উত্তরণ পর্ব-৩৬

0
684

#উত্তরণ
পর্ব_৩৬

সমরেশ চলে গেছে۔۔ উজানের মনে হয় ওর জীবনের যা কিছু নাপাওয়া, সবটুকু আজ ভাগ্য ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে, এবার শুধু বাসবী কে কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে. এতদিন উজান মনে মনে যে প্রশ্নমালা তৈরী করেছিল আজ তার সব উত্তর ও পেয়ে গেছে. এই মিশন টা শেষ হোক তারপর ও সব ঠিক করে দেবে.

মিশনের কথা ভাবতেই ওর মনের মধ্যে আবার একটা আশঙ্কা জন্ম নেয়. পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে উজান জানে এই মিশন গুলো কতটা বিপজ্জনক, প্রতিটা মুহূর্ত সঙ্গিন. যখন মিশনে বেরোয়, ওরা নিজেরাও জানেনা যে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে পারবে কিনা. উজানের চোখের সামনে একে একে বাসবী, সমরেশ, ঠাম্মি, হিয়া সবার মুখ ভেসে ওঠে. এদেরকে নিয়েই তো উজানের বর্তমান পৃথিবী. নতুন প্রশ্নমালার প্রশ্নরা জন্ম নিতে থাকে. উজান পারবে তো ফিরে আসতে? পারবে তো তার ভাঙা পরিবারটা জোড়া লাগাতে? পারবে তো শেষপর্যন্ত ওই ইডিয়ট টাকে একান্ত নিজের ইডিয়ট বানাতে? ভাবতে ভাবতে কখন একসময় উজানের চোখ লেগে যায়۔۔۔

এদিকে সমরেশ বাড়ি ফিরে আসে নতুন আশায় উদ্দীপ্ত হয়ে. আয়নার সামনে দাঁড়ায় সমরেশ, আজ অনেক দিন পর নিজেকে একটু দেখতে ইচ্ছে করে ওর. বয়স যা না হয়েছে তার থেকে একটু বেশিই বয়স্ক লাগছে সমরেশকে, অথচ একসময় ভীষণ সুপুরুষ ছিলো সে. পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে ভিড় করে আসে. হাসি ফুটে ওঠে ওর ঠোঁটে.

নিজের হাসিটা ভীষণ অপরিচিত মনে হয় সমরেশের. কতদিন ও এইভাবে হাসেনি. সেই আগে হাসতো যখন ওর রাজা ওর কাছে থাকতো. আজ আবার ওর রাজাকে ও ফিরে পেয়েছে, এবার আর কোনো মতেই রাজা কে ও হারাতে পারবেনা۔۔۔۔۔ কোনো কিছুর বিনিময়েই না. নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় সমরেশ, মুখের মাংসপেশী গুলো কঠিন হয়ে আসে ওর.

কতক্ষন এইভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সমরেশ জানেনা. ঘোর কাটে গায়েত্রী দেবীর গলার আওয়াজে۔۔

গায়েত্রী দেবী: কি রে সমু? একা একা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস?

সমরেশ কিছু না বললেও ওর মুখের হাসি ওর হৃদয়ের প্রশান্তি কে ব্যক্ত করে. মা হয়ে গায়েত্রী দেবী ছেলের এই পরিবর্তন ধরে ফেলেন এক নজরেই۔۔

গায়েত্রী দেবী: আমাকেও একটু বল কি এমন ঘটলো যে আমার ছেলে আজ এতো খুশি?

কথা বলতে বলতেই কিছু একটা আন্দাজ করে গায়েত্রী দেবী আবার বলেন: রাজা?

সমরেশ গায়েত্রী দেবীকে এবার জড়িয়ে ধরে. এই মুহূর্তে মা ছাড়া আর কার কাছেই বা নিজেকে মেলে ধরতে পারে?

গায়েত্রী দেবী: বল না সমু, ও আমার রাজা۔۔۔۔۔۔না?

সমরেশ: হ্যাঁ মা۔۔۔۔ ও আমার রাজা۔۔۔۔۔আমাদের রাজা۔۔ ও আজ স্বীকার করেছে মা۔۔ (আনন্দে সমরেশের গলা কাঁপতে থাকে)۔۔

দুজনে আলিঙ্গনমুক্ত হন۔۔۔۔

গায়েত্রী দেবী কেঁদে ফেলেন: আমি জানতাম۔۔۔আমার মন বলছিলো۔۔۔۔আমার রাজা ফিরে এসেছে۔۔۔ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে ওর কান মুলে দি۔۔۔এই বুড়িকে দেখে ওর মায়া হলোনা একবারও?

সমরেশ: ও যে নিজেও ভেতরে ভেতরে বড্ডো অভিমান করে বসেছিল ওর বাবার উপর. তোমার মনে আছে মা۔۔۔۔সেই সে বার۔۔۔۔স্কুলের অনুয়াল স্পোর্টসে? এতো ভালো ছিল স্পোর্টসে অথচ আমি সেবার যেতে পারিনি বলে নিজের নাম উইথড্র করে নিয়েছিল. (হেসে) লম্বায় চওড়ায় বেড়েছে ঠিকই কিন্তু সেই ছোট্টোটিই রয়ে গেছে۔۔

গায়েত্রী দেবী: ভাগ্গিস হিয়া সেদিন ওকে নিয়ে এসেছিলো. হিয়াকে একবার বলিস না আসতে, ওর কাছে যে ঋণী হয়ে গেছি সমু۔۔

সমরেশ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে একটু অর্থপূর্ণ হেসে: মনে হচ্ছে আমাকে আর আনতে হবেনা মা, তোমার নাতিই নিয়ে আসবে হিয়াকে একদিন۔۔۔۔۔চিন্তা করোনা.

এবার সমরেশ গায়েত্রী দেবী কে সব খুলে বলে শুধু মাত্র ওদের দুজনের গোপন সত্যিটুকু বাদ দিয়ে۔۔۔ আজ আবার অনেকগুলো মানুষ নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে পেয়েছে۔۔

তন্দ্রার মধ্যেই উজানের কানে কে যেন ফিসফিস করে বলে: আপনার পারফিউম এর স্মেল টা খুব সুন্দর۔۔ Bit strong, প্রত্যেকবার পেয়েছি যখনই আপনার কাছে এসেছি۔۔

উজানের তন্দ্রা কেটে যায়, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই. ভাবে উজান, তারমানে ও হিয়াকে স্বপ্ন দেখছিলো?

ঘড়ির দিকে তাকায়. সকাল হয়ে গেছে, উজান ফ্রেশ হয়ে হন্তদন্ত হয়ে অফিসের দিকে ছোটে. অফিস পৌঁছে দেখে প্রায় সবাই উপস্থিত. মুরুগেশ কম্পিউটারে ক্রমাগত কিছু করে চলেছে.

উজান: CIA রিপ্লাই পাঠিয়েছে?

জনৈক অফিসার: Yes Sir..কিন্তু۔۔۔

উজান: কিন্তু কি?

মুরুগেশ : স্যার চিপ টা ওপেন হয়েছে কিন্তু অনেক গুলো সিকিউরিটি বেরিয়ার আছে সেগুলো আনলক করলে তবেই মেন চেম্বার পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব. CIA সবগুলো আনলক করে ফেলেছে একটা বাদে, ওটাই লাস্ট সিকিউরিটি বেরিয়ার. ওটা ক্র্যাক করতে পারলে তবেই মেন চেম্বারে ঢুকতে পারবো যেখানে ইনফরমেশন গুলো আছে.

উজান: Are you serious? CIA ক্র্যাক করতে পারেনি?

মুরুগেশ মাথা নেড়ে জানায় উজান ঠিকই বুঝেছে۔۔

উজান: কোনো ক্লু দিয়েছে?

মুরুগেশ: Yes Sir…It’s a some kind of voice note..

উজান: Voice note? নোট টা কি সেটা জানা গেছে?

মুরুগেশ: CIA is still working on it Sir…

এবার তিনি উজানকে চিপ টা ওপেন করে দেখান۔۔ উজান এবং বাকি সমস্ত অফিসার পুঙ্খানুপুঙ্খ সব কিছু লক্ষ্য করতে থাকে যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায়۔۔۔

দেখা যাক উজান চিপটা থেকে—কিভাবে নতুন ক্লু খুঁজে পায়—!

(কপিবাজ মহান ব্যাক্তিবর্গ গণ আপানাদের কপি করার সুবিধার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত–আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসুন কপি করার জন্য🥴🥴🥴)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here