আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ৫

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৫

রাতে আব্বা আম্মার সাথে এক সাথে খেতে বসার সময়, আব্বাকে মনে করিয়ে দিলাম নতুন গাছের চারা আনার কথা। আব্বা আশ্বাস দিলেন উনি কালকেই এনে দিবেন।

পরদিন কলেজ থেকে এসেই দেখি আব্বা অনেক গুলো গাছের চারা এনে রেখেছেন। চারা গুলো একটু পরে ছাদে রেখে আসতে হবে। আব্বা নতুন গাছের চারা গুলো মাত্রই এনেছেন। তাই আর ছাদে রাখতে পারেননি। অতএব আমি আর আব্বা মিলে একটু পরে গাছের চারা গুলো ছাঁদে রেখে আসবো। যদিও গাছের চারা গুলো বারান্দায় ও রাখা যায়। কিন্তু, বারান্দায় না রেখে ছাঁদে রাখলে ঠিকমত সূর্যের আলো পাবে চারাগুলো। আর ঠিকমতো সূর্যের আলো পেলে চারা গুলো বড় হতে বেশি সময় লাগবে না।

আব্বা আর আমি খাওয়া দাওয়া করে ছাঁদে এক এক করে গাছের চারা গুলো রেখে এলাম। আব্বা যখন নিচে নামবেন তখন আমাকেও তাঁর সাথে ছাঁদ থেকে নিচে নামতে বললেন। কিন্তু আমি আব্বাকে বলেছি আমি পাঁচ মিনিট পরে আসছি। পাঁচ মিনিটের কথা বলে দশ মিনিট থাকার চিন্তা করলাম আমি। ওমা ছাঁদে কিছুক্ষন থেকে যখনই নিচে নেমে যাবো। ছাদে এক গাদা পায়রা হাজির। পায়রা গুলো কেন যে ওই ছাঁদ থেকে বারবার আমাদের ছাঁদে আসে কে জানে! আর কোনো বাসার ছাঁদ কী পায়রা গুলোর চোখে পড়ে না! শুধু আমাদের ছাঁদেই উড়ে আসা লাগে এদের?

তখন যেহেতু দুপুর সেহেতু আশেপাশে বাসার সবাই কম বেশী ঘুম। দুপুরের এই সময়টাতে মোটামুটি একটু নিরব নিস্তব্ধতা বিরাজমান থাকে। আমি পায়রাগুলোকে নিয়ে কিছুক্ষন মাতামাতি করার পর;ছাঁদ থেকে নিচে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠাৎই কারো গলার স্বর আমার কানে এলো। খুব গভীর গলায় কেউ আমাকে পেছন থেকে বললো,

— এভাবে চেনা অচেনার মধ্য গন্ডিতে কাউকে ফেলা উচিত না। হয়ত চেনা নাহলে অচেনা। কিন্তু চেনা অচেনার মধ্য অবস্থায় কাউকেই রাখা উচিত নয়।

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম বর্ণ। কথাটা বর্ণ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন কি না জানি না। হয়তো আমাকে বলেছেন নয়তো অন্য কাউকে। যাকেই বলুক না কেন আমি কোনো জবাব দিলাম না। কী দরকার শুধু শুধু একজনের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলার? ❝কিছু কিছু মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলা মানেই মায়ার মোহজালে আঁটকে যাওয়া। আর এই মায়ার মোহজাল ভেঙে বের হওয়ার ও কোনো উপায় নেই। অপ্রয়োজনীয় এই মানুষগুলোর প্রতি মায়া গুলো কষ্ট ব্যতীত আর কিছুই দেয় না❞

রাতে যখন ঘরটা ঠান্ডা হওয়ার জন্য মাত্র জানালাটা খুলেছি। তখনই জানালা খুলে দেখি বর্ণ দাঁড়িয়ে। আমি অবাক হয়েছি ওনার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে।

— এই যে ম্যাডাম! মনে আছে আমাকে?

আমি আরেকটু অবাক হলাম। বেশ অসস্তি নিয়েই জবাব দিলাম,

— জি।

— আমার নাম জানেন আপনি? বলুন তো আমার নাম কী?

— আপনার নাম বর্ণ।

— আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে? আমার তো আপনার নাম মনে নেই!

— জি, আপনি একদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তখন আপনার নাম শুনেছি।

— বাহ্ খুব সুন্দর করে মনেও রেখেছেন দেখছি। আপনার নামটা যেন কী?

— আমার নাম মেহুলিকা।

— আপনার নামটা খুব সুন্দর।

— জি ধন্যবাদ।

— আপনি যেন কীসে পড়েন?

— জি, ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।

— আপনার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই এমন হুট করে এত প্রশ্ন করে ফেললাম। বিরক্ত হলে মাফ করবেন।

— না না সেরকম কিছু না। আমি বিরক্ত হইনি মোটেও।

— হুম তাহলে ভালো। আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবেন না?

— আমার এত কৌতূহল নেই তবে আপনার যদি বলতে ইচ্ছে হয় তাহলে বলতে পারেন।

— আপনি যদি জানতে না চান তাহলে আমার বলে কী লাভ?

— না আপনি বলুন সমস্যা নেই।

— নাহ থাক, যেদিন আপনার মনে হবে আসলেই আমার সম্পর্কে কিছু জানার দরকার। সেদিন বলবো সব।

এরপর আমি কথা না বাড়িয়ে জানালা লাগিয়ে দিয়েছি সাথে সাথে। রাগে আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এটা কেমন আচরণ? আগ বাড়িয়ে এত কথা বলার কী দরকার?

অতএব বর্ণকে আমার ব্যাক্তিত্ব হীন একটা মানুষ মনে হলো। ছেলে মানুষ কথা বলবে কম। এটা কেমন ছেলে যে বকবক করছে তো করছেই।

আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর এই জানালাটা কখনো খুলবো না। বর্ণ চলে গেলে আবার খুলবো। তবে এখন আর খুলবো না জানালাটা।

আমি বেশ কিছুদিন আর জানালাটা খুলিনি। জানালা খুললেই বর্ণ কথা বলতে আসবে এই ভেবে। আর ছাঁদে ও যাইনি এরপরে। ছাঁদে গেলেও বর্ণকে দেখতে হবে তাই আর যাইনি।

একদিন হুট করে জানালা খুললাম৷ ভেবেছিলাম বর্ণ হয়তো চলে গেছেন। কিন্তু না জানালা খুলে দেখি, বর্ণ তখন ও সেখানে। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই আমি জানালা বন্ধ করে দিয়েছি।

তারপর একদিন জানালা খুলে দেখলাম বর্ণ আর নেই। এরপর আবার আগের মতো সব ঠিক হয়ে গেল। জানালা, বারান্দার দরজা খুলতে শুরু করলাম আবার।
কিন্তু আমার সাথে আস্তে আস্তে একটা আজব ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। যেমন বিকালে আমি যখনই ছাঁদে যাই। তখনই আমি যাওয়া মাত্রই একটা পায়রা আসতো। শুধু একটা না কয়েকটা পায়রা আসতো। পায়রা গুলোর পায়ে কী যেন একটা বাঁধা দেখতাম সব সময়। একদিন সাহস করে একটা পায়রার পায়ের থেকে বাঁধনটা খুলে দেখি; ওখানে একটা ছোট্ট কাগজকে কী যেন লিখা।

কাগজটা পায়রার পা থেকে খুলে নিয়েই নিচে নেমে গেলাম আমি। রুমে গিয়ে গেট লাগিয়েই ওটা পড়তে বসলাম। কাগজটা পড়তে গিয়ে আমার চোখ শেষ প্রায়। এটাকে কাগজ বলা যায় কিনা জানি না। আমার জানামতে এটাকে চিরকুট বলে। চিরকুটটা যে লিখেছে তাঁর হাতের লিখার তারিফ করতেই হয়। কাক বকের ঠ্যাং এর মতো হাতের লিখা। আঁকাবাঁকা কাটা ছেঁড়া করে লিখা। কে লিখেছে কে জানে! চিরকুটে লিখা ছিল,

” তোমায় দেখে মুগ্ধতা-রাও মুগ্ধ জানো? কী প্রণয়ে ফেললে আমাকে? তোমার আচার-আচরণ ব্যবহার খুব সুন্দর। তোমার ব্যবহার দেখেই আমি মুগ্ধ। কী সুন্দর কথাবার্তা। চালচলন কত মার্জিত তোমার!কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আমি তোমার পানে চাই বন্ধু কিন্তু তুমি আমার পানে একবার চাইয়াও দেখ না।”

চিরকুট পড়ে আমি বুঝতে পারলাম এই চিঠি যে লিখেছে সে বড়ই মুগ্ধতা নিয়ে লিখেছে। কিন্তু এতটুকু মুগ্ধতা যদি লিখাটাতে এত ব্যবহার করা হতো তবে আরও ভালো হতো। কারন লিখাটা কাঁটা, ছেড়ায়,ভুলে পরিপূর্ণ। যাই হোক এই চিরকুট কার জানি না। হয়ত এটা আমার জন্য লিখা না। অন্য কারো জন্য লিখা হয়ত। কিন্তু চিরকুটটা যে লিখেছে তাঁকে একটা কথা বলা দরকার।

এরপরের দিন বিকালে ছাঁদে গাছে পানি দেওয়ার নাম করে। আমি একটা ছোট চিরকুট লিখে ছাঁদের এক কোনে ফেলে রেখে এলাম। কতক্ষন পরে ছাঁদ থেকে কাপড় নিয়ে আসার নাম করে ;ছাঁদে গিয়ে দেখি ওমা আমার চিরকুট হাওয়া!

কে নিয়ে গেল কে জানে! হয়ত কালকের ওই চিরকুটটা যে লিখেছে তিনিই নিয়েছেন। তবে উনি যদি চিরকুটটা খুলে দেখেন। তবে অবশ্যই চমকাবেন।

চিরকুটে আমি সেই আগের চিরকুট প্রদানকারীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি,

” যতটা সময় নিয়ে চিরকুটটা লিখেছেন ততটা সময়; বানান আর লিখার দিকে দিলে ভালো হতো। হাতের লিখা পড়তে গেলে যে কেউই দাঁত ভাঙবে। এবং বানানের কথা তো বাদই দিলাম। মুগ্ধতা বানান দুইবার ভুল করেছেন। অতএব এইসব চিরকুট লিখে সময় নষ্ট না করে আগে হাতের লিখা ঠিক করুন।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here