#উত্তরণ
পর্ব_২৭
মহিলা এবার ঠান্ডা গলায় বলে: আপনার কোনো আইডিয়া নেই মিস মিত্র۔۔۔আমি আপনার সাথে হেসে কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু আপনাকে শুট করতে আমার হাত একটুও কাঁপবে না.
হিয়া: আপনি আমায় শুট করতেই পারেন তবে সেটা আপনার ওপরওলা যদি নির্দেশ দেয় তাহলেই. আর এতো তাড়াতাড়ি তিনি সেই নির্দেশ দেবেন বলে মনে হয়না. (একটু হেসে) কারণ۔۔۔۔ফোন টা তো চাই۔۔۔۔۔তাই না?
হিয়ার কথা শুনে মহিলা চেয়ার ছেড়ে হিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে এসে বলে: কোথায় ফোন টা?
হিয়া হেসে ফেলে: পান নি? আমার লাগেজ এমনকি আমাকেও তল্লাশি করেছেন নিশ্চয়?
মহিলা: আপনি ওখানে রাখলে নিশ্চয় পেতাম আর তাহলে আপনাকে এখানে আটকে রাখতে হতোনা.
হিয়া:۔۔۔۔
মহিলা: আমাদের ধৈয্য কম মিস মিত্র۔۔
হিয়া ধীর গলায়: সে ব্যাপারে আমি কি করতে পারি ম্যাডাম? মেডিটেশন করে দেখতে পারেন۔۔
মহিলার হিয়ার উপর যতটা রাগ হয় তার থেকেও বেশি সে অবাক হয়. হিয়ার বাচালতা তাকে ভীষণ ভাবে উত্তক্ত করে তোলে. তার হাত নিসপিস করতে থাকে হিয়া কে ঘা দুয়েক বসিয়ে দেবার জন্য, কিন্তু তার উপর নির্দেশ আছে হিয়াকে আঘাত না করার. দুজনের স্নায়ু যুদ্ধ চলতে থাকে, একসময় ওই মহিলা ক্লান্ত হয়ে পরে, সে কিছুতেই হিয়াকে বাগে আনতে পারেনা.
হিয়া এবার উঠে দাঁড়ায় অত্যন্ত সাবধানে. দাঁড়াতে গিয়ে ও বোঝে ক্লোরোফর্ম তার শরীরের কোষ গুলোকে মারাত্মক প্রভাবিত করেছে. একটু টাল খায় হিয়া, টেবিল ধরে নিজেকে সামলায়. ও এবার মহিলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে۔۔
হিয়া: আমি আপনার সাথে এই বিষয়ে একটি কথাও বলতে চাইনা ম্যাডাম. আপনি গিয়ে বরং ওনাকে পাঠিয়ে দিন, আমি ওনার সাথেই কথা বলতে চাই.
মহিলা: “ওনাকে”?
হিয়া: আপনি যার নির্দেশ পালন করছেন.
মহিলা: এতো সহজ? আমি ডাকলেই উনি চলে আসবেন?
হিয়া: আপনাকে মনে হয়না কিছু করতে হবে. ওনাকে ভাবতে দিন উনি কি করবেন.
মহিলা: মানে?
হিয়া ক্যামেরা গুলোর দিকে ইশারা করে বলে۔۔
হিয়া: এই ঘরে নিশ্চয় শুধুমাত্র ক্যামেরা নেই, বাগ ও আছে? এতক্ষন ধরে তো আমাদের সব কথাই উনি শুনছেন, কাজেই ওনার কাছে আমার বার্তা পৌঁছে গেছে ম্যাডাম. সো ইউ প্লিজ ডোন্ট ওয়ারি۔۔۔
মহিলা এবার ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে শ্রাগ করে. তার কানে লাগানো ইয়ার বাডসে কিছু একটা নির্দেশ আসে তারপর সে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়.
হিয়া টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়. শরীর খুব দুর্বল ওর, তাও হিয়া মনে মনে তৈরী হয় পরবর্তী যুদ্ধের জন্য. ও জানে এইবার যে আসছে তার সাথে যুদ্ধে জেতা সহজ হবেনা ওর পক্ষে.
দরজার দিকে পিঠ করে হিয়া দাঁড়িয়ে থাকায় ও জানতে পারেনা কেউ নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে. সে এসে হিয়ার পেছনে দাঁড়ায়. হিয়ার প্রতিটা রোমকূপ জানান দেয় সেকথা. হিয়া চোখ বন্ধ করে একটা গভীর শ্বাস নেয় তারপর পেছনে ফেরে.
আগের সে মহিলার মতোই এই মানুষটাও মাস্কে গোটা মুখ ঢেকে রেখেছে, শুধু ছোখ দুটো বিদ্যমান. যদিও হিয়ার তাকে চিনতে এক ফোঁটাও অসুবিধে হয়নি কিন্তু আজ কি যেন একটা আলাদা ব্যাপার রয়েছে. খটকা লাগে হিয়ার, খুব খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতে থাকে ও. হঠাৎই এতদিনের একটা রহস্য দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায় হিয়ার কাছে, চমকে ওঠে ও۔۔
হিয়া বিড়বিড় করে ওঠে: দ্যাট লেপার্ড? তার মানে ওর অবচেতন মন ঠিকই টের পেয়েছিলো۔۔۔۔۔ওই বুঝতে পারেনি এতদিন?
হিয়ার নিজের ওপর মারাত্মক রাগ হয়. এদিকে সামনের মানুষটা ভ্রু কোঁচকায়, কি যেন বিড়বিড় করছে হিয়া. সেটা লক্ষ্য করে হিয়া নিজেকে দক্ষতার সাথে সামলে নেয়.
হিয়া: কি বলে ডাকবো আপনাকে?
লোকটা এখনো কোনো কথা না বলে তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে. হিয়া বিরক্ত হয়ে এবার নিজের চেয়ারে বসে পরে.
হিয়া: আমি দেখতে এতটাও সুন্দরী নই যে আপনি এতক্ষন ধরে আমাকে দেখে যাচ্ছেন. আবার এমনটাও নয় যে এই প্রথম আপনি আমাকে দেখলেন. কথা বলতে ইচ্ছে না থাকলে আপনি এলেন কেন?
উজান: এতো বাড়াবাড়ির দরকার কি মিস মিত্র? ফোন টা দিয়ে দিলে আপনার পক্ষেই ভালো.
হিয়া: ভালো? কিরকম ভালো?
উজান: আপনি যদি প্রাণে বেঁচে যান সেটা আপনার পক্ষে ভালো নয় কি?
হিয়া: দেখুন এটা আমি বুঝতে পারছি যে যারা আমাকে মারতে চাইছে আপনি তাদের দলে নেই. তাদের দলে হলে অনেকদিন আগেই আমাকে মেরে ফেলতে পারতেন, সুযোগ তো কম ছিলনা আপনার হাতে. বরং বহুবার বাঁচিয়েছেন. এখন প্রশ্ন হলো আপনি কোন দলে?
দেখা যাক–হিয়ার প্রশ্নের উত্তর উজান কিভাবে দেয়–নাকি সেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বরাবরের মতো প্রশ্ন এড়িয়ে যাবে উজান–!
(পাঠকগণ এতক্ষণ ধৈর্য্য পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ–আজকের সবার কমেন্ট লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন🙂🙂।#ভালোবাসার_নীড় পোস্ট করবো কি না জানি না😉😉😉)