#উত্তরণ
পর্ব_২৩
ডিনার শেষে উজান ঠিক করে একবার হিয়ার সাথে কথা বলবে. আজ সারাদিন শুধুমাত্র অফিসিয়াল কথা ছাড়া একটাও কথা বলেনি হিয়ার সাথে. ওদের দুজনের হাতেই সময় বড্ডো কম.
হিয়া ডিনার করে একটা গ্লাস হাতে ধরে পুল সাইডে বসে ছিল, তখনি উজান আসে.
উজান: এখানে একা একা?
হিয়া: এমনি
উজান হিয়ার হাতের গ্লাস টা কে ইশারা করে: ডু ইউ বুজ?
হিয়া: (গ্লাস টা দেখিয়ে) ফ্রেশ লাইম সোডা۔۔۔এন্ড ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন ক্যাপ্টেন আই ডোন্ট বুজ.
উজান: ও
হিয়া: কিছু বলবেন?
উজান: আসলে আজকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি আপনি কেমন আছেন.
হিয়া: ঠিক আছি ক্যাপ্টেন. থ্যাংক ইউ.
উজানের হিয়ার উত্তর গুলো কেমন অনুভূতিহীন মনে হয়. ওর উপস্থিতিতে হিয়ার এই উদাসীনতা কোথাও যেন কষ্ট দেয় ওকে.
উজান: আপনাকে এখানে আর একা থাকতে হবেনা, নিজের রুমে যান.
হিয়া কোনো উত্তর দেয় না, চুপ করে পুলের জলের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে. উজান এবার এসে ওর পাশে বসে.
উজান: কি ভাবছেন? আমাকে বলা যায়?
হিয়া: আচ্ছা উজান স্যার, আপনার জন্মদিন কবে?
উজান: আমার জন্মদিন নিয়ে আপনার কি দরকার?
হিয়া: আপনার জন্মদিনে কাকিমা কত আয়োজন করেন তাই না? আপনার পছন্দের খাবার বানান, পায়েস রান্না করেন۔۔۔۔তাই না?
উজান হেসে: হুম, তা করে. আমি কাছে থাকি আর না থাকি, মা সব কিছুই করে.
হিয়া: আমার জন্মদিনে বাবা কেক আনতো. আমার ফেভারিট রেস্টুরেন্টে খেতে যেতাম, কিন্তু মার হাতের পায়েস, রান্না কোনোদিনও জোটেনি.
উজান বোঝে আজ হিয়া কোনো কারনে খুব আবেগী হয়ে উঠেছে. পরিবেশটা একটু স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে বলে۔۔
উজান: এতো মন খারাপ কেন? (একটু থেমে) বুঝেছি. কাউকে ছেড়ে আমার সাথে আসতে হলো বলে? দুদিনের তো ব্যাপার.
হিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে: কাকে ছেড়ে আসার কথা বলছেন?
উজান: ওই যে আপনার বিশেষ বন্ধু۔۔۔۔উদ্দীপ্ত.
হিয়ার সোনালের বলা আজকের কথাগুলো মনে পড়ে যায়. বিরক্ত হয় হিয়া. শুধু শুধু ওকে অন্যের সাথে জড়িয়ে কথা শুনতে ওর ভালো লাগেনা. হয়তো বিরক্তিটা বেশি পরিমানে হয় উজান বলায়, জানেনা হিয়া.
হিয়া : “বিশেষ” তো অনেক দূরের ব্যাপার ক্যাপ্টেন, উদ্দীপ্তর সাথে আমার কোনো রকমেরই বন্ধুত্ব নেই.
উজান মনে মনে খুব খুশি হয়, এই উত্তরটাই তো ও শুনতে চাইছিলো. কিন্তু সেটা গোপন রেখেই বলে: কিন্তু সবাই তো সেরকম কিছুই আলোচনা করছিলো.
হিয়া এবার উঠে পড়ে: ক্যাপ্টেন কাশ্যপের মৃত্যুর সাথে আমার যোগ আছে, উদ্দীপ্তর সাথে আমার সম্পর্ক আছে۔۔۔۔۔ আমার সম্পর্কে আপনার আর কি কি ধারণা আছে বলুন তো.
উজানও উঠে পড়ে: উদ্দীপ্তর সাথে আপনার সম্পর্ক নাই থাকতে পারে, কিন্তু ক্যাপ্টেন কাশ্যপের মৃত্যুর সাথে অবশ্যই যোগ আছে মিস মিত্র۔۔۔ সেটা তো এতদিনে আশা করি আপনিও বুঝতে পেরেছেন.
হিয়া অবিশ্বাসের সুরে: আপনি এখনো মনে করেন যে আমি ওনার খুনের সাথে যুক্ত?
উজান: আগে ভাবতাম, এখন ভাবিনা. তবে খুনের সাথে যুক্ত না হলে যে আপনি অন্যভাবে যুক্ত নন সেটা কিন্তু না.
হিয়া: আপনার কি মনে হয়, আমি কিভাবে যুক্ত?
উজান: সেটা অবশ্য আপনি নিজে এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি.
হিয়া: আপনি বুঝেছেন কি? বুঝে থাকলে আমাকেও বোঝান.
উজান: হার্দিক আপনাকে কি দিয়েছে সেটা আপনি এখনো জানেননা, আর জানেননা বলেই ইওর লাইফ ইজ ইন থ্রেট. ওরা চায়না আপনি তার হদিস পান. তাই এতো আক্রমণ আপনার উপর.
হিয়া কয়েক সেকেন্ড উজানের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তারপর প্রশ্ন করে: কে আপনি?
উজান হেসে: আপনি আমাকে চেনেন মিস মিত্র.
হিয়া: আমি পাইলট উজান চ্যাটার্জী কে চিনি. কিন্তু এই পাইলটের অন্তরালে থাকা আপনি কে?
উজান কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে হিয়াকে দেখে বলে: অনেক রাত হলো, রুমে যান.
বলেই ও চলে যায় হিয়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে.
হিয়া নিজের রুমে ফিরে আসে. বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিয়ে আজ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে ওর সাথে সবটা মনে করার চেষ্টা করে. যত ভাবছে তত যেন ও আলোর হদিস পাচ্ছে. কাল রাত্রে ভালো করে ঘুমায়নি, আজও সকল থেকে এতো ধকল গেলো কিন্তু ওর দু চোখে ঘুম নেই. আর বসে থাকতে পারেনা হিয়া, সোজা হাজির হয় উজানের রুমে.
উজান তখন হিয়ার কথাই ভাবছিলো. হঠাৎ ডোর বেল বাজায় ভাবনায় ব্যঘাত ঘটে. দরজা খুলে হিয়া কে দেখে ভীষণ রকম চমকে ওঠে. দরজা খোলা মাত্র হিয়া সোজা রুমে ঢুকে পরে অনুমতির অপেক্ষা না করেই.
একটু আগেই উজান হিয়াতে বিভোর ছিলো তাই হঠাৎ হিয়ার উপস্থিতিতে উজান অসস্তিতে পরে.
উজান : এ۔এটা কি হলো? আমার পারমিশন ছাড়া আপনি আমার রুমে ঢুকে পড়লেন কেন? তাও আবার এতো রাতে?
হিয়া: আমার আপনার সাথে কথা আছে.
উজান: কাল সকালে বলবেন, এখন যান.
হিয়া দুপা এগিয়ে আসে উজানের দিকে, কোমরে হাত দিয়ে প্রশ্ন করে: আপনি কি বাই এনি চান্স আমাকে ভয় পাচ্ছেন? কিন্তু কেন? আমি কাল রাত্রেও আপনার ফ্ল্যাটে ছিলাম. কাল যখন ভয় পাননি তখন আজ কেন পাচ্ছেন?
উজান: ইডিয়ট এমনি এমনি বলি? ওটা আমার ফ্ল্যাট, আমাকে কেউ প্রশ্ন করার নেই ওখানে. কিন্তু এটা হোটেল, কেউ যদি এতো রাত্রে আপনাকে আমার রুমে দেখে তাহলে কি ভাববে ভেবে দেখেছেন?
হিয়া: ও ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন. আমার রেপুটেশন খুব ভালো. কেউ দেখলেও খারাপ ভাববে না. ভাববে নিশ্চই কোনো দরকার আছে. আর সত্যি তো আমি দরকারই এসেছি.
উজান: নিজের ঢাক যত ইচ্ছে নিজে পেটান কিন্তু নিজের রুমে, আমার রুমে নয়.
হিয়া বিছানায় বসে পড়ে: সেখানে ঢাক পিটিয়ে কি লাভ যেখানে কোনো শ্রোতা নেই? আমি কথা শেষ না করে যাবোনা, ব্যস. আপনি তাড়াতাড়ি আমার কথাটা শুনে নিন, তাহলেই তো আমি যেতে পারি.
উজান হতাশ হয়ে: অগত্যা۔۔۔বলুন
দেখা যাক কি কারণে হিয়া হঠাৎ উজানের ঘরে অসময়ের অতিথি হয়ে গেল—!!
(আজকের পর্বে আপনারা কি ভেবেছিলেন যে–আজ উদ্দীপ্ত হিয়া কে প্রোপজ করবে😂😂–বা উজান হিয়া কে প্রোপজ করবে 😅😅 সে গুড়ে বালি😁😁🤣।তো কেমন ২০২০ সালের শেষ এবং ২০২১ সালের প্রথম ৪৪০ ভোল্টের হাই ভোল্টেজ ঝাটকা🤣🤣🤣।