ইতি মাধবীলতা – ৭ (খ)

0
774

ইতি মাধবীলতা – ৭ (খ)
আভা ইসলাম রাত্রি
নিচের নোটটা পড়বেন!

জমিদার বাড়ীর উঠোনে বিশাল এক বাগান। বাগানে কি যে সুন্দর সুন্দর ফুলের চারা! ফুলের সুবাসে চারপাশটা যেনো নদীর ঢেউ এর ন্যায় ভেসে যায়। বাগানের কারবারির জন্যে লোকও তো কম না। প্রায় তিনজন মালি দিনরাত এই বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনে মত্ত! একটু আগে মেঝো কাকী মাধবীকে এসে বলেছেন, ‘ বাগানটায় নাকি পোকার উপদ্রব হয়েছে আজকাল। একটুখানি দেখে আসতে। ‘ বিষয়টা বেশ অবাক করা ছিলো। এমনিতে এ বাড়ির কেউ মাধবীকে কিছু ছুঁতে দেয়না। সেখানে এত শখের বাগান দেখতে যেতে বলছেন? তবে মাধবী দিরুক্ত করলো না। চুলের তেলটা আবারও জায়গায় রেখে পা বাড়ালো বাগানের দিকে।

মাধবী চোখে জমিদার বাড়ীর বাগানের সৌন্দর্য ভেসে উঠতেই মুখটা বিস্ময়ে ‘হ’ আকৃতির ধারণ করলো। এত সুন্দর বাগানও হয় বুঝি? যেনো সাক্ষাৎ মায়ের হাতে গড়া! মাধবী রিতা মাধবীলতা ফুল স্পর্শ করলো। ইশ, ফুলের নরম গা যেনো শরীরে কাঁটা দিচ্ছে! মাধবী মালিনী কে জিজ্ঞেস করে বসলো,
— এই চারাগুলো কে লাগিয়েছে গো?

মালিনী আগাছা কাটতে কাটতে নম্র কণ্ঠে উত্তর দিলো,
— বড় কত্তা, কত্তি! তেনার গাছের কি শখ! বিদেশ থেকে গাছ এনে একানে লাগান। দিনরাত নজর রাকেন গাছগুলোর উপ্রে। গাছের এত্তু অযত্ন হলে, আমাদের তো আবার বকতে গিয়ে নিস্তার ছাড়েন।

মাধবী মনে মনে বেশ খানিক অবাক হলো। মানুষটার কত শত অদ্ভুত শখ! সারাদিন বাইরে থেকে এসবের উপর নজর রাখার সময় পান বুঝি? মাধবী প্রশ্ন করলো,
— তোমাদের বড় কর্তার আর কি কি শখ আছে?
— তেনার তো শখের বিশাল কারবার গো, কত্তি! বড় কত্তার কুত্তা পালার শখ আছে। এ বাড়িতে তো ছিল দুটো কুত্তা। নাম কি যেনো….. ওহ হ্যাঁ, হেবন আর হিল! একটা বেটি কুত্তা, একটা ব্যাটা কুত্তা। ওরা একন বড় কত্তার লগে শহরে থাকে।

‘হেবন আর হিল’ এটা আবার কি ধরনের নাম? মাধবী কিছু একটা ভেবে শুধরে দেবার চেষ্টায় বললো,
— হ্যাভেন আর হেল?
মালিনী জিভে কামড় দিলো। মাথা চুলকে বললো,
— হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঐটাই। কুত্তার আবার নাম? কি আর কমু! সবই বড় কত্তার দয়া!

মাধবী হেসে ফেললো মালিনির কথার ছন্দে। কি সুন্দর করে কথা বলে মহিলাটা! হঠাৎ মাধবীর মনে পড়লো, নিলাংসুর ছোট ভাই কোথায়? তাকে তো আর দেখেনি এ বাড়িতে? মাধবী কৌতুহল বশত প্রশ্ন করলো,
— আচ্ছা, উনার ছোট ভাই কোথায়? তাকে তো দেখিনি এ বাড়িতে!
— তেনি তো বাড়িতে থাকেন না গো কত্তি। বিদেশ থাকে বিদেশ!
— বিদেশ কোথায়?
— ওই যে, কলিকত্তা আছে না? ওকানেই!
— কলকাতা?
— হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটাই।
— উনার কোনো বোন নেই?
— আছে তো। ছোটমা তো শহরে থাকেন, বড় কত্তার শহরের বাড়িতে। জানো কত্তি, আমাদের ছোটমা দেখতে একদম ম্যাম সাহেবের মতন। বাড়ির সবচেয়ে ছোট কিনা, কত্তা বাবুর খুব আদুরের। তাই তো বাড়ির মেয়েকে অতদূর পড়তে পাঠালেন।

নিলাংসুর সম্পর্কে এতকিছু জানতে পেরে মাধবীর কেনো যেনো বেশ লাগলো। মনের মাঝে চিকন সুরের বাদ্য বাজলো ক্রমাগত, অবিরাম! মাধবী আর কিছুক্ষণ বাগানটা দেখেশুনে বাড়ির ভেতর চলে এলো। বাগানটা ঘুরে আজ মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে।
_________________________________
রাতের খাবার পর্ব বেশ সুষ্টভাবেই সম্পন্ন হলো। নিলাংসু বাবার সাথে রাজনৈতিক বিষয়ে দরকারি কথাবার্তা সেরে মাত্রই নিজ কক্ষে প্রবেশ করলো। মাধবী তখন চুলের জট ছাড়ছিলো। নিলাংসু সেদিকে একপল চেয়ে আলমারীর দিকে পা বাড়ালো। জরুরি নতিপত্র ঘাঁটাঘাটি করতে করতে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
— ব্যাগ-পত্তর তৈরি করো। আমরা দুদিন পর শহরে যাচ্ছি।

নিলাংসুর কথায় মাধবী বেশ খানিকটা অবাক হলো। সে চুলের ভাঁজ যেমন তেমন রেখে ফিরলো নিলাংসুর পানে। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,
— শহরে? কেনো?
— আমি শহরে কাজ করি। জানো তো তা? নাকি নিজের পতি কি কাজ করে সেটাও ভুলে বসে আছো?

মাধবী ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিলাংসুর পানে। এ বাড়িতে এসে জতদূর শুনেছে, নিলাংসু বাংলার এক নামিদামি নেতা। পাকিস্তানিদের কাছেও তার বেশ হাকডাক। নেতা দেখেই বুঝি শহরে থাকেন তিনি? মাধবী ত্যাড়া কণ্ঠে বললো,
— আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাইনা। আপনার যেতে হলে, আপনি যান। আমায় টানছেন কেনো এর মধ্যে? আমাকে আমার বাড়িতে রেখে আসুন, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

নিলাংসু কিঞ্চিৎ হাসলো। নতিপত্র পুনরায় যথা স্থানে রেখে আলমারির কপাট বন্ধ করে দিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো মাধবীর পানে। মাধবী কিছুটা পিছিয়ে গেলো তাতে। হুট করে নিলাংসু মাধবীর কপালে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করলো। মাধবীর মনে হলো, তার রক্ত হঠাৎ করেই উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার সর্বাঙ্গ শিরশির করছে। মাধবী সরিয়ে দিতে চাইলো নিলাংসুকে। তবে নিলাংসুর এমন শক্ত ও ভারী দেহখানা একটুও সরাতে পারলো না। অতঃপর, নিলাংসু ঠোঁট মাধবীর কানের লতিতে স্থাপন করলো। ফিচেল কণ্ঠে বললো,
— যে একবার আমার খাঁচায় বন্ধি হয়ে যায়, তার নাম বাইরের দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে যায়। আমার খাঁচা থেকে তোমাকে একটা জিনিসই মুক্ত করতে পারে…মৃত্যু!

মাধবীর চোখ বড় হয়ে গেলো। সে খামচে ধরলো নিজের হাঁটুর কাছের শাড়ী। একটু আগে এ কি বললো নিলাংসু? নিলাংসু সরে এলো। হেঁটে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। গা থেকে পাঞ্জাবি ছাড়াতে ছাড়াতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
— চিন্তা করো না। এত সহজে মৃত্যু তোমায় পাকড়াও করতে পারবে না। আমি আছি তো! ভয় পেও না।

মাধবী তখনো শক্ত দেহে নিজ স্থানে স্থির! বুকের ভেতরটা দ্রিমদ্রিম শব্দ করছে। প্রাণ পাখি বোধহয় এখনি দেহ ত্যাগ করবে!

#চলবে
পেজের রিচ কমে গেছে, আপনারা হয়তো নিজেরাও বুঝতে পারছেন। তাই ভাবছি একটা কাজ করা যাক। এখন থেকে আগামী পাঁচ পর্ব অব্দি প্রতি পর্বে আপনারা ছোট করে ১ হাজার কমেন্ট করতে পারবেন? কমেন্ট বলতে একটা অক্ষর করলেই চলবে। তার বদলে আমি আগামী পাঁচ পর্ব বিশাল আকারের দিবো। আসলে সবসময় এভাবে কমেন্ট চাইতে ভালো লাগেনা। নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। তাই এই বড় করে পর্ব দেওয়ার বিষয়টি আনলাম। রাজি? আশা করি, আমার পাঠকরা বরাবরের মত এবারও আমায় নিরাশ করবেন না।

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here