আলো_আঁধার
part_8
#writer_Tahsina_Islam_Orsha.
শরতের রাত্রি চাঁদের আলো ঘরের কোনায় কোনায় বিরাজ করছে। আকাশে পেজা তুলোর মতো মেঘ। স্নিগ্ধতায় ভরা কোমলতার এক অপূর্ব রূপ মিশ্রণ। কামিনী ফুটেছে, সন্ধ্যা মালতী ও ঘ্রাণে ভরে গেছে পুরো বাড়ি।
ভরা পূর্ণিমায় যখন আপন মানুষ আরো আপন হয়ে পাশে থাকে তখন চাঁদের আলো আরো উজ্জ্বল মনে হয়। আহ্লাদ, প্রমোদে ভরে যায় মন। ছুটে যেতে ইচ্ছে হয় যেদিকে চোখ যায় এই ভরসায় যে আপন মানুষটা তো আগলেই নেবে। কিন্তু অক্ষত থেকেও যখন সব ভেঙে যায় তখন কি মেনে নেওয়া যায়? আঁধার কি মেনে নেবে আলোকে? আঁধার কি ভালোবাসে আলোকে? নাকি ভালোবাসতে পারবে?
আলোর চোখের বারিধারা বয়ে এনেছে স্বইচ্ছায় অতীব জঘন্য মাথা ব্যথা৷ তাই মাথাটা চেপে ধরেছে বালিশে এক কোনায়। তবুও কমছে না মাথা ব্যথা।
সহসা দরজা খোলার শব্দ ঠিক হয়ে বসে আলো। দরজা বাম হাত দিয়ে খুলে সামনে এগিয়ে আসে আঁধার। শেরওয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে আলোকে লক্ষ্য করে বলে
‘ তুমি কি ভেবেছো এই ভাবে ভালোবাসা পেয়ে যাবে? এই ভাবে ভালোবাসা পাওয়া যায় আলো? পাওয়া যায় না। তুমি সারাজীবন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাতরাবে কিন্তু ভালোবাসা পাবে না। যেমনটা আমি পায়নি। তিন্নিকে তো আমি অগাধ ভালোবাসতাম। তোমার জন্য পরিনতি পেলো না আমার ভালোবাসা। তেমনই তোমার ভালোবাসাও পরিনতি পাবে না আলো। কখনো পাবে না আমার ভালোবাসা তুমি ।
আলো কান্না করছে আঁধারের কথা শোনে। ওর কি দোষ ছিলো? ও যদি জানতো তিন্নি সব শুনছে তাহলে কখনোই কিছু বলতো না। বুঝতেই পারেনি কখন আঁধারকে বলে দিয়েছে সব।
আলো বিছানা ছেড়ে উঠে আঁধারের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে
‘ বিশ্বাস করুন আমি জেনে কিছু করিনি। আমি জানতাম না এমন কিছু হবে। আপনি চাইলে আমি আপনাকে মুক্তি দেবো তিন্নিকে খুঁজে এনে দেবো আপনার কাছে তবু আমায় ভুল বুঝবেন না দয়া করে।
আঁধার এক ঝাটকায় আলোর হাত ছাড়িয়ে
‘ নাটক করো না আলো। আর ছোঁবে না তুমি আমায়। তুমি সব জানতে। তুমি তো জানতে আমি ভালোবাসি তিন্নিকে তারপরও? তারপরও কেন আলো?
আলো কান্না করে
‘ আমি তো করিনি জেনে কিছু আঁধার কেন করছেন আমার সাথে এমন? আমি তো জানি আপনি ভালোবাসুন তিন্নিকে।ওকে নিয়ে ভালো থাকুন আমি তো তাই চাইতাম।
আঁধার চিৎকার দিয়ে উঠে আলোর সাথে
‘ জাস্ট শাট আপ।
আকস্মিক আলোর চোখ খুলে যায় তাহলে কি আলো স্বপ্ন দেখছিলো? প্রচুর কান্না আর মাথা ব্যথায় অসহ্য হয়ে বালিশে মাথা লাগাতেই আলোর চোখ লেগে এসেছিলো আর এতোক্ষণ ধরে তাহলে আলো স্বপ্ন দেখছিলো! আলোর শরীর ভিজে গিয়েছে ঘেমে। ভয় আর চিন্তা দুটোই হচ্ছে এখন। যা স্বপ্ন দেখেছে যদি আঁধার তাই ভাবে তাই করে তখন? তখন আলো কি করবে? কিবা করার থাকবে! সব দোষ তো আলোরই। সে যদি না আসতো ওদের দুজনের মাঝে এমন হতোই না। কেন ভালোবেসে ফেললো সে আঁধারকে। আলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১ বেজে ৩০ মিনিট কিন্তু আঁধার আসেনি এখনো, তাহলে কি আঁধার আসবে না? আর কোথায় বা গিয়েছে উনি?
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ হয়। আলোর চোখ জোড়া দরজার দিকে যায় আঁধার এসেছে ভেবে। আঁধার দরজা আস্তে করে লাগিয়ে রুমে প্রবেশ করে। আলো বসে আছে এখনো বিয়ের সাজে। এতো ভারি গহনা নিয়ে বসে থাকার কোন মানে হয়না। আঁধার তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এদিকে আলো অবাক হয় আঁধার আলোকে কিছুই বলেনি নিঃশব্দে চলে গেছে৷ আঁধার খুব রাগী নয় । শান্ত শিষ্ট একটা মানুষ। অযথা কথা, রাগ করো সাথেই করে না সে ।
প্রতিটি কথা প্রশ্নবোধক চিহ্নও ব্যবহার করে হিসেব করে৷ কিন্তু যখন কারো সাথে রাগ করে সেই রাগের মাত্রা হয় প্রকান্ড তীব্র। তখন হয়তো যে কেউই ভয় পাবে আঁধারকে দেখে।
আলো কিছুই বুঝতে পারছে না কি হবে। আলোকে কি বের করে দিবে আঁধার? নাকি বলবে আমি কখনো তোমায় ভালোবাসবো না আলো। আমি তিন্নিকেই ভালোবাসি আর বাসবো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আঁধার বের হয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।
এতো রাতে উনি গোসল করেছে ময়লা ধুতে নাকি কষ্ট, গ্লানি বুঝার চেষ্টা করছে আলো। আঁধারের দিকে তাকাচ্ছে বার বার।
আঁধার এখনো আলোকে এই ভাবে বসে থাকতে দেখে বিদ্বিষ্ট হয়ে
‘ যতদুর জানি এই গুলো খুবই ভারী আর অস্বস্তিকর। এই গুলো খুলে ফ্রেশ হয়ে নাও।
আলো কিছুটা অবাক হয় কিন্তু তা চেহারায় ফুটে উঠতে না দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কিছু কি বলবে আঁধারকে? কিছু বললে আধার কেমন রিয়েকশন দিবে? খুব রাগারাগি করবে? আলো চুপ চাপ টেবিলের উপর রাখা একটা ড্রেস নিয়ে
ফ্রেশ হতে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর আলো বের হয়ে দেখে আঁধার সোফায় বসে বসে ল্যাপটপ টিপছে। তিন্নিকে খোঁজার চেষ্টা করছে? হবে হয়তো। তিন্নিকে আঁধার অনেক ভালোবাসে আর তা উপলব্ধি হয় যখন তিন্নিকে পাওয়ার জন্য আলোকে নাটক করতে বলে মিথ্যা বলতে বলে নিজের ফেমিলিকে তখনি বুঝতে পেরেছিলো আলো । আঁধার নিজের ফেমিলিকে অনেক ভালোবাসে আর সেই ফেমিলিকে যখন সে মিথ্যা বলে বুঝতে হবে সেই মানুষটিকে সত্যিই আঁধার অনেক ভালোবাসে।
.
.
.
আলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁধার প্রসন্ন মুখে
‘ দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঘুমিয়ে যাও।
আলো একটু অবাক হয়ে
‘ আ আপনি ঘুমাবেন না?
আঁধার কপালে ভাজ তুলে।
‘ তুমি বেডে শুয়ে পড় আমার কাজ আছে শেষ করে এই খানেই শুয়ে পড়বো।
আলোর মুখে কষ্টের চাপ ভেসে উঠে। তা আঁধার খেয়াল করেনি। আবার চোখ দেয় ল্যাপটপে। আলোর চোখে পানি এসে যায় অজান্তে, আঁধারের অদেখা সেই পানি। আচ্ছা আলোর চোখে এখন পানি দেখলে আঁধার কি করতো? আলো নীরবে শব্দহীন ভাবে এগিয়ে যায় বেডের কাছে। সাজানো বেডে আজ তিন্নির থাকার কথা ছিলো। আচ্ছা এটাই তবে নিয়তি? নিয়তির বিধানে এমন ভাবে কেন লেখা থাকে সব!? সহজ ভাবে কেন দেয়না? চাইলেই কি পারতো না সহজ ভাবে দিতে? যদি এমনই লেখা ছিলো বিধানে তবে এতো কিছুর কি দরকার ছিলো?।
.
.
.
আলো সাজানো ফুল গুলো জড় করে নিচে ফ্লোরের এক পাশে রেখে সে বেডের এক সাইডে শুয়ে পড়ে। এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। অনেক্ষণ শুয়ে থাকার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪ টা বাজে। তারপর আধারের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁধার ঘুমিয়ে গেছে জড়সড় হয়ে। সোফায় তার শরীর ভালোভাবে আঁটেনি। আলো আফসোস করছে এটা কেন বলেনি যে সে সোফায় শুবে।
নিঃশব্দে পা বাড়ায় আঁধারে দিকে আলো। নিজেকে আটকানোর চেষ্টা সে করেনি। হয়তো সে জানেইনা সে উঠে আঁধারের কাছে যাচ্ছে। এই মায়াভরা মুখে বিষন্নতায় ভরপুর আজ। আলোর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আঁধারকে দেখে। সব কিছুর জন্যই দায়ী । আলো আঁধারের পা দুটো ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। দু’হাতে আলতো করে পায়ে ধরে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় পায়ের উপরিভাগে……….
.
.
.
চলবে……….
বিঃদ্র:- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্বটা একটু ছোট আর এলোমেলো হয়েছে তার জন্য দুঃখিত। গুছিয়ে লিখতে পারিনি অসুস্থতার জন্য। সবাই ভালো থাকুন।