উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৭]

উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৭]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)

ইশতিয়াক লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লো।যেই মেয়ে টা ওকে ভালোবাসে সে কিনা ওকেই বকাঝকা করেছিল। মাথার চুল গুলো টানতে টানতে নিচে যাচ্ছিল তখন আয়শি ওর হাত ধরে টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।আয়শির এমন কাজে যারপরনাই বিরক্ত হলো ইশতিয়াক,আয়শির থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলল,,,,,,
কি ব্যাপার আয়শি? এইভাবে হুটহাট ফালতু কাজ করা কিন্তু আমার মোটেও পছন্দ নয় তুমি তা জানো তারপরও এসব কি হ্যা?
আয়শি ইশতিয়াকের কথার কোনো উত্তর দিলো না, পায়ে পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো ওর দিকে। ইশতিয়াক পিছিয়ে না গিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল, এই উদ্ভট মেয়ে টা কি করতে চায় সেটাই সে দেখবে। আয়শি ওর দিকে এগিয়েছে অনেক টাই,আর একটুও ফাঁকা নেই ওদের দুইজনের মধ্যে,কিছু উল্টো পাল্টা করার মতলব নিয়ে আয়শি ওর মুখের দিকে মুখ এগিয়ে দিচ্ছিল তখনই ইশতিয়াক ঠাস করে থা’প্প’র বসিয়ে দিলো আয়শির গালে। থা’প্প’র দিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে দিল ওকে তারপর বললো,,,,

এই টার জন্যই কি এইভাবে মুখ এগিয়ে দিচ্ছিলে আমার দিকে?দেখেছো আমি কি করে তোমার মনের কথাটা বুঝে গেছি, এরপর থেকে যদি আবার এইরকম মিষ্টি থা’প্প’র খাওয়ার ইচ্ছা করে তোমার তাহলে এইভাবে ই আমাকে নিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ো বেইবি।

ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসির রেখা টেনে ইশতিয়াক রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আয়শি গালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো, রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,, এইভাবে আর কতদিন আমার থেকে দূরে সরে থাকবে ইশতিয়াক? একদিন না একদিন তো তোমাকে আমার কাছে আসতেই হবে আর সেইদিন খুব বেশি দুরে না। চেয়েছিলাম তোমাকে কিস করতে আর তুমি ভাবলে তোমার এই লোহার মত হাতের থা’প্প’র খেতে চেয়েছি।ভাবো বেইবি ভাবো, সময় আমারো আসছে, খুব শিঘ্রই তোমাকে আমি আমার সাথে করা প্রতিটি ব্যাড বিহেবিয়ার এর শাস্তি দিবো তখন তুমি কি করবে?গাল থেকে হাত টা সরিয়ে নিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিলো আয়শি।

__________________________________

পুরো বাসা জুরে অহনা কে দৌড়িয়ে বেড়াচ্ছে মেঘা।আজ অহনার মুক্তি নেই মেঘার হাত থেকে, রাগে গজগজ করছে মেঘা।এই গাধা টাইপের মেয়ে টা ওই বদমাইশ ছেলে টা কে ওর রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছে।তার উপর এখন বলছে ও নাকি ছেলে টা কে রিপোর্ট টা দিতে চেয়েছিলো, ওর কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই যে নিজের রিপোর্ট অন্য কাউকে দান করতে যাবে। অহনা ও পড়েছে বিপদে, না বুঝে রিপোর্ট তো দিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন মেঘার হাত থেকে রক্ষা পাবে কি করে? এই ভর দুপুরে পুরো বাসা জুরে অহনা আর মেঘা কে ছুটাছুটি করতে দেখে শায়লা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন। নিশ্চয়ই অহনা আজকেও মেঘার কথার অবাধ্য হয়েছে, ওর কথা শুনে নি তাই এখন মেঘা ওকে। তিনি এগিয়ে এসে দুই মেয়ে কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,,,

কি হয়েছে তোদের? এইভাবে ছুটাছুটি করছিস কেন বলতো?

কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছো,বলো কি হয় নি? তোমার এই গুনধর মেয়ে আমার সিটি স্ক্যান এর রিপোর্ট টা একটা বাজে উদ্ভট বদমাইশ ছেলে কে দিয়ে দিয়েছে আবার বলছে আমি না কি ওই ছেলে টা কে রিপোর্ট টা দিতে চেয়েছিলাম।(মেঘা)

মেঘার কথা শুনে শায়লা বেগম খানিকটা রেগে গেলেন।
এইসব কি সত্যি অহনা? তুই ওর রিপোর্ট টা ছেলে টা কে দিলি কোন বুদ্ধিতে, মাথায় কি শুধু গোবর সার নাকি তোর!যাকে তাকে রিপোর্ট দিয়ে বেরাচ্ছিস।(শায়লা বেগম)
অহনা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে বললো,,সরি মেঘু, আমি দুই দিনের মধ্যে তোর রিপোর্ট টা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। তাঁর পর একটু দাঁত গুলো বের করে দিয়ে বললো,, তুই কোন চিন্তা করিস না, আমি আছি তো না কি?

হ্যা তুই আছিস বলেই তো চিন্তা হচ্ছে আমার, কোন দিন না জানি তুই আমাকেই অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিস।(মেঘা)
অহনা কাচুমাচু হয়ে বললো,,,এই ব্যাপারে পরে কথা হবে,চল এখন আমরা কিছু খাবার খেয়ে নিই। রাতে তো আবার হসপিটালে যেতে হবে লিরার বাবা কে দেখার জন্য,চল।

____________________________________

রাত এখন এগারোটা বাজে। জানালার পাশে বসে আপন মনে ভাবছে মেঘা। আজকের দিনে যা কিছু হয়েছে সবকিছু কেমন জানি লেগেছে তার।লিরার বাবা কে যখন ও রক্ত দিতে যাচ্ছিল তখন কেমন জানি একটা অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছিল তার, একটা অদ্ভূত রকমের অস্বস্তি কাজ করছিল ওর মধ্যে। রক্ত দেওয়ার পর পরই তো বাসায় চলে এসেছে তখন আর ওর বাবাকে দেখতে যাওয়া হয় নি।তাই রাতে যখন লিরার বাবা কে ও দেখতে গেলো তখন ও লিরার বাবা কে দেখে চমকে উঠে ছিল।কারন ওর বাবার মুখের আদল টা ঠিক ওর মতই,কেউ যদি ওদের একসাথে দেখে তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দিবে ওরা দুজন বাবা মেয়ে।লিরার বাবা কে দেখে কেন জানি মেঘার প্রচুর পরিমাণে রাগ হচ্ছিল, রাগে সারা শরীর কাপতে শুরু করেছিল। কোনো মানুষ কে দেখে এর আগে এতো পরিমাণে ও কখনো রাগে নি তাও আবার কোনো কারণ ছাড়াই। বেশিক্ষণ কেবিনে ও থাকতে পারে নি, পাঁচ মিনিট পরই ও বেরিয়ে এসেছিল,যদি থাকতো তাহলে রাগের বশে কিছু একটা করে বসতো ও। লিরা মেয়ে টা কে ওরা হসপিটালে ই রেখে এসেছে,লিরা ওদের ওর সব সমস্যার কথা বলেছিল।লিরা রা যেই বাসায় ভাড়া থাকতো সেই বাসায় বেশ কিছু দিন ভাড়া না দেওয়ার কারণে ওদের আর থাকতে দিবে না।আর কোথাও ওর যাওয়ার জায়গাও নেই তাই মেঘার কাছে সাহায্য চাইছিল।মেঘা ওকে আশ্বাস দিয়ে এসেছে যে কালকে সকালে ও লিরার একটা ব্যাবস্থা করে দিবে। লেখিকা-সাদিয়া জান্নাত সরমি, এইভাবে হুটহাট করে তো আর কারো সাহায্য করা যায় না তাই ও কাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে।মেঘা আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, আকাশে আজ চাঁদ নেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।আজ আর ওর মায়ের সাথে কথা বলা হলো না, মা হয়তো রাগ করবে ওর উপর কিন্তু ও কি করবে আজ তো চাঁদ কে দেখাই যাচ্ছে না। মনে মনে বললো সরি মা,আজ তোমার সাথে কথা বলতে পারলাম না। আকাশে চাঁদ না উঠলে মেঘার মন ভালো থাকে না, চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে কথা বলে সে আর ভাবে তার মা তার সব কথা শুনছে। মাকে নিয়ে সে নিজের একটা কাল্পনিক জগত বানিয়ে নিয়েছে যেটার মূলে হচ্ছে চাঁদ। কিছুক্ষণ চাঁদের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে থেকে মেঘা ঘুমাতে চলে গেল।

___________________________________

পাংশুটে মুখ করে মায়ের সামনে বসে আছে মাহদী। একটু আগেই মা ধমক দিয়ে সবকিছু জেনে নিয়েছেন ওর থেকে, নিজের পেশেন্টের প্রেমে পড়ে গেছে তার ছেলে এই ব্যাপারটা আফরোজা চৌধুরী ঠিক কিভাবে নিবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছে না মাহদী। বারবার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,দশ মিনিট ধরে মা চুপচাপ বসে কি একটা যেন ভাবছেন, এই দেখে মাহদীর মনে হচ্ছে মা হয়তো বা ধ্যান ধরেছেন এই ভেবে যে ছেলেটা শেষে কি না পেশেন্টের প্রেমে পড়লো। একটু পরে মাহদীর ধৈর্যের অবসান ঘটিয়ে আফরোজা চৌধুরী মুখ খুললেন,,,,

মেয়েটার বাসা কোথায় আর ও দেখতে কেমন?
মায়ের প্রশ্ন শুনে মাহদী ঢোক গিললো, মা কি এখন ওর মেঘ পাখি কে ব’কা’ঝ’কা করবে না কি?মেঘ পাখির তো কোনো দোষ নেই,ও বেচারি তো জানতো ও না যে মাহদী ওকে ভালোবাসে। ভয়ে ভয়ে বললো,,

মা তুমি কি ওকে গিয়ে ব’ক’বে? দেখো ওর কিন্তু কোনো দোষ নেই এতে,ও আমাকে কোনো কিছু বলে নি, আমি নিজে থেকেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই আর কি!(মাহদী)

মাহদীর কথা শুনে আফরোজা চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বললেন,,, তুমি বড় হয়েছ ঠিকই মাহদী কিন্তু তোমার আমার প্রতি ধ্যান ধারণা টা ঠিক আগের মতই রয়ে গেছে। বলছি কি আমার ছেলের বউ কে কি আমি জানতে পারবো না?ও দেখতে কেমন, ওর পরিবারের সদস্যরা সবাই কেমন, আশপাশের পরিবেশ কেমন ওদের সেইসব কিছু জেনে তারপরেই তো আমি ওই মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেবো।

মাহদী তো মায়ের কথা শুনে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। মা মেনে নিয়েছে ব্যাপার টা, ভাবতেই ওর খুশি লাগছে, এখন শুধু অপেক্ষা মেঘ পাখির উত্তরের।

চলবে ইনশাআল্লাহ

[আজকে দুই পর্ব দেওয়ার কথা থাকলেও দিতে না পারার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here