ইস্ক পর্ব-১৭

0
1126

#ইস্ক
#সাদিয়া

১৭
সূর্যের তীর্যক রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বুকে। আলো ফুটতেই সবাই সবার নিত্য কাজে হুমড়ে পরছে। নতুন একটা দিনের আলো ফুটা মানে কিছু মানুষের কাজের শুরু আর কিছু মানুষের আরেকটা আরাম আয়েশের শুরু।
তিতিল সকালে প্রতিদিনকার মতো নিজের কাজ সেরে নিল। একে একে সবাই এসে পরছে নিচে ব্রেকফাস্টের জন্যে। ইয়াদ কে না দেখে ইনা তাকে নিচ থেকে ডাকল। ইয়াদের শব্দ নেই। ইনা তিতিল কে বলল তাকে ডেকে দিতে।

তিতিল গিয়ে দেখল লোকটা সোফায় উল্টোপিঠে উবু হয়ে শুয়ে আছে। ঠোঁট বিড়বিড় করে তিতিল বলল,
“আশ্চর্য উনি এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন? জানে না নাকি এভাবে শুয়া আল্লাহ পছন্দ করে না। আজাইরা মাতবরি।”
কপাল কুঁচকে এসেছে বিরক্তে। গিয়েই আচমকা বাহু ধরে ধাক্কা দিতে শুরু করল। মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব তুলে তাকাল তিতিলের দিকে।
“সকাল হয়েছে খুব আগে। উঠুন নাস্তার জন্যে বসে আছে ওখানে।”

“আমার টা তুমি করে নাও।”
ঘুম ঘোরে বলল ইয়াদ।

“আশ্চর্য আপনার নাস্তা আমি করে নিব মানে?”

“….

“কালকের মতো পানি ঠেলে দিচ্ছি আমি তবে।”

ধড়ফড়িয়ে উঠল ইয়াদ।
“ইডিয়ট। যাও আসছি আমি।”
তিতিল চুপচাপ চলে গেল। ইয়াদ চোখ ডলতে ডলতে বলল,
“ধানিলঙ্কা পুরো।”

খাবার টেবিলে বসে আছে চারজন। তিতিল পাশে দাঁড়িয়ে ইয়াদের মুখে রুটি আর ডিম তুলে দিচ্ছে। ইনা খাওয়া রেখে তাকাল একবার। তার একটু পর বলল,
“মা ভাই কথা ছিল একটা।”

রেহেলা বেগম বললেন,
“কি কথা?”

“….

“কি হলো আপু বলো।”

ইনা সময় নিয়ে বলল,
“ভাই আর তিতিলের ডিভোর্স নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম।”

থমকে গেল তিতিল। বুকটা ধক করে উঠল। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে তাকাল ইনার দিকে। এদিকে ইয়াদ বিস্মিত হয়ে আছে। চোখ বোনের উপর থেকে সরছেই না। কানে আবার একথাটা বাজতেই সে বুকে ব্যথা অনুভব করল। বিরহের এক চিনচিনে ব্যথা!

“আমি তিতিলের জন্যে একটা ছেলে পছন্দ করেছি। সে তিতিলের সাথে মিট করতে চায়। আর ডিভোর্স নিয়ে আমি উকিলের সাথে কথা বলে নিব।”

অবাক সুরে রেহেলা বেগল বললেন,
“ইনা!”

“কি মা? একটা মেয়ের জীবন তো আমরা এমনি নষ্ট করতে পারি না। আর কত মেয়েটা এভাবে থাকবে? ওর কি ভবিষ্যৎ নেই? মায়ার বশে ওর জীবন টা কি নষ্ট করছি না আমরা? কি দরকার আছে মিথ্যে একটা সম্পর্কের? তার চেয়ে ডিভোর্সের পর নিয়ামের সাথে তিতিলের বিয়ে হয়ে ভালো হবে।”

ভয়ংকর গর্জে উঠে ইয়াদ। চোখ লাল হয়ে গেছে। ডান হাত দিয়ে টেবিলে সজোরে বারি দিয়ে বলল,
“এমন কিছুই হবে না।”

“হবে না মানে? কি বলতে চাস ভাই?”

“এ বিষয় নিয়ে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।”

ইয়াদ হনহন করে চলে গেল। তিতিলের ভেতরটা ভার লাগছে। চোখ দিয়ে টলমল হওয়া পানিটা গড়িয়ে পড়তেই সে মুছে নিল। কিছু না বলে চুপচাপ উপরে চলে গেল বিষন্ন ব্যথিত মনে।

“ইনা এমন টা করা ঠিক হবে না।”

“ঠিক বেঠিক বুঝি আমি মা।”
ইনাও রাগ দেখিয়ে চলে গেল। অসহায় মুখে বসে রইলেন রেহেলা বেগম।

ইয়াদের ভেতরটা আগুনের মতো জ্বলছে। অস্থির ভাব কাজ করছে তার। দাঁতে দাঁত লেগে আসছে বারবার। ঠোঁট গুলি কাঁপছে রাগে। মুখ ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। গরম ধোয়া বের হচ্ছে যেন নিশ্বাসের সাথে। স্বস্তি লাগছে না। ইচ্ছা করছে সব কিছু ধ্বংস করে দিক চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া হৃদয়ের মতো। লাল লাল চোখ গুলি দিয়ে এক ফোটা পানি পরতেই ইয়াদ সাথে সাথে তা মুছে নিল। বাইকের চাবি হাতে নিয়ে গছগছ করে বেরিয়ে গেল। রেহেলা বেগম পিছন থেকে ডাকলেও শুনেনি ইয়াদ। রেহেলা বেগম খুব চিন্তিত। তিনি জানেন না ভাগ্য কি লিখে রেখেছে।

তিতিল পাথর হয়ে জমে আছে। নিজেকে অনুভূতি শূন্য লাগছে। চোখের কোণার পানিটাও যেন বরফ হয়ে গেছে। টলমলে পানিটা চোখ দিয়েও গড়িয়ে পরছে না। ভেতরে শুধু ভারি একটা কিছু অনুভর করছে যে। যেটা তার দম টা আটকে আটকে আনছে। শ্বাসনালী চেঁপে ধরেছে যেন নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার অভিপ্রায়ে।

বাইক বের করে ইয়াদ উপরে তাকাল। কেন মনে হচ্ছিল তিতিল ছাদে আছে। তার ধারণা সত্যি। তিতিল চেয়ে আছে। ইয়াদ মাথা উঁচু করে একবার তাকিয়ে বাইক স্টার্ট করে চলে গেল। এবার তিতিলের চোখের জমা পানিটাও গড়িয়ে পড়ল বাঁধভাঙ্গা।

—-
রেহেলা বেগম চিন্তিত মুখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। পাশেই বসে আছে হিমা। সে নির্বাক। কি হতে চলছে কেউ বুঝতে পারছে না। দুজনের মনেই ভয় গুটিয়ে নিয়েছে তাদের।

“হিমা।”

“বলো মা।”

“ইনা এসব ঠিক করছে না। জানি না কি হবে।”

“আমিও সেটাই ভাবছি মা। ভাইয়া যদি জানতে পারে তিতিল আপু গেছে নিয়াম ভাইয়ার সাথে দেখা করতে কি বলবে সেটাই ভাবছি।”

“আমি তো নাই করেছিলাম। তিতিলও যেতে চায় নি। ইনা যে জোর করে..”

“আল্লাহ জানে কি হবে মা।”

“…..

একটুপর বাইকের আওয়াজ পেয়ে মা মেয়ের আত্মা শুকিয়ে গেছে। অজানা ভয়ে তাদের শুকনো পাতার মতো নিগড়ে নিয়েছে সক রস। ইয়াদ এসে গেছে এবার কি হবে?

ইয়াদ বাড়িতে ঢুকে দেখে হিমা আর মা কে। ওদের মুখের ভাব দেখে কপাল কুঁচকালেও কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হলো না আর। রান্নাঘরে ফরিদা আন্টি কে বলল,
“ফরিদা আন্টি তিতিল কে বলেন আমার জন্যে ফ্রিজ থেকে পানি দিয়ে আসতে।”

ইয়াদ চলে গেল।

“ইয়াদ আব্বা তিতিল মা তো বাসায় নাই।”

সিঁড়ির ধার থেকে ইয়াদ চমকে গেল। ফিরে এসে একবার মায়ের দিকে তাকাল। উনাকে খুব অস্থির লাগছে। জিজ্ঞেস করল,
“তিতিল কোথায়?”

“…..

“কি হলো তিতিল কোথায় মা?”

“ও একটু বের হয়েছে বাবা।”

“কোথায় গেছে?”

“….

এবার সে জোরে চিৎকার করে উঠল।
“তিতিল কোথায় গেছে?”

ফরিদা আন্টি রেহেলা বেগম হিমা ভয় পেয়ে গেয়ে নিস্তব্ধ হয়ে উঠেছেন। ঢোক গিলে বললেন,
“বাবা ও ইনার সাথে গেছে।”

“আপুর সাথে মানে?”

“….

“কি হলো বলছো না কেন?”

“ইনা অফিস থেকে এসে তিতিল কে নিয়ে গেছে নি নিয়ামের সাথে দেখা করাতে।”

রেহেলা বেগম জানেন না ছেলে এবার কি বলবে। ইয়াদ তাকিয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে। মুখের ভাব কেমন দেখাচ্ছে। অজানা ভয়ে এবার আরো কুঁকড়ে উঠলেন তিনি। হঠাৎ ইয়াদ বলল,
“কাজ টা ঠিক হয় নি।”

ইয়াদ প্রবল বেগে ছুটল বাহিরের দিকে। রেহেলা বেগম হিমার ডাকে সে সাড়া দেয় নি। রাগে ফুসফুস করতে করতে বাইক নিয়ে আবার বের হয়ে গেছে।

পাগলের মতো বাইক চালাচ্ছে ইয়াদ। ভেতরে যেন দাবানল শুরু হয়েছে। চোখ গুলি বারবার নাম না জানা ভয়ে ঝাপসা হয়ে আসছে তার।

ইনার অফিসে গিয়ে চিৎকার শুরু করল তার কেবিনে।
“হচ্ছে টা কি ভাই?”

“তোমার সাহস কি করে হয় আপু এমন একটা কাজ করার?”

“কি বলতে চাস তুই?”

“কি বলতে চাই বুঝতে পারছো না? তিতিল আমার বউ আর তুমি।”

“কিসের বউ?”

“মানে?”

“দুই বছর বউ কোথায় ছিল তোর? ভালো করেই জানিস এখানে এসেছিস ডিভোর্সের জন্যে। আর আমরা তিতিলের জীবন টা নষ্ট করতে পারি না।”

“আপু তুমি ভালো করেই জানো আমি ব্যবসার কাজে এসেছি এখানে। আর ডিভোর্স দিব কি দিব না সেটা আমি বুঝব। তিতিল কোথায় বলো।”

“নিয়ামের সাথে।”

“কোথায় আছে সেটা বলো।”

“আস্তে ভাই এটা অফিস।”

“ও কোথায় আছে আমায় ঠিকানা দাও।”

“রেস্টুরেন্টে আছে ওরা।”

মাথার রগ এখনো দপদপ করে উঠানামা করছে ইয়াদের। নিজের রাগ কে কিছুতেই সামলে নিতে পারছে না সে।

“ভাই একবার ভাব ডিভোর্সের পর মেয়েটার কি হবে?”

রাগের মাত্রা বাড়ে ইয়াদের। বোনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
“তিতিল কে না আমি ডিভোর্স দিচ্ছি না আর না এই জীবন থাকতে দিবো।”

চলবে♥
(নিজের মন্তব্যটুক করে যাবেন💛)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here