ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-১৩

0
2050

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ভোর হলো প্রায় অনেকক্ষণ। জানালার পাশটায় কৃষ্ণচূড়ার গাছটায় দুটো কাক বসে আছে। প্রেমিক জোড়া কি ? ঐশী জানে না। ঐশী বারান্দায় মাটিতে বসে আছে। হাঁটু গেড়ে “দ” আকৃতিতে। চুল এলোমেলো। সাথে ছোট্ট মনটাও। শরীরে জ্বালা ধরেছে। এই জ্বালা কি কোনো ধ্বংসের ? নাকি কোনো দমকা প্রতিশোধের ? ঐশী সেটাও জানেনা। তবে কিছু না একটা তো আছে। কিছু একটা ! ছোট্ট শরীরে নিশ্বাসের বেগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একসময় ঐশী চিৎকার করে বলে উঠে, ” তোমরা যা করলে তা একদম ভালো করলে না। এর জন্যে পস্তাবে। বহুৎ পস্তাবে তোমরা।”

ঐশী বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। কিছু কি চলছে ওর মাথায় ? চোখ মুখ এমন হয়ে আছে কেনো ? চোখ থেকে আগুন ঝরছে ওর। মুখ কটমট করছে। ঐশী মেয়েতো এমন নয় ? তবে কে এই মেয়ে ? নাকি ঐশীর কোনো হিংস্র প্রতিরূপ ? ঐশী দেয়ালের লোহায় লটকানো ব্যাগ টা নিজের হাতে নিল। ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে প্রয়োজনীয় সব কিছু ব্যাগে পুরে নিল। ওড়না গায়ে দিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। উদ্দেশ্য জুভানের অফিস।
___________________________

জুভান অফিসে বসে একজন পরিচালকের সাথে মিটিং করছে। সবসময় ও গান গেয়ে এসেছে । তবে আজ একটা মিউজিক ভিডিওর শুটিং আছে ওর। চেহারা সুরত ভালো হওয়ায় পরিচালক নিজে এসে কথা বলছেন ওর সাথে। জুভানের হাতে সাদা কাগজের স্ক্রিপ্ট। ভ্রু কুচকে চোখ এলোমেলো ঘুরছে সেই স্ক্রিপ্টে। সেইসময় ঐশী জুভানের অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। কোনো কথা না বলে সোজা অফিসে প্রবেশ করতে চাইলে জুভানের অ্যাসিসট্যান্ট সাহাদাত ওকে আটকে ফেলে। ঐশী বিরক্ত হয়। কটমট চোখে তাকাল শাহাদাতের দিকে। কন্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বললো,

” হোয়াট ? আটকালে কেনো ? ”

সাহাদাত কপাল ভাজ করে বললো,

” কে আপনি ? হুট করে স্যারের অফিসে চলে যাচ্ছেন। কোনো অপরিচিত কারো সাথে স্যার মিট করেন না। সো ইউ মে লিভ নাও। ”

ঐশী সব শুনেও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে বুকে দু হাত গুটিয়ে বললো,

” আপনার স্যার আমাকে চিনেন। উনাকে গিয়ে বলো ঐশী এসেছে। গো। ”

শাহাদাত সব শুনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ঐশীর দিকে। স্যার ওই এখন কাজের জায়গায় মেয়ে আনা শুরু করেছেন ? হ্যা খোদা ! আর কত অধঃপতন হবে উনার ? সাহাদাত কোনো প্রত্যুত্তর না করে ঐশীকে অপেক্ষা করতে বলে জুভানের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি। আর নেওয়া যাচ্ছে না এসব। এত মেয়ে না ভোগ করে এবার বিয়ে করে নিলেই তো হয়। শাহাদাত বিড়বিড় করে এসব বলতে বলতে কেবিনের সামনে এসে দাড়ালো। কেবিনের দরজা একটু খুলে মোলায়েম সুরে বলল,

” স্যার ? ”

জুভান স্ক্রিপ্ট থেকে মুখ তুলে তাকালো শাহাদাতের দিকে। পরিচালকও তাকিয়েছেন। শাহাদাত এক ঢোক গিলে বললো,

” একজন এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে। নাম বললো “ঐশী” । ”

ঐশী ! জুভান একটু অবাক হলো। ঐশী কেনো এসেছে ? জুভান সব শুনে শাহাদাত কে বললো,

” একটু অপেক্ষা করতে বলো। আমি উনার কাজ শেষ করে ডেকে নিবো। ”

শাহাদাত মাথা নেড়ে সম্মান জানিয়ে দরজা লাগিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।

জুভান মিউজিক ভিডিওর কাজটা গ্রহণ করে পরিচালকের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। পরিচালক খুশিমনে জুভানের থেকে বিদায় নিলেন। অতঃপর জুভান শাহাদাতকে বলে ঐশীকে কেবিনে আসতে বললো।

জুভান কফি হাতে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। একটু পর ঐশী কেবিনে নক দিল। জুভান কফি নিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

” কাম ইন। ”

ঐশী ভিতরে প্রবেশ করলো। জুভান ঐশীর দিকে একঝলক তাকিয়ে হতবাক হলো। কি হাল করেছে ? চোখের নিচে এক ইঞ্চি জুড়ে কালো কালি পড়েছে। মুখ শকনো। গরমকালেও ঠোঁট ফেটে কতক টুকরো হয়েছে। জুভান ঐশীর দিকে বিমর্ষ হলো। কিন্তু সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশীকে চেয়ারে বসতে বললো। ঐশী ব্যাগ আঁকড়ে ধরে চুপচাপ জুভানের সামনে চেয়ারে এসে বসলো।

অতঃপর নীরবতা। কেবিন জুড়ে ভোতা এয়ারকন্ডিশনারের ঝিমঝিম শব্দ। দুজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ পুরো কেবিনময়। সেই নিরবতা ভাঙলো জুভান। গলা কেশে বললো,

” ঐশী ? ”

ঐশী মুখ তুলে তাকালো জুভানের দিকে। দৃষ্টি এলোমেলো, বিধ্বস্ত। জুভান আলতো সুরে বললো,

” কোনো দরকার ? হঠাৎ আমার অফিসে ? ”

ঐশী আনমনে চেয়ে রইলো জুভানের দিকে। ঠোঁট কথা বলতে চায় , কিন্তু কণ্ঠ বাক্য সাজাতে নারাজ। ঐশী সাহস করে মুখ খুললো,

“আব. আমাকে কি একটা চ.চাকরি দেওয়া যাবে ? ”

জুভান হতবম্ব। চোখে , মুখে উদ্বেগ। যেই মেয়ে জুভানের একটা হেল্প নিতে নারাজ আজ সে তারই কাছে একটা চাকরি চাইতে এসেছে। সত্যি ! এটা কি চমকপ্রদ ব্যাপার নয় ?

জুভান কপাল ভাজ করে বললো,

” কি চাকরি করতে চাও ? ”

ঐশী এদিক ওদিক তাকিয়ে আবারও জুভানের দিকে তাকালো। জোর গলায় বললো,

” যে চাকরি আমার লাইফ চেঞ্জ করে দিবে। আমার এই মুহূর্তে একটা পার্মানেন্ট জব চাই। চাই মানে চাই। ”

জুভান বিস্ময়ের চূড়ায়। আজ ঐশীর হলো কি ? তবুও সে বাক্য ক্ষয় না করে বললো,

” হুট করে ত আর চাকরি পাওয়া যায় না। তবে এক কাজ করতে পারো। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট রূপে আপাতত কাজ করো। পরে না হয়…”

” আমি রাজি। কি কাজ করা লাগবে ? ”

জুভান মুচকি হাসলো। বললো,

” কাজের ব্যাপারে আমি কিন্তু কোনো কম্প্রোমাইজ করিনা। কাজ কাজের জায়গায় আর বাকি কিছু আলাদা। কাজের সময় তুমি এক আর আমি অন্য। সেটাই আমার সাথে কাজ করার মেইন রুলস। ”

ঐশী চুপচাপ মাথা হেলালো। কোনো অনুভূতি প্রকাশ করলো না। আর না কোনো প্রত্যুত্তর করলো। জুভান অতঃপর বললো,

” বাকি কাজ গুলো শাহাদাতের কাছ থেকে জেনে নিও। ”

” কাজ কখন থেকে শুরু করতে হবে ? ”

” আজ তো হবে না। কাল থেকে শুরু করো। কিন্তু কাজ করতে হবে উইথ রেসপনসিবিলিটি। ”

” ওকে। আমি আসছি এবার। ”

ঐশী বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। রাস্তায় একটা রিক্সা ডেকে চরে বসলো রিক্সায়। রিক্সা চলছে ধীর গতিতে। আর ঐশী ? সেতো বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে গলায় ঝুলানো লকেট টার দিকে। এবার শুরু হবে খেল। জমবে মজা। ধীরে ধীরে নিঃশেষ হবে সকলে। নাও ইটস প্লে টাইম। ঐশী মৃদু হেসে লকেট টা হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে তাকালো নীলাভ রঙের আকাশটায়।

_________________________

” ভাই , পুলিশকে তো মেরে ফেললাম। কিন্তু প্রোভ ? সেটাতো পেলাম না। ”

তরুণ ছেলে হাতের মদের গ্লাসটা জুড়ে ছুড়ে ফেললো দেয়ালে। দেয়ালে সেই গ্লাস আঘাত পেয়ে শ টুকরো হলো। তন্ময় রেগে গড়গড় করতে করতে বলল,,

” শালা , গেম খেলেছে আমাদের সাথে। আগে ভাগেই সব লুটপাট করে দিয়েছে। শালা। মাদা**”

হাসিব তন্ময়ের দিকে তাকালো ভয়ে ভয়ে। ভাই তার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না। যেকোনো সময় কাউকে খুন করে ফেলতে পারে। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক ওর জন্যে।

হঠাৎ একজন লোক তন্ময়ের কাছে আসলো। মাথা নিচু করে বললো,

” ভাই, একটা ছেলে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। ”

#চলবে…

গল্পের মেইন প্লট আজ থেকে শুরু। প্রতিটি ধামাকার জন্যে অপেক্ষা করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here