আলো_আঁধার
part_1+2
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
এয়ারপোর্টে সবার সামনে হাত থেকে পাসপোর্ট আর ভিসা কেড়ে নিলো আঁধার। অনেক চেষ্টা করেও ভিসা আর পাসপোর্ট হাতে রাখতে পারলাম না। আঁধার আমার শরীরের আধছেঁড়া জামা ঢাকার জন্য মাটি থেকে ওড়না তুলে শরীরর ঢেকে দিতেই উৎসুক জনতা আমাদের দিকে আরো গভীর দৃষ্টি মনোনিবেশ করলো। তারা বেশ মজা পাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে। ওড়নার এক অংশ ছিড়ে সদ্য কাটা হাতে ওড়নার এক অংশ নিজেই পেচিয়ে নেয়। আমার চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি বের হচ্ছে কোন কথা বলতে পারছিনা।
কিছুক্ষণ আগেই মারামারি করেছে আঁধার। আলো এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকবে তখনি একটা ছেলে বাহিরে থেকে টিটকারি মারছিলো এমনিতেই আলোর মেজাজ খারাপ ছিলো, ছেলের কথায় আরো মেজাজ চড়ে যায়। কথা গুলো সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে ওই লাফাঙ্গা ছেলেকে চড় বসিয়ে দেয় গালে। চড় বসিয়ে দিতেই ওই ছেলে আলোর ওড়না হেচকা টানে শরীর থেকে ফেলে দেয় আর ডান হাতের বাহুর দিকে জামা ছিঁড়ে ফেলে। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে মজা নিচ্ছিলো। হঠাৎ আঁধার এসে ওই ছেলেকে লাথি মারতেই ছিটকে দূরে পড়ে যায়। ওই ছেলের কাছে চাকু ছিলো চাকু বের করে আঁধারকে আঘাত করতে আসলেই আঁধার চাকু বাম হাত দিয়ে ধরে আরেকটা ঘুসি মেরে ফেলে দেয়। তারপর মাটিতে ফেলে ইচ্ছে মতো মেরে ছেলেটাকে পুলিশে দেয়।
আঁধার আলোর পিছু পিছুই আসছিলো কিন্তু ট্রাফিকে আটকে গিয়ে লেট হয়ে যায়৷ আলোকে আটকাতেই তার পিছু নেওয়া। আজকে যদি আরেকটু লেট করে আসতো সে, কি হতো ভাবতে পারছে না আঁধার। আজকাল কারো কিছু হলে বিপদে পড়লে মানুষ এগিয়ে আসে ঠিকি কিন্তু সাহায্য করতে নয় কেমেরা অন করে ছবি তুলতে আর ভিডিও করতে আসে।
আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছে আর হাতে ওড়নার ছেঁড়া অংশ ভালো ভাবে বাধতে বাধতে
‘ ফিরে চলো
আলোর কান্নার আওয়াজ আরো দিগুণ বেড়ে গেলো। কেন সে যাবে? যাবে না সে।
‘ যাবো না আমি আপনি চলে যান। কেন এসেছেন এখানে! আমি তো সব কিছু ছেড়ে চলেই এসেছি কেন পিছু এসেছেন আবার?
আধার নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে উপরের ঠোঁট কামড়ে ধরে
‘ আই থঠ তুমি একটা চালাক মেয়ে বাট একচুয়েলি তুমি একটা ডাফার।
আলো উদ্বিগ্ন চোখে আধারের চোখে তাকিয়ে
‘ আপনি যা-ই বলেননা কেন আর যা-ই ভাবেন না কেন আমি আর ফিরছিনা। এতো অপমান আর ধিক্কারের পরেও আপনাদের মনের খায়েশ মিঠেনি? আমি অনাথ হতে পারি অসহায় নই। মামুনি, আনিশা, তিন্নি, ফায়েজ, মামা আপনার ফেমিলির সবাইকে নিয়ে আপনি ভালো থাকুন তা-ই চাই।
আঁধার আলোর ডান হাত শক্ত করে ধরে
‘ তোমার কথায় শেষ কথা নয়। তুমি যাবে এবং এখন এই মুহুর্তে যাবে। ডেম ইট। আলোর কাজই সবাইকে আলো দেওয়া। নিজের আলোয় সবাইকে মুগ্ধ করা। চাইলেও সবার থেকে আড়াল করা যায়না আলোকে।
আলো আধারের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ।
‘ আমি ক্লান্ত আর না প্লিজ। আলো বেলা শেষ হতেই আধারে হারিয়ে যায়। সবাই জেনে গিয়ে ভালোই হয়েছে অন্তত এখন আর নাটক করতে হবেনা। আপনি যান চলে যান আ আমি যাবো না ( কান্নার মাঝে হেচকি তুলে) আর এখন আমি আপনার সাথে গেলে সবাই আমায় তা-ই ভাববেন যা ভাবছে হয়তো তার থেকে বেশি খারাপ ভাববে। আমি আসলে কারো আদর ভালোবাসা ডিজার্ভ করিনা। এমনিতেও ভালোবাসা পাইনি কারো আর যাদের পেয়েছিলাম তাদের ভালোবাসাও হারালাম।
‘ দেখো ভুল তো তোমার ছিলো না। ভুল আমার ছিলো। আমি সব ঠিক করে দিবো তুমি ফিরে চলো।
আলো বা হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে
‘ না সব ভুল আমারই ছিলো।
আধার কপালে হাত দিয়ে ঘসছে
‘ কান্না বন্ধ কর। তুমি এতো ছিঁচকাঁদুনে কেন? চলো বাসায় ফিরবে৷
‘ আমি যাবো না মানে যাবো না। কথা বুঝেন না আপনি?
‘ ওকে ফাইন তাহলে থাকো তুমি এইখানে আমি গেলাম।
আলো অবাক হয়ে
‘ আমার পাসপোর্ট আর ভিসা দিয়ে যান।
আধার আর কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিতেই আলো দৌড়ে গাড়ির পিছনে যাচ্ছে আর বলছে
‘ আধার আমার পাসপোর্ট ভিসা দিয়ে যান প্লিজ।
আধার আর পিছনে ফিরে তাকায়নি একবারের জন্যও। আলো মাটিতে বসে পড়ে।
হঠাৎ ই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয় সবাই ব্যাস্ত হয়ে আশ্রয় নেয় বৃষ্টি হাত থেকে বাঁচার জন্য কিন্তু আলো ওখানেই বসে আছে ওভাবে। এখন আলো কি করবে। পাসপোর্ট আর ভিসা ছাড়া তো সে যেতে পারবে না। আধার কেন করলো এমনটা। সবার থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে দেশের বাহিরে যেতে চেয়েছিলো। ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় ভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পায়। এই সুযোগে সবার থেকে আড়াল হতে চেয়েও পারলো না আলো।
.
.
আলো বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়েই ছিলো। তাদেরও টাকা পয়সার কোন অভাব ছিলো না। ক্লাস এইটে ওঠার পর তার মা মারা যায়। এর দুই মাসের মাথায় মারা যায় বাবা। অনেকে বলে স্ত্রীর শোকেই মারা গিয়েছে উনিও। স্ত্রীকে নাকি খুব বেশিই ভালোবাসতো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তারা। আলোর চাচারা কৌশলে আলোদের জায়গা সম্পত্তি সব নিয়ে যায়। মামার বাড়ি কিছু দিন থাকতেই আলোর মামি বেশ উৎপাত করতে শুরু করলে আধারের মা মমতা জাহিদ আলোকে ওদের বাড়ি নিয়ে যায়। আঁধারের বাবা মা আলোর দূর সম্পর্কের মামা মামি। আধারের আব্বু তেমন পছন্দ করতো না আলোকে। তখন আঁধার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছিলো। আধার ইউএস চলে যাওয়ার পর পাঁচ বছর থেকে এক বছর হলো দেশে এসেছে। আধার আলোকে বন্ধুর মতোই দেখতো। অনেকে ওর সাথে বাজে বিহেভ করলেও আঁধারের আচরণ ছিলো কোমল।
মমতা জাহিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে আঁধারের বিয়ের কথা বলতেই আঁধার কিছটা ঘাবড়ে যায়। কারন সে একজনকে ভালোবাসে আর সে ইউএস ই থাকে। ওরা ও বাঙালি পরিবারের সবাই ইউএস থাকে। আঁধারকে অনেক চাপ দিচ্ছিলো আঁধার কোন উপায় না পেয়ে আলোর কাছে যায়। সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে আলোর। কি সুন্দর করে আলোর সামনে এসে
‘ আলো আমায় বাঁচাও এই বিপদ থেকে। তোমায় তো বলেছি আমি একজনকে ভালোবাসি। এখন আমি কি ভাবে বিয়ে করবো অন্য কাউকে। আর তন্নি এখন দেশেও আসতে পারবে না। ওর এক্সাম চলছে। ওর বাসায়ও কিছু জানায়নি ও।
‘ কিন্তু আমি কি ভাবে সাহায্য করবো বলুন?
‘ আমি বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমরা লুকিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলেছি। তাহলে আপাতত ওরা আমায় চাপ দেবে না। আমি সিউর ওরা আমাদের আবার বিয়ে দিতে চাইবে ততদিনে তন্নির এক্সামও শেষ হয়ে যাবে। ওকে দেশে এনেই আমি সব সত্যি বলে দিবো।
‘ কিসব বলছেন আপনি?!! আমি এইসব পারবো না। তাছাড়া এতো বড় মিথ্যা আপনি জানেন ওরা কত কষ্ট পাবে পরে জানতে পারলে?
‘ প্লিজ আলো আমার হাতে আর কোন অপশন নেই আম্মুকে সরাসরি না-ও করতে পারছিনা আম্মু অসুস্থ। আমি তন্নিকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ আমার এই হেল্পটা করো। তোমার কখনো এমন হলে আমি সাহায্য করতাম না বলো?
‘ আমি পারবো না আঁধার এটা অনেক বড় একটা বিষয়।
আঁধার চুপ থেকে কিছুক্ষণ
‘ আমি তোমায় সব চেয়ে কাছের বন্ধু ভেবেই বলেছিলাম আর কোন উপায় না পেয়ে। থাক কি করবো আর। সবার ভালোবাসা তো আর কপালে জুটে না তন্নির ভালোবাসাও হয়তো আমার কপালে নেই।
আঁধার চলে যেতে নিলেই আলো পিছন থেকে ডাক দেয়
‘ আঁধার ঠিক আছে আমি রাজি কিন্তু বেশি দিন না সত্যিটা শিগগিরই বলে দিবেন।
আঁধার খুশি হয়ে প্রথম আলোকে জড়িয়ে ধরতেই আলো কেঁপে উঠে ।
‘ থ্যাংস আলো। আমি জানতাম তুমি আমার পাশে থাকবে।
সেদিনই আঁধার অনেক মিথ্যে বানিয়ে বলে সবাইকে। মমতা জাহিদ এতো খুশি হয় যেন সে এটাই চেয়েছিলো। ছেলে যে লুকিয়ে বিয়ে করেছে সেই ভাবনা তার মাথায় নেই। কিন্তু আঁধারের আব্বু আর বাকি সবাই অনেক রাগ করেছিলো সেদিন।
.
.
.
গাড়ির হর্ন বেজে চলেছে আলোর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। হঠাৎ একজন এসে আলোকে ধাক্কা দিতেই আলোর হুশ ফিরে আসে। আলো উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরে করে।
আঁধারের বাড়ি ছাড়া তো আলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। প্রায় সন্ধ্যায় আলো বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আলোর কাছে গিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করছে। মমতার দিকে আলো তাকাতেই উনি কষ্টে মুখ ফিরিয়ে নেয় আলো দিক থেকে। আঁধার বসে এমনভাবে
সন্ধ্যার নাস্তা খাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি।
আলো ভিজে একাকার আনিশা (আঁধারের বোন) আলোকে নিজের ঘরে পাঠায় সবার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচিয়ে।
🍁🍁🍁🍁
গভীর রাতে আলো আঁধারের রুমে এসেছে। আলোর ঘুম আসছে না। এতো কিছুর মাঝে তার কি ভুল ছিলো? সে তো শুধু ভালোবেসে ফেলেছে আঁধারকে তাতে ওর দোষটা কোথায়?
আলো আঁধারের পা জোড়া ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে। আঁধারের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথায় চুমু দিতেই আঁধার বলে উঠে
‘ কে?…………..
চলবে………….
#আলো_আঁধার
#part_2
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
আলো আঁধারের পা জোড়া ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে। আঁধারের ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের মাথায় চুমু দিতেই আঁধার বলে উঠে
‘ কে?
কোন সারাশব্দ নেই। আঁধার ঘুম ঘুম চোখে পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্পটা অন করে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে কেউ নেই। আঁধার আবার লাইটটা অফ করে ঘুমিয়ে যায়।
এদিকে আলো নিচু হয়ে বেডের পাশে ফ্লোরে বসেছিলো। লাইট অফ করতেই আলো বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয় বিছানায়। ভালো লাগছে না শরীরটা। হয়তো ধরা পরে যেতো আজ আঁধারের কাছে, একটুর জন্য বেঁচে গেছে। দু’দিন পরই আঁধারের বিয়ে অথচ মন মানছে না আলোর। এখানো এমন বাচ্চামি করার কোন মানে হয়না। কিন্তু মনকে কি ভাবে বুঝাবে সে? মন তো তার কথা শুনছে না। আঁধারের জন্য এখনো কেন এমন আওয়াজ তুলে মন জানা নেই তার।
অভিনয় করতে করতে ভালোবেসে ফেলার বিষয়টা প্রকান্ড বিচ্ছিরি বিষয়। সে আরেকজনকে ভালোবাসে জেনেও না জানার ভ্রম করে ভালোবেসে ফেলাটা সত্যিই অন্যায়। কেন সে করতে গেলো এই বাজে অভিনয়টা এমন না করলে হয়তো আজ না আঁধারকে ভালোবাসতো না পরিবারের সকলের কাছে খারাপ হতো ।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে সবাই নাস্তা করছে। আনিশা, ফায়েজ বসে বসে ফোন ঘাটছে আর খাচ্ছে। আঁধারের আব্বু চা নাম নিয়ে
আঁধারকে বসতে দেখে মমতা জাহিদ আঁধারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে
‘ আলো কোথায়?
আঁধার নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে
‘ কেন!? আসেনি একবারো?
‘ ওকে সকাল থেকে একবারো দেখিনি। অন্য দিন তো এসে সব কাজ গুছিয়ে রাখে। আজ এখনো রুম থেকে বের হয়নি। ওর সাথে রাগ করে কথা না বললেও চিন্তা তো ঠিকি হয়। ওটা কি ও বুঝবে?
আঁধার মুখটা গম্ভীর করে
‘ আমি ডেকে নিয়ে আসছি তুমি বসো।
আঁধার অনেকক্ষণ ধরে নক করছে কিন্তু আলোর কোন সারাশব্দ নেই। এতো বেলা পর্যন্ত আলো কখনো ঘুমায়না। দিনের আলো ফোটার আগেই ঘুম থেকে উঠে যায়। আঁধারের এবার একটু ভয় হলো। আঁধার কোন রেসপন্স না পেয়ে দরজায় একটু জোরে ধাক্কা দিতেই দরজা খোলে যায়৷ এতো কেয়ারলেস মেয়ে দরজাটা লাগিয়ে ঘুমায়নি। ভিতরে প্রবেশ করে দেখে আলো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে জড়সড় হয়ে। আঁধার কয়েকবার ডাক দিলো উঠার নাম নেই। এতো কি ভাবে ঘুমায় মানুষ এতো ডাকার পরও একটুও রেসপন্স। আঁধার চলে যেতে নিয়ে আবার কি মনে করে আলোর মাথার কাছে এসে বেডের কোনায় বসে। সে অদ্ভুত ভাবে কেন তাকিয়ে আছে আলোর দিকে বুঝতে পারছে না তবে তাকিয়ে থাকতে কেন যেন ভালো লাগছে ভীষণ। আলোর মুখের উপর কিছু চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে দেখে আনমনে চুল গুলো সরিয়ে দিতে গিয়ে শক খায় আঁধার। ভীষণ গরম লেগেছে আলোর শরীর। ভালো করে দেখতে কাপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আলোর শরীর।
আঁধার মমতা জাহিদকে তড়িঘড়ি করে ডাকতে শুরু করে। মমতা জাহিদ আঁধারের এমন ভয়ের ডাক শোনে তারাতাড়ি করে আলোর রুমে এসে দেখে আঁধার একটা রুমাল ভিজিয়ে আলোর কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
মমতা জাহিদ আলোর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আঁধারের দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে
‘ আঁধার কি হয়েছে আলোর?
আঁধার ব্যস্ত হয়ে
‘ প্রচন্ড জ্বর আসছে। ধরে দেখো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
মমতা জাহিদ একটু এগিয়ে আলোর শরীর ধরে দেখে আসলেউ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কখনো কাউকে কিছু বলে না। চিন্তা দিতে চায়না। রাতেই হয়তো জ্বর এসেছিলো কাউকেই কিছু বলেনি।
‘ আঁধার ডাক্তার কে ফোন কর না হয় তুই নিয়ে যা ওকে হাসপাতালে অনেক জ্বর শরীরে।
‘ হুম মা সেটাই ভাবছি একটা প্যারাসিটামল দাও আগে। জ্বরটা কমলে নিয়ে যেতে হবে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আলোর জ্বর কমছেনা কিছুতেই। আঁধার আর কোন উপায় না পেয়ে আলোকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসাই হাসপাতালে যাওয়ার জন্য সাথে আনিশাকে নিয়ে নেয়। আলোকে এডমিট করেছে ওর কন্ডিশন দেখে। ডাক্তার বলেছে ওর শরীর আর মনের দুটোর কন্ডিশনই খারাপ তাই এমন হয়েছে। বেশি ভেজার ফলে এমন হয়েছে।
বিকেলে আলোকে ডিসচার্জ করে দেয়। আসলে ডাক্তার থাকতে বলেছিলো কিন্তু আঁধার ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। সব কিছুই আঁধারের জন্য হয়েছে। আঁধার তখন এমন না করলে হয়তো এতো সব কিছু হতোই না। না বাড়ির সবার কাছে আলো খারাপ হতো। আঁধার তো নিজের সন্তান তাকে সবাই সহজেই মাফ করে দিয়েছে কিন্তু আলোকে তা করেনি। আঁধার সব সময় একটা গিল্টি কাজ করে এখন। আলো ও অসুস্থ হয়েছে ওর জন্য রাস্তায় একা ছেড়ে না আসলে এমন হতো না। জোর করে নিয়ে আসলেই হতো উল্টো রাগ দেখিয়ে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।
.
.
এই দিকে তন্নি এসেছে আঁধারের বাড়ি। বিয়ের গহনা কিনতে যাওয়ার কথা ছিলো আজ। কিন্তু এসে দেখে আলো অসুস্থ। আঁধার বসে আছে আলোর কাছে হাত ধরে। তিন্নিকে দেখে আঁধার উঠে জড়িয়ে ওকে। আলোর ভিতরটাই মোচর দিয়ে উঠে ওদের এক সাথে দেখে। কি পাপের ফলে আল্লাহ তাকে এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে বুঝতে পারছে না সে। কেন এমন হলো এতো কিছু জানার পরও কেন ভালোবেসে ফেললো আঁধারকে। কেন মেনে নিতে পারছে না দুজনকে এক সাথে?!
তিন্নি আঁধারকে ছেড়ে
‘ এখন কেমন আছো আলো?
আলো জোর করে হাসির রেখা টেনে
‘ ভালো আছি এখন।
‘ আজকে কিন্তু শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়ে গেলে। শুধু আঁধারকে নিয়ে গেলে হবে বলো? ওতো কিছুই পছন্দ করে দিতে পারবে না উল্টো আমাকে কনফিউজড করে দিবে। তাই তোমাকে নিয়ে যাবো ভেবেছিলাম।
আলো মলিন হেসে
‘ তাতে কি আনিশা আছে ওকে যাও।
আঁধার আলোর কথা মাঝে
‘ আজকে যাওয়া হবে না তোমায় অসুস্থ রেখে শপিংয়ে যাবো নাকি আমি!!
আলো আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ কেন! কি হয়েছে আমি তো এখন সুস্থই আছি আপনি তিন্নিকে নিয়ে যান। বিয়ের তো আর দেই নেই সব শপিংই বাকি এখনো ।
আঁধার এক কথার মানুষ সে যাবে না আজকে মানে যাবে না। এর মাঝেই আনিশা আসে আলোর রুমে
‘ আলো এখন কেমন আছিস?
‘ হুম এখন ভালো।
‘ শোন আজকে রেস্ট নিবি শুধু বিছানা ছেড়ে উঠবি না তুই তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আজ। সবাই কতো চিন্তা করছিলো। মা তো কান্না করতে করতে শেষ।
আলোর চোখে একটু পানি জমা হলো মামুনির কথা শুনে। যতই রাগ করুক না কেন তিনি এখনো ভালোবাসে আলোকে আলো জানে সেটা।
‘ ভাইয়া মা তোকে ডাকছে৷ তিন্নির শপিংয়ে যেতে হয়তো
আঁধার মুখ কালো করে
‘ আজকে যাবো না মাকে বলে দে।
‘ আমি আছি তো আলোর কাছে তুই যা সমস্যা নেই। তাছাড়া তিন্নিরও তো পরে অনেক কাজ থাকবে। বার বার তো সময় পাবে না শপিংয়ের।
আলো আনিশার হাত ধরে
‘ আপনি যান আনিশা তো আছেই।
আঁধার আলোর কাছে আবার বসে
‘ তুমি সিউর আমি যাবো।
আলো মনে মনে বলছে যাবেন না আঁধার প্লিজ থাকুন না আমার পাশে। আমার যে আপনার সাথে ভালো লাগে ভীষণ
‘ কি হলো আলো কথা বলছো না কেন?
আলো চোখ বুজে আবার খোলে
‘ হুম যান।
তিন্নি আলোর কপালে হাত দিয়ে
‘ সাবধানে থেকো তুমি, আমি আবার আসবো।
আর যা করেছো আমার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না।
আলোর খুব ইচ্ছে হচ্ছে বলে দিতে সে ভালোবেসে ফেলেছে আঁধারকে। আলো কিছু বলতে যাবে তিন্নিকে………….
চলবে………….
বিঃদ্র:- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।