় থাকতে পারবোনা টিয়া! তোমাকে নিজের খেয়াল নিজের ভালো নিজেকেই বুঝতে হবে…. মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট তুমি আমার জান! আমাকে ভালো রাখতে হলে প্লিজ নিজেকে কষ্টদিও না। আমার জন্য তোমার কিছু করতে হবেনা। শুধু নিজেকে ভালো সুস্থ রাখো তুমি! আমি তাতেই ভালো থাকবো! ”
টিয়া ঘুমঘুম চোখে চকিতে তাকালো স্তব্ধের দিকে। ওকে এতগুলো কথা স্তব্ধ বলল ওকে তাও এভাবে? বিশ্বাস করতে পারছেনা টিয়া কানে বারবার জান শব্দটা বেজে উঠছে। স্তব্ধদের কথাগুলো মনে মনে আওড়াতেই ভারী কন্ঠে বলল,
–” আবার কোথায় যাবেন আপনি? আবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?”
টিয়ার চকিত দৃষ্টিতে স্তব্ধ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলো। এভাবে কখনও ও নিজের দিকটা কারো কাছে প্রকাশ করেনি। ভিন্ন এক অনুভূতি টের পেলো স্তব্ধ। অনুভূতি প্রকাশে এতটাও খারাপ লাগেনা বরং একটা আলাদা স্বস্তি আছে! টিয়া হুট করে কথায় স্তব্ধ স্মিত হাসলো বলল,
–” পাগলী মেয়ে সেটা বলছিনা। আমি কাজের জন্য প্রায় সময় তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো। তখন তোমার নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে। আমার বিরহে পুড়লে হবে না। কারণ ছাই দিয়ে আমার কাজ নেই!”
টিয়া বাচ্চাদের মতো গাল ফুলালো। খিটখিটে মেজাজের সাথে বলল,
–” আপনাকে বিয়ে করে বড্ড ভুল হয়ে গেলো আমার! হাসবেন্ড না সুন্দর করে একটু কথা বলতে জানে। যাই বলে তেতো তেতো! আর না জানে রোমান্স। না সে সব সময় আমার পাশে থাকবে। বাবার কথায় যদি তখন রাফিকে বিয়ে করে নিতাম। এত কিছু সেক্রিফাইজ করতে হতোনা। বড্ড ভুল হয়ে গেলো!”
সব ঠিক ছিলো স্তব্ধ ভ্রু কুঁচকালো রাফি নামটা শুনে! কিছুটা শক্ত চোখে টিয়ার দিকে তাকাতেই ও টিয়া বরখে গেলো বুঝলো ভুল যায়গায় ভুল না নিয়ে ফেলেছে। ও একটু হাসার চেষ্টা করে অসহায় কণ্ঠে বলল,
–” প্লিজ স্তব্ধ আর এসব বলবোনা। কিন্তু একটা সত্যি কথা বলবেন প্লিজ?”
স্তব্ধের চোখ মূহুর্তে শীতল হয়ে এলো। সেটা টিয়ার চোখ এড়ালো না। টিয়াকে ছেড়ে দিয়ে স্তব্ধ ফের গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–” গো ফ্রেশ হয়ে আসো! ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন নিতে হবে!”
স্তব্ধের শীতল চাহুনি। গম্ভীর কণ্ঠ টিয়াকে নিরদ্বিধায় আর একটা কথাও বলতে দিলো না। ও আর একবার রিকুয়েষ্ট করার চেষ্টা করলেও মুখদিয়ে কিছু বের হলোনা অল্পস্বল্প ভয়ে। স্তব্ধ ওকে ছেড়ে বারান্দায় রেলিং এর উপর দুহাত দুপাশে রেখে দাঁড়িয়ে গেলো। দৃষ্টি তার দূরে….. সেদিকে একবার তাকিয়ে দূর্বল পায়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো টিয়া মন টায় ছোট্ট হয়ে গেলো ওর।
স্তব্ধ জানে টিয়া কি বলতো। আসলে রাফির সাথে টিয়ার বিয়ে অলমোস্ট হয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখন ব্যাপারটা স্তব্ধের কানে আসে ওর বন্ধুদের থেকে। তখন কিছু দিনি হয়েছিলো স্তব্ধ ভার্সিটি যায় না। শুধু মাত্র টিয়া ওর পিছু নেয় বলে। কিন্তু টিয়ার বিয়ের ব্যাপার টাই এমন একটা ব্যাপার ছিলো যেটা ওকে অস্থির করে তোলে! সেই প্রথম হুট করে ওর রাতে অস্থির অস্থির লাগতে শুরু করে। প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে স্তব্ধ খেয়াল করলো মাথা থেকে টিয়ার বিয়ের বিষয় টা বের হচ্ছেনা কিছুতেই। সেই রাতে ওর ঘুম হলোনা। সারারাত বারান্দায় সিগারেট টানার পর সকালে। বিষণ্ণ, অনুভূতিশূন্য এবং তিরিক্ষি মেজাজে নিয়ে নিয়ে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললো। খোঁজ খবর নিয়ে রাফিকে বের করে ভয়ংকর ধোলাই দিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে সাংঘাতিক এক ঘুম দিলো। এক ঘুমে সকাল এত শান্তির ঘুম স্তব্ধ আগে ঘুমায়নি। কিন্তু ঘুমের রেশ ছুটতেই ও তিড়িৎ গতিতে উঠে বসে এবং গতদিনের কাহিনী মনে করে ও নিজেই বোকা হয়ে যায়। আসলে কেন করলো ও এটা? বিয়ে হয়ে গেলেই মেটার লাইফ সেট ছিলো। আবেগে ভেসে নিজের সময় টা নষ্ট করতোনা টিয়া। কিন্তু শেষে ও নিজেই সেটায় বাধা হয়ে দাঁড়ালো? সেদিন ওর বিস্ফোরিত মাইন্ড চিৎকার করে বলছিলো। তুমি নিজেও আবেগে ভাসার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছো।
স্তব্ধ যতদিনে ভার্সিটি ছেড়েছিলো ততদিনে টিয়া ওর একটা অভ্যাস হয়েগিয়েছিলো। যা স্তব্ধ বুঝতেও পারেনি। তবে টিয়ার বিয়ের বিষয় টাই প্রথম যেটাতে স্তব্ধ টিয়ার প্রতি হেল্পলেস হয়ে গিয়েছিল নিজের সম্পূর্ণ অজান্তেই। স্তব্ধ টিয়ার উপর আকর্ষিত না হলেও। টিয়ার অনুভূতি পাগলামো গুলোকে অসম্মান করতে পারেনি। বলতে গেলে স্তব্ধ টিয়ার পাগলামো অনুভূতি গুলোকেই ভালোসেছে সর্ব প্রথম। সেই দিক থেকে ওর ভালোবাসাটা সম্পূর্ণ আলাদা। টিয়াকে ওর অনুভূতি গুলোকে স্তব্ধ সব সময় দূর থেকেই ফিল করতে পারতো এবং পছন্দ করতো। ততদিনে টিয়া পাগলামোতে পাগল হয়ে নিজেও পাগলামো শুরু করে দিয়েছিলো স্তব্ধ আটকাতে পারেনি নিজেকে। নিজের উপর সংযত শব্দটার বালাইও ছিল না। নিজেকে নিজের কাছে বড্ড অপরিচিত মনে হতো স্তব্ধের। টিয়ার প্রেমে একা একা, লুকিয়ে লুকিয়ে একটু একটু করে পুড়ছিলো স্তব্ধ। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ টিয়ার অজান্তে কেও জানতোনা স্তব্ধের মনে কি চলছে! সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত ভালোবাসা ছিলো ওর টিয়ার প্রতি! তবে স্তব্ধ চায়নি টিয়াকে কষ্ট দিতে কিন্তু কিছুই যে ওর হাতে ছিলো না। তবে টিয়া চাইলেও কখনও স্তব্ধের ভালোবাসার পরিমাপ করতে পারবেনা। স্তব্ধ ওর টিয়াপাখিকে ঠিক ওতটাও ভালোবাসে!
পুরোনো কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্তব্ধ! টিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই বুঝলো টিয়ার মন খারাপ! স্তব্ধ রুমে গিয়ে একটা টাওয়াল নিয়ে নিজ হাতে টিয়া চুল গুলো মুছে দিলো। টিয়া সম্পূর্ণ অবাক দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো স্তব্ধের দিকে। ছেলেটার মুড কখন কেমন থাকে ও বুঝেনা। চুল মুছে স্তব্ধ টিয়ার স্নিগ্ধ মুখে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে চাইলো। কিন্তু বেশি ক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না মনে হচ্ছে বুক কাঁপছে! ওর প্রিয় এতটা মোহনীয় কেন?
🍁
স্তব্ধ আজ সবাইকে নিয়ে ঢাকা নিজ বাড়িতে ফিরছে! টিয়ার তাতে বাধ ভাঙা খুশির সীমা নেই। আর টিয়ার খুশি দেখে স্তব্ধের মনে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন পর টিয়াকে ঠিক আগের মতো দেখতে পেলো স্তব্ধ চঞ্চল অনেকটা প্রজাতির মতো। সারাক্ষণই ছুটোছুটি প্রিয় মেয়েটা হুট করেই কেমন ম্যাচিউর ম্যাচিউর লাগচ্ছিলো এমন টিয়াকে স্তব্ধ চায়নি। বাট আজ ফাইনালি ও ওর আগের প্রিয়শীকে ফিরে পেয়েছে মনে হচ্ছে। তাতে স্তব্ধের মন আজ ফুরফুরে!
টিয়া স্তব্ধের পাশে গাড়িতে বসে আছে চুপচাপ… পিছনে কিয়াশা আস্ফি টুকটাক কথা বলছে। কবির আর বাকি সবাই অন্য গাড়িতে আসছে! টিয়ার বহুদিন পর বাইরে যেতে পারার খুশিটা আস্ফিকে কিয়াশার সাথে এত হেসে হেসে কথা বলতে দেখায় বিলিন হয়ে যাচ্ছে! রাগে গাঁ শির শির করছে।
স্তব্ধের শীতল চাহুনি সেটা লক্ষ্য করলেও। আপাদমস্তক ড্রাইভিং মনোযোগ দিলো আজ এত কিছু কেমন যেন দেখতে ইচ্ছে করছেনা ওর আগের লুকুচুড়ি প্রেম প্রেম খেয়াল আবার ডুবতে ইচ্ছে করছে টিয়াকে নিয়ে সেই পুরোনো ভার্সিটির কোনায় কোনায় যাকিনা অম্ভব!
টিয়া পিছনে ফিরে কিয়াশার না দেখার মতো আস্ফিকে চোখে চোখে শাসাচ্ছে। কিন্তু তাতে আস্ফি খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না! টিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল বান্ধবীর জন্য কষ্টে বুকটা ভাড়ী হয়ে গেলো। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজ ঢাকায় ফিরে পিউকে নিয়েই নিজের বাসায় ফিরবে সেই যে মেয়েটা অভিমান করে বেরিয়ে ছিলো ওর বাসা থেকে সেটাও তো ভাঙাতে হবে!
এদিকে আস্ফি মনে মনে ভিষণ ভয় পাচ্ছে ঢাকা ফিরলেই নিশ্চয়ই পিউকে ফেস করতে হবে ওর? কিন্তু কিভাবে করবে ও সেটা মেয়েটা হাজার স্বপ্ন দিয়ে এখন নিজেই পিছিয়ে যেতে হচ্ছে ওর। নিজের কষ্ট গুলো কাকে বুঝাবে? টিয়ার দৃষ্টি বুঝতে পারছে ও কিন্তু ওকে শক্ত হতে হবে।
কিয়াশা একদৃষ্টিতে বাইরে দেখতে লাগলো। আস্ফির সাথে আর একটুও কথা বলবেনা ও। ঢাকা গিয়েই স্তব্ধকে বলে দিবে ওর ফিরে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে। ও আর নিতে পারছেনা এসব সব সময় মনে হচ্ছে গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে থাকে। সহ্য হচ্ছেনা আস্ফিকে নিজের আশেপাশে। যেখানে ওর খুব গভীরে আস্ফির বিচরণ তবুও সহ্য হচ্ছেনা এমন কেন। উফফ মাথাটা ফেটে যাচ্ছে ওর!
চারটি মন চার ভাবনায় বিভোর অথচ ভাগ্যে অদের আলাদা কিছুই রেখেছে সেটা ওরা আদৌ জানতে পারবেনা……
চলবে!