উত্তরণ পর্ব-৪০

0
721

#উত্তরণ
পর্ব_৪০

ইনফরমেশন গুলোর একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে মুরুগেশ উজানের হাতে দেয়. উজান সেগুলো মন দিয়ে দেখতে থাকে. হিয়া সহ অন্য অফিসাররাও কম্পিউটারের মনিটারের সামনে ভিড় জমায়. মনিটারের স্ক্রিনে তখন এক দুর্বোধ্য গাণিতিক সঙ্কেত۔۔

23037258: 8586
18537384: 1048
26927580: 1220
26858092: 6683
22727586: 3555
27197801: 8848
17407848: 4590
09937812: 8091

আটটা সঙ্কেত, আটটা ধাঁধা. এগুলো সমাধান করলে তবেই বোম্ব ব্লাস্ট আটকানো সম্ভব. উজানের কোঁচকানো ভ্রু আরো একটু কুঁচকে যায়, ভাবতে থাকে কোথা থেকে শুরু করবে. উজান কিছু একটা নির্দেশ দিতে যায় মুরুগেশকে, কিন্তু তার আগেই হিয়ার কথা শুনে থেমে যায়۔۔۔

হিয়া: এরা এবার এভারেস্টের মাথায় বোমা ফাটাবে নাকি?

উজান: আপনি কি এখন ঠাট্টা করছেন, নাকি কিছু একটা ভেবে বললেন? (হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে)

হিয়া মাঝে মাঝে রসিকতা করলেও ওর বুদ্ধিমত্তাকে বেশ সম্মান করে উজান. হার্দিকও করতো, তাই ও হিয়াকেই ব্যবহার করেছিল ওর গোপন সিন্দুকের চাবিকাঠি হিসেবে.

হিয়া: আরে ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী ঠাট্টা করবো কেন? আসলে ওই সংখ্যাটা এভারেস্টের হাইটের সাথে ম্যাচ করছে তাই বললাম (বলে হিয়া একটা বিশেষ সংখ্যার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে)۔

হিয়াকে অনুসরণ করে উজানের চোখ 8848 এ আটকে যায়. প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হিয়া আবারও চিৎকার করে ওঠে۔۔

হিয়া: ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী এটা দেখুন۔۔۔۔এটা অন্নপূর্ণার হাইট۔۔۔۔ আর এটা তো মাউন্ট আবুর۔۔۔

হিয়ার কথা শুনে উজান একবার মনিটারের দিকে তাকিয়ে আবার হিয়ার উপর তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করে۔۔

উজান: আপনি মাউন্ট আবুর হাইট কি করে জানলেন? এভারেস্টর হাইট না হয় সবাই জানে, কিন্তু অন্নপূর্ণা বা মাউন্ট আবুর হাইট পড়লেও সেটা মনে থাকার কথা না মিস মিত্র۔۔

হিয়া: বই এ পড়ে কে মনে রেখেছে ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী? মাউন্ট আবু ট্রেক করেছিলাম তাই জানি. আর অন্নপূর্ণাও ক্লাইম্ব করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পারমিশন পাইনি এজ কম থাকায়. সেজন্যই এদের সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞান আছে. এ ব্যতীত এখন যদি কাঞ্চনজঙ্ঘারও হাইট জিজ্ঞাসা করেন বলতে পারবোনা, অথচ এতবার দেখেছি.

হিয়ার কথা শুনে বাকিদের সাথে সাথে উজানও হতবম্ব.

বিস্মিত উজান বিরক্ত : Are you serious? আপনি অন্নপূর্ণা ক্লাইম্ব করার কথা ভেবেছিলেন? অসাধারণ۔۔۔۔ Do you have any idea? Annapurna is among the deadly peak in the world. ফ্যাটালিটি রেসিও জানেন?

হিয়া যেন গাল ফুলিয়ে উজানকেই নালিশ ঠোঁকে : জেনে বুঝেই তো গিয়েছিলাম. কিন্তু ওরা অ্যালাওই করলোনা.

উজান: কারণ ওরাতো আর আপনার মতো ইডিয়ট নয়۔۔

হিয়া প্রায় তেড়ে আসে উজানের দিকে : দেখুন ভালো হচ্ছেনা কিন্তু. আপনি আমায়۔۔۔۔

হঠাৎ একটা গলা খাকরানির শব্দে হিয়া কথা থামিয়ে পাশে তাকায়. দেখে আরোহী হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সাথে বাকিরাও. এবার হিয়াকে অনুসরণ করে উজানও একটু অপ্রস্তুত হয়. সত্যিতো, এতো ভাইটাল একটা সিচুয়েশনে ও হিয়ার সাথে কি করে ফালতু তর্কে জড়িয়ে পড়লো? মনে মনে সব দোষ হিয়ার ঘাড়ে সমর্পন করে একটু শান্ত হয়ে মনিটরের দিকে এগিয়ে যায় উজান۔۔۔

অফিসার কে নির্দেশ দেয় প্রত্যেকটা নম্বর কে চেক করার. তারপর একটা চেয়ার টেনে অফিসারের পাশেই বসে পরে উজান۔۔۔

হিয়া অফিস থেকে বেরিয়ে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে. পেছন থেকে কারোর আওয়াজে ফিরে তাকায়, দেখে আরোহী. আরোহী ওর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে۔۔۔

আরোহী: রুমে যাচ্ছেন?

হিয়া: হ্যাঁ۔۔۔ এখানে থাকেই বা কি করবো?

আরোহী: চলুন আপনাকে পৌঁছে দি. (হেসে) জানি আপনি একাই যেতে পারবেন۔۔۔۔۔তাও. এই ফাঁকে একটু গল্প করা যাবে আপনার সাথে. আমারও ওখানে এখন বিশেষ কাজ নেই. ওটা এখন স্যার আর অফিসার মুরুগেশ সামলে নেবেন.

হিয়া: অফিসার মুরুগেশ কে?

আরোহী: ওই যিনি উজান স্যারের ছায়া হয়ে রয়েছেন. ইলেকট্রনিক্স উইজার্ড বলতে পারেন. ওনার হাতে কম্পিউটার বা অন্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস জীবন্ত হয়ে ওঠে۔۔۔

হিয়া: আচ্ছা আপনাদের টিমে আপনি ছাড়া অন্য কোনো মহিলা দেখলামনা তো?

আরোহী: উজান স্যারের টিমে আমি একাই মহিলা আছি তবে অন্য টিমে আরো মহিলারা আছেন۔۔۔

হিয়া: সেই টিম গুলোও কি এখানে আছে?

আরোহী: না ম্যাডাম, প্রতিটা টিম নিজের নিজের ওয়ার্কিং এরিয়ায় আছে. এখানে শুধু উজান স্যার যে টিমটা লিড করছেন সেটা, অর্থাৎ মেন অপারেশন টিমটাই আছে. অ্যাকশন, মানে বাইরের সব মুভমেন্ট আমরা করি. এই টিমের সবাই IPS. কাজেই বুঝতেই পারছেন আমাদের কাজ. ইমফরমেশন রেসকিউ করার পর আমাদের বেরিয়ে যেতে হবে অপারেশনে۔۔۔

দেখা যাক এর পর কি ঘটতে চলেছে উজান-হিয়া র জীবনে–!!

(আপনারাও ভাবুন তো দেখি কিভাবে পাজাল্ট সলভ করা যায়🤔🤔😜😜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here