উত্তরণ পর্ব-২৬

0
712

#উত্তরণ
পর্ব_২৬

হিয়ার রুম থেকে নিজের রুমে ফেরে উজান. সোজা জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, তারপর ঠিক করে নেয় পরবর্তী কোর্স অফ অ্যাকশন. ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসি.

উজান: বেস্ট অফ লাক মিস হিয়া মিত্র۔۔

তারপর নিজের লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পরে, দুপুরে ফ্লাইট۔۔

হিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের লাগেজ গুছিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে. লিফ্ট এর সামনে উজানের সাথে দেখা. একটু আগের ঘটনাগুলো মনে পড়ে হিয়ার. একটু কষ্ট, একটু অসস্তি মাখা দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকায় হিয়া. উজান তখন মোবাইলে ব্যস্ত, একবারের জন্যও তাকায়না হিয়ার দিকে. উজানকে এতো শান্ত দেখে হিয়ার অসস্তি বহুগুনে বেড়ে যায়, এই শান্তি ঝড়ের পূর্বাভাস নয় তো?

ওদের পরবর্তী ওভারনাইট লেওভার কোচিনে. হোটেলে পৌঁছতে অনেক রাত্রি হয়ে যায়. ডিনার করে যে যার নিজের রুমে চলে যায়, কাল সকালের ফ্লাইট. আজ সারাদিনে প্রয়োজনের বাইরে একটাও কথা হয়নি উজান আর হিয়ার, এমনকি উজানকে হিয়ার আসেপাশেও দেখা যায়নি.

পরদিন কলকাতায় পৌঁছে সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় দু’টো বেজে যায় হিয়ার. কাজ শেষে হিয়া চারপাশ একবার ভালো করে দেখে নেয়, না উজান নেই. হিয়ার কষ্টও হয় আবার স্বস্তিও. গত দুদিন ধরে নিজের অনুভুতি গুলোর সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে হিয়া, বাড়ি টা বড্ডো টানছে ওকে.

অফিসের গাড়ি আজ হিয়াকে বাড়িতে ড্রপ করবে. হিয়া এক্সিট এর দিকে এগিয়ে যায়, বাইরে ওর জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে. হিয়া গাড়িতে লাগেজ তুলে দিয়ে উঠে বসে. গাড়ি এয়ারপোর্ট চত্বর ছেড়ে এগিয়ে চলে ওর বাড়ির পথে.

গাড়ি কিছুক্ষনের মধ্যেই ইএম বাইপাস ধরে ছুটতে থাকে. একটা পেট্রল পাম্প দেখে ড্রাইভার গাড়ি ঘোরায় সেই দিকে. হিয়া লক্ষ্য করে কিন্তু কিছু বলে না, পেছনের সিটে মাথা হেলিয়ে চোখটা বন্ধ করে বসে থাকে. পেট্রল পাম্প থেকে বেরিয়েই আচমকা ব্রেক কষে গাড়িটা থেমে যায়. এই আচমকা ঝাঁকুনি তে হিয়া টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে ছিটকে পড়ে. নিজেকে সামলে ড্রাইভার কে কিছু বলতে গিয়ে দেখে ড্রাইভারের পাশের সিটে একজন মুখোশ পরিহিত ব্যক্তি, হাতে .36 ক্যালিবারের কোল্ট রিভলভার যেটা ড্রাইভারের দিকে তাক করা.

হিয়া এতটাই হতবম্ব হয়ে যায় যে সে লক্ষ্য করেনা কখন তার দুপাশেও দুজন আবির্ভুত হয়েছে নিঃশব্দে. সামনের লোকটির ইশারায় ড্রাইভার কাঁপতে কাঁপতে গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং লোকটি ড্রাইভারের জায়গাটি দখল করে. হিয়া এতক্ষনে সামলে নেয় নিজেকে. ও আন্দাজ করতে পারছে ওর সাথে কি হচ্ছে বা হতে চলেছে, সাথে এটাও আন্দাজ করে এর পেছনে কে বা কারা থাকতে পারে. হিয়া কিছু করার আগেই ক্লোরোফর্মের প্রভাবে নিস্তেজ হয়ে এলিয়ে পরে সিটে. গাড়ী তার নতুন গন্তব্যের পথে ছুটে চলে.

হিয়ার যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও নিজেকে এক অদ্ভুত পরিবেশে আবিষ্কার করে. একটা 10″x10″ এর ঘর, আলোর কোনো খামতি নেই ঘরে. হিয়া একটা চেয়ারে বসে মাথাটা সামনের টেবিলের ওপর রেখে শুয়ে ছিল, সামনে একটা জলের বোতল আর টেবিলের ওপর প্রান্তে আরেকটি চেয়ার. মাথা টা তুলতে গিয়ে টের পায় এখনো ক্লোরোফর্মের প্রভাব পুরোপুরি কাটেনি. কর্মসূত্রে সে জানে বিপদে পড়লে নিজেকে যথাযত শান্ত রাখতে হয়. হিয়া হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়, রাত 8:30 pm. ও অনেকটা জল খেয়ে নেয়, তারপর চোখ বন্ধ করে মাথাটা টেবিলে রাখতে গিয়ে কি যেন টের পায়, ভ্রু কুঁচকে ওঠে. কিছু একটা গভীর ভাবে চিন্তা করতে থাকে হিয়া, তারপর ওর ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে. তারপর টেবিলে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ে.

কতক্ষন ঘুমিয়েছে হিয়া জানেনা. যখন ঘুম ভাঙে তখনও চারপাশের পরিবেশের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি. এবার ধীরে ধীরে মাথা তুলে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে. ঘুমের পর ওর মাথা চমৎকার কাজ করছে, গত কয়েক মাসের ঘুম টা বোধহয় একসাথেই ঘুমিয়ে নিলো ও. নিজেকে সম্পূর্ণ ধীর, স্থির আর শান্ত রাখে, ওর একটা ভুল পদক্ষেপ অনেক বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে. হিয়া জানে ওর উপর নজর রাখা হচ্ছে, চারটে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা হিয়ার চোখ ইতিমধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছে. হিয়া অপেক্ষা করতে থাকে পরবর্তী ঘটনার জন্য.

বেশ কিছুক্ষন পর হিয়া জুতোর শব্দ শুনতে পায়. আবছা থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে সেটা. নিজেকে প্রস্তুত করে ও আসন্ন যুদ্ধের জন্য۔۔

ঘরে কেউ প্রবেশ করে, তারপর হিয়ার সামনে এসে যে দাঁড়ায় তার মুখে মাস্ক, শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে. ভালো করে লক্ষ্য করলে হিয়া বোঝে ইনি মহিলা. অজান্তেই হিয়ার একটা ভ্রু সামান্য উপরে উঠে যায়. হিয়ার ভ্রু ওঠানো দেখে সামনের মহিলার চোখে বিশেষ অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে. ক্লোরোফর্মের যে প্রভাব হিয়ার উপর দেখেছে তাতে এতো তাড়াতাড়ি যে হিয়া স্বাভাবিক হবে সেটা ওকে অবাক করে.

হিয়া মহিলার চোখের ভাষা পড়ে হেসে ফেলে۔۔

হিয়া: কি ভাবছেন? ক্লোরোফর্মের ডোজের কথা? আরেকটু বেশি হলে তো আপনাদের সব পরিকল্পনাই মাঠে মারা যেত۔۔

মহিলাও এবার হেসে ফেলে বলে: গুড সেন্স অফ হিউমার۔۔

হিয়া:۔۔۔۔۔

মহিলা: একটুও ভয় পাচ্ছেন না দেখছি۔۔

হিয়া: আসলে۔۔۔۔(থেমে যায়) আরে দাঁড়িয়ে কেন? বসুন না. যদিও এটা আপনাদেরই জায়গা, তাও যখন আমাকে থাকতে দিয়েছেন তখন নিজেরই মনে করে নিচ্ছি. প্লিজ বি সিটেড.

মহিলা আবার হেসে ফেলে. তারপর হিয়ার উল্টো দিকের চেয়ারে বসে.

হিয়া: সত্যি বলতে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম গাড়িতে. তারপর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ভয়টা চলে গেলো۔۔

মহিলা: কেন?

হিয়া: ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই বলে۔۔

মহিলা: টু মাচ কনফিডেন্ট۔۔

হিয়া: আ বিট۔۔

মহিলা: আমার সেটা মনে হয়না

হিয়া চুপ করে শুনতে থাকে۔۔

মহিলা এবার ঠান্ডা গলায় বলে: আপনার কোনো আইডিয়া নেই মিস মিত্র۔۔۔আমি আপনার সাথে হেসে কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু আপনাকে শুট করতে আমার হাত একটুও কাঁপবে না.

হিয়া: আপনি আমায় শুট করতেই পারেন তবে সেটা আপনার ওপরওলা যদি নির্দেশ দেয় তাহলেই. আর এতো তাড়াতাড়ি তিনি সেই নির্দেশ দেবেন বলে মনে হয়না. (একটু হেসে) কারণ۔۔۔۔ফোন টা তো চাই۔۔۔۔۔তাই না?

দেখা যাক কারা কিডন্যাপ করলো হিয়া কে—আর তাদের কিডন্যাপ করার প্রধান উদ্দেশ্যেটাই বা কি–উজানই বা কোথায়–হিয়ার বিপদ হয়েছে জেনে উজানের মনের অবস্হায় বা কি হবে–!

(আজকের পর্ব পড়ার পরও কিছুজন ৪৪০ভোল্টের ঝাটকা খাবে–আবার কিছু জনের মাথার ওপর দিয়ে যাবে🤣🤣– এ পর্বটা পড়ার পর সবার অনুভূতি কেমন হয় অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন😊😊–আর #ভালোবাসার_নীড় কাল সকালে যথা সময়ে পেজে ল্যান্ড করবে😊😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here