উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ০৫

0
1074

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৫
__________________

সকালটা শুরু হয় পাহাড় দেখা দিয়ে। সারাদিন এই পাহাড় দেখাটা বিদ্যমান থাকে। বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় পাহাড়ের ভ্যালি। কত মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য! ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এখানে আসার পর থেকে শুধু একটা কথাই ভাবছে ইরতিজা, এ শহরটা এত সুন্দর কেন? এই শহরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ সে। প্রকৃতি রৌদ্রজ্জ্বল থাকলে পাহাড় ভালো করে দেখা যায়। কুয়াশা, মেঘলা পরিবেশ থাকলে অতটা ভালো দেখা যায় না। গত তিনদিন রোদ ছিল। আজ আকাশ আবার মেঘলা। বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস নেই। তবে সারাদিন মেঘলা প্রকৃতি থাকবে। এখানের তেমন কিছু ঘুরে দেখা হয়নি এখনও। তবে একদিন আগে সে এবং নওরিন জুহির সাথে একটা ফরেস্ট এরিয়া ঘুরতে গিয়েছিল, ‘Redmond west wetland’। বাসা থেকে সাত-আট মিনিটের পথ ওটা।
শীত শীত বাতাস, পাখির কলকাতান আর সবুজের বিশাল অরণ্য মুগ্ধতায় জড়িয়ে ধরেছিল। সত্যি কথা বলতে ওখান থেকে আসতে ইচ্ছা করছিল না। সরু ওয়াকওয়ে ধরে হেঁটেছিল অনেকক্ষণ। তাও প্রকৃতি দেখার স্বাদ মিটছিল না। ওয়াকওয়ের দুই পাশে বিশাল বিশাল গাছ। দুটো খরগোশ দেখেছিল। দেখেছিল কাঠবিড়ালিও। আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আছে ওই ফরেস্ট এরিয়ায়। সব প্রাণীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
ইরতিজার কাছে সবচেয়ে অবাকপূর্ণ বিষয় হলো- রেডমন্ডে সচরাচর হরিণ দেখা যায়। রিশন যখন বলেছিল তখন বিশ্বাসই করতে পারেনি। ভেবেছিল মজা করছে রিশন। কিন্তু পরেরদিন বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে যখন নিজ চোখেই হরিণ দেখলো, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিল সে আর জুহি, এর মাঝেই কোত্থেকে একটা হরিণ সামনে এসে পড়েছিল। একটু পরই আবার ছুট দিয়ে চলে গিয়েছিল। কী দারুণ একটা ব্যাপার না? আসলেই মুগ্ধকর!

বাসার সামনে রাস্তায় হাঁটছে ইরতিজা। শীত লাগছে, তবে তেমন পুরু কাপড় জড়ায়নি গায়ে। গায়ে শুধু একটা জাম্পার সোয়েটার। খোলা চুলগুলো হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। হাতে কফির মগ। কফি খেতে খেতে ঘর থেকে বের হয়েছিল। এখন হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে আকাশ পানে তাকাচ্ছে। গম্ভীর আকাশ। আকাশের গম্ভীরতায় তাকালে আড়ি করে বসতে ইচ্ছা হয় আকাশের সাথে।

আজাদ চৌধুরী বাইরে বেরিয়ে ইরতিজাকে ডাকলেন,
“ইরতিজা, খেতে এসো।”

ইরতিজা ঘরে চলে এলো। ডাইনিংয়ে বসলো শুধু সে এবং তার বাবা। নওরিন বাইরে গিয়েছে, এখনও ফেরেনি। আর মা অসুস্থ বোধ করছে বলে শুয়ে আছে। ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে সে আর বাবা। পরোটা, ব্রেড এবং ডিম পোচ। এর বেশি কিছু তৈরি করেনি। বাবাকে হেল্প করে দিয়ে কফি নিয়ে বাইরে গিয়েছিল। বাবা টেবিলে খাবার সাজিয়েই ডাকলেন। বাবা আসলে রান্না-বান্নার কাজে দক্ষ। ইরতিজা নিজেও দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করে। পারে মোটামুটি সব কিছুই।

আজাদ চৌধুরী ব্রেকফাস্টের এক পর্যায়ে বললেন,
“জুহির সাথে মার্কেটে যাচ্ছ না কি ব্রেকফাস্টের পর?”

“হ্যাঁ, তবে জুহি শুধু আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে মার্কেটে। ওর ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে, ওকে সেখানে যেতে হবে।”

“একা কেনাকাটা করতে পারবে? অপরিচিত জায়গা তো!”

“সমস্যা নেই, পারবো।”

আজাদ চৌধুরী এ বিষয়ে আর কথা বললেন না। ব্রেডের উপর জেলি মাখাতে মাখাতে বললেন,
“গাড়িটা খুব শীঘ্রই কিনে ফেলবো। গাড়ি ছাড়া চলাচল করা মুশকিল।”

ইরতিজা হ্যাঁ মিলালো,
“হ্যাঁ, গাড়ি ছাড়া চলাচল করা কষ্টের।”

জুহি কল করে পাঁচ মিনিট সময় দিলো। পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে বাইরে বের হলো ইরতিজা। কিন্তু জুহি তাকে পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে নিজেই দেরি করছে। রিশনের কথাই সত্যি, মেয়েটা সময়ের প্রতি যত্নশীল নয়। আমেরিকার মানুষের কাছে সময়ের মূল্য অনেক, কিন্তু জুহি তো দেখছে তার ব্যতিক্রম!

রিশন চেয়ারে বসে আছে বাড়ির সামনে। হাতে ট্যাব। ইরতিজা একটু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে লক্ষ করেছে। সে ইরতিজার কাছে এসে ট্যাবটা ওর সামনে ধরলো। ইরতিজা ট্যাবের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
“এটা কী?”

রিশন ট্যাবটা নামিয়ে নিয়ে বললো,
“আমার ইউটিউব চ্যানেল। সাবস্ক্রাইব করবে।”

“তুমি একজন ইউটিউবার? কই আগে তো জানতাম না।”

“আগে জানতে না এখন তো জানলে। সাবস্ক্রাইব করো কিন্তু, আর ভিডিয়ো গুলোও অবশ্যই দেখার চেষ্টা করবে।”
রিশন টোল পড়া হাসি উপহার দিয়ে আলতো করে ইরতিজার গাল টেনে দিয়ে ঘরে চলে গেল।
ইরতিজা বিমূঢ় হয়ে রিশনের গাল টেনে দেওয়া স্থানটা স্পর্শ করলো। এমন করলো কেন রিশন? তাকে কি বাচ্চা ভাবলো? যে বাচ্চা মেয়ে গাল টেনে আদর করি? কিন্তু তারা দুজন তো সমবয়সী। ব্যাপারটা ভালো লাগলো না ইরতিজার। ভালো না লাগাটা প্রখর হলো যখন এই গাল টেনে দেওয়ার জন্য জোনাসকে মনে পড়লো। আচ্ছা, সমস্যাটা কী? রিশনের সাথে দেখা হলে প্রায়ই তার জোনাসকে মনে পড়ে! জোনাসও আগে হুটহাট করেই তার গাল টেনে দিতো। তখনও ইরতিজার নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা মনে হতো। সেদিন জোনাস যখন ফোন করে বললো,
‘আমি আমার সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছি টিজা!’
ওটা শোনার পর টের পাচ্ছিল, হৃদয়ের গহীন প্রান্তে ব্যথারা শান্ত অথচ বিষাক্ত রূপ নিচ্ছে ধীরে ধীরে। জোনাস এমনও করতে পারে? অযথাই কেন নিজের প্রিয় সাইকেলটা বিক্রি করেছে?

“লেট’স গো টিজা!” জুহির কণ্ঠস্বরে ইরতিজার ভাবনায় ছেদ পড়লো। জুহিকে দেখে মৃদু হাসলো সে। জুহিকে আজ সব দিনের চেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছে। আজ একটু বেশিই সেজেছে বোধহয়। ইরতিজা জিজ্ঞেস করলো,
“ঠিক কোথায় যাবে তুমি?”

জুহি হেসে উত্তর দিলো,
“আন্দ্রেজের বাসায়। কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে যাব।”

“আন্দ্রেজ কে?”

জুহি হাঁটা শুরু করে বললো,
“একটা হাঁটতে না পারা ছেলে!”

“মানে? হাঁটতে পারে না?”

“একেবারে হাঁটতে পারে না সেটা নয়। হাঁটা-চলা সবই করতে পারে। কিন্তু ওর ডান পায়ে সমস্যা আছে। এক্সিডেন্টে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল পা। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। আমাদের মতো স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারে না!”

অজানা কারণেই ইরতিজার হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হলো ছেলেটার জন্য। বললো,
“ছেলেটা তোমার বন্ধু হয়?”

“হুম।”

“কিন্তু গতকাল ইউনিভার্সিটিতে তোমার যেসব বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে তাদের মধ্যে তো এমন কোনো ছেলে ছিল না।”

গতকাল ইরতিজা ভার্সিটিতে গিয়েছিল। কিন্তু ক্লাস এটেন্ড করেনি। ক্যাম্পাস ঘুরে-ফিরে দেখেছিল। আগামী কাল অথবা পরশু ক্লাস এটেন্ড করবে।
জুহি জানালো, আন্দ্রেজ সেদিন ভার্সিটিতে যায়নি। ইরতিজার একটু মন খারাপ হলো। সেদিন ছেলেটা ভার্সিটিতে উপস্থিত থাকলে দেখা হয়ে যেত ছেলেটার সাথে।

_________________

মিরান্ডা তাকিয়ে আছে বিছানায় ঘুমন্ত ক্যানিয়লের মুখের দিকে। খুব যতনে দেখছে সে ওকে। ফর্সা মায়াবী একটি মুখ। কালো-বাদামি রঙা চুল কপালের অধিকাংশ ঢেকে রেখেছে। ভ্রু জোড়াও কালো। তবে চোখের পাতা মেললে হালকা কমলা রঙের মণি দুটো হেসে উঠবে। এখনও এভাবে ঘুমোচ্ছে কেন? ড্রিংক করেছে না কি গতরাতে? ভাবতে ভাবতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে উঠেছিল মিরান্ডার। এরমধ্যে দেখলো ক্যানিয়লের বন্ধ আঁখি জোড়া মৃদু কম্পমান হচ্ছে। মূলত ঘুম থেকে জেগে উঠছে ও।
মিরান্ডা জানে সে ব্যর্থ হবে, তাও একবার অযথাই চেষ্টা চালালো। ক্যানিয়লের ঠোঁটে চুমু খাওয়ার জন্য ঝুঁকে পড়লো সে। অধরে অধর স্পর্শ করার আগেই অধরে অনুভব করলো আঙুলের ছোঁয়া। মনে মনে হাসলো মিরান্ডা। ছেলেটা আটকে দিয়েছে তাকে। প্রকাশ্যেও হাসলো সে। বললো,
“জানতাম বাধা দেবে। অপ্রস্তুত থেকেও এত নিখুঁতভাবে সামলে নিলে কীভাবে এটা? তুমি আসলেই দক্ষ!”

ক্যানিয়ল হাত দিয়ে মিরান্ডার ঠোঁট আরও জোরে চেপে ধরে বললো,
“কতবার নিষেধ করেছি এমন করতে?” শান্তস্বরের প্রশ্ন।

মিরান্ডা হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
“বহু বার।”

“তারপরেও এমন কেন করো?”

মিরান্ডা ফিচেল হেসে বললো,
“ভালো লাগে করতে।”

ক্যানিয়ল বিরক্তিতে মুখ বিকৃত করে চোখ সরিয়ে নিলো। শোয়া থেকে উঠে নমনীয় দৃষ্টি মেলে চাইলো। ঢিমে গলায় বললো,
“আমি তোমার জন্য অনুভূতি অনুভব করতে এখনও ব্যর্থ মিরান্ডা।”

মিরান্ডার মুখ কালো হয়ে এলো। বললো,
“আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়ে বাচ্চা পর্যন্ত হয়ে যাবে তারপরও বোধহয় তুমি আমার জন্য অনুভূতি ফিল করতে পারবে না ক্যানি। এক বছর ধরে একই কথা শোনাচ্ছ তুমি। আমি তোমার উডবি ওয়াইফ। আমার সাথে অবশ্যই তোমার সহজ হওয়া উচিত।”
অভিমানপূর্ণ শোনালো মিরান্ডার কথা।

ক্যানিয়ল বেড থেকে নেমে বললো,
“ফ্রেশ হতে যাচ্ছি আমি।”

মিরান্ডা ফ্রেশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। ক্যানিয়ল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঢুকে গেল আবার ড্রেসিংরুমে। সময় নিয়ে রেডি হয়ে বের হলো। কালো লেদার কোটটা গায়ে ঢুকিয়ে বললো,
“সকাল সকাল বাড়িতে আসার কারণ?”

“সকালে তোমার বাড়িতে আসা কি আমার জন্য নিষেধ?”

“না, কিন্তু কেন এসেছো? কারণ আছে নিশ্চয়ই। শুধুমাত্র আমাকে চুমু খাওয়ার উদ্দেশ্যে তো আসোনি।”

মিরান্ডার মন একটু ভালো হয়েছে। সে বেডে বসে ছিল এতক্ষণ। ক্যানিয়লের কাছে এসে দাঁড়ালো এখন। ধূসর চোখ জোড়া ক্যানিয়লের কমলা রঙা চোখে নিবদ্ধ করে বললো,
“ফ্রেন্ডসদের সাথে পাঁচদিনের ট্রিপে ক্যালিফোর্নিয়া যাচ্ছি। এটা জানাতেই এসেছিলাম। তুমি কি এখন বাইরে যাবে?”

“হ্যাঁ, হাঁটতে বের হবো।”

ক্যানিয়ল টেবিল থেকে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। যাবে, কিন্তু হঠাৎ একটা কথা মনে করে দাঁড়ালো। মিরান্ডার কাছে এগিয়ে এসে ওর হাত তুলে নিয়ে চুমু খেলো। বললো,
“তোমার আশা আর অপূর্ণ রাখলাম না। ভিন্নভাবে হলেও আংশিক পূরণ করে দিলাম। ট্রিপ ভালো কাটুক মাই ফিউ…”
থেমে গেল ক্যানিয়ল। ‘ফিউচার’ শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়েও আবার করলো না। কথাটা সংশোধন করে বললো,
“মিরান্ডা!”

বলে বেরিয়ে গেল। লিভিং রুম পেরিয়ে আসার সময় মিসেস সোফিয়া বললেন,
“মিরান্ডা এসেছে তো, ওর সাথে ব্রেকফাস্ট সেরে যাও।”

“ওয়াকিং শেষে একা ব্রেকফাস্ট করে নেবো।”

বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো ক্যানিয়ল। মেঘলা পরিবেশ গুমোট অনুভূতি লিখে চলেছে এক নাগাড়ে। খারাপ নয়। মেঘলাময় দিন ভালো লাগে তার। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে যাবে।
প্রকৃতির মতো আজ আশপাশটাও কেমন গুমোট হয়ে আছে। মানুষজন নেই। কর্মদিবসে অবশ্য মানুষ থাকেও না তেমন। তবে আজকে একটু বেশিই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
ক্যানিয়ল হাঁটছিল। হঠাৎ একটা খারাপ শঙ্কা হলো তার। মনে হলো কেউ পিছন পিছন ফলো করছে তাকে। আড়চোখে দেখার চেষ্টা করলো। হ্যাঁ, একজন লোক ফলো করছে। হাঁটা অব্যাহত রাখলো সে। আরও কিছুক্ষণ সহ্য করলো এটা। দেখছিল চলে যায় কি না লোকটা। কিন্তু গেল না। বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ক্যানিয়ল। কিছুদূর পিছনে থাকা লোকটাও দাঁড়িয়ে গেল। ক্যানিয়ল অকস্মাৎ পিছন ঘুরে লোকটার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“হোয়াই আর ইউ ফলোয়িং মি ড্যাম?”
বলেই দৌড়ে গেল লোকটার দিকে।

লোকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু যখন বুঝলো ক্যানিয়ল তার দিকে দৌড়ে আসছে, অমনি সেও উল্টোদিকে ছুটতে শুরু করলো। ক্যানিয়ল পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললো,
“স্টপ। স্টপ হিয়্যার।”

কিন্তু লোকটা কি থামবে তার কথায়?

(চলবে)

গ্রুপ লিংক―
https://facebook.com/groups/3087162301558677/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here