#উত্তরণ
পর্ব_৩৫
উজান ওর অফিসে এসে দেখে একজন দরজার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে. উজানের জুতোর শব্দে সেই মানুষটা ঘুরে তাকায়, মুহূর্তে উজানের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়. চিফ সারপ্রাইজের কথা বললেও সেটা যে এই ধরণের কিছু হতে পারে সেটা উজান স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি.
উজান: স্যার আপনি?
সমরেশ: জানি তুমি আমাকে এক্সপেক্ট করোনি, কিন্তু এটাই সত্যি.
উজান: আপনিই সেই সিনিয়র অফিসার যার কথা চিফ۔۔۔۔۔
উজানের কথা শেষ হয়না, তার আগেই সমরেশ মাথা নেড়ে জানায় উজানের ধারণাই ঠিক.
উজানের মনের মধ্যে তখন যে ঝড় টা উঠেছে তাতে উজানের গোটা পৃথিবীটা ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে. উজানকে দেখে সমরেশ সহজেই আঁচ করতে পারে সেই ঝড়ের উপস্থিতি. সেও তো কয়েক ঘন্টা আগে এই ঝড়ের মধ্যে দিয়েই গেছে۔۔
সমরেশ এগিয়ে এসে উজানের কাঁধে হাত রাখে. সমরেশের স্পর্শ উজানের মধ্যেকার ঝড়ের প্রাবল্যকে আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়. অনেক কিছু বলতে চাইছে উজান সমরেশকে, অনেক প্রশ্ন আছে তার, কিন্তু কথারা আজ তার ভাষা হারিয়েছে. সমস্ত অনুভূতি জল হয়ে চোখের রাস্তায় বাইরে বেরোতে চায়۔۔
সমরেশেরও আজ একই অবস্থা. আজ তার আত্মজ তারই পথ অনুসরণ করে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এতো বছর পর. সব কথা যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলার মধ্যে۔۔
সমরেশ: আমি আজকেই জানলাম তোমার কথা. জানার পর আর ধৈর্য্য রাখতে পারিনি, তাই চলে এলাম۔۔
উজান নিজের আবেগ সামলে সমরেশের চোখে চোখ রাখে. কিছুটা বিস্ময়, কিছুটা অভিমান মেশানো সুরে বলে۔۔
উজান: কেন? কেন ধৈর্য্য রাখতে পারেন নি জানতে পারি?
সমরেশ: আমিও এই কাজ করেছি উজান, আমি জানি এই কাজের ঝুঁকি কতটা. পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা. তোমার কথা ভেবে আমি অধৈর্য্য হবো সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?
উজান: আমার কথা ভেবে? (একটু থেমে) বুঝলাম۔۔۔
সমরেশ: কি বুঝলে?
উজান নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখার চেষ্টা করে : আপনি আমায় চেনেন তাই একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছেন স্যার. কিন্তু চিন্তা করার কোনো কারণ নেই.
সমরেশ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে: হিয়া কোথায়?
উজান: উনি ঠিক আছেন۔۔
সমরেশ: হিয়া জানে তোমার এই সত্যিটা?
উজান মাথা নেড়ে জানায় যে হিয়া জানে۔۔
সমরেশ: যেটা খুঁজছিলে পেয়েছো?
উজান: হুম. ডিকোড করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে. ওদের রেসপন্স এর অপেক্ষা করছি.
এরপর উজান সমরেশকে পুরো ব্যাপারটা জানায় সাথে হিয়ার বলা কথাগুলোও. দুজনের মধ্যে বেশ কিছু আলোচনাও হয় এই নিয়ে. আলোচনা শেষে۔۔۔
উজান: অনেক তো রাত্রি হলো স্যার, আপনি কি বাড়ি ফিরবেন, না এখানেই থেকে যাবেন?
সমরেশ: আমাকে ফিরতে হবে উজান, মা জানে না۔۔
উজান: ঠিক আছে চলুন আমি আপনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দি. (একটু থেমে) ঠাম্মি ভালো আছেন তো?
সমরেশ স্মিত হেসে: মা এতদিন ভালো ছিলেন না, তবে এবার উনি ভালো থাকবেন۔۔۔۔ (তারপর উজানের একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে) তোমার মা কেমন আছেন রাজা?
এতক্ষন ধরে সজোরে আটকে রাখা আবেগটা সমরেশের শেষ বাক্যে প্রভাবে ফুঁসে ওঠে উজানের মধ্যে. কথার দখল নেয় অশ্রুরা۔۔
সমরেশ উজানকে জড়িয়ে ধরে. উজান আজ সেই আবার আগের ছোট্ট রাজা হয়ে যায় যে সমরেশ আঁকড়ে ধরে বাঁচতো. কত কথাই না বলতে চাইছে উজান সমরেশকে, কিন্তু পারছেনা. উজান যত সহজে তার রাগ বা বিরক্তি টা প্রকাশ করতে পারে, তার কোমল অনুভূতিগুলো পারেনা. সেগুলো অনুচ্চারিতই থেকে যায়. সামনের মানুষটার দায়িত্ব সেই সমস্ত না বলা কথাগুলো পড়ে ফেলার, আর সমরেশ সেটা অতি সহজেই পড়ে ফেলে.
সমরেশ আবেগতাড়িত কণ্ঠে উজানকে শক্ত বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলে: তুমি চিনেছিলে আমাকে তাই না? এতো কাছে এসে কি করে পারলে রাজা তোমার বাবার থেকে দূরে থাকতে? খুব অভিমান হয়েছিল আমার উপর? কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অপারগ ছিলাম. কথা দিয়েছিলাম তোমার মা কে যে আমি কোনোদিন কোনো যোগাযোগ রাখবোনা তোমাদের সাথে. যদিও বার বার মনে হতো ভেঙে দিই সব প্রতিশ্রুতি۔۔۔۔۔তাও পারিনি. পারিনি এটা ভেবেই, আমি যে কাজের সাথে যুক্ত তাতে হয়তো আমার থেকে দূরে থাকলেই তোমরা সুরক্ষিত থাকবে. তুমি যতটা কষ্ট পেয়েছো আমি তার থেকে কম পাইনি রাজা, বিচার করলে হয়তো একটু বেশিই পেয়েছি. মন আর মস্তিষ্কের লড়াইয়ে যখন মস্তিষ্ক জিতে যায় তখন সেটা নিতান্তই জয় হয়, সেখানে আনন্দের উপস্থিতি থাকেনা. তবে বাসবীরও কোনো দোষ ছিলোনা এক্ষেত্রে. আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে তুমি আর তোমার মা ই ছিলে সবটুকু জুড়ে۔۔۔۔۔۔আর আজও আছো. (একটু থেমে) কতদিন দেখিনি তোমার মাকে, অনেক কথা বলার আছে বাসবীকে.
সমরেশ আর উজান বেশ কিছুক্ষন পর আলিঙ্গন মুক্ত হয়۔۔۔
সমরেশ: বাসবী জানে তোমার কাজের কথা?
উজান: না۔۔
সমরেশ: আমিও জানাই নি আর সেটাই কাল হয়েছিল۔۔ I have lost everything….. but not anymore… এবার আমি ঠিক করেছি বাসবী কে সব জানাবো শুধু তোমার এই মিশনটা আগে শেষ হোক. এখন মাত্র সময়ের অপেক্ষা۔۔۔۔
দেখা যাক এর পর কোন পথে মোড় নেয়—-উজান সমরেশের জীবন—!!
(কেমন আছেন–মহান কপিবাজ মানুষজন–আপনারা তো চোরের থেকেও বেশি ছ্যাঁচড়া–তাই আপনাদের ছ্যাঁচড়ামি মানে কপি করার জন্য পেজে আমন্ত্রণ রইলো🥴🥴)