ইস্ক পর্ব-২০

0
1228

#ইস্ক
#সাদিয়া

২০
আকাশে সোনার থালার মতো চকচক করছে সূর্য টা। নিজের চাকচিক্য রশ্মির কারণে তাকাতে পর্যন্ত পারা যাচ্ছে না। যোহরের আজান দিতে আর কিছুক্ষণ। একটু আগের মৃদু হাওয়া বয়ে যাওয়া আবহাওয়া মুহূর্তে বদলে রোদের দেখা মিলেছে। ইয়াদের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। তিতিল মেয়েটার নাকে বিন্দুবিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটের উপরপাটিতেও ঘাম জমে আছে। ইয়াদ ব্রেক কষে সেই যে তাকিয়েছিল তার দিকে। হঠাৎ ইয়াদের মুুচকি হাসি দেখে তিতিলের কপাল কুঁচকে এলো। কৌতূহল বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করা হয়নি আপনি এভাবে হাসছেন কেন।

“জিজ্ঞেস করবে না হাসছি কেন?”

ইয়াদের মুখ থেকেই কথা চলে এলো। তিতিল মুখ কালো করে ফিরিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ সিটবেল্ট খুলে তার দিকে ঝুঁকল কি মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। ইয়াদ ফের হেসে মিনমিন গলায় আওয়াজ তুলল,
“শুনেছিলাম যে মেয়ের নাক ঘামে তার স্বামী নাকি তাকে বেশ আদর করে?”

এহেন কথায় তিতিল তার দিকে ফিরল। সাথে সাথে তার অবাধ্য চুল আর ঝুমকা নড়ে উঠল। তার সঙ্গে চওড়া হয়ে হলো ইয়াদের হাসি।

“আদর না ছাই।”

“কিছু বললে?”

“না। কষ্ট ছাড়া দিয়েছেন টা কি হিসাব করবেন।”

এই বলে তিতিল নেমে গেল। ইয়াদ মাথা ঝাকিয়ে বাঁকা ঠোঁটে হাসল। মনে মনে বিড়বিড় করল,
“এজন্যেই তো আপনাকে এখানে এনেছি ম্যাম।”

তিতিল ফেলে সামনে চুল ঠিক করে দৃষ্টি ফেলল। বাগান বাড়ি যেমন হয় এটা যেন তারচেয়েও বেশি। এখানে বোধহয় প্রকৃতিরা খেলা করে। প্রাণভরে নিশ্বাস জমা করা যাবে এখান থেকে। বিস্ময়ে হতবাকে তিতিলের চোখ নেঁচে উঠল। যেখানে চোখ যাচ্ছে শুধু সবুজ গাছেদের সমাহার দেখতে পাচ্ছে। সরু একটা পাকা রাস্তা তাার পাশে ছোটছোট নানা ফুলের মেলা। রাস্তার সোজাসোজি ছোট্ট একটা সাদারং এর নীড় দেখা যাচ্ছে। বাড়ির দুই পাশেই শুধু গাছ দেখতে পাচ্ছে। এখানে যেন সব গাছের হাট বসেছে। আনমনে হৃদয় মন হেসে উঠল মেয়েটার। মুখে তৃপ্তির হাসি টেনে একপা একপা করে হাটছে তিতিল। সাথে পিছন পিছন আসছে ইয়াদ। অনেকদিন পর এখানে এসেছে। ব্যস্ত শহরের ধুলোবালির রেশ ঝেড়ে ফেলে প্রশান্তির এক নিশ্বাস টেনে নেয় বুকের ভেতর। এখানে শ্বাস নিলেও যেন তৃপ্তি পাওয়া যায়। ইয়াদ মুচকি হেসে তাকাল তিতিলের দিকে। মেয়েটা চোখ ভর্তি মুগ্ধতা ঠেসে নিয়ে হাটছে। বাড়ির যত কাছে যাচ্ছে ততই যেন মুগ্ধতায় মিলিয়ে যাচ্ছে সে। এক তলা বাড়ির কোণ ঘেষে টিনের চালে বেয়ে উঠছে পাতা ফুলের গাছ। তিতিলের মাথা থেকে সব কিছু যেন ছুটি নিয়েছে। নতুন একটা জগতে সে যেন বিরাজ করছে। আপাদত এই মুগ্ধতার বিস্ময়ের রেশে সে ডুবে গিয়েছে। বাড়ির টার দিকে তাকালে অদ্ভুত কিছু প্রশান্তির হাওয়া দুল খেয়ে যায়।

“এটা আমার দাদাভাই বানিয়েছিল দাদুকে নিয়ে অবসর সময় কাটানোর জন্যে।”

হঠাৎ ইয়াদের কথায় তিতিল তেমন চমকাল না। তবে তার দিকে না ফিরেই জিজ্ঞেস করল,
“মা ইনা আপু হিমা এখানে কেন থাকে না?”

“এটা শহর থেকে অনেক দূর তাই।”

তিতিল আর কিছু বলল না। নির্মল হাওয়া শরীরে বয়ে যাচ্ছে বলে তিতিল একদম নির্বিকার। ইয়াদ একেবারে তার কাছাকাছি চলে এসেছে। পিছন থেকে তিতিলের বাহু টেনে সামনের দিকে ফিরাল। মেয়েটাকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ দেওয়ার আগেই সেকেন্ডের মাঝে কোমর পেঁচিয়ে আরো কাছে টেনে আনল। নেশাক্ত এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাতাল করা কন্ঠে বলল,
“দাদাভাই এটা বানিয়েছিল দাদুর জন্যে। তবে এখন এটা আমার আর আপনার কাটানোর সময়ের জন্যে।”

“….

তিতিল ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলল। ইয়াদ আবার এক গালে হাসল। মুখ বাড়িয়ে দিল তিতিলের দিকে। তা দেখে মেয়েটা মুখ পিছিয়ে নিতে চাইলে ইয়াদ এক হাতে তিতিলের পিঠ ঠেলে তার দিকে নিয়ে এলো। ঠোঁট টিপে হেসে মুখ কানের কাছে এনে বিড়বিড় করে বলল,
“এখানে দাদুভাই আর দাদুর মতো আপনাকে নিয়ে আমি সময় কাটাব। একদম নিজেস্ব কিছু সময়। আপনার নাক ঘামার বিষয়টা একদম হাড়ে হাড়ে অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিব মিসেস ইয়াদ মাহাবুব।”

ইয়াদ ঝটপট নিজের জায়গায় এসে দাঁড়াল। ওদিকে ভয়ে মেয়েটা একদম গুটিয়ে গেছে। দাঁতে দাঁতে চেঁপে ভয়টাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে মনেপ্রাণে। হঠাৎ ইয়াদ তাকে বুকের সাথে চেঁপে ধরল। গলার খুব কাছে নিজের ভিজে ঠোঁট লাগিয়ে দিতেই মেয়েটা শিহরণে সর্বাঙ্গে কেঁপে উঠল। বিষয়টা ধারণা করতে পেরে ইয়াদ কোমল করে হাসল। একচুল না সরে নেশাময় গলায় ফিসফিস করে বলল,,
“তুমি যখন এভাবে ভয় পাওয়া না তখন আমার ঠিক এইভাবেই তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে মনটা হিসপিস করে রে তিতিল পাখি। আরো অনেককক কিছু ইচ্ছা জাগে মনে। মন বলে তোমাকে নিয়ে একলা ঘরে..”

কথা শেষ করার আগেই তিতিল তাকে ঠেলে নিজের থেকে দুরে সরাল। ইয়াদও এটা নিয়ে আর নাড়াচাড়া করল না। হেসে মুখ ফিরিয়ে নিল। ওদিকে লজ্জায় কান আর গাল দিয়ে যেন গরম ধোয়া বের হচ্ছি। এক্ষনি প্রেশারকুকারের মত সিটি বেজে সামনের লোকটাকে জানান দিবে।

“জানো তিতিল পাখি দাদাভাই আর দাদু নিজেদের শেষ সময় টা এখানে কাটিয়েছে।”

আচমকা তিতিল তাকাল ইয়াদের দিকে। মুখ দেখে তার বুঝতে দেরি হলো না লোকটা কষ্ট পাচ্ছে। ঠোঁটের কোণার হাসির আড়ালো লোকটার কষ্টভরা মুখটা যেন চাঁদের মতো ভেসে উঠছে।

ইয়াদ আবার বলে উঠল,
“দাদাভাই চলে যাওয়ার পর দাদু এখান থেকে আর শহরে যায়নি। এখানেই থেকেছে। দাদুর শেষ নিশ্বাস টা দাদাভাইয়ের মতো এখানেই কেটেছে তিতিল।”

ইয়াদ ঠিকভাবে বলতে পারছিল না লেগে আসছিল তার গলা।
“তিতিল স্বামীর স্ত্রীর মাঝের সম্পর্ক টা হলো ভালোবাসার সম্পর্ক। এখানে ভালোবাসা আর বিশ্বাস দিয়ে নীড় তৈরি করা হয়। কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়, আর জীবনের শেষ নিশ্বাস টা পর্যন্ত শক্তহাতে পাশে থাকতে হয়।”
একটু থামল ইয়াদ। আবার বলতে লাগল, “যা দাদাভাই আর দাদুর মাঝে ছিল। দাদাভাই চলে যাওয়ার পর দাদু একদম একলা হয়ে গিয়েছিল। এখান থেকে আর বের হয়নি তিনি। আমি দেখেছি জীবনের শেষ নিশ্বাসটা পর্যন্ত দাদুর মুখে মনে দাদাভাই ছিল। প্রতিটাদিন বিকেল বেলায় তিনি আমাদের সবাই কে ছেড়ে একলা কিছু সময় কাটাতেন দাদাভাই কে নীরবে মনে করবেন বলে। উনার সমস্ত জীবন জুড়েই যেন ছিল দাদাভাই। আমি দেখেছি দাদাভাই চলে যাওয়ার পর দাদু কতটা কষ্টে থাকতেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে তিনিও চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। এটা ভালোবাসা তিতিল। ভালোবাসার মাঝে দুইটা মানুষ থেকে একটাও যদি হারিয়ে কিংবা চলে যায় তখন ঠিক অপর মানুষটা বুঝে ভালোবাসার মর্ম কতটা গভীর হয়। ভালোবাসা হারিয়ে যেতে দিতে নেই। তিতিল ভালোবাসা হারিয়ে যেতে দিও না। ভালোবাসা..”

ইয়াদ আর বলতে পারছিল না। তিতিল খেয়াল করল লোকটা চোখের কোণার পানি টা আড়াল করে দৌড়ে পালাল।

চলবে♥

(আশা করব গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। আর শীতে শ্বাসকষ্ট বাড়ছেই🙂 দোয়া করবেন❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here