ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-২৩

0
1973

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আসরের আযান ভেসে আসছে অদূর এক মসজিদ থেকে। সেই সুর ছন্দময় ভাবে এসে কানে লাগলো ঐশীর। জানালার পাশের হিজল ফুলের গাছটায় একজোড়া শালিক নিজ বাসায় ফিরে এসেছে। সঙ্গে এনেছে মুখভর্তি সারাদিনের খাবার। বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে যে! জুভান কাউকে ফোন করলো, রুমে একটা ডিম আর একগ্লাস দুধ আমার জন্যে।

একটু পর দরজার বেল বাজলো। জুভান ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে পাশে রাখলো। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। খাবার গ্রহন করে ট্রে টা নিয়ে বিছানায় রাখলো। ঐশীর ঘুমন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসলো। ঐশীর পাশে বসে আলতো গলায় ডাক দিলো,

” ঐশী,ঐশী। উঠো। খাবারটা খেয়ে নাও। ঐশী? ”

ঐশী চোখ কুচকে নিলো। আদো আদো চোখ মেলে তাকালো। পাশে সুঠাম দেহী পুরুষকে দেখে সে চমকে উঠলো। হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। ব্যাকুল কণ্ঠে বললো,

“আপনি? আপনি আমার রুমে কি করছেন ? এটাতো আমার রুম, তাইনা ? ”

জুভান ঐশীকে বুঝানোর মত করে বললো,

” রিলাক্স ঐশী। রিলাক্স। ওকে। আমি বুঝিয়ে বলছি। শান্ত হও। ”

ঐশী মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে বললো,

” বলুন। ”

” তুমি রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলে। আমি তোমায় হোটেলে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার দেখছিলেন তোমায়। তাই আমি পাশে ছিলাম। আর এখন জাস্ট তোমাকে খাইয়েই চলে যেতাম। দেটস ইট। ”

ঐশী হাফ ছাড়লো। বেডে হেলান দিয়ে ক্লান্ত চোখে তাকালো জুভানের দিকে। বললো,

” খাবার ? ”

জুভান খাবারের ট্রে-টা ঐশীর দিকে এগিয়ে দিলো। ট্রে তে ডিম আর দুধ দেখেই ঐশী নাক ছিটকালো। বিরক্ত হয়ে বললো,

” এসব আমি খাই না। প্লিজ সরান এগুলো। আমার দেখতেই বমি আসছে। ”

জুভান উত্তর করলো না। বরং প্লেট থেকে ডিম হাতে নিয়ে ঐশীর গাল চেপে ধরলো। ঐশী তাজ্জব বনে গেলো এমন ব্যাবহারে। গাল ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। জুভান ছাড়লো নাম বরং জোরপূর্বক ডিমটা ঐশীর মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে গাল ছেড়ে দিলো। ঐশী না চাইতেই গিলে ফেললো ডিমটা। তারপর অগ্নি চুক্ষ নিয়ে তাকালো জুভানের দিকে। বললো,

” আপনি এভাবে জোর করে খাওয়ালেন কেনো ? আমি মানা করেছিলাম, না ? ”

জুভান মুচকি হেসে দুধের গ্লাস হাতে নিলো। বললো,

” আমার সাথে ঝগড়া করার জন্যে হলেও তো তোমার শক্তি দরকার। আর এসব না খেলে তো আর শক্তি আসমান থেকে আসবে না। তাইনা? ”

ঐশী রাগে আগুনের শিখায় পরিণত হতে লাগলো। জুভান এসব পাত্তা না দিয়ে দুধের গ্লাস ঐশীর দিকে এগিয়ে বললো,

” এখন এটা। খেয়ে ফেলো ঝটপট। ”

ঐশী ত্যারাভাবে বললো,

” না। খাবো না। আমার এসব পছন্দ নয়। ”

” পছন্দ না হলেও খেতে হবে। কারণ এসব তোমার পছন্দ না হলেও স্বাস্থ্যের পছন্দ। সো ড্রিংক ইট। ”

ঐশী নাক মুখ খিচে দুধটা খেয়ে ফেলার চেষ্টা করলো। অর্ধেক খেয়ে আর পারলো না। গ্লাসটা আবারও ট্রে তে রেখে বললো,

” আই অ্যাম ডান। আর খাওয়া সম্ভব না। ”

জুভাম ট্রে সাইড টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,

” যেটুকু খেয়েছো , সেটুকুই এনাফ। নাও ঘুমাও। আমি লাইট নিভিয়ে চলে যাচ্ছি। ”

জুভান সোফায় থাকা ল্যাপটপের দিকে এগিয়ে গেলে ঐশী হুট করলে চিৎকার করে উঠে। আতঙ্কিত গলায় বলে,

” আমার ড্রেস ! আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করেছে ? আম..”

জুভান ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকে ভ্রু কুচকে নিলো। আসলেই! এই মেয়েটা ব্যাপক সন্দেহবাজ। জুভান ঐশীর চিৎকার কানে না নিয়ে ল্যাপটপ হাতে নিলো। কোনো উত্তর না দিয়েই চলে যেতে নিলে ঐশী আবারও চিৎকার করে উঠে,

” আসলেই আপনার চরিত্রের কোনো ঠিক নেই।আপনি কি করে পারলেন এভাবে ….”

আর বলতে পারলো না ঐশী। মাঝপথেই ডুকরে কেঁদে উঠলো। জুভান তো হতভম্ব হয়ে পিছন ফিরলো। ঐশীর পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

” স্টপ ক্রাইং। ”

ঐশী কান্না থামলো না। বরং আরো জোড়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। জুভান এবার ঐশীর পাশে বসে ঐশীর বাহু ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরালো। দাত চেপে বললো,

” ওয়ে। হ্যালো। নিজেকে কি মনে করো ? কোনো রাজ্যের কুইন। এত লেম চিন্তা ভাবনা তোমার। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন , আপনার ড্রেস আমি চেঞ্জ করেনি। বমি করে ড্রেস নষ্ট করে ফেলেছিলেন। তাই হোটেলের একজন ফিমেল সার্ভেন্ট এসে চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছে। ”

ঐশী কান্না থামিয়ে ভিজে চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান রাগে ঐশীর বাহু ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দিলো। তারপর ল্যাপটপ হাতে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
ঐশী চেয়ে রইলো অবাক পানে। নিদারুণ বিস্ময় ওই কালো মনির চোখ জোড়ায়। এই মানুষটাকে এখনো চিনে উঠতে পারেনি সে। একেবারেই না।

আচমকা ঐশীর মুঠোফোনে ” রিং রিং ” বেজে উঠলো। ঐশী চোখ মুখ মুছে ফোন হাতে নিলো। হোয়াটসআপ মেসেজ। ঐশী মেসেজটা ওপেন করলে দেখে কয়েকটা ছবি। তন্ময়ের খুনের দৃশ্য। ঐশী এসব দেখে থমকে গেলো। দরদর করে ঘেমে উঠলো তার কপাল। ঐশী ফিরতি মেসেজ করলো,

” কি চাই তোমার ? ”

” টুং” করে মেসেজ আসলো। ঐশী ধুকধুক মন নিয়ে মেসেজ পড়লো। লেখা,

” তোমার সাথে দেখা করতে চাই। ”

ঐশী একটু ভাবলো। তারপর লিখলো,

” ওকে। কোথায় দেখা করতে হবে অ্যাড্রেস পাঠিয়ে দিও। ”

ঐশী ফোন বেডের উপর রেখে “দ” আকৃতিতে বসলো। দুহাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরে দুলতে দুলতে ভাবলো,

” কে এই মানুষ ? ছেলে নাকি মেয়ে? আর কিভাবে এসব ছবি পেলো ও। ”

ঐশী এসব ভেবেই ভয়ে একদম সেটিয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর হৃদপিণ্ড টা জোরে চলছে। এবার কি হবে!

_______________________

জুভান রুমে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করলো। ল্যাপটপ বেডে জোরালো ভাবে রেখে দিয়ে সোফায় বসলো। রাগে গড়গড় করতে করতে বললো,

” কি পেয়েছে কি এই মেয়ে। যখন যা মুখে আসে তাই বলে। আমাকে এতদিনে এমন মনে হয়েছে ওর। মানছি একসময় আমি মেয়েবাজ ছিলাম। কিন্তু কখনোই কোনো মেয়ের সম্মতি ছাড়া ওকে ছুঁইনি। আর এই মেয়ে কত সহজেই আমাকে চরিত্রহীন বলে দিলো। রাবিশ! ”

জুভান যখন রাগ সামলাতে ব্যস্থ তখন ওর ফোনে কল আসে। জুভান পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে একজন বললো,

” স্যার , কাজটা শেষ। ”

জুভান বাঁকা হাসলো। বললো,

” গুম করে দিয়েছো তো, ঠিকভাবে ? ”

” জ্বি স্যার। ”

” ভেরি গুড। এখন নিউজ সেন্টার গুলোকে সামলে নিও। রাখছি।”

জুভান সোফা থেকে উঠে ফোন কেটে দিলো। একটু নিরব থাকার পর শব্দ করে হাসলো। পরক্ষণে হাসি থামিয়ে বললো,

” নিষিদ্ধ কাজ করার পর সেটা অতি শীগ্রই গোপন করে ফেলতে হয়। নাহলে সেই অসাবধানতা, নিষিদ্ধ কাজ আর নিষিদ্ধ লোক দুজনের জন্যেই বিপদ ডেকে আনে। ”

____________________

“হক মহল ” বাড়ির বাগানে আরাম কেদারায় বসে আছেন সাহেদুল হক। হাতে চায়ের কাপ। পরনে একটা সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি। খুব আরামসে বসে গল্প করছেন একজন আত্মীয়ের সাথে। হঠাৎ উনার কাছে ছুটে এলো এক ছেলে। সাহেদুল হক তার দিকে তাকাতেই ছেলেটা হাপাতে হাপাতে বললো,

” সাহেব , তন্ময় ভাইরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আজ সকাল থেকে। ”

সাহেদুল হক এই খবর শুনে খুব একটা আশ্চর্য হলেন না। ব্যাপারটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বললেন,

” আরে। দেখো কোথায় মদ খেয়ে পড়ে আছে। ”

” সত্যি বলছি সাহেব। আমি সব জায়গায় , সব বারে খুঁজেছি। উনি কোথাও নেই। ”

সাহেদুল হক এবার রাগী চোখে তাকালেন। বললেন,

” তো তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে কি করবো আমি। নাচবো। ধিং তা নানা ধিং। যত্তসব। যাও এখন। আমার এখন বিশ্রামের সময়। ”

ছেলেটা এসব শুনে আহত ভঙ্গিতে তাকালো মন্ত্রী পদে বসে থাকা এই মানুষরূপী জানোয়ারের দিকে। একটা মানুষ এতোটা নির্দয় কি করে হয়! ভেবে পায়না সে।

#চলবে

শব্দসংখ্যা – ১০০০+

অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্থ আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম দিবো না। কিন্তু পরে ভাবলাম আপনাদের খারাপ লাগবে। মনে মনে আমাকে গালিও দিতে পারেন। তাই ছোট করে একটা পার্ট দিলাম। হ্যাপি রিডিং।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/193725929338642/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here