আলো_আঁধার part_7

আলো_আঁধার
part_7
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.

কাউকে মন থেকে চাইলে নাকি পুরো দুনিয়া ষড়যন্ত্র রচনা করে একে অপরকে মিলিয়ে দিতে। তবে কি তাই হয়েছে? রাতভোর কান্নার আওয়াজ কি আকাশ শুনেছে? হন্য হয়ে বাতাসে কি তার খবর ছড়িয়ে পড়েছে ! যে পথে অশ্রুর ঢল নামতো সে পথের ধূলোরা কি মিছিলে নেমেছে ?

রচনার উপসংহার তবে কি আলো আর আঁধারের হবে? আলোর মাথা ঝিমঝিম করছে। ব্যস্ত চোখ দুটো আঁধারকে দেখছে অবিরাম।

আঁধারের কানের পাশ দিয়ে গাল বেয়ে চিনচিনে ঘাম পড়ছে। চিঠি! কিন্তু চিঠি কেন? মানুষ কখন চিঠি রেখে যায়? আঁধারের ভয় হচ্ছে। সেই ভয় কিসের নাম দিতে পারছে না এই মুহূর্তে।

মমতা জাহিদ আঁধারের কাধে হাত দিয়ে

‘ কি হলো আঁধার কি ভাবছিস? চিঠিটা খোল। কি আছে এতে দেখ। তিন্নি চিঠি দিয়ে কোথায় যাবে? তোদের মাঝে কি ঝগড়া হয়েছিলো কোন?

আঁধার এই মুহুর্তে কথা বলতে পারছে না তার শরীর অবশ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু তিন্নি কেন করেছে এমনটা? তিন্নির আম্মু আঁধারের কাছে গিয়ে
‘ বাবা খোলে দেখো কি আছে এতে না হলে আমরা কি ভাবে বুঝবো কি হয়েছে ওর, কেন করেছে এমন, আর সে এখন কোথায় আছে। আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে ( বলেই কান্না করে দেয় তিনি)

আঁধার মমতা জাহিদের দিকে একবার তাকিয়ে
চিঠিটা ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে।

মময়া জাহিদ আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ বাবা জোরে পড় যাতে আমরা সবাই শুনতে পারি।

আঁধার ভাবলেশহীন ভাবে মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে তিন্নির নিখোঁজ হবার কারণ উম্মোচন করতে পড়া শুরু করে চিঠি

” তোমাকে ভালোবাসার ঠিক পর মুহুর্ত থেকে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন সাজানো শুরু করেছি। আবেগ বেয়ে অনুভূতির যেই স্রোত বয়ে চলে তার নাম দিতেই হয়তো আমরা ভালোবাসি বলি। আমি জানি চিঠিটা পড়ার পর তোমার খুব রাগ হবে আমার উপর। কিন্তু আমার এটা করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। সময় স্বল্পতার জন্য এমন করতে বাধ্য হয়েছি কারন এখন বুঝানোর কোন সময় নেই।
ভালোবাসা নামটা অনেক বিস্তৃত কারো কারো কাছে ভালোবাসা মানে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝে। ঠিক আমিও তেমন, কেউ যদি আমায় বলে ভালোবাসা মানে কি? আমি চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে দিবো ভালোবাসা মানে তুমি। তোমার নিঃশ্বাস আমার ভালোবাসা। তোমার হাসি কান্না সবই আমার ভালোবাসা। কেউ যখন সত্যিই ভালোবাসে তখন সে ওই ভালোবাসার মানুষটার তীব্র ভালো থাকা ছাড়া সত্যিই আর কিছু কামনা করে না। আর কেউ যদি করে তাহলে বুঝে নিতে হবে সেটা ভালোবাসা না। আমি তোমায় ভালোবাসি আঁধার তাই মনে প্রানে চাই তুমি ভীষণ রকম ভালো থাকো।
গত রাতে আমি আমি ভুলবশত তোমার আর আলোর সব কথপোকথন শুনে ফেলেছি। তুমি আলোকে নিয়ে ছাদে আসার সময় আমি দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি তোমাদের ডাক দিতে ছাদের গেটের কাছে আসতেই শুনেছি সব। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত শোনাটা হয়তো খুব বেশিই জরুরি ছিলো। আলো তোমায় ভীষণ ভালোবাসে আঁধার।

আঁধার ঠিক এতোটুকু পড়েই থেমে যায়। সেই সাথে আলো সহ উপস্থিত সবাই চমকে যায়। ব্যপারটা বুঝতেই হয়তো সবাই চুপ করে আছে। বাকিটা শোনার জন্য অধির আগ্রহের সাথে দাঁড়িয়ে আছে । আলোর দিকে আড়চোখে বার বার দেখছে সবাই।

মমতা জাহিদ আঁধারের পিঠে হাত রেখে
‘ তারপর পড় বাবা।

আঁধার মাথা নিচু করে
‘ আমি আর পড়তে পারবো না মা।

মমতা জাহিদ আঁধারকে ধরে জোরে শ্বাস নিয়ে
‘ বাকিটা পড়ে ফেল বাবা

আঁধার চুপ থেকে আবার পড়া শুরু করলো

” তোমাকে পাওয়ার সুখ আমায় যতটা আনন্দ দিতো তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিতো যদি তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো জানার পরও তোমায় আমি বিয়ে করতাম। এখন হয়তো ভাবছো তুমি তো আলোকে কখনো বলোনি যে তুমি তাকে ভালোবাসো। তাহলে কি ভাবে আমি জানলাম তুমি তাকে ভালোবাসো। আঁধার তুমি যখন আমার সাথে থাকতে তখন তোমার আমার কথা ছাড়া তুমি সব চেয়ে বেশি আলোর কথা বলতে। সারাক্ষণ আলো আলো করতে। আমি তখন কিছু মনে করতাম না ভাবতাম বন্ধু তাই হয়তো ওর কথা বেশি বলো। কিন্তু তুমি নিজেও জানো না তুমি আলোকে ভালোবাসো। ভীষণ ভালোবাসো। ওর প্রতি তোমার কেয়ার কখনো একটা বন্ধুর প্রতি হতে পারেনা। ওইদিন তো তুমি ওকে রেখে বিয়ের শপিংও করতে যেতে চাচ্ছিলে না। আঁধার তুমি নিজের মনের ভিতরে একবার ঘুরে এসো সব জেনে যাবে। আর আলোতো মুখ ফুটে বলেই ফেলেছে সে তোমাকে ভালোবাসে অবশ্য এর জন্য সে দায়ী নয়। অভিনয় করতে করতে কখন মানুষ ভালোবেসে ফেলে তা কেউ জানে না আলোকে আমি একদিন বলেছিলাম কখনো সু্যোগ হলে অনেক গুন বেশি ফিরিয়ে দেবো। এটাই হয়তো সেই সুযোগ আঁধার। একটা গল্পে দু’জন নায়িকা থাকলে জরুরি না একজনের ভিলেন হতে হবে। দু’জনই ভালো হতে পারে আঁধার। এই গল্পের নায়িকা আলো। আমি চাই তোমরা ভালো থাকো ভীষণ। ভীষণ ভালো থাকো তোমরা আঁধার।

ইতি
তিন্নি।

আলো কান্না করছে এসব কি হলো? এমন তো হবার কথা ছিলো না। আঁধার চুপ হয়ে বসে পড়ে নিচে। কিছু বলার শব্দ এখন তার কাছে নেই। শব্দেরা অভিমান করেছে তার সাথে, না বলা কতো শব্দ না বুঝার জন্য । সেই সাথে এখানে বিরাজ করছে পিনপতন নীরবতা। কি হবে এখন? সব এলোমেলো অগোছালো হয়ে গেছে। সবাই বুঝতে পারছে না এখন কি হবে। ফায়েজও চুপ করে বসে আছে। আঁধারের চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।

তিন্নির আব্বু আম্মু কান্না করছে। এই দিকে কাজী চলে এসেছে বিয়ে পড়ানোর জন্য। আঁধারের আব্বু কাজীর দিকে অগ্রসর হয়ে
‘ বিয়ে হবে না কাজী সাহেব। একটু সমস্যা হয়েছে। আপনাকে কষ্ট করানোর জন্য দুঃখিত।

কাজী চলে যেতে নিলেই
মমতা জাহিদ সবার সামনে গলা উঁচিয়ে
‘ বিয়ে হবে কাজী সাহেব। আর দুটো বিয়েই হবে।

আলো, আঁধার সহ উপস্থিত সবাই মমতা জাহিদের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। কি বলছে এসব এখন তিনি? আঁধারের আব্বু মমতা জাহিদের দিকে তাকিয়ে

‘ কি বলছো এইসব এখন মমতা? কি ভাবে হবে বিয়ে?

মমতা জাহিদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে
‘ এইবার সত্যি সত্যি বিয়ে হবে আলো আর আঁধারের।

আলো চমকে যায় মমতা জাহিদের কথায়,
কি বলছে মামুনি। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে ভিতরের ধুকপুক।

মমতা জাহিদ আঁধারের আব্বুর দিকে তাকিয়ে
‘ হ্যা আলো আর আঁধারের বিয়ে হবে।

আঁধার মাথা নিচু করে বসে আছে স্তব্ধ হয়ে।

আঁধারের আব্বু চোয়াল শক্ত করে রাগান্বিত স্বরে
‘ তাহলে ফায়েজ? ফায়েজ কি করেছে ওকে কেন এসবে টেনেছো?

‘ ফায়েজেরও আজকে এই মুহুর্তেই বিয়ে হবে।

‘ কিন্তু কার সাথে হবে? এখন পাত্রী কোথায় পাবে?

ফায়েজ মিটমিট করে তাকায় সেই পরিচিত মুখের দিকে। রাইসাও ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে ফায়েজের দিকে।

মমতা জাহিদ রাইসার দিকে অগ্রসর হয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে

‘ রাইসা মা তুমি কি করবে বিয়ে ফায়েজকে??

রাইসা চোখ বড় বড় করে তাকায় মমতা জাহিদের দিকে……
.
.
.

সব ঝামেলা কাটিয়ে বিয়ে হয়ে যায় আলো আর আঁধারের। ফায়েজ আর রাইসার।
রাত প্রায় ১টা বেজে যাচ্ছে আঁধার বসে আছে ড্রয়িংরুমের বেল্কুনির চেয়ারে। তিন্নির ফোনে ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ। মমতা জাহিদ আঁধারকে দেখতে পেয়ে

‘ আঁধার? এখনো যাসনি রুমে?

আঁধার দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘ যাচ্ছি মা।

‘ আলো একা একা বসে আছে আর তুই এখানে বসে কি করছিস। যা রুমে যা ।

আঁধার কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।

মমতা জাহিদ আঁধার চলে যাওয়ার পর হাতে চা নিয়ে চেয়ারে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মনে মনে বলছে

‘ আই’এম সরি আঁধার । আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলো না………
.
.
.
চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here