উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ১৭

0
612

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৭
_________________

ক্যানিয়ল হাতের ক্ষত স্থান পানি দিয়ে ধুয়ে নিচ্ছে। কপালের এক পাশও হালকা কেটে গিয়েছে তার। রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছে তার মুখ। পাগল মেয়েটাকে সাইকেলে উঠানো খুব বড়ো ভুল ছিল। মেয়েটা আসলেই পাগল! সাইকেল থেকে নামার জন্য অমন জেদ না ধরলে কি আজ সাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়তে হতো? আহত হতে হতো? কেন সঙ্গী হিসেবে মেয়েটাকে সাইকেলে নিয়েছিল? ক্যানিয়লের আফসোস হচ্ছে কাজটা করার জন্য।
মেয়েটা শুধু যে সাইকেল থেকে নামার জন্য জেদ করেছিল সেটাই নয়, ক্যানিয়ল সাইকেল না থামানোয় সে পিছন থেকে ক্যানিয়লকে হাত দ্বারা আঘাতও করেছে! এরপরই ঘটলো এক্সিডেন্ট! সাইকেল পড়লো, সেই সাথে সাইকেলে থাকা মানুষ দুজনও পড়ে গেল! ক্যানিয়ল বিশ্বাস করতে পারছে না সে একটা মেয়ের দ্বারা আজ আহত হয়েছে! পিঠ ব্যথা করছে। মেয়েটা খুব জোরে আঘাত করেছে কি না।
মেয়েটাকে কিছু বলারও সুযোগ পায়নি। কিছু বলার আগেই মেয়েটা দৌড়ে চলে গিয়েছে। তবে পরে দেখা হলে অবশ্যই ছাড় পাবে না পাগল মেয়েটা। নির্ঘাত হকিস্টিকের আঘাতে মা/থা ফাটিয়ে দেবে!
দরজা খোলার শব্দ কানে এলে সচকিত হয়ে উঠলো সে। পানির কল বন্ধ করে বেরিয়ে এলো। মাদার সোফিয়া প্রবেশ করেছে রুমে। সে এগিয়ে এসে ক্যানিয়লের সামনে থামলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল কপালের কাটা অংশটার দিকে। তারপর হাত বাড়িয়ে স্থানটা ছুঁয়ে বললো,
“কাকে মেরেছো আজকে?”

“কাউকে না।”

“তাহলে কীভাবে আঘাত পেয়েছো?”

“সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে।”

সোফিয়ার মুখ থেকে কালো ছায়া উঠে গেল। হেসে বললেন,
“সাইকেল চালাতে তুমি এখনও পারদর্শী হয়ে উঠতে পারোনি উমরান?”

“ছিলাম পারদর্শী, কিন্তু একজন অনভিজ্ঞ বানিয়ে দিলো।”

সোফিয়া চোখ সরু করে তাকালেন। বুঝতে পারলেন না ক্যানিয়লের কথা। মুখটা আবারও আঁধারে ঢাকা পড়লো। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতে এমন অভিব্যক্তি তার। বললেন,
“মমকে মিস করো উমরান?”

প্রশ্নটা শুনে ধাক্কা খেলো ক্যানিয়ল। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,
“হঠাৎ হঠাৎ এই প্রশ্নটা কেন করো মাদার সোফিয়া?”

“কারণ তুমি সব সময় এটার ভুল উত্তর দাও। সঠিক উত্তরটা কবে শুনতে পাবো সেটাই পরীক্ষা করি। এবারও কি উত্তরটা ভুলই থাকবে?”

“ভুল নয়, ওটাই সঠিক। তাকে আমি ঘৃণা করি, মিস নয়!”

ক্যানিয়ল দরজার দিকে পা বাড়ালো। সোফিয়া পিছন থেকে বললেন,
“তাহলে এন্ডারসন হাউজে ওয়ারড্রোবের ভিতর তোমার মমের ছবি কেন দেখা যায় উমরান?”

ক্যানিয়ল থমকে দাঁড়ালো।
_________________

পা যন্ত্রণা করছে, ঔষধ লাগানোর পরও ব্যথা কমেনি। পাজি ছেলেটার জন্য আজ সাইকেল থেকে পড়েছে! ছেলেটা এত পাজি! ভাবলেও শরীরে ঝিরঝির করে রাগ কাঁপন ধরাচ্ছে।
ইরতিজা হাত বাড়িয়ে আগুনের তাপ নিলো। বাসার সামনে আগুন জ্বালিয়েছে রিশন। আগুনের উষ্ণতা শীতকে অনেকটাই বিতাড়িত করেছে। রিশনের দিকে তাকালো ইরতিজা। রিশন ভিডিয়ো এডিট করছে। সে এখনও ক্ষুব্ধ ক্যানিয়লের উপর। ক্যানিয়লের জন্য ওইদিন জোনাকির ভিডিয়ো শ্যুট করতে পারেনি। ইরতিজা ক্ষুদ্রশ্বাস ত্যাগ করলো। ক্যানিয়ল যে পাজি এটাই তার নমুনা। সকলের সাথে ঝগড়া করে, ঝামেলা করে!
দূরে চোখ পড়লো ইরতিজার। জুহিকে আসতে দেখলো। সে উঠে এগিয়ে এলো জুহির দিকে। পায়ে যন্ত্রণা অনুভব হলেও হাঁটতে তেমন সমস্যা হয় না।

“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আন্দ্রেজ তোমাকে অনেকবার কল দিয়েছে। রিং হওয়ার পরও কল রিসিভ করোনি তুমি।”

জুহির মেজাজ চটা। থিওডোর নামের একটা ছেলের উপর ভীষণ ক্ষ্যাপা সে। ছেলেটার সাথে আজকেই বন্ধুত্ব হয়েছিল তার। ছেলেটা পর্যটক, রেডমন্ড ঘুরতে এসেছে। রাতে জুহির সাথে ডিনার করবে বলেছিল। হ্যাঁ, বলেছিল তো ভালো কথা। জুহিও বেশ খুশি হয়েছিল। খুশি মনে সে ডিনার করতে গিয়েছিল। ছেলেটা নিজের অর্থ খরচ করে খাওয়াবে তাকে এমনটাই তো হওয়ার ছিল। কিন্তু ছেলেটা এতটাই চতুর যে নিজের ডলার খরচ না করে তাকে দিয়ে বিল মিটিয়েছে! সে কিছু বলতেও পারেনি, কিছু করতেও পারেনি। চুপচাপ বিল মিটিয়ে দিয়ে চলে এসেছে। আজকের পর থেকে ওই ছেলের সাথে আর বন্ধুত্ব রাখবে না। আজকেই বন্ধুত্ব হয়েছিল, আজকেই বন্ধুত্বের সমাপ্তি টানবে।
জুহি রাগান্বিত কণ্ঠে বললো,
“কেন? ওই খোঁড়া ছেলে আমাকে কেন কল দিয়েছে? দিলেই কি আমার রিসিভ করতে হবে? যখন মার্টার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে তখন আমার কথা মনে থাকে না?”

জুহি আর দাঁড়ালো না, ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ইরতিজা তাকিয়ে রইল ওর পথের দিকে। মনে মনে বললো,
“আজব তো!”

রিশন পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করছিল। ইরতিজাকে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে ডাকলো। ইরতিজা এগিয়ে গিয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসলো। রিশন বললো,
“তুমি কি জানো আমার বোন আন্দ্রেজকে ভালোবাসে?”

“হোয়াট?” কথাটা শোনামাত্র বিস্ময়ের ধ্বনি বেরিয়ে এলো ইরতিজার মুখ থেকে।

“হ্যাঁ। আমি জানি না ও কেন আন্দ্রেজকে পছন্দ করে! এত ছেলে থাকতে আন্দ্রেজই কেন হবে? তুমি এর কারণ জানো?”

“তুমি মজা করছো রিশন।” কথাটা কেন যেন বিশ্বাস হলো না ইরতিজার।

রিশনের মন অসন্তুষ্ট হলো। হঠাৎই খুব বিরক্তবোধ করলো সে। উঠে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে বললো,
“তোমরা মেয়ে জাতিটাই কেমন যেন! কোনো কিছু বুঝিয়ে ওঠা যায় না তোমাদের।”

বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেল।
ইরতিজা হতবাক হয়ে বসে রইল। তার দিনগুলো আজকাল খুবই বাজে যাচ্ছে!

_________________

আজ ইউনিভার্সিটিতে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সিদ্ধান্তটা হচ্ছে বন্ধুরা মিলে ‘Rattlesnake lake’ ঘুরতে যাবে আগামীকাল। দুপুরে রওনা হবে, ফিরবে সন্ধ্যায়। এই দলে মোট নয়জন যুক্ত হয়েছে। দলের ভিতর সামুরাও আছে। সামুরা ছেলেটা খুব ভালো, ইরতিজা বুঝতে পেরেছে এ কদিনে। দুই দুই বার আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে সে তার ফ্যামিলির আচরণে।
ইরতিজা ক্লাসে বসে বসে ভাবছিল সামুরাকে নিয়ে। ক্লাসের ভিতর বেশিরভাগ আসনই ফাঁকা। সবাই ক্যাম্পাসের এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। ইরতিজার পাশে জুহি প্রয়োজনীয় একটা জিনিস নোট করে নিচ্ছে। হঠাৎ দরজায় ক্যানিয়ল এসে দাঁড়ালো।

“ইজা!”

শান্তস্বরের ডাকটা কানে আসতেই গায়ের প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে উঠলো ইরতিজার। সে ডাক অনুসরণ করে তাকালো। ক্লাসরুমে উপস্থিত সকল চোখই এখন ক্যানিয়লের উপর নিবদ্ধ। এত জনের দৃষ্টির অন্তর্গত হয়ে ক্যানিয়লের অস্বস্তি বোধ হলো। সে ইরতিজাকে বললো,
“এদিকে এসো। তোমার সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।”

উপস্থিত সকলের চোখেই কৌতূহল। জুহি অবাক হয়ে ইরতিজার মুখপানে চাইলো। ইরতিজা তাকানো ক্যানিয়লের দিকে। বললো,
“যাব না।”

ক্যানিয়ল রেগে গেল। মুখচ্ছটা রাগের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটালো। সে গম্ভীর কণ্ঠে নির্দেশ করলো,
“এসো।”

“তুমি যাও এখান থেকে।”

জুহি ইরতিজার সাথে তাল মিলালো। ক্যানিয়লকে বললো,
“হ্যাঁ তুমি যাও। টিজাকে কেন ডাকছো? ও কেন যাবে তোমার সাথে? তুমি চলে যাও। টিজা যাবে না তোমার সাথে।”

ক্যানিয়ল ভারি বিরক্ত নিয়ে তাকালো জুহির দিকে।
“তুমি চুপ করো প্লে গার্ল!”

অপমানে থমথম করে উঠলো জুহির ভিতরটা। ক্লাসে উপস্থিত মানুষজনের মাঝে তাকে ‘প্লে গার্ল’ বলে সম্বোধন করলো ক্যানিয়ল? জুহি একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো গোটা রুমের উপর।

ক্যানিয়ল আবার বললো,
“দ্রুত এসো পাকিস্টানি গার্ল, এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট কথা।”

“যাব না আমি, তুমি যাও এখান থেকে।”

“হ্যাঁ, যাবে না ও। যেতে চাইলেও আমি যেতে দেবো না।” জুহি বললো।

ক্যানিয়ল চোখ সরিয়ে নিয়ে বিরক্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। অনন্তর আবার তাকালো ইরতিজার দিকে। ইরতিজার মাথায় হিজাব নেই। চুল স্বল্প বিনুনি করা। ইরতিজাকে এমন দেখতে ভালো লাগলো না তার।

“তাহলে তুমি আসবে না?”

ইরতিজা কিছু বললো না।
ক্যানিয়ল নির্বিকার বললো,
“ঠিক আছে, আসতে হবে না তোমার। আমিই টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসবো।”
বলে সে প্রস্থান করলো।

ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছিল ইরতিজা, জুহি। গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। গেট থেকে কিছুটা দূরে থাকাকালীন গেট দিয়ে প্রবেশ ঘটলো ক্যানিয়লের। আচমকা কেমন ভয় ছমছম করে উঠলো ইরতিজার মাঝে। সে দৃষ্টি নামিয়ে হাঁটতে থাকলো।
ক্যানিয়ল যখন ইরতিজার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ ইরতিজার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। পিছন থেকে হাতে টান পড়তেই পিছন ঘুরে যেতে হলো ইরতিজার। ক্যানিয়ল হাঁটা অব্যাহত রেখেছিল। অতএব বাধ্য হয়েই ইরতিজাকে ওর সাথে পা মিলিয়ে চলতে হলো। জুহি পিছন থেকে ডেকে উঠলো,
“হেই!”

ক্যানিয়ল থামলো না। ইরতিজাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। পায়ের গতি দ্রুত তার। ইরতিজার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হচ্ছে ইরতিজার।

“ছাড়ো আমায়।”

কথাটা কান অবধিও যেন পৌঁছালো না ক্যানিয়লের।
জুহি কী করবে বুঝতে না পেরে দৌড়ে এলো ওদের পিছন পিছন। কিন্তু ওদের ধরতে পারলো না। ক্যানিয়ল ইরতিজাকে নিয়ে লাইব্রেরি রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো।
দরজার কপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থমকে যেতে হলো জুহির। তবে সে স্থির রইল না, দুই হাত দিয়ে অনবরত দরজার গায়ে আঘাত করে বললো,
“হেই, তুমি কি পাগল? টিজাকে ওভাবে টেনে নিয়ে এসেছো কেন? দরজা বন্ধ করেছো কেন? হেই, খোলো দরজা। খোলো বলছি।”
জুহির কণ্ঠ অস্থির।

ইরতিজা দরজার দিকে এগোনো দিলেই ক্যানিয়ল বাধা দিলো।
ইরতিজা রক্তচক্ষুতে তাকালো ক্যানিয়লের দিকে।

“তুমি তোমার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ ক্যানিয়ল! খুব অতিরিক্ত করে ফেলছো তুমি। আমাকে যেতে দাও।”

“যেতে দেবো বলে কি টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে এসেছি? বলেছিলাম তো টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসবো। সাবধান থাকোনি কেন?”

ইরতিজা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
সহসা ক্যানিয়লের মাঝেও রাগের ছটা লাগলো। ইরতিজার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“তুমি মেয়েটা ঠিক কী বলো তো? তুমি কি আসলেই ওই গ্যাংয়ের সাথে জড়িত? সাইকেল থেকে ফেলে দিয়েছো আমায়! পিঠেও আঘাত করেছো পিঠ এখনও ব্যথা করছে। তুমি কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দিয়েছো আমার গায়ে। লুক অ্যাট দিস…”

কপালের কাটা অংশটা দেখিয়ে দিলো ক্যানিয়ল।
“আমি মানুষজনকে কী করে বলবো যে এই ক্ষত একটা মেয়ে আমাকে সাইকেল থেকে ফেলে দেওয়ার কারণে হয়েছে?”

জুহির উত্তেজনা বেড়ে চলছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। জুহির পিছনে আরও কয়েকজন এসে দাঁড়িয়েছে ব্যাপারটা দেখতে। জুহি আবারও করাঘাত করে বললো,
“হেই, তুমি কী করছো টিজার সাথে? দরজা খোলো। টিচার ডাকতে বাধ্য করো না আমায়।”

“এই কলঙ্ক কীভাবে মুছবে পাকিস্টানি গার্ল? তোমাকে মেরে ফেললে কি এই কলঙ্ক মুছবে? তোমাকে মেরে ফেললে তো তোমার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। যার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না তার দ্বারা পাওয়া আঘাতেও নিশ্চয়ই কোনো কলঙ্ক খচিত থাকবে না। তোমাকে কি আমি মেরে ফেলবো?”

“তোমার সকল কথাই সন্ত্রাসীদের মতো! তুমি আসলেই সন্ত্রাসী। তোমাকে পুলিশে দেওয়া প্রয়োজন।”

ক্যানিয়ল হেসে ফেললো। বললো,
“আর তোমাকে মেন্টাল প্রিজনে পাঠানো প্রয়োজন।”
একটু থেমে হতাশার দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো,
“চেয়েছিলাম হকিস্টিক দিয়ে তোমার মা/থা ফা’টি’য়ে দেবো।”
বলতে বলতে পুরু একটা বই দিয়ে ইরতিজার মাথায় আঘাত করতে নিয়েও আঘাত করলো না।
“কিন্তু মত পরিবর্তন হয়ে গেল। যাও করলাম না তোমায় আঘাত। মেয়েদের এমনিতেও আমি অপছন্দ করি। আঘাত করলে পছন্দের মানুষদেরই করতে হয়, অপছন্দের মানুষদের নয়।”

ক্যানিয়ল সরে গেল কাছ থেকে। বইটা বুক সেলফে রেখে দরজার দিকে অগ্রসর হলো। দরজার কাছে গিয়ে আবার থামলো কিছু একটা মনে পড়তে। পিঠের ব্যাগ থেকে একটা সাদা হিজাব বের করলো। পিছন ফিরে ইরতিজাকে বললো,
“তোমার মাথায় হিজাব কেন নেই পাকিস্টানি গার্ল?”

ইরতিজা হঠাৎ এমন প্রশ্নে তটস্থ বোধ করলো।

ক্যানিয়ল এগিয়ে এলো কাছে। হাতের হিজাবটা ইরতিজার মাথায় এক প্যাঁচ দিয়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো,
“ভালোভাবে পরে নেবে এটা।”

ইরতিজা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল। চলে গেল ক্যানিয়ল। দরজা খুলতেই যেন নিজের প্রাণ ফিরে পেল জুহি। তার দমবন্ধ হয়ে আসছিল এতক্ষণ ধরে। ক্যানিয়ল বের হতেই সে ব্যস্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“টিজার সাথে কী করেছো তুমি? হুহ? কী করেছো?”

ক্যানিয়ল জুহির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে স্তব্ধ ইরতিজাকে দেখলো। তারপর জুহির দিকে তাকিয়ে ওষ্ঠকোণে অদ্ভুত হাসির রেখাপাত ঘটিয়ে জুহির কানে কানে বললো,
“তোমার কাজিনের সাথে খুব বাজে কিছু করেছি আমি। দেখবে কয়েকদিন যাবৎ কেবল আমিতেই ডুবে থাকবে ও। টেনে-হিঁচড়েও উঠাতে পারবে না ওকে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here