উত্তরণ পর্ব-২৪

0
712

#উত্তরণ
পর্ব_২৪

হিয়া উঠে আসে উজানের কাছে : আপনি কে? প্লিজ বলুন.

উজান: আবার এক কথা

হিয়া: সিটি সেন্টারে প্রথম যেদিন গাড়ি চাপা পড়তে পড়তে বাঁচলাম, সেদিনও আপনিই বাঁচিয়েছিলেন۔۔۔۔ তাই না?

উজান কোনো কথা বলেনা, দুহাত বুকের উপর ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে۔

হিয়া: আপনি প্রত্যেকবার আমাকে যে বাঁচিয়েছেন সেটা নিশ্চয় কাকতালীয় ভাবে নয়? আপনি নজর রাখছিলেন আমার উপর. আপনি সব জানতেন, কোথায়, কখন আমি বিপদে পড়বো۔۔۔তাই না? আপনি আসলে কে?

উজান এবার হিয়ার দুকাঁধ চেপে ধরে ঠান্ডা চাপা গলায় বলে: আপনাকে যেটুকু জানানো হবে সেটুকু নিয়েই খুশি থাকুন মিস মিত্র. বেশি জানা আপনার পক্ষে বিপদজনক.

হিয়া উজানের চোখে চোখ রেখে ততধিক শান্ত গলায় বলে: মৃত্যুর থেকেও বেশি বিপদজনক?

উজান: আপনার কিছু হবেনা, আমি বলছি. শুধু আমার থেকে দূরে থাকুন আর যতটা বলবো ততটাই করবেন, বেশি না.

কয়েক মুহূর্ত কেটে যায় একে ওপরের চোখের দিকে তাকিয়ে۔۔۔

হিয়া: দূরে তো আমি এমনিই চলে যাবো. ওদের থেকে পালিয়ে কদিন বাঁচতে পারবো আমি? আমি শুধু সেই কটা দিন বাঁচতে চাই যে কটা দিন আমার সেই জিনিস টা উদ্ধার করতে সময় লাগবে যেটাকে নিয়ে এতো সমস্যা. আমি জানিনা সেটা কি, কোথায় আছে. আমি শুধু জানি ওটা খুঁজে বার করে সুরক্ষিত হাতে তুলে দিতে হবে, ব্যস.

হিয়ার কথার মাঝেই উজানের হাত শিথিল হয়ে আসে. হিয়া কে ছেড়ে দিয়ে একটু পিছিয়ে যায় উজান. কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নেয় হিয়া,/তারপর আবার স্বমহিমায় ফিরে আসে.

হিয়া হেসে : আর এই কটা দিন আমি আপনাকে জ্বালাব۔۔۔۔۔۔হুম.

উজান: মানে?

হিয়া: দেখুন, এখনও না কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছিনা.

উজান: প্রশ্ন?

হিয়া: আপনি উদ্দীপ্তর প্রতি এতো বিরূপ কেন?

উজান বিরক্ত: কেন আপনার কষ্ট হচ্ছে?

হিয়া: আজ সবেমাত্র ওকে দেখেছেন. ওর প্রতি এতো কিসের বিরক্তি আপনার?

উজান এখনো বিরক্ত: (মনে মনে: “ওকে? ওর প্রতি”? হুঁহ) কে বললো আপনাকে এসব বাজে কথা?

হিয়া: সব কথা মুখে বলার দরকার পড়ে না ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী. ওই যে কি যেন বলেছিলেন۔۔۔۔ “অবজারভেশন এন্ড এনালিসিস”?

উজান: আপনার আর কিছু বলার আছে?

হিয়া একটু এগিয়ে বড় কাচের জানালার সামনে দাঁড়ায়. এখন থেকে নিচে পুল টা স্পষ্ট দেখা যায়.
হিয়া সেই দিকে তাকিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে যেন বলে۔۔

হিয়া: জানেন আপনার সাথে একটা খুব অদ্ভুত সম্পর্কের ঘেরাটোপে আটকা পড়েছি. আপনি যখন থাকেন না আমি আপনাকে মিস করি. আপনার সাথে থাকাকালীন একটা তীব্র অধিকার বোধ কাজ করে. মনে হয় আপনার বকা, ঝগড়া সব কিছু শুধু আমার জন্য. নিজেরই খুব অদ্ভুত লাগে, এটা তো হওয়ার কথা ছিলোনা..

হঠাৎই যেন হিয়া বাস্তবে ফিরে আসে۔ কয়েক মুহূর্তের বিরতি নিয়ে বলে۔۔

হিয়া: খুবই অস্বাভাবিক, তাই না? আজ সুযোগ পেলাম তাই কথাগুলো বললাম. কে বলতে পারে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন বলার সুযোগ হবে কিনা۔۔

আবার কয়েক মুহূর্ত বিরতি. হিয়া আবার উজানের সামনে এসে দাঁড়ায়.

হিয়া: দেখুন রেগে যাবেননা. বলছি۔۔۔۔۔আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?

উজান: কি?? (উজানের চোখ বিস্ফারিত)

হিয়া : না মানে۔۔۔۔এমনি আর কি۔۔۔۔থাকতেই পারে۔۔۔۔আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানিনা۔۔۔۔۔তাই۔۔۔۔তাছাড়া জানতে চাওয়াটা দোষের নাকি?

এতোক্ষন উজান একজন শ্রোতার ভূমিকা পালন করছিলো, বলা ভালো হিয়া ওকে বক্তব্য রাখার বিশেষ সুযোগ দেয়নি. এবার উজান মরিয়া হয়ে বলে ওঠে۔۔

উজান: এগুলোই তাহলে আপনার জরুরি কথা?

হিয়া এতক্ষন নিজের তালে বকবক করে যাচ্ছিলো, হঠাৎ তাল কেটে যায়. এবার ওর মনে পড়ে, যে কথা ও বলতে এসেছিলো সেটা ও বলতে ভুলে গেছে.

হিয়া মাথা চুলকে: ইয়ে۔۔ না۔۔۔ মানে জরুরি কথাটা তো বলাই হলোনা. এখন তো অনেক রাত্রি হয়ে গেছে. ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না কাল বলে নেবো, কালকেই তো আর মরছিনা. ওকে গুড নাইট ক্যাপ্টেন.

বলেই হিয়া উজানের রুম থেকে বেরিয়ে যায়. উজানের কয়েক মুহূর্ত সময় লাগে এতক্ষন যা কিছু হলো সেটা বুঝে উঠতে. তারপর উজান ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে. হিয়ার কথা গুলো ওর কানে বাজতে থাকে. কত সহজে সব টা বলে গেলো. একটা ভালোলাগা নিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে নরম আদুরে গলায় বলে “ইডিয়ট”۔۔

হিয়া নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে. পাশে মোবাইলে রবীন্দ্র সঙ্গীত বেজে যাচ্ছে. হিয়া ঘুমিয়ে পড়ে.

আজ হিয়া আবার স্বপ্ন দেখে. হিয়া একটা দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে লেপার্ড টার দিকে তাকিয়ে আছে. লেপার্ড টা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে হিয়ার দিকে. হিয়া ভয়ে . বন্ধ করে নেয়, ওর শেষ সময় উপস্থিত. লেপার্ড ওর খুব কাছে এসে হিয়ার গালে নিজের নাক ঠেকিয়ে ছোট্ট আদুরে আওয়াজ করে. হিয়া ভয়ে ভয়ে চোখ খোলে, দেখে লেপার্ড ওর গা ঘেঁসে বসেছে۔۔۔

দেখা যাক হিয়া কিভাবে—এবার নিজের স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে থাকা লেপার্ড এর যোগসুত্র খুঁজে বের করে–!

(পাঠকগণ আপনারা সবাই মনে করে কমেন্ট করবে—🙂🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here