আলো_আঁধার part_3+4

আলো_আঁধার
part_3+4
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.

নীরবে তোলপাড় হচ্ছে ভিতরে। সব নিয়ম নীতিমালা ভেঙে চুরমার হয়ে যাক বলে দোয়ায় মেতে উঠেছে ভাঙাচুরা হৃদয়। তবু তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে শব্দের আনাগোনা নেই। পলকহীন তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন বেমালুম উপায় নেই আলোর।

তিন্নি অপেক্ষার চোখ নিয়ে
‘ কিছু বলবে আলো?

ভেজা চোখে বর্ষণ হলো না। স্বভাবে শান্ততা মিশিয়ে
‘ কিছু না সাবধানে যাও। সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ দিতে নেই।

‘ হ্যা কিন্তু কখনো সুযোগ হলে অনেক গুন বেশি ফিরিয়ে দিবো।

আঁধারের সাথে তিন্নি বেড়িয়ে যেতেই আলো উঠে ওয়াশরুমে যায়। পানির ঝাপটা মুখে দিয়ে ভাবছে কি করতে যাচ্ছিলো সে? কি ভাবে সে বলতে চাচ্ছিলো সে ভালোবাসে আঁধারকে। আঁধার তো অনেক আগে থেকেই তিন্নির হয়ে আছে। এখন কি ভাবে বলবে তিন্নিকে আঁধারকে সে ভালোবাসে। ওদের মাঝে সে কিভাবে যাবে! এতো নিচে সে কখনো নামতে পারেনা।

তিন্নির আর আঁধারের শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায় অনেক। এক এক করে কেনা সব কিছু বের করছে তিন্নি। আনিশা, আলো, ফায়েজ, মমতা জাহিদ সবাই মিলে বসে বসে দেখছে। অনেক শপিং করেছে তিন্নি। সবার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। আঁধার আলোকে একটা শাড়ী দিয়েছে। তিন্নির জন্য শাড়ি কেনার সময় আঁধারের নাকি এই শাড়িটা ভালো লেগেছে খুব তাই আলোর জন্য নিয়ে এসেছে। আলো নিচের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নেয় শাড়িটা। মানা করতে পারবে না সবার সামনে আর মানা করলে কেমন দেখাবে তাই চুপচাপ নিয়ে নেয়।

রাতে সবার সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিন্নি নিজের বাসায় চলে যায়। দু-পরিবার সিধান্ত নিয়েছিলো বিয়ে ধুমধামে হবে। কিন্তু আঁধার বলেছিলো ছোট্ট খাটো ভাবে আয়োজন করে বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে। কিন্তু তিন্নিরও ইচ্ছে বেশ আয়োজন করে বিয়ে হবে তাই আঁধার আর না করেনি।

আলো দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কার্ণিশে নিরলসভাবে । আকাশ গুমোট হয়ে আছে। ঘনকালো মেঘ উড়ছে। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে জোরেসোরে। আলোর অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। অস্বস্তি লাগছে ভীষণ। অক্ষম অনুভুতি গুলো এসে মনে হচ্ছে গলায় দলা পাকাচ্ছে। অনিমন্ত্রিত চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে বুকে।

হঠাৎ চিরচেনা ঘ্রাণ এসে লাগলো আলোর নাকে। আলো পিছনে ফিরতেই আঁধারের মাকে দেখে
‘ মামুনি!

‘ খুব রাগ হয়েছিলো। ভেবেছিলাম আর কথা বলবো না তো সাথে। কিন্তু মায়ের মন তো থাকতে পারিনি আর।

(আলোর চোখে আসা ফোটা ফোটা জল বার বার মুছে দিচ্ছে বাম হাত দিয়ে৷)

‘ সবার অপমান সহ্য করে তো আমার জন্যই পড়ে থাকতি এই খানে আর আমিও দেখ স্বার্থপরের মতো তোকে দূরেই সরিয়ে দিলাম।

আর কিছু বলার আগেই আলো ঝাপ্টে ধরে মমতা জাহিদকে। এই বাড়িতে বরাবর খুব বেশি আলোকে শুধু একজনই বোঝে আর সেটা হচ্ছে তার মামুনি৷ তাই উনি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলো আলো। বাবা- মা হারানোর পর মায়ের আদর এই মানুষটা তাকে দিয়েছিলো।পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যদি এখন আলোকে কেউ ভালোবাসে সেটা তার মামুনি। কিন্তু সেই মানুষটাকে আলো না চাইতেও অনেক দুঃখ দিয়ে ফেলেছে৷ কোন কিছুই হাতের মধ্যে নেই এখন মনে হচ্ছে।

আলোকে এমন ভাবে কাঁদতে দেখে

‘ কি হলো এই ভাবে কাঁদছিস কেন? আমি কি রাগ করতে পারিনা নাকি নিজের মেয়ের সাথে। আর আমার রাগ করার যথেষ্ট কারন তোরা দিয়েছিলি৷ আঁধারের সাথে তাল মিলিয়ে তুই এমন না করলেও পারতি। এখন সবাই তো তোকেই ভুল বুঝছে। কিন্তু আমি তো জানি তোর কোন ভুল নেই। তাই আরো বেশি রাগ হচ্ছিলো। ফায়েজের মা যা তা বললো তোকে চুপ করে শুনছিলি। কিন্তু আমি তো তোর অপমান সহ্য করে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা৷

আলোর কান্নার বেগ আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো
‘ আমায় ক্ষমা করে দাও মামুনি। আমি বুঝিনি সব কিছু এতটা বড় হয়ে যাবে।

‘ কিন্তু নিজের গায়ে যে কলঙ্ক জেনে শুনে লাগালি তার কি করবি?

আলো মুখ তুলে নেয় মমতা জাহিদের বুক থেকে। চোখ মুখ মুছে শক্ত হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মমতা জাহিদ আলোর কাধে হাত রেখে

‘ ভালোবেসে ফেলেছিস আঁধারকে?

মমতা জাহিদের মুখ থেকে কথাটা বের হওয়ার আগেই আলো চোখ বড় বড় করে উনার দিকে আচমকা তাকায়।

‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন এই ভাবে তাকিয়ে থেকে কি হবে?

আলোর ভিতরে ধড়াম ধড়াম আওয়াজ শুরু হয়েছে। হাত পা মনে হচ্ছে কাপছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে

‘ ক কি সব বলছো মামুনি। আমি আঁধারকে কেন ভালোবাসবো?। আর আঁধার যে তিন্নিকে ভালোবাসে সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম তার জন্যই তো এতো কিছু হ হলো।

‘ কিন্তু তোর চোখ কেন অন্য কথা বলছে?। তুই তো জানিস আমি তোর সব কথা চোখ দেখেই বুঝে নিই। তোর চোখ দেখে বার বার মনে হয় তুই আমার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছিস। সেটা অভিনয় করেই হোক বা এমনিতেই।

আলো জড়িয়ে ধরে মমতা জাহিদকে আবার। চোখ বন্ধ করে মিথ্যা গুলো সাজিয়ে নেয় সুন্দর করে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে

‘ তেমন কিছুই না মামুনি৷ আমি আঁধারকে বন্ধু মনে করি। তার জন্যই সব করেছি। তোমার এই জন্য এমন মনে হচ্ছে কারন মিথ্যা গুলো শুনে খুশি হয়েছিলে। তুমি চেয়েছিলে আমি আঁধারে বউ হোই ।

মমতা জাহিদ চোয়াল শক্ত করে

‘ যদি তাই হয় তাহলে কালকের সন্ধ্যায় আমি যা সিধান্ত শোনাতে যাচ্ছি আশা করি তুই তাতে বিরূপ মত করবি না৷ আর আমার কথার উপর আর কোন কথা বলবি না।

কথা গুলো বলে মমতা জাহিদ চলে যায় নিচে। আলোর চিন্তা এবার বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতা জাহিদ। কোন সিধান্তের কথা বলতে যাচ্ছেন উনি? মাথায় ঢোকছে না কিছু। আলোর শরীরটা আবার ভীষণ খারাপ লাগছে। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে আলোও তার রুমে চলে যায়।

কচি রোদে বসে বসে চা খাচ্ছে আলো মমতা জাহিদের সাথে । অনেকবার চেষ্টা করেছিলো বলতে যে রাতে কোন সিধান্তের কথা বলেছো মামুনি। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছে না।

এর মধ্যে দুজনকে এক সাথে বসে থাকতে দেখে বেশ খুশি হয়েছে আঁধার।

হাস্যজ্জল মুখ নিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে

‘ তা আমি কি এক কাপ চা পেতে পারি? না মানে চা নিয়ে আপনাদের সাথে শামিল হতে চাই।

আলো মুচকি হাসি দিয়ে
‘ নিয়ে আসছি বসুন আপনি।

আলো চা নিয়ে আসার জন্য কিচেনে চলে যায়।
হঠাৎ বিকট শব্দে আঁধার দৌড়ে কিচেনে যায়। আলো চা সহ চায়ের পাতিল ফেলে দিয়েছে। হাতে, পায়ে গরম চা-ও পড়েছে। আলোর দু’হাত আঁধারের দুহাতে নিয়ে তারাতাড়ি বেসিন ছেড়ে দেয় আলোর দু’হাতে পানি দিচ্ছে, আবার পা মুছে দিচ্ছে হাত দিয়ে আঁধার।

এই দিকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মমতা জাহিদ। এটা কি আঁধার শুধু বন্ধুত্বের জন্য করছে নাকি অন্য কিছু। ( মনে মনে ভাবছে)

আঁধারের রাগ হচ্ছে অনেক কন্ট্রোল করতে না পেরে রাগ দেখিয়ে

‘ তোমার কি জীবনেও আক্কেল হবে না? এই ভাবে কেউ কাজ করে? পুরে মরে আমাদের ফাসানোর ধান্দায় আছো নাকি? আমারই ভুল হয়েছে তোমার কাছে চা চেয়ে। একবার জ্বর বাধাবে তো আরেকবার হাত-পা পুরাবে।

আর কিছু বলার আগেই আলো কান্না করে দেয়। আলোর কান্না দেখে আঁধার বোকা বনে যায়। এই মেয়েকে কিছু বললেও জ্বালা।

আঁধার বোকার মতো চুপ করে তাকাতেই আলো চোখে পানি নিয়ে বের হয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।
.
.
.
আমি কি কাম কাজ কিছুই পারি না? এমন ভাবে বলার কি ছিলো আঁধারে! আমি শুধু চিন্তায় মগ্ন থাকায় হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো পাতিলটা।

হঠাৎ আনিশা এসে
‘ তা কি চিন্তায় মগ্ন ছিলি?

আনিশার কথা শোনে আলো চুপ হয়ে যায়।

‘ কি হলো বল কি চিন্তা করছিলি। ভাইয়া আমায় পাঠালো মলম দিয়ে তোর হাতে পায়ে লাগিয়ে দিতে। হাত পা নাকি পুড়ে ফেলেছিস।ভাইয়া আসেনি তুই নাকি রেগে গেছিস তাই।

আলো মনে মনে খুশি হয়েছে কিন্তু খুশি এক সাইড করে আবার মনে মনে বলছে

‘ এতো দরদ দেখানোর কি আছে! আমার এতো দরদ লাগে না। বকবে আবার দরদ দেখাবে কেন!!

আনিশা আলোকে ভাবতে দেখে

‘ এখানে বসে পড় আমি লাগিয়ে দিই মলম। আর বল কি নিয়ে ভাবছিস এতো?

‘ আসলে মামুনি কি যেন সিধান্তের কথা বলেছিলো সেটাই ভাবছিলাম কি নিয়ে।

‘ তোকেও বলেছে? আমাদেরও বললো সবাই যেন সন্ধ্যায় থাকি কি যেন বলবে সবাইকে।

এই বার আলোর সত্যিই কেমন যেন লাগছে সবাইকে যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই বড় বিষয় হবে। কিন্তু বিষয়টা কি!?? তার আর আঁধারের বিষয়ে নয়তো???……….

চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#আলো_আঁধার
#part_4
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.

ভাঙছে। ভীষণ ভাঙছে ভিতরে৷ ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সব ৷ কিন্তু আফসোস ভাঙচুরের আওয়াজ শুধু আলো ছাড়া আর কেউ শুনতে পাচ্ছে না, সে শুনতে পাচ্ছে না যার শোনার প্র‍য়োজন প্রখর। ভিতরে তীব্র ব্যথায় কিছু কাতরাচ্ছে তার আন্দাজ শুধু আলো ছাড়া আর কারো নেই।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেছে। সকালে চা চেয়েছিলো আঁধার। কিন্তু বেকুবির জন্য দিতে পারলো না। তাই নিজেকে নিজে হাজার খানেক গালি দিয়ে মনকে শান্ত করলো আলো। সকালে দিতে পারেনি তো কি হয়েছে এখন দিবে। এই ফাঁকে আঁধারকেও দেখা হয়ে যাবে। হঠাৎ হঠাৎ যে
আলোর কি হয়, ভীষণ ইচ্ছে হয় আঁধারকে দেখতে আর এই রোগ হয়েছে ভালোবেসে ফেলার পর থেকেই। আগে কখনো এমন হতো না। এখনো হঠাৎ আলোর খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে আঁধারকে। চা দিতে গিয়ে দেখেও আসবে মন ভরে। কিন্তু এখন চা নিয়ে গেলে কি ভাব্বে আঁধার? এই সময় কি কেউ চা খায়? এমন ডাফার কখনো দেখিনি এসব বলবে? বা তোমাকে এখন কে বলেছে চা নিয়ে আসতে? ধুর যা ইচ্ছে ভাবুক। এমনিতেও কম কথা শোনায় নাকি এখন আবার শোনালে মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে না।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আলো পা বাড়ালো আঁধারের রুমের দিকে। দরজায় নক করতেই আঁধার ভিতরে যেতে বললো। আঁধার কিছু করছে ল্যাপটপে। আলো আঁধারের সামনে চায়ের কাপ ধরতেই আঁধার কোন কথা না বলে কাপ নিয়ে নেয়। আলো ভীষণ অবাক হয় আঁধার কিছু না বলায়। দু’একটা কথা শুনিয়ে দিবে ভেবেছিলো আলো কিন্তু তা করেনি।

আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে

‘ তুমি কি ভাবে বুঝলে এখন আমার চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো? থ্যাংকস।

‘ আলো আঁধারের মুখে থ্যাংকস শব্দটা শোনে আনমনেই হেসে ফেলে। বোধ হয় একটু ভালো লাগা কাজ করছে৷

এই দিকে আঁধার জানতো আলো সকালে চা দিতে পারেনি তাই চা নিয়ে আসবেই তা ভেবে আনমনে হেসে উঠে। আলো চলে যেতে নিলেই আঁধার বসতে বলে। আঁধারের সামনে বসতে একটু অস্বস্তি অনুভব করলেও আলো বসে পড়ে আঁধারকে কাছ থেকে দেখার লোভে। প্রিয় মানুষ গুলোকে কাছ থেকে দেখার প্রলোভন কার না হয়। আলোরও তাই হয়েছে। প্রিয় মানুষ গুলোকে কাছ থেকে দেখার, ছোঁয়ার মতো সুন্দর অনুভুতি আর দৃশ্য দ্বিতীয় হতে পারে না।
প্রায় আধা ঘন্টা বসে বসে আঁধারকে দেখছে আলো। আঁধার কোন কথা বলছে না আলোর সাথে। আলোর হঠাৎ হুশ ফেরলো সে এখানে এই ভাবে বসে বসে কি করছে? কেউ দেখলে কি ভাববে? এমনিতেই তো কম কথা উঠেনি ওর উপর। এখন আবার কেউ এই ভাবে বসে থাকতে দেখলে নিশ্চিত কেলেংকারী হয়ে যাবে।

আলো বসা থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হতেই আঁধার আলোর হাত ধরে ফেলে।

আঁধার মুচকি হেসে
‘ এখানে বসো একটা কবিতা শোনায়। এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলাম হচ্ছিলো না। তোমাকে সামনে বসিয়ে লিখতেই কবিতা সম্পুর্ণ হলো।

আলো আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ কবিতা কবে থেকে লিখতে শুরু করলেন আবার? আমার জানামতে তো৷ আপনি লেখালিখি করেন না।

‘ ধুর আগে শোনো তো কবিতাটা।

আলো চুপ করে আবার আঁধারের সামনে বসে পড়ে। কবিতার কথা শোনে আলোও লোভ সামলাতে পারলো না।

আঁধার ল্যাপটপে মনযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলো

দেখো না প্রিয়া কতশত যুগ
তোমার জন্য অতিবাহিত করে দিয়েছি
শুধু তোমায় আপন করার লোভে,
আরো আগে হয়নি কেন দেখা
তাই জীবনর প্রতি রাগে ফেটে পড়ি ক্ষোভে।
কত সময় একাকি পাড় করে দিয়েছি
তোমায় নিয়ে দু’জন হবো বলে।
এতো অপেক্ষায় আর ক্লান্ত চেহারায়
হাত বুলিয়ে দিয়ে আগমন ঘটালে তোমার,
আমার জীবনে এক নতুন সম্ভ্রম নিয়ে
জড়িয়ে নিলে অজানা মায়া অনুভুতি দিয়ে।
যত স্মৃতি ছিলো বেদনায় নীল
তোমার কোমলতার রঙে হলো রঙিন।
আজীবনের জন্য কথা দিলে আমার অন্তরিন্দ্রিয় কারাগারে আমৃত্যু বন্দিনী
হয়ে থাকবে যেখানে অন্যের প্রবেশ নিষেধ।
এর চেয়েও বেশি তোমার কাছে কি চাইবো আর
এর অধিক তো কিছু চাইবার নেই আমার
সেই সাধ্য সত্যিই আমার আর নেই অভিমানী
শুধু এইটুকু কথা দিতে পারি
তুমি আজীবন থাকবে আমার হিয়ার সম্রাজ্ঞি
তোমায় বুঝিয়ে দিতে পারি পৃথিবীর সব দামী
জিনিস তোমার সামনে অতি তুচ্ছ নগন্য
হাকিকত এতো সুন্দর হতে পারে তোমার
স্পর্শ বুঝিয়েছে আমার কল্পনাকে
সারাদিন তোমার তারিফ করে আমার ঠোঁটে
জানি না শোনলে বলবে কি লোকে।
তোমাকে তকদিরে দিয়েছে রহমান
জানো? শুকরিয়া জ্ঞাপন করি হাজাবার।
তোমাকে অবলম্বন করে বাকি জীবন
কাটিয়ে দিতেই আমাদের এই সুন্দর বন্ধন।

আলোর চোখে ছলছল করছে পানি। নীরবে পথ তৈরি করে বেয়ে চলেছে পানি সেদিকে আলোর খেয়াল নেই।

আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। মেয়েটা কান্না করছে কিন্তু কেন কান্না করছে?
বাহ সুন্দর লাগছে কিন্তু।

আঁধার আলোর সামনে চেয়ার টেনে বসে চেয়ারের মাথাত থুতনি রেখে

‘ তুমি কি সত্যিই ছিঁচকাঁদুনে

আঁধারের কথায় আলো উপর নিচে তাকিয়ে দেখে সে কান্না করে ফেলেছে অলরেডি।

আলো তোতলাতে তোতলাতে
‘ ক কই আমি ছিঁচকাঁদুনে হতে যাবো কেন?

‘ এই যে আবারো কান্না করছো।
আচ্ছা বলো কবিতাটা কেমন হয়েছে। আসলে কবিতাটা লিখেছি বিয়ের দিন বা রিসিপশনে তিন্নিকে শোনাবো সবার সামনে। ও কবিতা অনেক ভালোবাসে । কখনো লেখা হয়নি ওর জন্য কিন্তু বিয়ে বলে কথা নিজের লেখা একটা কবিতা ওকে উপহার দেওয়া যেতেই পারে। কেমন হয়েছে বলো।

আলো নির্বাক হয়ে বসে আছে আঁধারের কথায়। প্রতিটি শব্দ তাহলে তিন্নির জন্য? ভাবতেই ভিতরে নড়াচড়া করে উঠলো কিছু৷ দলবেঁধে গলায় কিছু জড় হলো বুঝতে পারছে।

‘ কি হলো আলো কেমন হয়েছে বললে না যে

অনেক সময় নিয়ে আলো
‘ খুব সুন্দর।

মা মামুনি আমায় ডাকছে আসি এখন।
অসাড় শরীর টেনে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আলো। এমনই তো হবার কথা তাহলে খারাপ লাগছে কেন? কান্না কেন আসছে এই ভাবে অবাধ্য হয়ে!?

সারা বিকেল আলো আর ঘর থেকে বের হলো না। সন্ধ্যায় কেউ আলোর ঘরে এসে লাইট জ্বালায়। ফলে লাইটের আলো চোখে পড়তেই আলো চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আনিশা।

আনিশা আলোর কাছে এসে বসে

‘ সন্ধ্যায় এই ভাবে লাইট অফ করে শুয়ে আছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে।

আলো উঠে বসতে বসতে
‘ না তেমন কিছু না এমনিতেই শুয়ে ছিলাম।

‘ আচ্ছা চল মা ডাকছে তোকে। সবাই নিচে বসে তোর জন্য অপেক্ষা করছে তুই নিচে গেলেই মা কোন সিধান্তের কথা বলছিলো তা বলবে।

আলোর কেমন যেন একটা লাগছে। কি হতে পারে সেই সিধান্ত তা নিয়ে ভাবছে।

‘ কি হলো আলো চল।

আলো আর কথা না বাড়িয়ে ওড়নাটা নিয়ে আনিশার পিছু পিছু পা বাড়ায়।

নিচে যেতেই মনে হলো সম্পুর্ণ পরিবার এক হলো। সবাই আছে এখানে।

মমতা জাহিদ আলোর দিকে তাকিয়ে

‘ তোর শরীর ঠিক আছে আলো?

‘ হ্যা মামুনি ঠিক আছে।

আঁধারের আব্বু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে
‘তাহলে বলো এইবার কি বলতে চাইছো।

মমতা জাহিদ ফায়েজের মায়ের দিকে তাকিয়ে
‘ দেখ শান্তা আমি তোকে কখনো আমার জা এর মতো দেখিনি সব সময় আমার বোনের মতোই দেখেছি।

ফায়েজ মা মুচকি হেসে
‘ জানি আপা। কিন্তু কি হয়েছে সেটা বলুন

‘ ফায়েজের আব্বু এখন দেশে নেই তুই এখন ফায়েজের গার্ডিয়ান। আর আমি কিন্তু ফায়েজকে নিজের ছেলের মতোই দেখি তুইও জানিস। তাই আমি আলোর জন্য ফায়েজকে পছন্দ করেছি। আমি চাই আগামীকাল আঁধার আর তিন্নির হলুদে আলো আর ফায়েজেরও হলুদ হয়ে যাক।

মমতা জাহিদের কথা শোনে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে উনার দিকে। এই দিকে আলোর দুনিয়ায় মনে হচ্ছে ঝড় উঠেছে এই কথা শোনে।

বুকের ব্যথার সাথে মাথার ব্যথাটাও বেড়েছে
মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে আলোকে বেশি ব্যথা দিতে পারে দেখার জন্য । চিনচিনে ঘাম ঝড়ে পড়ছে আলোর……..

চলবে………….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here