উমা [কপি করা নিষেধ] ৪০তম_পর্ব

#উমা [কপি করা নিষেধ]
৪০তম_পর্ব

উমা রুদ্রের পানে ফিরলো। আধার আলোর মায়ায় রুদ্রের মুখোভঙ্গি আবছা হয়ে আছে। তবুও উমার ইচ্ছে হলো এই মূহুর্তে কথাটা বলতে। রুদ্রের হাতখানা নিয়ে নিজের উদর ছুলো সে। ধীর স্বরে বললো,
“আমাদের ছোট পরিবারে একজনের আবির্ভাব হতে চলেছে, একজন ছোট মানুষ। তার ছোট্ট দুটো হাত আলতো করে ছুয়ে যাবে আপনাকে। তার কোমল স্পর্শে ক্লান্তি গুলো হাওয়াই মিঠাই এর মতো উড়ে যাবে। ছোট ছোট পায়ে বিচরণ করবে আমাদের জীবনে। সুমধুর কন্ঠে আপনাকে ডাকবে, ” বাবা”। ব্যাস্ততার মাঝে এক শীতল দীর্ঘশ্বাস। এতোবড় ধরনীতে আমাদের ছোট পৃথিবী। আমাদের উষ্ণ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।”

রুদ্র দাঁড়িয়ে রইলো। তার হৃদস্পন্দনের গতি বেসামাল হয়ে গিয়েছে। উমার হাতটা শক্ত করে নিজ হাতের ভেতরে নিলো সে। কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমি সত্যি বাবা হতে চলেছি?”
“হু”

ছোট করে “হু” বললো উমা। রুদ্রের ক্লান্ত শরীরটা ধরে রাখতে পারলো না। শক্ত আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো সে উমাকে। মুখ গুজলো উমার কাঁধে। রুদ্রের চোখে জল আসার ঘটনাটি বডফ বিরল। সে নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে নারাজ। কিন্তু আজ নির্লজ্জের মতো নিজের আনন্দকে প্রকাশ করছে সে। তপ্ত আঁখিজোড়া জল ছেড়ে দিলো। উমার কাঁধটা ভিজে গেলো সেই জলে। বাবা হবার সুখটা কি এতোটাই প্রশান্তির! এতোটা স্নিগ্ধ! রুদ্রের জানা নেই। তবে নিজের কলিজার একটা টুকরো উমার গর্ভে বেড়ে উঠছে, বেড়ে উঠছে ক্রমশ। একটা সময় পর সেই সুখের টুকরোটা হাতে পারে রুদ্র। সত্যি কেউ তার জীবনে বিচরণ করবে। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরলে হয়তো কেউ ছুটে আসবে তার বুকে। হয়তো কেউ আলতো স্বরে তার নিকট হাজারো আবদারের ঝুলি খুলবে। তবুও প্রচন্ড আনন্দের মাঝেও এক টলমলে ভয় উঁকি দিলো রুদ্রের বুকে। উমাহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের টলমলে ভয়। আরোও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো উমাকে সে। উমা রুদ্রের ভয়ের আভাস পেলো। পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,
“তার আগমনে খুশি হন নি?”
“খুশির মাঝেও নিকষকৃষ্ণ ভয় ডানা মিলেছে”
“কিসের ভয়”
“ছোট বউটিকে হারিয়ে ফেলার ভয়”

তখন বারান্দার হলুদ বালবটা জ্বলে উঠলো। আলোকিত হলো আধারে লিপ্ত বাড়িটি। উমা চাইলো রুদ্রের মুখপানে। তার চিন্তিত মুখখানা দেখে স্মিত হাসে সে। চোখে উষ্ণ পরশ দিয়ে বলে,
“ভগবান চাইলে কিচ্ছু হবে না। দেখবেন”

রুদ্র কিছু বলে না। শুধু কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জুমার দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে তোমায়, লাফালাফি করবে না, ছোটাছুটি করবে না। কোনো ঝামেলায় জড়াবে না।”

উমা খিলখিল করে হেসে উঠে। রুদ্রের অবস্থা দেখে বেশ হাসি পেলো তার। তার জন্য চিন্তিত রুদ্রকে দেখে কে বলবে এই সেই রুদ্র যাকে কি না লোকে ভয় পায়। উমা হাসি থামিয়ে বললো,
“কাল ছুটি নিবেন?”
“তুমি বললে নয়মাস আমি বাড়িতে থাকতে রাজী, তোমার জন্য। তোমাকে চোখের সামনে বসিয়ে রাখবো। কিছু করবে না, শুধু আমার কাছে থাকবে।”
“ধুর, সেজন্য না।”
“তাহলে?”
“ও বাড়ি যেতাম। বাবা-মা, ফুলির মা খবরটা জানলে খুশি হবেন।”

ও বাড়ি যাবার কথা শুনতেই রুদ্রের মুখোভাব বদলে গেলো। খানিকটা স্থির হয়ে গেলো তার স্নায়ু। রুদ্রের বেষ্টনী হালকা হয়ে গেলো। তাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে উমা বললো,
“কি হলো? কি চিন্তা করছেন”
“ও বাড়ি যাবার কি খুব দরকার?”
“এতো বড় একখানা খবর তাদের জানাবো না?”
“ফোনেও জানানো যায়!”

উমার ভ্রু কুঞ্চিত হলো। অবাক কন্ঠে বললো,
“পাগল হয়ে গেলেন নাকি? তারা দাদু ঠাম্মা হতে চলেছে। এই সুখবর টা ফোনে দিবো। আমি কিছু জানি না, আমরা ও বাড়ি যাবো।”
“এই অবস্থায় জার্নি করাটা কি ঠিক হবে?”
“আমি কি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাচ্ছি নাকি? সর্বোচ্চ আধ ঘন্টা লাগবে”

রুদ্র তার যুক্তি দাড় করাতে পারলো না। উমার বক্তব্য যৌক্তিক। কিন্তু সে তো জানে না, অভিনব এবং রুদ্রের সম্পর্কটা কতোটা তিক্ত। দাদু হবার সুখের মিষ্টিটাও অভিনব বাবুর কাছে এক নতুন সুযোগ মনে হবে। উমা স্মিত হেসে বললো,
“আপনি কাপড় ছেড়ে নিন। আমি খাবার দিচ্ছি। সকাল সকাল কাল বেড়িয়ে পড়বো।”

রুদ্র মাথা নাড়ালো। উমা চলে গেলো নিচে। রুদ্র আকাশ পানে চাইলো। কেনো যেনো ভয় হচ্ছে। শত্রুর মুখোমুখি হবার ভয়, উমাকে হারাবার ভয়, সর্বোপরি নিজের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার ভয়____________

রাজশ্বী শাশ্বতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শাশ্বত বেশ মনোযোগ সহকারে দেখছে রাজশ্বীর প্রতিবেদন। অজস্র ভুল, মেয়েটিকে নিয়ে বেশ চিন্তিত সে। তাকে কাজগুলো হাতে ধরে শেখাতে হচ্ছে৷ একটা বাক্য ও ঠিক মতো লিখতে পারে না মেয়েটি। বাক্যগঠন ও যেনো শাশ্বতকে শেখাতে হচ্ছে। শাশ্বতের বিরক্তভরা মুখখানা দেখে আন্দাজ করতে পারছে আজও মন মতো কাজ হয় নি। সুমনের কাছ থেকে শুনেছে শাশ্বত মানুষ কাজের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। একাগ্রতা তার পছন্দ। কিন্তু রাজশ্বীর মাঝে সেই একাগ্রতার বহুত অভাব। মনটা বড্ড উড়নচণ্ডী। দিদির মতো এক মনে কাজ করা যেনো তার সম্ভব নয়। শাশ্বত প্রতিবেদনটা দুমড়ে মুচড়ে ফেললো ঝুড়িতে। কড়া নজরে তাকালো রাজশ্বীর দিকে। রাজশ্বী মাথা নত করে ফেললো। শাশ্বত তার ভীতু মুখখানা উপেক্ষা করে, কড়া ধমকের স্বরে বললো,
“তোমার দ্বারা কি একটা প্রতিবেদন লেখা সম্ভব নয়?”
“………”
“আমি আমার ইহজীবনে এতোটা গবেট মহিলা মানুষ দেখি নি। এক সপ্তাহ হয়ে গেলো একটা প্রতিবেদন তুমি সঠিক করে আমাকে দিতে পারো নি। এক জায়গায় ভুল ধরি তো অন্য জায়গায় ভুল করো। সমস্যা কি? সাংবাদিকতা কি ছেলেমানুষী? যে একটা প্রতিবেদন লিখতে পাড়ে না সে কিসের সাংবাদিক হবে। প্রথমত তুমি তোমার কাজের প্রতি দৃঢ় নও। দ্বিতীয়ত তুমি কি নিয়ে চিন্তা করতে থাকো নিজেও জানো না। কিভাবে সাংবাদিক হবে তুমি?”

শাশ্বতের কথাটা বেশ গায়ে লাগলো রাজশ্বীর। এতোটা কঠোর অপমান এই জীবনে এই প্রথম হতে হলো তাকে৷ ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো সে। চোখগুলো জ্বলছে। শাশ্বত রাজশ্বীর নতমুখখানা দেখে আরোও রেগে গেলো। তীব্র স্বরে বললো,
“আহম্মকের ন্যায় দাঁড়িয়ে না থেকে কাজটা করো, যাও”

রাজশ্বী মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। শাশ্বতের মাথায় আগুন জ্বলছে। কাজের প্রতি অনীহা তার মোটেই ভালো লাগে না। এদিকে হতাশা তাকে জর্জরিত করে রেখেছে। কোনোভাবেই উত্তম বাবুর কেসের গতি হচ্ছে না। সব রাস্তা যেনো বন্ধ। কোনো কুল কিনারা পাচ্ছে না সে। এর মাঝেই মন্সুর মিয়া চায়ের ট্রে নিয়ে হাজির হয়। দরজা কড়া নাড়লেই শাশ্বতের চোখ যায় তার দিকে। খিটখিটে মেজাজে বলে,
“কি হলো, এতো দেরী হলো যে?”
“স্যার, একখানা খাম আইসে।”

খামের কথা শুনতেই বেশ নড়েচড়ে বসে শাশ্বত। হাত বাড়ায় মন্সুর মিয়ার দিকে। মন্সুর মিয়া বদলে করে আনা খামটা দেয় শাশ্বতের হাতে। ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে খামটি খুলে শাশ্বত। খাম খুলতেই………

চলবে

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব আগামীকাল রাতে পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

৩৯তম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/441432110911900/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here