#উত্তরণ
পর্ব_২৯
উজান বিরক্তি ভরা চোখে হিয়ার দিকে তাকায়. হিয়া তখনও নিজের মনেই হেসে যাচ্ছে. হিয়ার সেই খুশি মুহূর্তে ছোঁয়াচে হয়, উজানের মুখেও সেই খুশির আভা ছড়িয়ে পরে. হাসতে হাসতে হিয়ার চোখ যায় উজানের দিকে. হিয়ার চোখে চোখ পড়তেই উজান চোখ সরিয়ে নেয়. হিয়া হাসতে হাসতে উজানের সামনে এসে দাঁড়ায়۔۔۔
হিয়া: তার মানে আপনি টেররিস্ট নন۔۔
উজান: (ভ্রু কুঁচকে তাকায় হিয়ার দিকে)
হিয়া: তার মানে আপনি ভালো লোক۔۔۔۔মানে যাকে বলে অনেস্ট۔۔
উজান: (বিরক্তি সহকারে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারো আড় চোখে তাকায়)
হিয়া: তার মানে আপনি ইন্টেলিজেন্স এর লোক, আন্ডারকপ?
উজান: ۔۔۔۔۔۔
হিয়া: তার মানে۔۔۔۔۔
উজান: তার মানে আপনার মাথাটা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে۔۔۔
কপট রাগে হিয়ার ভ্রু কুঁচকে ওঠে۔۔۔
হিয়া: এই আপনি মজা করছেন?
উজান: আপনার কি মনে হয়, এই জায়গাটা মজা করার জন্য উপযুক্ত নাকি আপনি মজা করার উপযুক্ত মানুষ?
হিয়া: মানে টা কি?
উজান: অনেক বক বক করেছেন, এবার একটু আসল কাজটা করবেন? দয়া করে বলবেন কোড টা কোথায়? সময় কিন্তু থেমে নেই মিস মিত্র۔۔
হিয়া: আমার ফোন টা দিন
উজান সরু চোখে তাকায়, বোঝার চেষ্টা করে হিয়া আবার মজা করছে নাকি সিরিয়াস.
উজান: ফোন দিয়ে কি হবে?
হিয়া: বলছি۔۔۔আগে দিন۔۔۔۔۔এটা ঠিক চেক করার কথা মনে হয়নি না?
উজান: হয়েছিল۔۔۔শুধু অপেক্ষায় ছিলাম. যদি আপনি নিজে শেষ পর্যন্ত না দিতেন তাহলে ওপরে ওপরে যে চেকিং টা হয়েছে সেটা আর ওপরে ওপরে থাকতো না۔۔ শুধু শুধু আপনার জিনিসপত্র নষ্ট করার ইচ্ছে হয়নি۔۔
হিয়া: সবই যদি পারতেন তাহলে এই কিডন্যাপের কি দরকার ছিল? শুধু শুধু ক্লোরোফর্ম দিয়ে আমাকে অসুস্থ করা কেন?
উজান: আপনার কিডন্যাপ হওয়াটা আপনার জন্যই জরুরি ছিল মিস মিত্র, এছাড়া আপনাকে বাঁচানো যেত না. তাছাড়া আমি নিজের কাজ করবো, না আপনাকে পাহারা দেব? যদি আপনি আগেই আমাকে ফোনটা দিয়ে দিতেন তাও আপনাকে এখানে আনতেই হতো.
এরপর উজান কাউকে নির্দেশ করে. প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একজন এসে ফোন টা দিয়ে যায়. হিয়া সন্তর্পনে সিম কার্ড রাখার জায়গা টা খোলে, দেখা যায় ওখানে কোনো সিম নেই, তার পরিবর্তে একটা চিপ রাখা. চিপটা বের করে উজানের হাতে দেয়. উজান সেটা হাতে নিয়ে আলোর সামনে বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে.
উজান: আর ফোনটা?
হিয়া: ওটা কোচিনের হোটেলের ডাস্টবিনে ফেলে এসেছি.
উজান: হোয়াট? আপনি কি করে জানলেন যে এটাই কোড? আপনি না জাস্ট۔۔
হিয়া: শুনুন আমি ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন. এটা ফোনের অংশ নয়, আবার মেমোরি চিপের মতো দেখতে হলেও সেটা নয়. এটা ওপেন করা অত সহজ নয়. এর এলিমেন্টারি সিকিউরিটি হলো থাম্ব ইম্প্রেশন, তারপর মেন চেম্বারে ঢুকতে হলে পাসওয়ার্ড দরকার. বলেই হিয়া একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে.
উজান এতক্ষন হাঁ করে হিয়ার কথা শুনছিলো. হিয়া থামতেই প্রায় রে রে করে হিয়ার দিকে ছুটে আসে۔۔
উজান: এই আপনি এতো কথা কি করে জানলেন? আপনি এটা ওপেন করার চেষ্টা করেছিলেন?
হিয়া তখনও নিজের মনে কিছু একটা গভীর ভাবে ভেবে চলেছে. উজানের কথা ওর কানে পৌঁছোয় না. এবার উজান হিয়ার কাঁধ ধরে জোরে ঝাঁকিয়ে বলে۔۔۔
উজান: মিস মিত্র, আই এম আস্কিং ইউ সামথিং ۔۔
হিয়া বিরক্ত হয়: উফফ۔۔ কি?
উজান: আপনি এটা ওপেন করার চেষ্টা করেছিলেন?
হিয়া: অদ্ভুত তো۔۔۔ আমার ফোনে একটা মেমোরি চিপ পেলাম, সেটা সত্যি চিপ নাকি অন্য কিছু দেখবোনা? আপনার সাথে যে অত ঝগড়া করলাম সেটার সত্যিই কোনো সঙ্গত কারণ আছে কি নেই দেখবোনা? ওপেন করতে গিয়েই তো বুঝলাম ওটা কি. তারপর আমার নতুন ফোনের সিম কার্ডের জায়গায় ওটা ভরে পুরোনো ফোনটা ফেলে দিলাম. তবে ফেলার আগে পুরো চেক করে নিয়েছি, আর কিছু ছিলোনা ওতে. কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়۔۔
উজান হিয়ার কথাবার্তা শুনে একটু শান্ত হয়. ও জানে হিয়াকে ভরসা করা যায়۔۔
উজান: কি প্রশ্ন?
হিয়া: থাম্ব ইম্প্রেশন টা মোস্ট প্রবাবলি ক্যাপ্টেন কাশ্যপের, এখন ওটা কিভাবে পাওয়া যাবে?
উজান: সে পাওয়া যাবে, ও নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা. এটা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন আপনার কাজ শেষ.
হিয়া হাসে: আর আমার দরকার নেই বলছেন? ভালো কথা. এখন আপাতত এক কাপ চা হলে আরো একটু ভালো হয়, তাছাড়া খুব খিদেও পেয়েছে.
উজান কপট বিরক্তিতে: আর কিছু মিস মিত্র?
হিয়া: আর একটা কথা۔۔
উজান: বলুন۔۔
হিয়া উজানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে۔۔
হিয়া: যারা আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এলো তাদের আমাকে গাড়ি থেকে নামাতে না দিয়ে আপনি আমাকে কোলে করে নিয়ে এলেন কেন?
দেখা যাক হিয়ার প্রশ্নের জবাবটা উজান দেয়–নাকি বরাবরের মতো এড়িয়ে যায়–!!