উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [৮]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)
এক সপ্তাহ পর,,,,,,,,,
এই এক সপ্তাহের মধ্যে অনেক কিছুই বদলে গেছে।মেঘা,লিরা, অহনা আর ইশতিয়াক এর জীবনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ইশতিয়াকের জীবনে এসেছে প্রেমের ঝড় আর লিরা,মেঘার জীবনে এসেছে অতীতের কালো সত্যির ঝড়। ওইদিন সকালে হসপিটালে গিয়ে লিরার বাবার নাম জেনে হতবাক হয়ে গিয়েছিল মেঘা,তাই কৌতুহল বশত ওর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করতেই লিরা বলে যে ওর মায়ের নাম মিথি।মেঘা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,যার জন্য ওর মা ওকে ছেড়ে চলে গেলো শেষে ও কি না তাকেই রক্ত দিয়ে বাঁচালো।তারপরে মেঘা ভাবলো যে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে কিন্তু এখন তো ওকে রি’ভে:ঞ্জ নিতে হবে। ভুল করে বাবা নামের মানুষ টিকে ও ওর শরীরের বয়ে চলা রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছে কিন্তু তাই বলে তো আর এই পাপি লোকটাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না।লিরা কে বাসায় নিয়ে এসে মেঘা ওর মায়ের ডায়েরি টা দেখায় আর ওর বাবার আর ওর মায়ের সমস্ত কালো সত্যি লিরার সামনে নিয়ে আসে। সবকিছু জানার পর লিরা কি করবে বুঝতে পারছিল না, নিজের বাবা মায়ের সম্পর্কে এতো বড় একটা জঘন্য সত্যি জানার পর লিরা একেবারে ভেঙে পরেছিল।লিরার এই কঠিন একটা সময়ে ওর পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই,যাকে বাঁচানোর জন্য সে এখানে ওখানে ছুটে বেড়াচ্ছিল সেই একটা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে আর সেটা হচ্ছে ওর ক্লাসমেট এর মা।মেঘা লিরা কে নিজের সাথে ওর খালামনির বাসায় নিয়ে আসে ও এই বাড়িতে থাকবে বলে। শায়লা বেগম এতে ঘোর আপত্তি করেছিলেন,যার জন্য তিনি বোন কে হাড়িয়েছেন তাকে এই বাসায় স্থান দিতে নারাজ তিনি। কিন্তু পরে মেঘার জেদের কারণে হার মানতে হয়েছে তাকে।মেঘার এক কথা সে তার বোন কে নিজের কাছেই রাখবে,এতে যদি খালামনির কোনো সমস্যা হয় তাহলে বলে দিতে পারে সে তার বোন কে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবে।ওর এমন কথা শুনে শায়লা বেগম আর টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না, এই মেয়ে টা তার কলিজার টুকরা ।সে যদি বাসা থেকে চলে যায় তিনি কি নিয়ে বাঁচবেন, নিজের মেয়ের থেকেও যে মেঘার স্থান আগে।
🍂
লিরা আজ কয়েকদিন হলো মেঘার খালামনির বাসায়। এই কয়দিন সে চুপচাপ ছিল, কারো সাথে কোন রকম কথা বলে নি এমনকি মেঘার সাথে ও না।মেঘা ও কোনো রকম বিরক্ত করে নি তার বোন কে, মানসিক ভাবে সে এখন মেঘার সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত নয়। সন্ধ্যার দিকে মেঘা ছাদে এসে এক কোনায় দুটো চেয়ার রাখা আছে, তার একটাতে বসলো। কোন কিছু ভালো লাগছে না তার,ওই বদমাইশ ছেলে টাকে নিয়ে যতো ধরনের চিন্তা ভাবনা সব এসে ঘিরে ধরছে তাকে।দুই দিন আগে ওই ছেলে টা এসে কি সব কথা বলে গেল ওকে,ও নাকি ওই ছেলে টা কে কিসের একটা চিরকুট দিয়েছিল। তা-ও ওর রিপোর্টের ভিতরে লুকিয়ে, ছেলে টা এসে রিপোর্ট টা তো ফেরৎ দিয়েছেই সাথে ছোট একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে।এটা নাকি ফিরতি চিরকুট, ওর উত্তর লেখা আছে এই চিরকুট টাতে। অদ্ভুত ধাঁচের ছেলে টা তো ওকে কিছু বলার সুযোগ টুকু দিলো না, নিজের মতো কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেলো। ইশতিয়াকের দেওয়া চিরকুট টা মেঘা খুলেও দেখেনি অহনাকে দিয়ে বলেছে এটা যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু বেচারি অহনা সেটা না পুড়িয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখলো আর মেঘা কে বললো ও সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে।এখন ভাবনার বিষয় টা হচ্ছে ওর রিপোর্টের ভিতরে চিরকুট টা গেল কি করে, একটু পরেই মেঘার ভাবনায় ছেদ পড়ল কারো ডাকে। ঘরে তাকিয়ে দেখে লিরা এসে পাশের চেয়ারে বসেছে। শুকনো গলায় লিরা বললো,,,,
কেমন আছো তুমি মেঘাপু?(লিরা)
ধুর পাগলি, আমাকে তুমি আপু বলছো কেন? আমরা তো সেম ক্লাস,সেম এজ আর আমি ভালো আছি।(মেঘা)
নাহ, আন্টির ডায়েরি পড়ে আমি যা বুঝেছি তুমি আমার থেকে কয়েক মাস হলেও বড় তাই আমি তোমাকে আপু বলেই ডাকবো। বাবা আমার দুশ্চরিত্রা মায়ের জন্য আন্টিকে আর তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিল যার মূল কারণ হলাম আমি। আমি যদি তখন ওদের পাপের ফসল হয়ে মায়ের গর্ভে না আসতাম তাহলে হয়তো আজ আন্টি বেঁচে থাকতেন। তুমি ও কাউকে মা বলে ডাকতে পারতে কিন্তু সেটা আমার জন্য সম্ভব হলো না। তারপরও তুমি আমাকে তোমার বোনের স্থান দিলে, সবকিছু ভুলে আমাকে তোমার কাছে টেনে নিলে, আমার জন্য তুমি এতো দিনের ভালোবাসার খালামনির কে ছেড়ে দিতে চাইলে কেন আপু?(লিরা)
লিরার প্রশ্ন শুনে মেঘা হাসলো, তারপর বললো,,,,,
ওদের পাপের শাস্তি তুমি কেন পাবে বোন?পাপ ওরা করেছে, আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য ওরা দায়ী, তুমি তো নয়। যেভাবেই হোক না কেন তুমি তো আমার বোন, ওদের জন্য আমি কি করে আমার বোন কে ছেড়ে দিতে পারি বলো!(লেখিকা- সাদিয়া জান্নাত সরমি)লাবীব রহমান যা করেছে তার জন্য ওনার কোনো ক্ষমা নেই আমার কাছে কিন্তু তুমি কোনো অপরাধ করো নি। শুধু ওদের অপরাধের ফল হয়েছো তুমি,তাই তোমাকে আমি আমার কাছে টেনে নিয়েছি।(মেঘা)
লিরা আর কিছু না বলে উঠে এসে মেঘা কে জড়িয়ে ধরলো।মেঘাপুর মতো ওরও এখন লাবীব রহমানের উপর রাগ আর ঘৃনা জন্মেছে, ওইদিন হসপিটাল থেকে আসার পর আর একটা বারের জন্যও লাবীব রহমান কে দেখতে যায় নি সে। হসপিটাল থেকে একটা নার্স ওকে ফোন করে বলেছিল যে ওর বাবার জ্ঞান ফিরেছে আর উনি নাকি ওকে খুঁজছে।ও নার্স কে মুখের উপর বলে দিয়েছিল যে ওনাকে বলে দিন যে ওনার মেয়ে মা’রা গেছে আর আপনিও ওনার আপডেট দেওয়ার জন্য আমাকে কখনো ফোন করবেন না।
______________________________________
এক সপ্তাহ হয়ে গেল কিন্তু মাহদী তার মেঘপাখির দেখা পেল না এখনো। ভার্সিটি তে কয়েক বার টহল দিয়ে এসেছে এই পর্যন্ত কিন্তু নাহ, তার মেঘ পাখি ভার্সিটিতে আসে নি। অস্থির অবস্থায় এই কয়েক দিন কেটেছে মাহদীর, কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারেনি এই কয়েক টা দিন। অবশেষে আজ সকালে মেঘ পাখির সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে ভার্সিটির পথে আবার রওনা দিল মাহদী। আজকে যদি ও ভার্সিটি তে মেঘ পাখির দেখা না পায় তাহলে সে সোজা মেঘ পাখির বাসায় চলে যাবে। গিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে একজনকে এতো দিন অপেক্ষা করানোর ফল কি হয়! আচ্ছা মেঘ পাখি ওর চিরকুট টা পড়েছে তো, না আবার ফালতু কাগজ ভেবে ফেলে দিয়েছে ডাস্টবিনে।যদি এটা হয় তাহলে সে এইবার সরাসরি প্রপোজ করবে,মেঘার থা’প্প’র খাওয়ার আর ভয় পাবে না। এইসব ভাবতে ভাবতেই মাহদী গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। আনমনে ড্রাইভ করছে সে, হঠাৎ করে ই সামনের দিকে চোখ চলে গেল তার। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি ব্রেক করে তাকালো ওদিকে, দেখতে পেল,মেঘা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে খুব রেগে রেগে কথা বলছে। গাড়ি থেকে নেমে এসে মাহদী সোজা ওদের দিকে এগিয়ে গেল, গিয়ে যা শুনলো তাতে ওর মনে হলো এই কথা গুলো শুনার আগে ওর ম’রে যাওয়া উচিত ছিল।কি লজ্জা কি লজ্জা, এতো ভালোবাসা দিয়ে লেখা চিরকুট টা কিনা শেষ পর্যন্ত একটা ছেলের হাতে পড়লো।যাকে লিখেছিল সেতো পেলোই না উল্টো আরেক টা ছেলে সেই চিরকুট টা পড়ে নিলো।কি লজ্জার ব্যাপার একটা মাহদীর কাছে, ছিঃ
চলবে ইনশাআল্লাহ
[আমার জন্য কি আপনারা দুই লাইনের একটা মন্তব্য করতে পারবেন না]