উপন্যাস প্রপর্ণ, পর্ব-১৬

0
3399

#উপন্যাস_প্রপর্ণ(১৬)
#কুরআতুল_আয়েন

বেলীর পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটেছে।বুরাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কালকেই বেলীকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।কিন্তু,বেলী যেতে চাচ্ছে না।সে এখানেই থেকে বাকি ক্লাস গুলো করতে চায়।এতে বুরাগ অনেকটা চটে যায়।সে কিছুতেই বেলীকে ছাড়া যাবে না।এমনকি বেলীকে না নিয়ে সে এক পাও নড়বে না।বেলীও নাছোড়বান্দা সে কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে যাবে না।এই নিয়ে সকালে দু’জনের মধ্যে অনেক মনোমালিন্য হয়েছে।দু’জনেই দুজনের উপর অনেকটাই রেগে আছে।সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কারোর সাথে তেমন একটা কথাও বলে নি।বুরাগ চোয়াল শক্ত করে বিছানায় বসে আছে।অন্যদিকে,ফোনে আজাদ রহমান বুরাগকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।অবশ্য,বুরাগও বাবার কথা সমর্থন জানিয়েছে।সে চলে আসায় অনেকগুলো মিটিং এর নড়চড় হয়েছে।তাই তো বেলীর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই চলে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে।কিন্তু,বেলীর নাছোড়বান্দা জবাব বুরাগ একদমই আশা করে নি।মাথা যেনো রাগে কিলবিল করছে।

জাবেদা বেলীর হাতে হাতে খাবার দিচ্ছেন টেবিলে সাজিয়ে রাখার জন্য।বেলীও বাধ্য মেয়ের মতো আম্মার কথা অনুসরণ করে টেবিলে খাবার রাখছে।দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে তামিম চলে যাবে নিজের কর্মস্থলে।জাবেদা দ্রুত পায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন।টেবিলে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখেছেন খুব মনোযোগ সহকারে।বেলী একপাশে দাঁড়িয়ে পানির জগ,গ্লাস গুলো ঠিক করছে।

–“নিজের জামা-কাপড় গুছিয়ে নিস বেলী।কালকে সকাল সকাল তোকে চলে যেতে হবে তো।”

বেলী কাজ করা থামিয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ সঙের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মিনমিনে গলায় বললো,

–“আম্মা আমি বাকি ক্লাস গুলো এখানেই থেকে করতে চাই।”

জাবেদা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে তাকিয়ে রইলেন বেলীর দিকে।মিনিট পাঁচেক এইভাবে থাকার পর জাবেদা কাটকাট গলায় বললেন,

–“ক্লাস করার দরকার নেই।পরীক্ষার সময় শুধু এসে পরীক্ষা গুলো দিয়ে যাবি।বুরাগ যা বলছে তাই শুনবি।ছেলেটা তোর জন্য এইখানে এতোদিন পড়ে ছিলো।এখন তুই যদি এমন করিস তাহলে ছেলেটা বড্ড কষ্ট পাবে।আর,সবচেয়ে বড় কথা আগে তোর সংসার।মেয়েদের এটাই আসল ঠিকানা।’

বেলী কিছুক্ষণ নিষ্পলক চেয়ে রইলো।প্রাণহীন একটা হাসি টেনে বললো,

–“জানো!আম্মা,তোমাকে মাঝেমধ্যে আমার চিনতে খুব কষ্ট হয়।যখন চিনতে খুব কষ্ট হয় তখন মনে হয় আমি তোমার কাছে খুবই পর।আপন না।”

বেলী চলে আসে সেখান থেকে।ফোসফাস করে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।দরজা ঠেলে বুরাগকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে কিছু না বলে আলমারির কাছে এগিয়ে গেলো।বুরাগ বেলীকে দেখে রাগে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ধপ ধপ পায়ে বাহিরে চলে আসলো।বেলী সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আলমারি থেকে নিজের কাপড়চোপড় বের করে ট্রলি তে গুছিয়ে রাখছে।নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেলীকে বুরাগের সাথে যেতে হবে।
বেলী এক এক করে নিজের জামা,শাড়ি গুলো গুছিয়ে রাখছে ট্রলিতে।বিছানার বালিশের নিচ থেকে বুরাগের ফোনটা ভনভন করে বেজে উঠলো।প্রথমে বেলী চমকে উঠেছিলো।পরক্ষণেই স্বাভাবিক হয়ে বুরাগের ফোনটা হাতে তোলে নিলো।ফোনের স্ক্রিনে জয়নব নামটি দেখে কিছুটা খটকা লাগলো বেলীর।ফোনটিকে অনবরত বাজতে দেখে রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো।

ফোন রিসিভ হওয়ায় জয়নবের খুশি যেনো আর ধরছে না।উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,

–“এতো দিন কোথায় ছিলে তুমি বুরাগ।অফিসে অনেকদিন গিয়েও তোমার খোঁজ পায় নি।”

বেলী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তবে জয়নবের কথার ধরণ তার কাছে একদমই ভালো লাগছে না।বেলী কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো।ফোনের অপর পাশে জয়বব আবারও বলতে শুরু করলো,

–“কি ব্যাপার বুরাগ!কথা বলো?চুপ করে আছো কেন।তোমাকে আমি এই কয়েকদিন ভিষণ মিস করেছি।”

বেলীর বুকটা যেনো হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো।জয়নবের প্রতিটি কথায় বেলীর হৃদয়ের গহীনে আঘাত হানছে।বেলী এবার চুপ না থেকে কিছু বলতে যাবে তখনই বুরাগ এসে বেলীর কান থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় বেলী চমকে পিছনে তাকালো।বুরাগকে দেখে ভয় পেয়ে কিছুটা পিছনে সরে আসলো।

বুরাগ প্রথমে বেলীর দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।বেলীর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের ফোনের দিকে চোখ দিতেই মেজাজ টা যেনো আরো বিগড়ে গেলো।চোখে,মুখে রাগ ফুটিয়ে ফোনটা কানে চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বললো,

–“হ্যালো!”

–“এতোক্ষণ চুপ ছিলে কেন তুমি বুরাগ?কখন থেকে একা একা বকবক করে যাচ্ছি।”

–“আগে বলো কেন ফোন দিয়েছো।”

–“তোমাকে ভিষণ মনে পড়ছিলো তাই।অফিসে গিয়ে ঘুরে এসেছি কিন্তু তোমার দেখা পায় নি।আচ্ছা!কোথায় আছো তুমি।”

বুরাগ কথা বলে হাঁটতে হাঁটতে বেলীকে ক্রস করে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো।বেলী কিছু না বলে পুনরায় কাপড় গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কিন্তু,কান আর মন দু’টোই পড়ে আছে বুরাগ আর বুরাগের কথা শোনার উপর।

বুরাগ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

–“আছি কোনো এক জায়গায়।”

–“কবে আসছো তুমি।তোমাকে না দেখে থাকতে পারছি না।”

–“কালকেই চলে আসবো।পড়ে না হয় দেখে নিও।”

ফোনের অপাশে জয়নব হেসে উঠলো।তার কাছে বুরাগের আজকের কথা গুলো বেশ মধুর মনে হচ্ছে।

–“ঠিকাছে!আমি অপেক্ষায় থাকবো।আমার মনে হয় তোমার আগে অন্য কেউ ফোন ধরেছিলো?কে ধরেছিলো?”

বুরাগ একবার পিছন ফিরে বেলীর দিকে তাকালো।বেলী খুব মনোযোগ দিয়ে কাপড় গোছাচ্ছে।বুরাগ বুঝতে পেরেছে বেলী তার সাথে যেতে রাজি।তবে,বেলী যে ইচ্ছা করে যাচ্ছে না একপ্রকার বাধ্য হয়ে যাচ্ছে তার সাথে তাও বুঝতে বোধগম্য হয়েছে বুরাগ।এতে রাগ যেনো আরো বেড়ে গিয়েছে।জয়নবের কথায় খড়খড়ে গলায় জবাব দিলো,

–“হ্যাঁ!ধরেছিলো কেউ একজন।আমি ছিলাম না ফোনের কাছে।আর এখন আমি রাখছি।কাল তো আসছিই পরে না হয় দেখা করে নিবো।”

বলেই ফোনটা খট করে কেটে দিলো বুরাগ।বুরাগের এমন খাপছাড়া জবাবে বেলীর চোখ জোড়া দুটো যেনো পানিতে ভরে উঠতে শুরু করলো।বেলী বিরবির করতে লাগলো,আমি কি আসলেই কেউ একজন!

বুরাগ বেলীর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বললো,

–“যাচ্ছো তাহলে।”

বেলী কথা বলে না।চুপ করে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।বুরাগ বেলীর এরূপ আচরণ দেখে হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে নিলো।এমতাবস্থায় বললো,

–“কি হলো চুপ করে আছো কেন?একটা কথা বলছি তা কি তোমার কানে ঢুকছে না।”

বেলীর কাপড় গোছাতে গোছাতে জবাবে বললো,

–“দেখছেন তো কাপড় গোছাচ্ছি।তার মানে তো আমি যাচ্ছি তাই না আপনার সাথে।তো আবার পাল্টা প্রশ্ন করেন কেন?আমি যাচ্ছি কিনা?”

বেলীর ক্যাটক্যাট গলার উত্তর শুনে বুরাগ বেলীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।বেলীর কোমর টা নিজের সাথে শক্ত করে ধরে রেখেছে।ফোনটা বিছানার উপর ফেলে দিয়ে ডান হাত দিয়ে বেলীর গাল দুটো চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলতে শুরু করলো,

–“যখন আমি বলেছিলাম তোমাকে যাওয়ার জন্য তখন কেনো রাজি হও নি তুমি।আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে তোমাকে।কারণ,তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।”

বেলী ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো।এমতাবস্থায় বেলী তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বললো,

–“অর্ধাঙ্গিনী বলেই তো আমি আপনার কাছে যে কেউ।আমার পরিচয় বলতেও আপনি লজ্জা পান।”

বুরাগ বেলীর গাল থেকে হাত দুটো সরিয়ে নিলো।বেলীর চোখের কোণে পানি দেখে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো।এখন বুঝতে পারছে বেলীকে নিজের অজান্তে আবারও কষ্ট দিয়ে ফেললো।বুরাগ চলে যেতেই বেলী ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠলো।

দু’জনের মান অভিমানের মধ্যে দিয়েই একদিন কেটে গেলো।বেলী বুরাগের সাথে একটি কথাও বলে নি।বুরাগ অনেক বার বলার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু,বেলী বুরাগকে এড়িয়ে গিয়েছে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেলী আর বুরাগ নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিলো।বেলী চুপটি করে বসে আছে।বুরাগ অনেক বার আড়চোখে তাকাচ্ছে বেলীর দিকে।কিন্তু বেলী একধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।বুরাগ একহাতে ড্রাইভ করছে আর একহাত দিয়ে আলতো করে বেলীর হাত টা চেপে ধরলো।
তাও বেলী আগের মতোই বসে আছে।

বুরাগ আস্তে করে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,

–“বেলী!কথা বলবে না আমার সাথে।”

বেলী হাত টা সরিয়ে নিয়েছে।বুরাগ আবারও চেপে ধরে বললো,

–“তখন কি বলতে কি বলে ফেলেছি তার জন্য তুমি এতো রাগ করছো?”

–“দয়া করে আপনি আমার হাত টা ছাড়ুন।”

–“না আমি তোমার হাত কিছুতেই ছাড়বো না।আমার সাথে ভালো করে কথা না বললে তোমার হাত ছাড়া পাবে না।”

বেলী রাগে নিজের হাত সরিয়ে আনলো।রাগ দেখিয়ে বললো,

–“আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমার ভালো লাগছে না আপনাকে,আপনার এইসব ন্যাকামো কাজগুলোকে।এইসব থেকে মুক্তি দিন প্লিজ।”

বুরাগ বেলীর দিকে পলকহীন ভাবে চেয়ে জোরে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।সমস্ত রাগ এখন গাড়ির উপর দেখাচ্ছে।বেলী তিক্ত মেজাজ নিয়ে বললো,

–“আমার উপর যেহেতু রাগ তাহলে আমার উপরেই দেখান না।শুধু গাড়ির উপর কেনো দেখাচ্ছেন।এইরকম হলে তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।”

–“তা তোমাকে বলতে বাধ্য নই আমি কার উপর রাগ দেখাবো কি দেখাবো না।আর,যদিও গাড়ি এক্সিডেন্ট হয় তাহলে আমি মরে তোমাকে বাঁচাবো।তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।তোমাকে যেকোনো মূল্যে আমি সেইফ রাখবো।”

বেলী আঁতকে উঠলো।বুরাগের মুখে মৃত্যুর কথা টা শুনে চোখে আপনাআপনিই পানি চলে আসলো।বুরাগের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বাহিরের জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো।মাথাটা সিটে এলিয়ে দিয়ে রেখেছে।চোখের পানি গুলো বুরাগের থেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।

বুরাগ বুঝতে সক্ষম বেলী যে এখন কান্না করছে।বেলীর কান্না দেখে বুরাগ জোরে ব্রেক কষে গাড়িটা থামিয়ে দিলো।দু হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে বসে রইলো মিনিট দশেক।হুট করে বেলীকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বুকে ফেলে দিলো।

বেলী প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে পরমুহূর্তেই ঠিক করে নিলো।এখন পানি গুলো আর বাঁধা মানছে না।বুরাগের কালো শার্ট টা তেও যেনো ভিজার স্পষ্ট দাগ গুলো দেখতে পাচ্ছে।

বুরাগ বেলীর মুখ টা উঁচু করে কপালে একটা চুমু খেয়ে নিলো।মুখের আশেপাশে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো।চোখের পানি গুলো যত্ন সহকারে মুছতে মুছতে বললো,

–“আমাকে সহ্যও হয় না আবার আমার মরে যাওয়ার কথা শুনলেও কান্না করো।কি দিয়ে যে তৈরি তোমরা মেয়ে জাতিরা”

বেলী কান্নারত চোখে বুরাগের দিকে তাকালো।বুরাগের মুখ টা ঝাপসা দেখতে পাচ্ছে।চট করে নিজের চোখের পানিটুকু মুছে নিলো।এবার বুরাগকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।কতক্ষণ চেয়ে রইলো বুরাগের মুখের দিকে।

বুরাগ নিঃশব্দে একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,

–“খুব অভিমান হয়েছে তাই না আমার উপর।যার জন্য আমাকে তুমি এইভাবে অবহেলা করছো।”

বেলী নিজেকে বুরাগের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে প্রাণহীন ভাবে বললো,

–“আমি কি আপনাকে অবহেলা করতে পারি।আমি তো আপনার কাছে কেউ একজন।আপন তো নই আমি!যারা আপন হয় তারা অবহেলাও করতে পারে ভালোবাসতেও পারে।”

–“জানো বেলী!কেউ একজন মানুষটাকে যখন ভালোবাসা যায়,আপন করে নেওয়া যায় তখন কিন্তু তার অবহেলা গুলো সহ্য করা খুব দুষ্কর হয়ে যায়।”

–“কিন্তু,আমি তো আপনার কাছে আপন না আর না আপনি আমাকে ভালোবাসেন!আর আদোও ভালোবাসতে পারবেন কি না।”

বুরাগ মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

–“তুমি এখন বুঝবে না বেলী।সময় আসুক তারপর না হয় বুঝাবো তোমাকে।তখন,দেখবো!কীভাবে সহ্য করতে পারো সবকিছু।”

বুরাগ পুনরায় ড্রাইভ করা শুরু করলো।আর,বেলী বুরাগের কথা গুলো ভাবছে।তার মাথায় কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
—————————————————-
বেলী চলে যাওয়ায় জাবেদার খুব কষ্ট হচ্ছে।অবশ্য,মায়ের মন কষ্ট তো হবেই।তাছাড়াও,জাবেদার আজকে অন্যরকম একটি অনুভূতি হচ্ছে।কেন জানি খুব অস্থিরতা করছে মনের ভিতরটা।শিউলি জাবেদার পাশে এসে ধপাস করে বসে পড়লো।জাবেদা শিউলিকে দেখেই আচমকাই জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকে।শিউলি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো।শিউলি জাবেদার বুকে থেকেই বললো,

–“আম্মা তোমার কিছু হয়েছে।হঠাৎ করে এভাবে জড়িয়ে ধরলে।”

জাবেদা শিউলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

–“কেমন যেনো অস্থিরতা করছে মনের ভিতরটা।কিছুই ভালো লাগছে না।”

শিউলি জাবেদার বুক থেকে উঠে পড়লো।জাবেদার শাড়ির আঁচল টা হাতে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বললো,

–“আপা!চলে গেলো তাই কষ্ট হচ্ছে তোমার।তুমি মন খারাপ না করো না আম্মা কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মা পাশের গ্রামে মেলা বসেছে আমার বান্ধুবীরা সেখানে যাবে।আমিও যেতে চাই আম্মা।”

–“না শিউলি!আমার ভিতর টা খুব অস্থিরতা করছে।কোথাও যাওয়ার দরকার নেই তোর।কেন জানি মনটায় খারাপ কিছু হওয়ার আশংকা পাচ্ছি।”

–“আম্মা!সবাই যাবে আমাকে যেতে দাও।বেশি দেরি করবো না সত্যি।”

জাবেদা শিউলির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।শিউলির মায়াবী মুখটা থেকে আর না করতে পারলেন না।শিউলির কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন,

–“ঠিকাছে যাবি।তবে তাড়াতাড়ি চলে আসবি কিন্তু।”

শিউলি জাবেদা কে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ এইভাবে থেকে দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো।আজকে সে ভিষণ খুশি।করিমের সাথে আজকে অনেক দূরে ঘুরতে যাবে।করিম কথা দিয়েছে, আজকে তাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে।
————-
বেলী রুমজুড়ে পায়চারী করছে।তারও মনটা কেমন উশখুশ করছে।কোথাও স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না।বার বার বাজে চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে।বুরাগ বেলীকে এমন পায়চারী করতে দেখে কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো,

–“কি হলো বেলী!এইরকম ঘুরছো কেনো সারা রুম জুড়ে?”

বেলী নখ কামড়ে জবাব দিলো,

–“জানি না!কিছুই ভালো লাগছে না খুব কষ্ট হচ্ছে কেন জানি।অস্থিরতাও করছে।”

বুরাগ বেলীর কাছে এগিয়ে গেলো পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–“চলে এসেছো তো এইজন্য খারাপ লাগছে।রাতও হয়েছে অনেক।ঘুমাবে চলো।”

বেলীর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বুরাগের কথামতো শুতে গেলো।কিন্তু,মন তার কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।

বেলী বুরাগের বুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।বুরাগ বেলীর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।বুরাগ বেলীকে ঘুমোতে না দেখে বললো,

–“ঘুম আসছে না?”

বেলী সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,

–“একটুও না।কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।”

–“ঘুমোতে হবে না।চলো তোমাকে একটু আদর করে দেই।অনেকদিন হলো আদর করি না তোমাকে।”

বেলী সরে আসতে নেয়।বুরাগ বেলীর মতিগতি বুঝতে পেরে জাপটে জড়িয়ে ধরলো।বেলীর সারা মুখে একটা পর একটা চুমু এঁকে দিতে লাগলো।বেলীর গলার ভাজে মুখ ডুবিয়ে আদরে মেতে উঠলো।কিন্তু,বেলী সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভাবে বুরাগের স্পর্শে সাড়া দিচ্ছে।

গভীর রাত!কেউ ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে যাচ্ছে আবার কেউ নিজেকে বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।বেলী আর বুরাগ নিজেদের ভালোবাসায় ব্যস্ত হয়ে আছে।বুরাগ যেনো কিছুতেই থামছে না।বেলীও প্রথমে অনিচ্ছাকৃত ভাবে সাড়া দিলেও একটু পর সেও বুরাগের স্পর্শে মেতে উঠেছে।কতোবার যে ভালোবাসার অতল সাগরে ডুব দিলো তা বলার বাহিরে।দু’জনের মনে এখন দু’জনের জন্য ভালোবাসা রয়েছে।তফাৎ শুধু এটাই বুরাগ তার ভালোবসার কথা বাহিরে প্রকাশ করে নি।

অন্যদিকে,
শিউলি প্রাণপণে চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য।ছোট ছোট পা দুটো মোচড়ানোর ফলে ঘাসগুলো যেনো দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।শিউলির মুখ বাঁধা বলে কিছুতেই চেঁচাতে পারছে না।কিন্তু স্পষ্ট চোখ দিয়ে দেখছে করিম তাকে ধর্ষণ করছে।ভালোবাসার মানুষটাকে এইভাবে দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে শিউলির।শিউলি শরীর টা যতোই নাড়াচ্ছে ততই করিম শিউলির শরীরটাতে ব্লেড দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে।কিন্তু,শিউলি ছটফট করতে যেয়েও পারছে না।শুধু মাত্র তার গোঙানির আওয়াজ টুকু ভেসে আসছে।পাশেই শেয়ালেরা ডাকছে।আর,এদিকে করিম প্রতিশোধ নিচ্ছে শিউলিকে ধর্ষণ করে।ঘন্টাখানেক পর করিম নিজের চাহিদা মিটিয়ে দু’হাত দিয়ে শিউলির গলাটা চেপে ধরলো।শিউলির ছটফটানি যেনো আরো বেড়ে গিয়েছে।পা’দুটো ঘর্ষণের ফলে ছিলে গিয়েছে।চোখের সামনে বারবার আম্মার চেহারা ভেসে উঠছে শিউলির।আর,না পেরে শ্বাস যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বিরবির করে বলতে লাগলো,আমাকে ক্ষমা করে দিও আম্মা।বলেই পরকালের উদ্দেশ্য পাড়ি জমালো শিউলি।শিউলির শ্বাস চলে যেতেই করিম দু’হাতে ব্লেড দিয়ে শিউলির সারা শরীরে ব্লেডের আঁচড় বসিয়ে দিতে শুরু করলো।সব,রাগ ক্ষোভ যেনো এভাবেই বের করছে।শিউলির শরীর টা যেনো রক্তে ভেসে যাচ্ছে।করিম নিজের কাজ সেরে কপাল থেকে ঘাম টুকু মুছে নিলো।যাওয়ার আগে আরো একবার শিউলির নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে বিকট হাসিতে মেতে উঠলো।জোর গলায় বললো,’এখন কীভাবে সামলাবে চাচি নিজেরে।’
আবারও শিউলির কাছে এসে লাথি মেরে শিউলির নিথর দেহটাকে ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে চলে গেলো।ইসস্!অকালে শিউলি প্রপর্ণের মতো ঝরে গেলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here