#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৬
_________________
রিশন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পর লক্ষ করলো ইরতিজা তার সাথে নেই। তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে গেল সে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো ইরতিজা উপরে সিঁড়ির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে ডাকলো,
“টিজা, তুমি এখনও ওখানে কেন? এসো তাড়াতাড়ি।”
রিশনের উচ্চ কণ্ঠস্বর প্রবেশ করতে পারলো না ইরতিজার কর্ণকুহরে। এই মুহূর্তে সে হতবিহ্বল। অদ্ভুত এক দমবন্ধকর অনুভূতি তার হৃদয় ঠেসে ধরেছে। ক্যানিয়ল নিজের মাথার টুপি তার মাথায় পরিয়ে দিতেই এমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো তার। কেমন অদ্ভুত, কেন অদ্ভুত, এই প্রশ্নগুলোর কোনো ব্যাখ্যা আপাতত তার মনঃক্ষেত্রে জমা নেই। অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল ইরতিজা। রিশনের কথা তার অন্যমনস্ক চেতনায় প্রভাব ফেলতে না পারলেও, ক্যানিয়লের কথা মুহূর্তে তাকে জাগতিক হুঁশে ফিরিয়ে আনলো,
“রিশন তোমার জন্য সঠিক নয় ইজা!”
ক্যানিয়লের কথাটায় গরমিল আছে, খুব বড়ো গরমিল আছে। গরমিল কথাটার সহজ ধারা ধরতে সক্ষম না হয়ে ইরতিজা বললো,
“মানে?”
“মানে হলো-তুমি হচ্ছো আধা পাগল, আর রিশন হচ্ছে পুরো পাগল। আধা পাগল আর পুরো পাগলের মধ্যে প্রেমটা সুন্দর না হয়ে বরং আরও বাজে দেখায়। হয় তুমি পুরো পাগল হও, না হয় রিশনকে পুরো পাগল থেকে আধা পাগল বানাও। তারপর ডেট করবে দুজন। আর কখনও যেন না দেখি তোমরা দুজন এক ক্যাটাগরির না হয়ে ডেটে বের হয়েছো। যদি দেখি তাহলে দুজনকেই এই উইন্টারের মাঝে লেকের ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখবো।”
ইরতিজার মুখ ঈষৎ হা হয়ে গেল। স্ফীত চোখে চেয়ে বললো,
“না জেনে কথা বলা কি তোমার অভ্যাস? রিশন আমার ভাই। ও আমার আপন ভাইয়ের মতো।”
ক্যানিয়ল সূক্ষ্ম চোখে বললো,
“ভাই?”
প্রশ্নটা করার পর হঠাৎই তার অধরে অবজ্ঞাত হাসি লেগে গেল। বললো,
“তুমি কোন ধরনের প্রাণী সেটা ভাবছি!”
ইরতিজা ভ্রু কুঞ্চন করে বললো,
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
“তোমার মতো মিথ্যাবাদী মেয়ে এই প্রথম দেখলাম। প্রেমিককে বিনা দ্বিধায় ভাই বললে। সাংঘাতিক তো তুমি! যাই হোক, ডেট করতে আর কখনও এই ট্রি হাউজে আসবে না।”
“তুমি এখনও দাঁড়িয়ে আছো?”
ইরতিজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও ভারি বিরক্ত কণ্ঠে বললো রিশন। উপরের কথোপকথন সে শুনতে পাচ্ছে না। না হলে ক্যানিয়লের সাথে হয়তো আবারও বিশাল আকারের তর্ক-বিতর্ক শুরু হতো তার।
ইরতিজা হঠাৎ পিছন ঘুরে রিশনের দিকে তাকিয়েই জোর গলায় বলতে শুরু করলো,
“তুমি আমার ভাই রিশন। তুমি আমার আপন ভাইয়ের মতো। কেউ যাচ্ছেতাই বললেই তুমি অন্য কিছু হয়ে যাবে না!”
দ্রুততার সঙ্গে কথাগুলো বলে দ্রুতপদে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এলো ইরতিজা। বিস্ময়বিমূঢ় রিশনের এক হাত ধরে টেনে নিয়ে দ্রুতগামী পা ফেলে চলে গেল।
হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ক্যানিয়ল আর সামুরা। সামুরা এতক্ষণে একটা কথাও বলেনি। কখন কী বলবে বুঝে উঠতে পারেনি বিধায় চুপ ছিল একদম। এখনও তার মুখে কোনো কথা ফুঁটলো না।
ক্যানিয়ল বললো,
“আজকাল যেখানে-সেখানে পাগলি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামুরা, সাবধানে থাকবে।”
এরপর একটু নীরব থেকে অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করলো সে,
“ক্রেজি গার্ল!”
___________________
সকালে ক্যানিয়লের ঘুম ভাঙলো হুমকির কল পেয়ে। আজ অনেকদিন হলো সে এমন হুমকির কল পাচ্ছে। হুমকিটা এমন–যদি ক্যানিয়ল বাবার কোম্পানিটা নিজের নামে করে নেয় তাহলে এর জন্য ক্যানিয়লকে অনেক ভুগতে হবে। জীবন সংশয়ে পড়বে তার। কলার তাকে কোম্পানিটা গ্রহণ না করতে সাবধান করছে। এরপরও যদি ক্যানিয়ল সেটা গ্রহণ করে তাহলে তারা ধীরে ধীরে ক্যানিয়লকে মৃত্যুর স্বাদ উপলব্ধি করাবে। মূল কথা হলো তারা ক্যানিয়লকে কোম্পানিটা নিজের নামে না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। হঠাৎ এমন শত্রু কোত্থেকে জন্ম নিলো জানে না ক্যানিয়ল। মাঝে মধ্যে তাকে ফলো করে লোকগুলো। সে ধারণা করেছে মূলত একটা গ্যাং তাকে ফোন করে এমন সব হুমকি দিচ্ছে এবং তার উপর নজর রাখছে। কিন্তু তাদের দিয়ে কাজটা কে করাচ্ছে এটা হচ্ছে ভাবনার বিষয়।
যে লোকটার কারণে ইরতিজার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল সেই লোকটাও ছিল ওই গ্যাংয়েরই একজন সদস্য। ইরতিজাকেও তো সে প্রথমে ওই গ্যাংয়ের সদস্য ভেবে ভুল করেছিল। বিষয়টা মাঝে মাঝে খুব ভাবায় তাকে। সে চায় না বাবার কোনো কোম্পানির দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ুক। কিন্তু বাবা নিজের একটা কোম্পানি যে তার নামে করে দেবে এটা নিশ্চিত। আর সেটা ছোটো ধরনের কোম্পানি না হয়ে বড়ো ধরনের কোম্পানি হবে এটাও অজানা নয়। কে চাচ্ছে না সে ওই কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করুক? এটা কি তার ভাইদের মধ্যে কেউ? হতে পারে!
ভাইয়েরা এমনিতেও তাকে খুব একটা পছন্দ করে না। সেখানে বিজনেস ক্ষেত্রে তার কোনো অবদান না থাকলেও ভালো কোম্পানির একটা যদি সে পেয়ে যায় তাহলে তাদের অবজেকশন তো থাকবেই। কিন্তু কে করাচ্ছে কাজটা?
বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথায় যন্ত্রণা ধরে গেল ক্যানিয়লের। রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে এলো।
কিচেনে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ ইসহাকের দ্বিতীয় স্ত্রী, মানে ক্যানিয়লের দ্বিতীয় সৎ মা মিসেস ইয়াদা। ইয়াদার পরনে লম্বা গাউন। মাথায় হিজাব। সে বেশিরভাগ সময় মাথায় হিজাব পরে থাকে। স্নিগ্ধ সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয় তার মাঝে। তবে তার বাইরেটা সুন্দর হলেও, তার ভিতরটাকে অসুন্দর বলে মনে হয় ক্যানিয়লের।
মিসেস ইয়াদা ক্যানিয়লকে দেখা মাত্রই মুখ বিকৃত করে ফেললেন।
ক্যানিয়লের প্রতি তার গভীর বিরক্ত ছাপিয়ে থাকে সব সময়। এই ব্যাপারটা ছোটো বেলা থেকে খেয়াল করে আসছে ক্যানিয়ল। এখন আর এসবে তার কিছু যায় আসে না। শুধু মাঝে মাঝে হৃদয়ভার হয়ে পরিতাপের নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে। ক্যানিয়ল একটা কোল্ড ড্রিংকসের বোতল নিয়ে কিচেন থেকে বের হওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে টেবিলে থাকা মিসেস ইয়াদার ধুয়ে রাখা আপেলগুলো ফেলে দিলো ফ্লোরে।
ইয়াদা পিছন থেকে ক্ষুব্ধ বাঘের মতো হুংকার করে উঠলো,
“এটা তুমি কী করেছো ছেলে?”
“আমি স্যরি মাদার ইয়াদা! এটা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে করিনি, ভুলে হয়েছে। মানুষ ভুল করবে এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
ক্যানিয়ল বের হয়ে গেল। একেবারে বাড়ির বাইরে এসে থামলো সে। আজকের রোদ, প্রকৃতি সব কিছু বেশ মিষ্টি লাগছে। মনোহারিত্ব জড়ানো ঠেকছে! ইচ্ছা করছে এই প্রকৃতিতে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে।
কিন্তু নিশ্চিন্ত মন পাচ্ছে না, চিন্তাটা আলপিনের মতো আঘাত করছে অন্তঃকরণে। কে তাকে হুমকি দিচ্ছে সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় সে। পরিবারেরই কেউ হবে! হুমকি দেওয়ার বিষয়টা ড্যাডকে জানায়নি। ড্যাড সব শুনে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। যা ক্যানিয়ল একদমই চায় না। পুলিশের প্রতি তার ক্ষোভ অনেক পুরোনো। সতেরো বছর বয়সে এই ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল।
ক্যানিয়ল দুই চুমুক পানীয় পান করে বোতলটা ছুঁড়ে ফেললো ঘাসের মাঝে। আকাশের অবিন্যস্ত নীলে তাকিয়ে অবসন্ন নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তায় তাকাতেই খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখলো। একটা মেয়ে আর একটা ছেলে সাইকেলে যাচ্ছে। মেয়েটা বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে আছে ছেলেটাকে। সম্ভবত এরা প্রেমিক-প্রেমিকা। ক্যানিয়লের মিরান্ডাকে মনে পড়লো। মিরান্ডা একদিন সাইকেলে ঘুরতে চেয়েছিল তার সাথে। কিন্তু সে মিরান্ডাকে নিয়ে যায়নি সাইকেল ভ্রমণে। ব্যস্ততা না থাকলেও ব্যস্ততার বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিল। মিরান্ডা এখন দেশে নেই। গতকালই ইংল্যান্ড চলে গিয়েছে। ক্যানিয়লের মন খারাপ হলো। কেন মিরান্ডাকে ভালোবাসতে পারে না সে? তার মনে মিরান্ডার জন্য সুন্দর একটা অনুভূতি কেন জন্ম নেয় না? মিরান্ডার মতো একটা মেয়েকে অবশ্যই ভালোবাসা উচিত তার। কিন্তু মিরান্ডার প্রতি অনুভূতিটা কেন আসে না? ভালোবাসার অনুভূতি কি এতটাই দুর্লভ?
ক্যানিয়লের ইচ্ছা করলো আজকে সাইকেলে করে ঘুরতে যেতে। আবহাওয়া যেহেতু আজ খুবই প্রাণবন্ত। ক্যানিয়লের সাইকেল নেই এখন। সামুরার আছে। সামুরার সাইকেল করেই ঘুরবে। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো ক্যানিয়ল।
সময় নষ্ট না করে সামুরার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। সামুরা বাসায় থাকলে সামুরাকে সাথে নিয়ে বের হতো। সামুরা সিয়াটল গিয়েছে এক বন্ধুর সাথে।
ক্যানিয়ল ঠিক করলো এখন মেরিমুর পার্কে যাবে। পার্কটা বাসা থেকে বেশি দূরে নয়।
রাস্তার পাশে বেঞ্চিতে যে মেয়েটা বসা ছিল ওটা কি ইরতিজা ছিল না?
এই মাত্র একটা মেয়েকে অতিক্রম করে এসেছে ক্যানিয়ল। ওটা সম্ভবত ইরতিজাই ছিল। খেয়াল করে দেখেনি, খেয়াল হলো অতিক্রম করে আসার পর। মেয়েটাকে এখানে-সেখানে-ওখানে সবখানে দেখা যায়। যেখানেই যাওয়া হোক সেখানেই মেয়েটাকে দেখতে পায় সে। এর কারণ কী? ভেবে পাচ্ছে না ক্যানিয়ল।
হঠাৎ মনে হলো সে একা কেন সাইকেলে ঘুরছে? সাথে একজন সঙ্গী থাকলে ভালো হতো। ওই পাগল মেয়েটাকে সঙ্গী হিসেবে সাথে নেবে না কি? হোক মেয়েটা পাগল, সঙ্গী হিসেবে একজন সাথে থাকলে মন্দ হয় না। ক্যানিয়ল সাইকেল ঘুরিয়ে ফেললো।
এসে থামলো ইরতিজার সামনে। ডাকলো,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল!”
হঠাৎ ডাক শুনতে পেয়ে তাকালো ইরতিজা। তার কানে ফোন ধরা। কথা বলছিল সাজিদের সাথে। হাঁটতে বের হয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় বেঞ্চিতে বসেছিল। সাজিদ কল দিলো এ সময়। খানিক সময় হয়েছে এখানে বসে আছে। ক্যানিয়লকে পাত্তা দিলো না সে। বলতে গেলে একই জায়গার বাসিন্দা তারা এখন। দেখা হতেই পারে। এ নিয়ে বিস্মিত হলো না। চোখ সরিয়ে নিয়ে আগের মতো কথা বলতে লাগলো,
“তো আপনি কালকে বেলভিউ যাবেন?”
সাজিদ উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ। তুমি যাবে না কি সাথে?”
“আমি…”
বলতে পারলো না ইরতিজা। এর আগেই ক্যানিয়ল রুষিত স্বরে বলে উঠলো,
“তুমি অহংকার দেখাচ্ছ?”
ইরতিজা আবার তাকালো ক্যানিয়লের দিকে। খুব রাগ অনুভব হলো তার। সাজিদের সাথে কথা চালিয়ে যাওয়ার মন পেল না। ক্যানিয়লকে এড়িয়ে যাওয়ারও ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারলো না। কলে থাকা সাজিদকে বললো,
“আমি আপনার সাথে পরে কথা বলবো। হঠাৎ করে এক কালপ্রিটের সাথে দেখা হয়েছে। ওর সাথে সাক্ষাৎটা সেরে নিই।”
সাজিদের কিছু বলার অপেক্ষা না করে কল কেটে দিলো ইরতিজা।
বাংলাতে কথা বলায় কিছু বোধগম্য হয়নি ক্যানিয়লের। কিন্তু বাংলার ভিতর থেকে সে ঠিকই কালপ্রিট শব্দটা ধরতে পেরেছে। বললো,
“কালপ্রিট? কালপ্রিট শব্দটা জড়িয়ে উর্ডুতে কী বললে তুমি?”
ইরতিজা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ক্যানিয়লের প্রশ্নে কর্ণপাত না করে বললো,
“একজন মানুষের পার্সোনাল সময়ে তুমি কীভাবে ডিস্টার্ব করতে পারো? দেখোনি আমি ফোনালাপে ব্যস্ত ছিলাম? দেখেও কীভাবে ডাকলে?”
“ও-হো, এটাকে পার্সোনাল সময় বলে? তো ফোনালাপে কার সাথে এত ব্যস্ত ছিলে?”
“তোমাকে কেন বলবো? ইট’স অ্যা পার্সোনাল ম্যাটার।”
ক্যানিয়ল হাসলো। হাসার কারণে চোখ দুটো ছোটো হয়ে আরও সুন্দর দেখালো। ওই চোখেতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ইরতিজার। ক্যানিয়ল বললো,
“লেট’স গো।”
ইরতিজা ক্যানিয়লের কথা ঠিক বুঝতে পারলো না,
“মানে?”
“তুমি কি সাইকেল ভ্রমণে যেতে ইচ্ছুক? হলে চলো।”
সাইকেলের দিকে ইশারা করলো ক্যানিয়ল।
ইরতিজা অবাক হলো। ক্যানিয়ল তাকে সাইকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে? এটা কি শোনার ভুল?
“আমি তোমার সাথে কেন যাব? তুমি কি মজা করছো আমার সাথে?”
“আমি মজা করি না, করতে জানি না। আমি সিরিয়াস মানুষ। আমার সব কিছুই সিরিয়াস চলে। চলো।”
ক্যানিয়ল ইরতিজার একটা হাত ধরতে চাইলেই ইরতিজা সরে গিয়ে বললো,
“ডোন্ট টাচ মি! আমি তোমার সাথে যাব না। আমি পাগল নই যে আমি তোমার সাথে যাব।”
ইরতিজা এখান হতে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ালেই ক্যানিয়ল যাওয়ার পথে বাধা দিয়ে বললো,
“তুমি তো পাগলই পাকিস্টানি গার্ল! নতুন করে আর কী পাগল হবে? ওই রাতে বলেছিলাম না, তুমি হলে আধা পাগল?”
ইরতিজার মাঝে মুহূর্তে একটা রাগ তরতর করে বেড়ে উঠলো। সে ক্যানিয়লের দিকে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগে ক্যানিয়ল এক কদম এগিয়ে এসে তার মাথায় হস্ত পরশ বুলিয়ে বললো,
“তুমি কত ভালো পাকিস্টানি গার্ল! এত ভালো কেন তুমি? তুমি কি জানো তুমি একটা মিষ্টি মেয়ে?”
ক্যানিয়লের কথায় ইরতিজার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। সে ছিল রাগান্বিত, কিন্তু এখন খেয়ে গেল ভ্যাবাচ্যাকা!
ক্যানিয়ল বললো,
“আরে, এতদিন তোমার সাথে যা করেছি ওগুলো তো ছিল ফান। আমি মানুষটা মোটেই সিরিয়াস না ইজা। মজা করা ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। ওগুলো নিতান্তই মজা ছিল। তোমাকে তো আমি বন্ধু ভাবী।”
ক্যানিয়ল ইরতিজার দিকে একহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“তুমি কি আমার বন্ধু হবে ইজা?”
ইরতিজা অবাক। বিস্ময়ের সুবিশাল ও গভীর অর্ণবে তলিয়ে যাচ্ছে সে। মুখে গাঢ় বিস্ময়ের ছাপ পড়ে রয়েছে। ক্যানিয়ল এতদিন তার সাথে মজা করেছে? ইরতিজা বিস্ময়ে ডুবে রইল কিছুক্ষণ। ক্যানিয়লের বাড়ানো হাতটার দিকে তাকালো। কেউ নিজ থেকে বন্ধুত্ব করতে চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? ইরতিজা খানিক ভেবে ক্যানিয়লের সাথে হ্যান্ডশেক করে একটু হাসার চেষ্টা করলো। যদিও তার মন সংশয়।
ক্যানিয়ল প্রসন্ন হেসে বললো,
“সো লেট’স গো। এখন তো আমরা বন্ধু। একে অপরের সাথে ঘুরতে যেতেই পারি। মেরিমুর পার্কে যাব।”
মেরিমুর পার্ক! নামটা শুনেছে ইরতিজা। কিন্তু এখনও যাওয়া হয়নি। সেখানে যাবে ক্যানিয়লের সাথে?
ক্যানিয়ল ইরতিজাকে ভাবাভাবীর সময় দিলো না। হাত ধরে নিয়ে এলো সাইকেলের কাছে। সে নিজে হেলমেট পরেনি, ইরতিজাকে পরিয়ে দিতো। কিন্তু ইরতিজার মাথায় সুন্দরভাবে একটা ওড়না দেওয়া আছে দেখে আর পরালো না। সিটে উঠে বসলো। ইরতিজাও উঠে বসলো পিছনে। তার ইতস্তত বোধ হচ্ছে। ইতস্তত বোধটা কেটে গেল ক্যানিয়লের কথায়, যখন ক্যানিয়ল একটু আগের বিনীত ছেলে থেকে পুনরায় অতীতের পাজি ছেলে রূপে ফিরে এলো। সে ইরতিজাকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“আমাকে ধরে বসার চেষ্টা করবে না নীচু মানসিকতার মেয়ে! আমি ভীষণ স্পেশাল! যে কেউ আমাকে স্পর্শ করলে সেটাও আমার জীবনে বড়ো একটা অপমান বলে গণ্য হবে। অতএব একদম ধরে বসার চেষ্টা করবে না। নতুবা তোমার সুন্দর হাত দুটি আমি হকিস্টিকের আঘাতে ভে/ঙে দেবো!”
ইরতিজা বিস্ময়ে তরান্বিত। দু চোখে বিস্ময় স্ফীত হয়ে উঠছে। এইমাত্র কী শুনলো সে? একটু আগের ক্যানিয়লের সাথে তো এই পাজি ক্যানিয়লের কোনো সাদৃশ্য নেই। ইরতিজা বললো,
“একটু আগেই তো তুমি বললে, তুমি…”
“ওগুলো তো শুধু তোমাকে সাইকেলে উঠানোর জন্য বলেছি। কিন্তু এখন যখন তুমি একবার সাইকেলে উঠেই গিয়েছো তখন আর কী উপায়…”
ক্যানিয়ল কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই সাইকেল চালাতে শুরু করলো। সাইকেলের চলন গতি এত দ্রুত যে ইরতিজা দুই হাতের বেষ্টনে ক্যানিয়লকে জড়িয়ে ধরতে বাধ্য।
সামনে থেকে ক্যানিয়লের কণ্ঠ কানে ভেসে এলো,
“তোমার দেখছি হাত ভা/ঙারও ভয় নেই!”
(চলবে)