আসক্ত🔥পর্ব :৩

0
5254

আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ৩

বিছানায় এক গাদা শপিং ব্যাগ পরে আছে, আর রিমপি-রিমি, তিতলি-নিশু সেগুলো নেড়ে চেড়ে দেখছে! টায়রা সেদিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে!

কিছুক্ষণ আগেই লাজুক অফিস থেকে ফেরার সময় এগুলো এনেছে!
কিছু লং স্কার্ট, টপ’স, হাটু সমান প্যান্ট, কামিজ, গাউন! এখন থেকে নাকি টায়রাকে এগুলোই পরতে হবে!
বাইরে কামিজ আর গাউন ছাড়া কিছু পরা জাবে না, আর বাসায় টপ’স টিশার্ট পরতে পারবে,এমনটাই বলে গেলো টায়রাকে লাজুক!

– একটা কথা কিন্তু মানতেই হবে ভাইর ড্রেস সেন্স কিন্তু চমৎকার ! দেখ কি সব লেটেস্ট ডিজাইনের ড্রেস এগুলো!

নিশুর মাথায় একটা গাড্ডা মেরে তিতলি বললো,
– গাধী এগুলো ভাইয়ের নিজের ডিজাইন করা, সুন্দর তো হবেই!

– আহহ! [ মাথা ডলতে ডলতে ] বুঝলাম কিন্তু টায়রা বাড়িতে এই গুলো পরলে প্রবলেম কি বুঝলাম না! আমরাও তো পরি, ইভেন আগে ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড গুলোকে দেখতাম তারা তো আরো ছোট ড্রেস পরে ঘুরে বেরাতো!

নিশুর কথা শুনতেই মুখটা ভার হয়ে এলো টায়রার!

রিমপি লাফিয়ে নিশুর পাশে বিছানায় বসে পরলো,তারপর জিগ্গেস করলো,
– আচ্ছা প্রাই দু বছর থেকে ভাইকে কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে যেতে দেখিনি! আগেতো ভাইয়ের আগে পিছে মেয়েদের অলওয়েজ দেখা যেতো! এখন কি হলো?

– কি জানি কি হয়েছে!

টায়রার কেনো জানি বুকের ভিতর হঠাৎ হু হু করে উঠলো, কান্না কান্না পাচ্ছে এখন তার! অভিমান হচ্ছে খুব লাজুকের উপর, কিন্তু কেনো?
________________
সন্ধ্যা পেরতেই টায়রা ছাদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! এটা তার রোজ কার অব্ভ্যাস, রাত হতেই ছাদে উঠে রাতের আকাশ দেখা! এর মধ্যেই লাজুককে চোখে পরলো!
পুল সাইডে বসে বসে ফাইল চেক করছে! আর ওখানেই ছাদের শিরি!

টায়রা ভেবেই নিজেছে সে আর লাজুক কে ভয় পাবে না, তার কথাও শুনবে না! কেনো ভয় পাবে? সে বাগ না ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবে?

লাজুক কে দেখেও না দেখার মত করে তার পাশ ঘেসে শিরির কাছে যেতেই ডাক পরলো!

– এই পিচ্চি দাড়াও!

লাজুকের দিকে ঘুরে চোখ গুলো ছোট ছোট করে মুখ বেকিয়ে বললো,
– আমি মোটেও পিচ্চি না ওকে, যথেষ্ট বড় হয়েছি! তাই পিচ্চি ডাকবেন না!

– ওউউউ! রিয়েলি? কই দেখি কোথা থেকে বড় হয়েছো!
কথাটা বলে টায়রার কাছে এগিয়ে যেতে নিলেই, লাফ দিয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো টায়রা!
তা দেখে লাজুক ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কি হলো কাছে এসো, চেক করে দেখি কোথায় বড় হয়েছো!

লাজুকের কথা শুনে চোখ গুলো বড় বড় করে বললো,
– মানে কি? আমি কি কোনো পোশাক যে পরে দেখে নিবেন ঠিক আছে কি না!

পকেটে দু হাত ভোরে দাড়িয়ে বললো,
– আগে এদিকে তো আসো তারপর না হয় দেখো কিভাবে চেক করি!

ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো টায়রা লাজুকের এরুপ কথায়! আড় চোখে লাজুকের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো তার চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ!

– আ..আপনি আমায় ভয় দেখাবেন না, আমি ম..মোটেও ভয় পাইনা আপনাকে!

– আচ্ছা তাই নাকি?

টায়রা ভয়ে ভয়ে বললো,
– হ..হ্যা পাইনা ভ..ভ..ভয় আপনাকে!

– ওকে লেট সি..
কথাটা বলেই টায়রা দিকে এগোতে লাগলো!

লাজুক কে এগোতে দেখে শুকনো ঢোক গিললো টায়রা! এতক্ষন লাজুকে কে শুনিয়ে এত বড় বড় কথা বললেও, এক মাত্র টায়রা যানে এর মধ্যে কয়বার হার্ট এ্যাটাক হতে গিয়েও হয় নি! এবার নির্ঘাত হার্টফেল করবেও!
তাই আগেই পালাতে হবে এখান থেকে!
হুট করেই টায়রা লাজুককে কিছু বুঝতে না দিয়ে খিচে দৌড় লাগালো! এ মুহূর্তের জন্যেও পিছন ফেরেনি, তাহলে হয়তো দেখতো লাজুকের মুখের হাসির ছাপ!
______________
সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি নিয়ে ধীরে ধীরে লাজুকের রুমে গেলো টায়রা! কালকের রাতের কাহীনির জন্য না যানি আবার কি করে?
বুক কাপছে ওর!

সাদা কম্বোল মুড়ি দিয়ে উবুত হয়ে ঘুমাচ্ছে লাজুক!টায়রার স্থীর দৃষ্টি সে দিকেই! চুল গুলো কপালে লেপটে আছে! ফর্সা নাকটা লাল হয়ে আছে!
লোকটার ঘুমানোর স্টাইলটাও এতো সুন্দর যে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে!

গুটি গুটি পায়ে বিছানার কাছে এগিয়ে গেলো! হালকা আওয়াজে ডাকতে নিলো,
– ভাই…..
সাথে সাথে দু হাতে মুখ চেপে ধরলো! লাজুক কে ভাইয়া বলে ডাকার মত ভুল ও আর দ্বিতীয় বার করবে না! এক বারেই চরম শিক্ষা হয়েছে!

সেদিক কিছু একটা কারনে টায়রা লাজুক কে ডাকতে গিয়ে ভাইয়া বলেছিলো!

আর তা শুনে লাজুক ভারী আওয়াজ করে বললো,
– তোমাকে যেনো আর কখনো আমায় ভাইয়া বলতে না শুনি!

লাজুকের কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়ে টায়রা বললো,
– কিন্তু আ….আপনি তো আ..আমার ভাভ..ভাইয়াই হন!

লাজুক রেগে টায়রাকে ধমক দিয়ে চেচিয়ে বললো,
– কাজিন হই তোমার, আপন ভাই নই! এই পৃথিবীতে সবাইকে নিজের বোন ভাবতে পারবো শুধু তুমি ছাড়া!
তোমাকে কখনো নিজের বোন ভাবতে পারবো না, বুঝেছো তুমি? এর পর যেনো এমনটা না হয়!

খুব খারাপ লেগেছিলো লাজুকের কথায়! কেনো তাকে বোন ভাবা যাবে না? সে কি এমন করেছে?
লাজুকের এরুপ আচরনে ভয়ে কুকড়ে গেছিলো টায়রা, সেদিনের সেই ভয়ংকর রুপ আর দেখার ইচ্ছা নেই!

লাজুকের পাশে গিয়ে হালকা আওয়াজে ডাকতে লাগলো!
– এই যে শুনছে? আপনার কফি এনেছি! ঠান্ডা হয়ে যাবে!

লাজুক সেই আগের মতই ঘুম! টায়রা বুকে ফু দিয়ে, কাপা কাপা হাতে লাজুক কে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো!

– এই যে উঠুন না, কফি এনেছি! আপনিই তো বললেন এখন যাতে ডেকে দেই! এখন ঘুমাচ্ছেন কেনো?

ঘুম ঘুম কন্ঠে জবাব দিলো,
– ডোন্ট ডিস্টার্ব মি টায়রা, যাও এখান থেকে! আমি উঠলে তোমার কপালে দুঃখ্য আছে!

টায়রা ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো!
লাজুক এখন এই কথা বলছে,কিন্তু যখন ঘুম ভাঙ্গবে তখন আবার সেই টায়রাকেই বোকবে!

কিছু একটা ভেবে ওয়াশ রুমে গিয়ে আবার ফিরে এলো! তারপর মগের পানি হাতে নিয়ে লাজুকের মুখের উপর ছিটিয়ে দিতেই হুড়মুড় করে উঠে বসলো লাজুক!
– হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুইং? হ্যাভ ইউ লস্ট ইওর মাইন্ড?

লাজুকের চেচানি শুনে ভয়ে টায়রা ততক্ষনাক দৌড়ে রুমের বাইরে দারজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরলো!

– এদিকে এসো তারা তারি!

টায়রা ভয়ে মাথা নাড়িয়ে না বললো,
– আ..আমি সস…সরি! আপনিই তো উঠছিলেন! আর না উঠালে সেই আবার আমায় বোকতেন!

লাজুক ভারী আওয়াজে বললো,
– আমি এদিকে আসতে বলেছি টায়রা! আর সেটা এক্ষুনি!

টায়রা ঢোক গিলে একটু একটু করে বিছানার কাছে এগিয়ে যেতেই ওর হাতে একটা টাওয়াল দিয়ে বললো,
– পানি গুলো তারাতারি মুছে দেও!

টায়রা হা করে তাকিয়ে রইলো লাজুকের মুখের দিকে! ও মুছে দিবে ?

টায়রাকে ঝাড়ি মেরে বললো,
– কি হলো শুনতে পাও নি কি বলেছি?

– হ্য..হ্যা! দিচ্ছি তো!
অসহায় ভাবে দু পা এগিয়ে লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়ালো! কাপছে টায়রা, ভিষন রকমের! কাপা কাপা হাতে টাওয়াল টা নিয়ে লাজুকের মুখের পানি মুছে দিতে নিয়ে দেখলো, ঘোলাটে সবুজ চোখ গুলো স্থির হয়ে আছে টায়রার মুখের দিকে!
তা দেখে কাপার মাত্রা যেনো আরো বেরে গেলো!

আলতো হাতে লাজুকের মুখে স্পর্শ করতেই নিজেই কেপে উঠতে লাগলো!
যেমন তেমন করে মুখের পানি মুছেই সরে এলো লাজুকের থেকে! বুক কাপছে ওর!
আর একবার লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!
শ্বাস দ্রুতো ওঠা নামা করছে!

– আ..আমি যায..যাবো..?

টায়রার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো লাজুক!
– হু যাও!
_____________
সে কখন থেকে ফোনের দিকে তাকিয়ে ব্লাশিং হচ্ছে রিমপি! যখন থেকে ফোনে কথা বলে এখানে এসেছে তখন থেকে এটা করে যাচ্ছে!
আর ওর এমন আজব বিহেইভ গুলো অদ্ভুদ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করছে টায়রা সহ বাকিরা!
হঠাৎ রিমপির এমন ব্লাশ হওয়ার কারন খুজে পাচ্ছে না ও !

– ওই ঢংগের মাসি! কি হইছে তোর বলতো?

তিতলির কথাতে যেনো আরো রিমপির গাল দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে!

টায়রা এলিয়েনের মত চোখ মুখ করে এগিয়ে গেলো রিমপির কাছে!
– ই..ইউ ওকে না?

টায়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো!

– বোন আমার কি হয়েছে তোর? তোর হাব ভাব দেখে কিন্তু আমার শুবিধার মনে হচ্ছে না!

রিমির কথায় রিমপি মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,
– আমাকে না ও কাল বাইরে যাওয়ার জন্য ডেকেছে!

– ও টা কে ?

টায়রার কথায় যেনো আরো লজ্জা পেলো সে!
– রু…রুহান!

– হোয়াট?

সবার এক সাথে চেচানোতে লাফিয়ে উঠলো রিমপি! অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে,
– কি..কি হয়েছে, এনিথিং রং….

রিমপির কথা শেষ হওয়ার আগেই চার জন চেচিয়ে ঝাপিয়ে পরলো রিমপির গায়ে!
এতোক্ষনে রিমপিও বুঝে গেলো ওদের এমন রিয়াক্ট করার মানে!

রিমপি কে ছেড়ে দিয়ে টায়রা বললো,
– বোন আমার ওকি তোকে প্রপোজ করেছে?

মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো,
– হুমম! একটু আগেই বললো, ওনাকি অনেক আগে থেকেই আমাকে লাইক করে! কিন্তু ভয়ে বলতে পারেনি! কাল দেখা করতে চাইছে আমার সাথে!

– সো হোয়াট? দেখা করে নে!

– আরে আমি একা কিভাবে? বাসায় কি বলবো? তোরাও চল না আমার সাথে?

নিশু আর রিমি বললো,
– তোরা তিন জন চলে যা, আমাদের শপিং এ যেতে হবে!

ওদের কথা শুনে টায়রা মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
– আমিও যেতে পারবো না, জোমরাজ যদি খবর পায়না, আমাকে কেটে কুচি কুচি করে টেস্টি লবন ছরিয়ে খেয়ে ফেলবে!

– আরে ভাই জানবে না, ও তো অফিসেই চলে যাবে!আর আমরা তো আছিই!

– না না আমি যাবো না! যদি দেখে ফেলে?

– আরে কিছু হবে না!বোন আমার প্লিজ একটু হেল্প কর, দেখ আমার লাভ স্টোরিটা শুরু হওয়ার আগেই যেনো এন্ড না হয়!

মুখ টা করুন করে তাকালো রিমপির দিকে!

– প্লিজ!

– আ..আচ্ছা ঠিক আছে!

টায়রাকে জরিয়ে ধরলো রিমপি!
– থ্যাকইউ বেবি!

বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো টায়রা!
রিমপি ওর থেকে এক ক্লাস উপরে, সেও প্রেমে পরেছে, কিন্তু টায়রা এখনো বুঝতে পারে না কোনটা ভালো লাগার অনুভূতি আর কোনটা ভালোবাসার?

তাহলে হয়তো বুঝতে পারতো তার আসক্তিটা কিসের?

To be continue…..
Shuchona Zannat…

স্টোরির কোন দিকটা তোমাদের ভালো লাগছে আর কোন দিকটা খারাপ লাগছে, বলে ফেলো তো!
আমি তোমাদের মতা মত অনুযাই লিখার ট্রাই করবো!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here