আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প নুজহাত_আদিবা পর্ব ৭

আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৭

আমি ভয়ে ভয়ে আমার রুমে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই আম্মা চিৎকার দিয়ে বললেন,

— কতদিন বলেছি বারান্দার দরজা খুলবি না? আর খুলেছিস যখন লাগিয়ে দিসনি কেন বারান্দার দরজা-টা? এই সময় বারান্দার দরজা খোলা রাখলে যে ঘরে মশা আসে জানিস না তুই?

আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলাম। যাক আমার হাতে ওই চিরকুটটা পড়েনি। চিরকুটটা একবার আম্মার হাতে পড়লে আমার খবর হয়ে যেত। আমি এবার আম্মার কথার জবাব দিয়ে বললাম,

— আমার মনে ছিল না আম্মা। আর হবে না কখনো।

— হুম, আর যেন না হয় এরকম। মশার কামড়ে কত রোগ বালাই হয় জানিস? ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ আরও অনেক রোগ হয়। ভুলেও এই সময় বারান্দার দরজা খুলবি না।

— আচ্ছা আম্মা।

আম্মা এটা বলেই বারান্দার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার রুম থেকে চলে গেলেন। আমি এবার কোনো রকমে চিরকুটটা নিয়ে একটা ভালো জায়গায় রেখে দিলাম। সময় পেলে রাতে পড়বো। কিন্তু এখন কোনো ভাবেই সম্ভব না।

আমি সব কিছু ঠিকঠাক করে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষন পরে আবার রুমে গিয়ে বসতে না বসতেই হঠাৎ লাইটটা অফ হয়ে গেল। লাইটের সুইজ নিয়ে অনেকক্ষন নাড়াচাড়া করার পরও লাইট আর জ্বলে উঠলো না। বুঝতে পারলাম লাইটটা ফিউজ হয়ে গিয়েছে।

আম্মা রান্নাঘরে ছিলেন। আমি রান্নাঘরে ঢুকে আম্মাকে বললাম,

— আম্মা লাইটটা ফিউজ হয়ে গিয়েছে। আব্বাকে বলো আসার সময় ভালো মিস্ত্রি নিয়ে আসতে।যেন নতুন লাইট লাগিয়ে দিয়ে যায়।

— আচ্ছা।

আব্বা আসার সময় মিস্ত্রি নিয়ে আসলেন। মিস্ত্রি যখন ঘরে কাজ করছিল তখন আম্মা আমাকে পাশের ঘরে গিয়ে বসতে বললেন।

আমি যখন দরজা খুলে পাশের রুমটায় ঢুকলাম; তখন আমার বুকটা কেঁপে উঠল। এই ঘরে আমার কত স্মৃতি! শুধু আমার না আমাদের। কিন্তু যাঁর সাথে স্মৃতি গুলো সেই মানুষটাই নেই।

আরেকটা বার যদি তোমাকে পেতাম! তোমাকে আরেকটাবার দেখতে না পাওয়ার আফসোস আমার কখনোই যাবে না! সারাটা জীবন আমি এই আফসোসের ঘানি টানবো। জানো তো? আফসোস নিয়ে বেঁচে থাকাটা কতটা কঠিন? তোমাকে ছাড়া বাড়িটা বড্ড খালি খালি লাগে। সবাই আছে শুধু তুমিই নেই! তুমি যদি থাকতে! তোমার একটা ভুল তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলো। শুধু আমার না! সবার কাছ থেকেই!

আমার মনটা হুট করেই খারাপ হয়ে গেল। কারনটা আমার নিজের ও অজানা নয়। মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট হয়। নিজেকে খুব একা একা মনে হয়। মনে হয় আমার কেউ নেই কিছুই নেই। ছন্নছাড়া মনে হয় নিজেকে।

রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। খুব সর্তকতার সাথে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর সেই গোপন স্থান থেকে সেই চিরকুটটা বের করলাম। আজকের চিরকুটে লিখা ছিল,

” চিরকুট পড়ে অবশ্যই তাঁর জবাব হিসেবে আরেকটা চিরকুট লিখা উচিত। একটা ছোট্ট করে চিরকুট তো লিখতেই পারতে! তোমার লিখা চিরকুট গুলো আমার পড়তে যে কী ভালো লাগে তা যদি তুমি বুঝতে! আমি তোমার লিখা সবগুলো চিরকুট রেখে দিয়েছি। বারবার করে পড়ি শুধু। যতই পড়ি ততই ভালো লাগে। মনে হয় চিরকুট গুলো বাঁধিয়ে রাখি দেয়ালে। দিনে দশবার করে আয়নার মতো তোমার চিরকুট গুলো দেখব। ”

আমি চিরকুটটা পড়ে কলম হাতে নিয়ে বসে রইলাম। চিরকুটের উত্তর হিসেবে কী লিখবো তা বুঝতেই পারছিলাম না। শেষে ছোট্ট এক টুকরো কাগজে লিখলাম,

” আপনি কে তা যদি জানাতেন খুব খুশি হতাম। আমি আসলে জানি না। আপনি কে? হয়ত আপনি যাকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট গুলো লিখছেন আমি সে না। ভুল তো হতেই পারে। আপনি দয়া করে নিজের পরিচয়টা দেবেন। ”

চিরকুটটা লিখে আমি খাতার নিচে রেখে দিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাঁদে গিয়ে চিরকুটটা ছাঁদের এক কোনায় রেখে এলাম।

বিকালে আবার যখন ছাঁদের গাছে পানি দিতে গেলাম। তখন দেখি নতুন চিরকুট হাজির। আমি খুব সাবধানে আমার ওরনার কোনায় জট বাঁধিয়ে রেখে দিলাম চিরকুটটাকে।

তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে চিরকুটটা খুলে দেখি তাতে লিখা,

” আমি কোনো ভুল মানুষকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট লিখছি না। আমি তোমাকেই লিখছি। তোমার নাম তো মেহুলিকা। আর আমি এই মেহুলিকা-কেই উদ্দেশ্য করে চিরকুট গুলো লিখছি। মেহুলিকা আমি শুধু তোমাকে চিনি-ই না। আমি তোমাকে দেখেছি ও। তোমার ভাষা, কথাবলার ভঙ্গি, তোমার বুদ্ধিমত্তা, তোমার আচরন বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি আমার পরিচয় জানতে চাও তো? আমি অবশ্যই আমার পরিচয় দেবো। আমি নিজেও অপেক্ষায় ছিলাম কবে তুমি আমার পরিচয় জানতে চাইবে। আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ। আমি খুব শীগ্রই তোমাকে আমার পরিচয় দেবো। ”

আমি এবার বড়সড় একটা চমক পেলাম। আমি চিনি না তাঁকে কিন্তু উনি আমাকে ঠিকই চেনে। আচ্ছা, উনি কী আমার পরিচিত কেউ? হতে ও তো পারে। আমি ও তাঁকে চিনি।

অতএব এসব চিন্তা করতে করতে আমি আবার এক গোলকধাঁধায় আঁটকে গেলাম। আমি যতই এই ধাঁধার সমাধান করতে চাই। ততই ধাঁধাটির রহস্য জাঁলে আঁটকে যাই। মন চাইলো একটা গল্প লিখে ফেলতে। গল্পের নাম হবে একটা
গোলকধাঁধার রহস্য এবং আমি!

আমি আবার একটা চিরকুট লিখলাম,

” আমি চাই আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার পরিচয় আমাকে দিন। আপনি কে তা জানার জন্য আমার মন খুব উদ্বীগ্ন। ”

সাথে সাথে ছাঁদে গিয়ে চিরকুটটা ছাঁদের কোনায় ফেলে রেখে আসলাম।

ছাঁদ থেকে নিচে নেমে আসার পর। আম্মা আমাকে ইচ্ছেমত বকা দিলেন। বললেন বেশি যেন ছাঁদে না যাই। আমি কোনো রকমে আম্মাকে শান্ত করে বলেছি আম্মা আর কখনো যাবো না। আম্মাকে এটাও বললাম যে, এরপর থেকে ছাঁদে গেলে আম্মার অনুমতি নিয়ে যাবো।

আমি রাতেও বসে বসে চিন্তা করলাম আসলে ওই চিরকুটের মালিক কে হতে পারে?

এসব চিন্তা করতে করতেই আনমনে জানালা খুলতেই দমকা হাওয়ায় আমার হৃদয় জুড়িয়ে গেল। ঠান্ডা বাতাস আমার মন এবং শরীর দুটোকেই শান্ত করলো। এসব ভাবতেই সামনে তাকিয়ে দেখি, পাশের বাসার ওই জানালা খোলা। এবং সেখানে বর্ণ বসা। আমার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। মাথায় তখন একটা কথাই আসলো তা হলোঃ পুরান পাগলের ভাত নাই আবার নতুন পাগলের আমদানি।

এখন আবার কিছুদিন এই জানালা বন্ধ করে রাখতে হবে। ইস! আমার হয়েছে মহা বিপদ। সব দিকেই যন্ত্রনা আমার। শান্তিই নেই কপালে!

সকালে কলেজে গিয়ে ক্লাসে ঢুকেই আরেকটা অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হলাম। আমার এক ক্লাসমেটের সাথে আরেক ক্লাসমেটের তুমুল ঝগড়া। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত কোনো বড় কারণেই ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু নাহ! ঝগড়াঝাটি শেষে শুনলাম এদের দুজনের ঝগড়া হয়েছেই মূলত বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। কার বয়ফ্রেন্ড বেশি ভালো। কার বয়ফ্রেন্ড বেশি কেয়ার করে এইসবই ঝগড়াঝাটির মূল বিষয়। আমার কাছে সবচেয়ে অবাক করার মতো ঘটনা যেটা মনে হলো সেটা হলোঃ এত অল্প বয়সেই এদের বয়ফ্রেন্ড ও আছে? বয়ফ্রেন্ডের জন্য এরা আবার এত ঝগড়া ও করে? কী জানি! হয়ত সবারই বয়ফ্রেন্ড আছে। শুধু আমিই বাদে।

আমি কলেজ থেকে যদিও আম্মার সাথেই বাসায় আসি। তবুও কলেজ থেকে বের হয়ে একটা জিনিস খেয়াল করি। তা হলো গার্লস কলেজ ছুটি হলেই মেয়েরা বের হয়ে একেকজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যায়। কলেজ ছুটি হলেই বের হয়ে দেখি কমপক্ষে ৩০-৪০ জন ছেলে তো দাঁড়িয়ে আছেই। আমার কাছে প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হতো৷ কিন্তু এখন স্বাভাবিকই মনে হয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here