ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-২৫

0
1937

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আকাশে কুঞ্জ মেঘের ভেলা পেরিয়ে প্লেন এসে নামলো মাটিতে। একজন একজন করে নেমে পড়লো সবাই প্লেন থেকে। জুভানের কাধে একটা ব্যাগ আর ঐশী লাগেজ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
জুভানের জন্যে অপেক্ষা করছিলো শাহাদাত আর ওর দুজন বডিগার্ড। জুভান আর ঐশীকে আসতে দেখে ওরা তিনজন এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ঐশী আশপাশে তাকিয়ে হাঁটছিলো আর নখ কাটছিল দাত দিয়ে। তপ্ত দুপুর। সূর্য একদম মাথার উপরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জুভানের গরম লাগছিলো তাই সে মাস্ক খুলে ফেলে দিলো। কিন্তু এতেই ঘটলো বিপত্তি। একদল লোক ওকে দেখে দৌড়ে এলো ওর কাছে। মুহূর্তেই মধ্যেই ভিড় জমে গেলো এয়ারপোর্টে। জুভানের এসব দেখে কিছুটা রাগ লাগলো। সারাদিন জার্নি করে মন মেজাজ একটুও ভালো নেই। তারমধ্যে এসব! তবুও সে হাসিমুখে ওদের কয়েকজনকে অটোগ্রাফ দিলো। বাকিদেরকে বডিগার্ড সামলে নিলো। ঐশী একপাশে দাড়িয়ে চোখ বড়বড় করে এদের কাজ দেখছিলো। এতদিন টিভিতে, মুভিতে এসব দেখতো। আজ তো সরাসরি! তবে ঐশীর ভালো লাগছে। জুভান ভিড়ের মধ্যে মাথা উচু করে একবার ঐশীকে খুঁজলো। বেশ খানিক তাকানোর পর আচমকা ঐশীর দেখে মিললো একটা ছাউনির নিচে। জুভান ঐশীকে কিছু একটা ইশারা করে কিন্তু ঐশী বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুচকে হাত নাড়ালো ও। জুভান অধৈর্য্য হয়ে শাহাদাতকে ফিসফিস করে বললো,
–” ঐশীকে গাড়ীতে তুলো। যাও। ”

শাহাদাত সবকিছু সামাল দিতে দিতে বললো,
–” কিন্তু স্যার, আপনি একা? ”
–” আমি যেটা বলেছি সেটাই করো। নো মোর ওয়ার্ডস। ”

শাহাদাত অযথাই দাত কেলিয়ে ভিড় থেকে বেরিয়ে গেলো। ঐশীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
–” ঐশী,”

ঐশী ভিড় থেকে চোখ সরিয়ে শাহাদাতের দিকে তাকালো। চোখ দিয়ে “কি” জিজ্ঞেস করলো। শাহাদাত বললো,
–” স্যার, তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছেন। ”

ঐশী তরিগরি করে বললো,
–” না, না , চাচা। আমি চলে যাবো টেক্সী করে বাসায়। স্যারের গাড়ি লাগবে না। ”
–” ঐশী, জেদ করো না।স্যার জানলে বকবেন আমায়। চলো আমার সাথে। ”
— ” আরে চাচা, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি স্যারকে ফোন করে জানিয়ে দিবো। এখন আসছি। ”

শাহাদাত আরো কিছু বলবে তার আগেই ঐশী উনাকে সালাম দিয়ে লাগেজ হাতে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।

________________________
সবশেষে ভিড় সামলে জুভান গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে উঠেই ঐশীকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে ফেললো ও। কপালে সরু ভাজ ফেলে শাহাদাতকে জিজ্ঞেস করলো,
–” ঐশী কই? ”

শাহাদাত মিনমিনিয়ে বললো,
–” স্যার, ঐশীকে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু ও মানা করে একাই চলে গেছে বাসায়।”

জুভানের প্রচন্ড রাগ লাগলো। দাতে দাত চেপে বললো,
–” আমার কথা বলো নি ওকে? ”
–” আব, বলেছি স্যার। বলেছে আপনাকে ফোন করে জানিয়ে দিবে। ”

জুভান কোনো উত্তর করলো না। কিন্তু ভীতরে ভীতরে ঠিকই ফুসছে ও। ওর বলা সত্বেও কি করে ঐশী একা একা চলে গেলো! এত সাহস! জুভান ফোন বের করে অযথাই স্ক্রল করতে লাগলো। মুঠোফোনের স্ক্রিনের উপর আঙুলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই দ্রুতগতিতে চলছে। শাহাদাত সেদিকে একঝলক তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করলো,
–” ঐশী, আজ তোমার কপালে শনি নাচছে। ইয়া আল্লাহ!”

________________________

আজ শুক্রবার। ঐশীর ছুটির দিন। ঘড়ির কাঁটা যখন “দশ” এর কাছাকাছি ঘুরছে তখন ঐশীর এলার্ম বেজে উঠলো। সবসময়ের মত ঘুমকাতুরে ঐশী এলার্ম অফ করে কাথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। একটু পর ঐশীর ফোন বেজে উঠলো। ঐশী চোখ বন্ধ করে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে কানে লাগালো। ঘুমঘুম কণ্ঠে ” হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে কিছুটা কড়া সুরে জুভান বললো,
–” কোথায় আপনি? ”

ঐশী জুভানের কণ্ঠ শুনতেই ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
–” বাসায় আমি। কেনো স্যার? কিছু কি হয়েছে? ”
–” না। এখনো কিছু হয়নি। তবে এবার হবে। কাল এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পাইনি কেনো তোমায়? ”

ঐশী মিনমিনিয়ে বললো,
–” আসলে স্যার , আমি একা একাই বাসায় চলে এসেছিলাম। তাই আরকি..”

ঐশীকে থামিয়ে জুভান বলে উঠলো,
–” এসেছো ভালো কথা। আমাকে জানিয়ে এসেছো? ”
–” আসলে ,আমি আপনাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবো ভেবেছিলাম। ”
–” তা, তুমি সেই কাজ করেছো? ”

ঐশী এবার জিহ্বা কাটলো। বাসায় ফিরে একদম ভুলে গেছিলো ফোন করার ব্যাপারটা। ঐশী ঢোক গিলে বললো,
–” আসলে..আমি..মানে….”
–” শাট আপ, ঐশী। তুমি আমার আন্ডারে চাকরি করো কিন্তু যাওয়ার আগে আমার পারমিশন নাও নি। এটাই তোমার প্রফেশনালিজম? টেল মি? ”

উফ! জ্ঞান দিচ্ছে! ঐশী একটা হাফ ছেড়ে দিয়ে বললো,
–” সরি স্যার। ”
–” ড্যাম ইউর সরি। আজ সন্ধায় একটা পার্টি আছে। অ্যাড্রেস পাঠিয়ে দিবো। চলে এসো ঠিক টাইম মতো।”

পার্টির কথা শুনে ঐশীর বিরক্ত লাগলো। কিন্তু চাকরি করে সে। তাই কোনোরূপ বারন না করে বললো,
–” ওকে স্যার। আমি পৌঁছে যাবো। ”

অতঃপর কিছুক্ষণ কেটে গেলো নিরবতায়। নিঃশ্বাসের শব্দ কতটা মধুর হতে পারে সেটা জুভান এখন উপলব্ধি করতে পারছে। ফোন কানে নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো ও। দূরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো,
–” তার এক উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার জ্বলন্ত রাগকেও ঠান্ডা করার ক্ষমতা রাখে। অদ্ভুত! ”
জুভানকে চুপ থাকতে দেখে ঐশী ফোন কানে রেখেই ভ্রু কুচকে নিলো। গলা ঝেড়ে বললো,
–” স্যার , ফোন রাখবো? ”

জুভান কিছুটা থতমত খেয়ে ফেলো। তরিগরি করে কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো সে। ঐশী বোকা বনে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে চিন্তা করলো,
–” উনার আবার কি হলো! স্ট্রেঞ্জ! ”

____________________________

আকাশের রং এখন লালাভ কালো। “গ্রীন ভিউ” রিসোর্ট মুখরিত হয়ে আছে নানাধরণের গানের সুরে। জুভান একপাশে দাড়িয়ে দুজন লোকের সাথে কথা বলছে। তিনজনের হাতে কোল্ড ড্রিংকস। জুভান কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বারবার ঘড়ি দেখছে। ঐশী এখনো এসে পৌঁছায় নি রিসোর্টে। এই মেয়েটা সময়ের কোনো তোয়াক্কাই করে না। সবসময় লেট। জুভান এসব ভেবে যখন লোকগুলোর সাথে কথা বলায় মগ্ন হলো ঠিক তখন ঐশী রিসোর্টের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলো। পরনে সাদা রঙের লেহেঙ্গা। ঐশী দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সাথেসাথে ওর উপর গোলাপের লাল পাপড়ি ছিটিয়ে দেওয়া হলো। ঐশী চমকে উঠলো। দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে ভিজে উঠলো রক্তিম পাপড়ির বৃষ্টিতে।
জুভান দূরে দাঁড়িয়ে ঐশীর কর্যকলাপ দেখলো। চোখ থমকালো হাজারবার। ওকে দেখে মনে হচ্ছে সাদা মেঘের চাদরে জড়ানো এক মেঘবালিকা। ঐশীর মুখের হাসি দেখে জুভানের ঠোঁট আপনা আপনি প্রসারিত হয়ে গেলো।এই মেয়েটা কি অদ্ভুত! সামান্য কিছুতেই অসামান্য খুশি হয়। এত সাধারণ কেনো এই মেয়েটা? তার এই সাধারণ ব্যবহারই জুভানকে ওর দিকে আকৃষ্ট করে। এক মিষ্টি ঘোরে আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জুভানকে অন্যমনস্ক দেখে পাশ থেকে একটা লোক ডাক দেয়। জুভানের ধ্যান ভ্রষ্ট হয়। অপ্রস্তুত হয়ে তাকায় আবার লোকের দিকে। ঠোঁট কথা বললেও অবাধ্য চোখ বারবার সেই মেঘবালিকার দিকে ছুটে যায়। তার একান্ত, ব্যাক্তিগত মেঘবালিকা!

ঐশী রিসোর্টের একপাশে এসে দাঁড়ায়। একজন ওয়েটার ওর কাছে ড্রিংকস দিয়ে যায়। ঐশী ড্রিংকস খেতে খেতে চারপাশে তাকায়। খুব বিরক্ত লাগছে এখানে ওর।
অনেকক্ষণ ধরে দু ছেলে ঐশীর দিকে নজর রাখছে। ঐশীর দিকে তাকিয়ে একজন আরেকজনকে বললো,
–” ভাই ,কি খাসা মাল। তাইনা? ”
–” একদম। পটাতে পারলে আজকের রাতের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করতে হবে না। উফ! ”

ঐশীর মাথা কেনো যেনো ঘুরছে। চোখের সামনে লাল নীল প্রজাপতি দেখছে। ভ্রম নাকি! ঐশী চোখ পিটপিট করে তাকালো। এবার তো আরো ভয়ঙ্কর! ঐশীর সামনে বেলুন উড়ছে। একেক বেলুনের হরেক রং। ঐশী বেলুন গুলো হাত দিয়ে ছুঁতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ঐশী বুকে হাত গুটিয়ে মুখ ফুলিয়ে তাকালো বেলুনগুলোর দিকে। পঁচা বেলুন! ঠিক তখন ঐশীর পাশে এসে দাঁড়ালো ছেলেগুলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
–” হেই, কিউটি? ”

ঐশী চোখ বড়বড় করে ওদের দিকে তাকালো। বললো,
–” কে কিউটি? ”

ছেলেগুলো ঐশীর কথা শুনে অবাক হলো। তাও হাসিমুখে বললো,
–” কে আবার? তুমি। ”
–” কিন্তু সে তো আমায় রণচন্ডি বলে ডাকে। কখনো তো কিউটি বলে ডাকে নি? ”
–” সে কে?

ছেলেগুলোর অবাক করা প্রশ্নে ঐশী খিলখিল করে হেসে উঠলো। হেলেদুলে বললো,
–” সে? আমার সে খুব বড় মানুষ! সবাই তার কাছে , ওটাকে কি যেনো বলে ,ওহ অটোগ্রাফ নিতে আসে। হুমম। ”

ছেলেগুলো একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। এই মেয়েটা যে নেশা করেছে সেটা তাদের বুঝতে বাকি নেই। এবার মেয়েটার পরিণতি ভেবেই ছেলেগুলো হাসলো। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
–” তুমি যাবে তোমার সে’এর কাছে? ”

ঐশী গ্লাসের বাকি ড্রিংকস-টুকু একদমই গিলে ফেললো। তারপর বললো,
–” না। যাবো না। আমি ড্রিঙ্কস খাবো। ”
–” ওহ। তুমি ড্রিংকস খাবে? তাহলে চলো আমাদের সাথে। অনেক ড্রিংকস দিবো তোমায়। চলো। ”

ছেলেগুলো ঐশীর উত্তরের অপেক্ষা না করে ওকে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো তাদের আস্তানায়। নেশায় বুদ ঐশী এসব ঘুর্ণাক্ষরেও টের পেলো না। সেও হেলেদুলে তাল মেলাতে লাগলো ওদের পায়ের সাথে।

#চলবে

শব্দসংখ্যা – ১২০০+

একটা ধামাকা আছে। সেটা আগামী পর্বের মধ্যেই দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/194947522549816/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here