আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ২১

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২১

দুলাভাই আমার সাথে কথা বলা শেষ করে আব্বার সাথে কথা বলতে গেলেন। এক দেড় ঘন্টার মতো কথা বললেন ওনারা। কী এত কথা বলেছেন আমি জানি না। পরে যখন দুলাভাই রুম থেকে বের হলেন তখন আমাকে বললেন,

— আমার কাজ আমি করেছি। এখন আমার দায়িত্ব শেষ বাকি সব এবার তোমার কাজ।

আমি কিছু বলার আগেই আম্মা চলে আসলেন। আমার আর কিছুই বলা হলো না দুলাভাইকে। রাতে দুলাভাই আর অমালিকা আপা খেয়েদেয়ে বাড়ি যাবেন। আম্মা আব্বা আজকে রাতটা এই বাসায় থেকে যেতে বলেছিল৷ কিন্তু, আপা বললেন দুলাভাইয়ের না কি অফিস আছে। সবার সাথে আমিও খেতে বসে গেলাম। আম্মা খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আমি আর অমালিকা আপা খাচ্ছি চুপচাপ। আব্বা আর দুলাভাই নানা রকম বিষয়ে গল্প করছেন।

— মেহুল।

আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। আব্বা যখন হঠাৎ করে আমার নাম ধরে ডেলে উঠলেন। আমি একটু চমকে উঠে বললাম,

— জি আব্বা।

— তোমাকে একটা কথা বলে রাখা ভালো। একটা ভালো ছেলের সন্ধান পেয়েছি। এখন তাদেরকে কালকে আসতে বলেছি। ছেলে যদি পছন্দ হয়ে তবে কালকেই তোমাকে তারা আংটি পড়িয়ে দিয়ে যাবে। আর নাহলে তো নেই।

— জি আব্বা।

আমি কোনো রকমে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার রুমে চলে এলাম। আমার হাত পা ভয়ানক ভাবে কাঁপছে। ছেলেটা যদি আমার বর্ণ হয় তাহলে ভালো। আর যদি সে বর্ণ না হয় তবে আমার হাতে আর কিছুই থাকলো না।

আমি আর রাতের অপেক্ষা করলাম না
বর্ণকে কল দিলাম। যা হওয়ার হবে। কেউ যদি শুনে নেয় তাহলে শুনুক। আমি একটা মানুষকে ভালোবাসি। এতে কার কী বলার থাকতে পারে?

— হ্যালো মেহুলিকা।

— বর্ণ, আপনি দুলাভাইকে সবকিছু বলার পর উনি কী বলেছেন।

— উনি কিছুই বলেননি। যা বলার তোমার আব্বু বলেছে।

— কী বলেছেন আব্বা?

— কালকে তোমাকে আংটি পড়িয়ে যেতে বলেছেন!

— কিহ! সত্যি?

— আমি মিথ্যা বলি না।

— আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বর্ণ। আসলেই এটা সত্যি? আমার মনে হচ্ছে আমি এখন ও সপ্নের দুনিয়ায় আঁটকে আছি।

— তোমার আব্বুর সাথে যখন কথা হলো আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যখন বললাম আমার তোমাকে পছন্দ এবং আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তখন আংকেল আমাকে সরাসরি না করে দিয়েছিলেন।

— তারপর কী হলো?

— তারপর আমি তোমার আব্বুকে বললাম ” আমি চাইলে আপনার মেয়েকে আপনার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি সবসময়ই চেয়েছি আপনি নিজে আমার হাতে আপনার মেয়েকে তুলে দেবেন। এখন যদি আপনি না চান তাহলে আমার আর কী বলার থাকতে পারে? যত যাইহোক মেয়েতো আপনার।

— আপনি এতগুলো কথা আব্বাকে বলেছেন? এত সাহসের উদয় হলো কোথা থেকে?

— একটা মানুষ মাঝে সাহসের উদয় হয় দুটি কারণে। এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরলে। আর দুই প্রেমে পরলে। আমি প্রেমে পড়েছি একটা মানুষকে ভালোবেসেছি। অতএব এতটুকু সাহস তো আমার থাকাই উচিত।

— বাদ দিন এইসব কথা। তারপরে কী হয়েছে সেটা বলুন।

— এরপর আমার শশুর তোমার শশুরকে ফোনটা দিতে বললেন। আমি দিলাম এরপর যা করার ওনারাই করেছে।

— সব বাদ দিয়ে কালকেই আংটি পরাতে হবে?

— আমার শশুর সাহেব বলেছেন সামনাসামনি আগে আমাদের দেখা হোক। তারপর তোমার মত থাকলে আংটি পরিয়ে রেখে যাওয়া হবে। তুমি জানো আমাদের বাসায় একটু আগে আংটির ডিজাইন নিয়ে গবেষণা চলছিল৷ আমি তো বসে বসে শুনছিলাম সব। জানো আমার না একটা বিয়ে বিয়ে ফিলিং হচ্ছে।

— বিয়ে বিয়ে ফিলিং কীভাবে হয়?

— তোমার ও হবে কালকে আংটি পরার পর। পরে দেখবো তুমিও মুঝে সাজানকে ঘার জানা হ্যাঁ গানে টিকটক করছো।

— ইয়াক! এইসব আজগুবি জিনিস ভালো লাগে না আমার। কী টিকটক ফিকটক নামের আজগুবি জিনিস।

–কালকে শাড়ি পড়ে অপেক্ষা করো আমার জন্য। আমি কিন্তু আসবো।

–আমি জানি আপনি আসবেন। আপনি হলেন বেহায়া কিছিমের মানুষ। বললেও আসবেন না বললেও আসবেন। দেখা যাবে বিয়ের ডালা পাঠানোর দিনও আপনি এসে বসে থাকবেন।

— হুহ, প্রেমিক মানুষ একটু বেহায়া না হলে চলে না কি? বেহায়া হয়েছি বলেই তোমাকে পেয়েছি নাহলে পেতাম না। বেহায়া না হলে কখনো বলতেও পারতাম না আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসা পেতে গেলে যদি একটু বেহায়া হতে হয়; তাহলে হলাম বেহায়া।

— আপনার মাথা পাগল হয়ে গেছে এই বিয়ে বিয়ে করতে করতে। রাখলাম আমি ফোন।

ফোন রেখেই আমি চুপচাপ বিছানার ওপরে বসে পড়লাম। আজকালকার ছেলেরা প্রেম করবে কিন্তু সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। এইদিক থেকে বর্ণ সেরা। বর্ণ প্রথম থেকেই শুধু বিয়ে বিয়ে করতো। আমি মুখে এটা সেটা বলে বর্ণকে চুপ করালেও। বর্ণের এই স্বভাবটা আমার বেশ লাগতো। আমার বর্ণ সবার চেয়ে আলাদা। আলাদা বলেই তো আমি পেয়েছি। নাহলে পেতাম না কি?

পরেরদিন সন্ধ্যা বেলা বর্ণদের আমাদের বাড়িতে আগমন। বর্ণের বড় দুইবোন। বর্ণের দুলাভাই, বর্ণের আব্বু এবং আম্মু এসেছেন। বর্ণের আব্বু এবং আম্মুকে সামনাসামনি দেখলে ও আমি বর্ণের বোনদের কখনো সামনাসামনি দেখিনি। ছবিতে দেখেছিলাম দুই একবার। কিন্তু সামনাসামনি ভাবে বলতে গেলে এটাই প্রথম দেখা। বর্ণের দু’জন বোনই মাশাল্লাহ সুন্দর দেখতে। বর্ণের চেহারার সাথে মিল খুব। দেখে সহজেই কে বলে দিতে পারবে এটা যে বর্ণের বোন। সেই দিক থেকে বলতে গেলে আমার আর অমালিকা আপার মধ্যে তেমন মিলই নেই। আমাদের দুজনের চেহারা দু’রকম। গায়ের রং ও আলাদা।

বর্ণের আব্বু আম্মু এবং বোনেরা আব্বা আম্মার সাথে কথা বলছেন। বর্ণ মাঝে মধ্যে খুব গভীর মনোযোগে কথা শুনছে আবার মাঝে মধ্যে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। পারেও বটে এই ছেলেটা।

কথা বলাবলির এক পর্যায়ে আমাকে আর বর্ণকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য আমার রুমে পাঠানো হলো। বর্ণ আমার রুমে ঢুকেই বারান্দায় চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে যখন বললাম,

— কী করছেন আপনি? রুমে না বসে বারান্দায় কেউ বসে?

— দেখছিলাম এখান থেকে আমার রুমটা কতটুকু দেখা যায়।

— হায় আল্লাহ্ আর কত কিছু যে দেখতে হবে আমার।

— আরেকটা চেয়ার আনো তো। আমরা দু’জনে এখানে বসে গল্প করি চলো।

— আপনি করুন একা একা গল্প। রুমের বাইরে এতগুলো মানুষ বসে আছে। আর উনি এখানে বসে গল্প করবেন। কী শখ ওনার!

— তুমি দিন দিন ঝগরুটে হয়ে যাচ্ছো মেহুলিকা।

— ভালো কথা বললেই আমি ঝগরুটে।

— ও মেহুলিকা মেহুলিকা গো

— কী হলো আবার?

— একটু পরে তোমার এই আঙুলে টুস করে আংটি পড়াবো৷ এরপর তোমাকে বিয়ে করবো। আমাদের একটা সংসার হবে। তুমি ভাবতে পারছো ব্যাপারটা? সেদিন মাত্র আমাদের দেখা হলো। আজ আমাদের সম্পর্কটা বিয়ে অবধি গড়াচ্ছে। তুমি একটা বার চিন্তা করে দেখো। কী অবাক করার মতো ব্যাপার না? কীভাবে কয়েকটা বছর কেটে গেল। কিছুদিন পরে আমাদের বিয়ে। আমার মনের ভেতরের অনুভূতি গুলো যদি তোমাকে খুলে দেখাতে পারতাম। তাহলে বুঝতে আমি কতটা খুশি। আমাদের এই ভালোবাসার গল্পটা আসলেই এবার সুন্দর একটা দিকে মোড় নিলো। এতদিন খুব চিন্তায় ছিলাম না জানি কী হয় সামনে। আজকের পর এই দুশ্চিন্তা আর থাকবে না। তাই না মেহুলিকা?

— হুম, আমিও ভেবেছিলাম হয়তো ওখানেই সবকিছুর সমাপ্তি। কিন্তু, আস্তে আস্তে যে আমাদের সম্পর্কটা এভাবে পূর্নতা পাবে। আমিও ভাবিনি কখনো।

— হুম,

— এবার বাইরে চলুন;অপেক্ষা করছে সবাই।

— হুম চলো।

রুম থেকে বের হয়ে আমরা আবার আগের মতো জায়গায় গিয়ে বসলাম৷ পরে আমাদের জিজ্ঞেস করা হলো কোনো অমত আছে কি না। বর্ণ না বলে আমার দিকে তাকালেন। আমিও না বলে দিলাম। এরপর বর্ণের দুলাভাই ওনার পকেট থেকে; একটা আংটির বক্স বের করে বর্ণের হাতে দিলেন। বর্ণ আংটির বক্স থেকে আংটি বের করে আমার হাতে পড়িয়ে দিলেন। অবশেষে আমিও এনগেজড হয়ে গেলাম।

এরপর বিয়ের কথাবার্তা চললো অনেকটা সময়। কীভাবে কী আয়োজন করা হবে সেই সমস্ত কথা চললো। ওইদিন এক বসায় বিয়ের ডেট ও ঠিক করে ফেলা হলো। আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করা হলো বর্ণের কানাডা চলে যাওয়ার আট দিন আগে। বর্ণ আগে কানাডা যাবে তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। বিয়ের ডেট আরো আগেই ঠিক করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আয়োজন করতে সময় লাগবে। কারণ, বর্ণ আর আমি দু’জনেই পরিবারের ছোট সন্তান। আমাদের পরে বিয়ের সিরিয়ালে আর কেউ থাকবে না। সেই হিসেবে বিয়েটা খুব ধুমধামের সহিত করা হবে।

চলবে….
দুলাভাই আমার সাথে কথা বলা শেষ করে আব্বার সাথে কথা বলতে গেলেন। এক দেড় ঘন্টার মতো কথা বললেন ওনারা। কী এত কথা বলেছেন আমি জানি না। পরে যখন দুলাভাই রুম থেকে বের হলেন তখন আমাকে বললেন,

— আমার কাজ আমি করেছি। এখন আমার দায়িত্ব শেষ বাকি সব এবার তোমার কাজ।

আমি কিছু বলার আগেই আম্মা চলে আসলেন। আমার আর কিছুই বলা হলো না দুলাভাইকে। রাতে দুলাভাই আর অমালিকা আপা খেয়েদেয়ে বাড়ি যাবেন। আম্মা আব্বা আজকে রাতটা এই বাসায় থেকে যেতে বলেছিল৷ কিন্তু, আপা বললেন দুলাভাইয়ের না কি অফিস আছে। সবার সাথে আমিও খেতে বসে গেলাম। আম্মা খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আমি আর অমালিকা আপা খাচ্ছি চুপচাপ। আব্বা আর দুলাভাই নানা রকম বিষয়ে গল্প করছেন।

— মেহুল।

আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। আব্বা যখন হঠাৎ করে আমার নাম ধরে ডেলে উঠলেন। আমি একটু চমকে উঠে বললাম,

— জি আব্বা।

— তোমাকে একটা কথা বলে রাখা ভালো। একটা ভালো ছেলের সন্ধান পেয়েছি। এখন তাদেরকে কালকে আসতে বলেছি। ছেলে যদি পছন্দ হয়ে তবে কালকেই তোমাকে তারা আংটি পড়িয়ে দিয়ে যাবে। আর নাহলে তো নেই।

— জি আব্বা।

আমি কোনো রকমে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার রুমে চলে এলাম। আমার হাত পা ভয়ানক ভাবে কাঁপছে। ছেলেটা যদি আমার বর্ণ হয় তাহলে ভালো। আর যদি সে বর্ণ না হয় তবে আমার হাতে আর কিছুই থাকলো না।

আমি আর রাতের অপেক্ষা করলাম না
বর্ণকে কল দিলাম। যা হওয়ার হবে। কেউ যদি শুনে নেয় তাহলে শুনুক। আমি একটা মানুষকে ভালোবাসি। এতে কার কী বলার থাকতে পারে?

— হ্যালো মেহুলিকা।

— বর্ণ, আপনি দুলাভাইকে সবকিছু বলার পর উনি কী বলেছেন।

— উনি কিছুই বলেননি। যা বলার তোমার আব্বু বলেছে।

— কী বলেছেন আব্বা?

— কালকে তোমাকে আংটি পড়িয়ে যেতে বলেছেন!

— কিহ! সত্যি?

— আমি মিথ্যা বলি না।

— আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বর্ণ। আসলেই এটা সত্যি? আমার মনে হচ্ছে আমি এখন ও সপ্নের দুনিয়ায় আঁটকে আছি।

— তোমার আব্বুর সাথে যখন কথা হলো আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যখন বললাম আমার তোমাকে পছন্দ এবং আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তখন আংকেল আমাকে সরাসরি না করে দিয়েছিলেন।

— তারপর কী হলো?

— তারপর আমি তোমার আব্বুকে বললাম ” আমি চাইলে আপনার মেয়েকে আপনার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি সবসময়ই চেয়েছি আপনি নিজে আমার হাতে আপনার মেয়েকে তুলে দেবেন। এখন যদি আপনি না চান তাহলে আমার আর কী বলার থাকতে পারে? যত যাইহোক মেয়েতো আপনার।

— আপনি এতগুলো কথা আব্বাকে বলেছেন? এত সাহসের উদয় হলো কোথা থেকে?

— একটা মানুষ মাঝে সাহসের উদয় হয় দুটি কারণে। এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরলে। আর দুই প্রেমে পরলে। আমি প্রেমে পড়েছি একটা মানুষকে ভালোবেসেছি। অতএব এতটুকু সাহস তো আমার থাকাই উচিত।

— বাদ দিন এইসব কথা। তারপরে কী হয়েছে সেটা বলুন।

— এরপর আমার শশুর তোমার শশুরকে ফোনটা দিতে বললেন। আমি দিলাম এরপর যা করার ওনারাই করেছে।

— সব বাদ দিয়ে কালকেই আংটি পরাতে হবে?

— আমার শশুর সাহেব বলেছেন সামনাসামনি আগে আমাদের দেখা হোক। তারপর তোমার মত থাকলে আংটি পরিয়ে রেখে যাওয়া হবে। তুমি জানো আমাদের বাসায় একটু আগে আংটির ডিজাইন নিয়ে গবেষণা চলছিল৷ আমি তো বসে বসে শুনছিলাম সব। জানো আমার না একটা বিয়ে বিয়ে ফিলিং হচ্ছে।

— বিয়ে বিয়ে ফিলিং কীভাবে হয়?

— তোমার ও হবে কালকে আংটি পরার পর। পরে দেখবো তুমিও মুঝে সাজানকে ঘার জানা হ্যাঁ গানে টিকটক করছো।

— ইয়াক! এইসব আজগুবি জিনিস ভালো লাগে না আমার। কী টিকটক ফিকটক নামের আজগুবি জিনিস।

–কালকে শাড়ি পড়ে অপেক্ষা করো আমার জন্য। আমি কিন্তু আসবো।

–আমি জানি আপনি আসবেন। আপনি হলেন বেহায়া কিছিমের মানুষ। বললেও আসবেন না বললেও আসবেন। দেখা যাবে বিয়ের ডালা পাঠানোর দিনও আপনি এসে বসে থাকবেন।

— হুহ, প্রেমিক মানুষ একটু বেহায়া না হলে চলে না কি? বেহায়া হয়েছি বলেই তোমাকে পেয়েছি নাহলে পেতাম না। বেহায়া না হলে কখনো বলতেও পারতাম না আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসা পেতে গেলে যদি একটু বেহায়া হতে হয়; তাহলে হলাম বেহায়া।

— আপনার মাথা পাগল হয়ে গেছে এই বিয়ে বিয়ে করতে করতে। রাখলাম আমি ফোন।

ফোন রেখেই আমি চুপচাপ বিছানার ওপরে বসে পড়লাম। আজকালকার ছেলেরা প্রেম করবে কিন্তু সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। এইদিক থেকে বর্ণ সেরা। বর্ণ প্রথম থেকেই শুধু বিয়ে বিয়ে করতো। আমি মুখে এটা সেটা বলে বর্ণকে চুপ করালেও। বর্ণের এই স্বভাবটা আমার বেশ লাগতো। আমার বর্ণ সবার চেয়ে আলাদা। আলাদা বলেই তো আমি পেয়েছি। নাহলে পেতাম না কি?

পরেরদিন সন্ধ্যা বেলা বর্ণদের আমাদের বাড়িতে আগমন। বর্ণের বড় দুইবোন। বর্ণের দুলাভাই, বর্ণের আব্বু এবং আম্মু এসেছেন। বর্ণের আব্বু এবং আম্মুকে সামনাসামনি দেখলে ও আমি বর্ণের বোনদের কখনো সামনাসামনি দেখিনি। ছবিতে দেখেছিলাম দুই একবার। কিন্তু সামনাসামনি ভাবে বলতে গেলে এটাই প্রথম দেখা। বর্ণের দু’জন বোনই মাশাল্লাহ সুন্দর দেখতে। বর্ণের চেহারার সাথে মিল খুব। দেখে সহজেই কে বলে দিতে পারবে এটা যে বর্ণের বোন। সেই দিক থেকে বলতে গেলে আমার আর অমালিকা আপার মধ্যে তেমন মিলই নেই। আমাদের দুজনের চেহারা দু’রকম। গায়ের রং ও আলাদা।

বর্ণের আব্বু আম্মু এবং বোনেরা আব্বা আম্মার সাথে কথা বলছেন। বর্ণ মাঝে মধ্যে খুব গভীর মনোযোগে কথা শুনছে আবার মাঝে মধ্যে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। পারেও বটে এই ছেলেটা।

কথা বলাবলির এক পর্যায়ে আমাকে আর বর্ণকে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য আমার রুমে পাঠানো হলো। বর্ণ আমার রুমে ঢুকেই বারান্দায় চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে যখন বললাম,

— কী করছেন আপনি? রুমে না বসে বারান্দায় কেউ বসে?

— দেখছিলাম এখান থেকে আমার রুমটা কতটুকু দেখা যায়।

— হায় আল্লাহ্ আর কত কিছু যে দেখতে হবে আমার।

— আরেকটা চেয়ার আনো তো। আমরা দু’জনে এখানে বসে গল্প করি চলো।

— আপনি করুন একা একা গল্প। রুমের বাইরে এতগুলো মানুষ বসে আছে। আর উনি এখানে বসে গল্প করবেন। কী শখ ওনার!

— তুমি দিন দিন ঝগরুটে হয়ে যাচ্ছো মেহুলিকা।

— ভালো কথা বললেই আমি ঝগরুটে।

— ও মেহুলিকা মেহুলিকা গো

— কী হলো আবার?

— একটু পরে তোমার এই আঙুলে টুস করে আংটি পড়াবো৷ এরপর তোমাকে বিয়ে করবো। আমাদের একটা সংসার হবে। তুমি ভাবতে পারছো ব্যাপারটা? সেদিন মাত্র আমাদের দেখা হলো। আজ আমাদের সম্পর্কটা বিয়ে অবধি গড়াচ্ছে। তুমি একটা বার চিন্তা করে দেখো। কী অবাক করার মতো ব্যাপার না? কীভাবে কয়েকটা বছর কেটে গেল। কিছুদিন পরে আমাদের বিয়ে। আমার মনের ভেতরের অনুভূতি গুলো যদি তোমাকে খুলে দেখাতে পারতাম। তাহলে বুঝতে আমি কতটা খুশি। আমাদের এই ভালোবাসার গল্পটা আসলেই এবার সুন্দর একটা দিকে মোড় নিলো। এতদিন খুব চিন্তায় ছিলাম না জানি কী হয় সামনে। আজকের পর এই দুশ্চিন্তা আর থাকবে না। তাই না মেহুলিকা?

— হুম, আমিও ভেবেছিলাম হয়তো ওখানেই সবকিছুর সমাপ্তি। কিন্তু, আস্তে আস্তে যে আমাদের সম্পর্কটা এভাবে পূর্নতা পাবে। আমিও ভাবিনি কখনো।

— হুম,

— এবার বাইরে চলুন;অপেক্ষা করছে সবাই।

— হুম চলো।

রুম থেকে বের হয়ে আমরা আবার আগের মতো জায়গায় গিয়ে বসলাম৷ পরে আমাদের জিজ্ঞেস করা হলো কোনো অমত আছে কি না। বর্ণ না বলে আমার দিকে তাকালেন। আমিও না বলে দিলাম। এরপর বর্ণের দুলাভাই ওনার পকেট থেকে; একটা আংটির বক্স বের করে বর্ণের হাতে দিলেন। বর্ণ আংটির বক্স থেকে আংটি বের করে আমার হাতে পড়িয়ে দিলেন। অবশেষে আমিও এনগেজড হয়ে গেলাম।

এরপর বিয়ের কথাবার্তা চললো অনেকটা সময়। কীভাবে কী আয়োজন করা হবে সেই সমস্ত কথা চললো। ওইদিন এক বসায় বিয়ের ডেট ও ঠিক করে ফেলা হলো। আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক করা হলো বর্ণের কানাডা চলে যাওয়ার আট দিন আগে। বর্ণ আগে কানাডা যাবে তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। বিয়ের ডেট আরো আগেই ঠিক করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আয়োজন করতে সময় লাগবে। কারণ, বর্ণ আর আমি দু’জনেই পরিবারের ছোট সন্তান। আমাদের পরে বিয়ের সিরিয়ালে আর কেউ থাকবে না। সেই হিসেবে বিয়েটা খুব ধুমধামের সহিত করা হবে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here