#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৮
_________________
জুহিকে কথাটা মজা করে বলেছিল ক্যানিয়ল, কিন্তু এই মজা করে বলা কথাটা যে আজবভাবে সত্যি হয়ে যাবে সেটা কে জানতো? গতকাল থেকে ক্যানিয়লকে ভেবে যাচ্ছে ইরতিজা। না, ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভাবা হয়েছিল ছেলেটা আসলে অতটাও খারাপ নয়। গতকালকের ঘটনা থেকে এটুকু আঁচ হয়েছে ইরতিজার। গতকাল থেকেই সে কেমন নিঝুম-নিস্পন্দ! কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলে না। একা একা থাকে। নিজের অভিব্যক্তি দেখে ইরতিজা নিজেই ভীষণ বিস্মিত। তবে বিস্মিতভাব দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় না তার মাঝে। সে আবারও ভেসে ওঠে নিঝুম-নিস্পন্দ উদাসী হাওয়ায়।
দুপুরে রওনা হলো ‘Rattlesnak lake’ এর উদ্দেশ্যে। ওদের গাড়িতে চারজন যাত্রী। ইরতিজা, জুহি, রিশন এবং আন্দ্রেজ।
হাইওয়ে ধরে ওদের গাড়িটা এগিয়ে চলছে। ইরতিজা বসে আছে পিছনের আসনে, ওর পাশে জুহি। ইরতিজা আজ থ্রি পিস, হিজাব পরেছে। ক্যানিয়লের দেওয়া সেই হিজাবটা পরেছে। এটা পরতেই ভালো লাগলো কেন যেন!
রাস্তায় বের হওয়ার পরেই নিঝুম মন হঠাৎ চাঞ্চল্যকর হয়ে উঠলো ইরতিজার। প্রকৃতি দেখার নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছে চিত্ত। কোন দিক রেখে কোন দিক দেখবে দিশেহারা লাগছে। ঝাপসা কুয়াশায় জড়ানো পাহাড় কী অপূর্ব! একটু গাড়ি নিয়ে বের হলেই পাহাড়ের নজরকাড়া সৌন্দর্য নজর কেড়ে নেয়।
ইরতিজার চোখ রাস্তার কর্ণারে গেল। স্নো ফল হয়েছিল, রাস্তার কর্ণারে জমে আছে বরফ। আজকে বোধহয় মাইনাস ওয়ান চলছে। অনেক ঠান্ডা।
চল্লিশ মিনিটের ভিতরই পৌঁছে গেল ওরা গন্তব্যে। গাড়ি থেকে বের হতেই তাপহীন রোদ আবেশী স্পর্শ বুলিয়ে দিলো চুল, মুখমণ্ডল ও গায়ের পোশাকে। এখানেও বরফ জমে আছে। ঘাসের উপর ছড়িয়ে আছে বরফের সাদা আস্তরণ। এখান থেকে একটু হেঁটে গেলেই লেক দেখা যাবে।
লেকের ধারে এসে দেখা মিললো বাকি বন্ধুদের। সকলেরই এই সময় উচ্ছ্বসিত থাকার কথা ছিল। ব্যস্ত থাকার কথা ছিল ফটোশ্যুট নিয়ে। কিন্তু একটা কারণে সকলের মুখই গম্ভীর, বেজার! লেকের ধারে সময় কাটানোর প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে এসেছে বাকি বন্ধুরা। চেয়ার, ছোটো টেবিল, খাদ্যদ্রব্য, মাদুর, খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সব কিছু নিয়ে এসেছে। কিন্তু সর্বপ্রথম ওদের দৃষ্টি বাকি সবকিছু ডিঙিয়ে চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটার উপর পড়লো। চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে আরাম করে বসে আছে সে।
জুহি অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
“হোয়াট দ্য হেল! হোয়াট এম আই সি? তুমি এখানে কেন ক্যানি?”
জুহির কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই চোখ খুললো ক্যানিয়ল। তার কমলা রঙা অক্ষি প্রথমেই অবলোকন করলো নীল সাদায় সজ্জিত আকাশ। এরপর ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো জুহির দিকে। জুহির পাশাপাশি ইরতিজা, রিশন, আন্দ্রেজকেও দেখতে পেল। ঠোঁট টেনে হেসে ইরতিজাকে দেখিয়ে বললো,
“ইজা আসতে বলেছে আমাকে।”
ইরতিজা চমকে উঠলো ক্যানিয়লের মিথ্যা কথা শুনে। ততক্ষণে উপস্থিত সবার দৃষ্টি এসে পড়েছে ইরতিজার উপর। ইরতিজার ভিতরটা কাঁপছে। বিনা অপরাধে হৃদয়ের এমন কম্পমান অবস্থা আসলেই খুব ভয়ংকর। জুহি প্রথমে বিস্ময় নিয়ে ইরতিজার দিকে তাকালেও ক্যানিয়লের কথাটা যে মিথ্যা এটা অনায়াসে বুঝে গেল। বললো,
“মিথ্যা বলার জন্য মাধ্যম হিসাবে আর কাউকে পেলে না? টিজা তোমাকে আসতে বলবে কেন? ও তোমাকে ঘৃণা করে!”
ক্যানিয়ল কেমন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“আচ্ছা! ঘৃণা করে? তাহলে আমার দেওয়া হিজাব ও কেন পরে আছে এখনও?”
সবাই আবারও ইরতিজার দিকে তাকালো। ক্যানিয়ল প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
“আমাকে তুমি ঘৃণা করো পাকিস্টানি গার্ল?”
ক্যানিয়লের প্রশ্নটা হৃদয় উপকূল স্তব্ধ করে দিলো ইরতিজার। পরক্ষণেই বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করে শব্দ হতে লাগলো। এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকাও অসম্ভব মনে হলো, কিন্তু এখান থেকে চলে যাওয়ার তো উপায় নেই তার। বাধ্যতামূলক দাঁড়িয়ে রইল।
ক্যানিয়লের আগমন কারো কাছেই ভালো লাগার কোনো বিষয় নয়। সবাই বিতৃষ্ণা অনুভব করছে। সবচেয়ে বিতৃষ্ণা, অস্বস্তিতে আছে সামুরা। ঘুরতে আসার কথাটা ক্যানিয়লকে জানানোই ভুল ছিল তার। সে একদমই চায়নি ক্যানিয়ল তার সাথে আসুক। কারণ এখানে ইরতিজা, রিশন থাকবে। ইরতিজার সাথে যে ক্যানিয়লের ঝগড়াপূর্ণ সম্পর্ক সেটা সে বুঝতে পেরে গিয়েছে। কিন্তু ক্যানিয়লকে সে সরাসরি কিছু বলতে পারেনি। এখন কি এখানে খুব বড়ো ঝামেলা বাঁধবে?
“আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি, কোনো রকম ঝামেলা করতে চাচ্ছি না তাই। তুমি চলে গেলেই আমরা সবাই খুশি হবো।” রিশন বললো। ক্যানিয়লকে দেখে সে ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড রেগে গেলেও শান্ত ভাবে ব্যাপারটার সমাধান করতে চাইলো।
“কিন্তু আমি তো তোমাদের সবাইকে খুশি করতে চাইছি না। আমার কোনো ইচ্ছা নেই তোমাদেরকে খুশি করার। অন্যের খুশি নিয়ে আমি ভাবী না। আমার খুশিটাই ইম্পরট্যান্ট আমার কাছে।”
সবাই বুঝতে পারলো ক্যানিয়লকে বুঝিয়ে লাভ হবে না। তাই সবাই এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়লো যে যার মতো করে লেক দেখার উদ্দেশ্যে। জুহিও ইরতিজার হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে গেল দূরে।
ইরতিজা মুগ্ধ নয়নে দৃষ্টি মেলে দিলো প্রকৃতি পানে। লেকটা পাহাড়ে বেষ্টিত। দুই পাশ দিয়ে পাহাড় ঘিরে রেখেছে। পাহাড় এবং নীল-সাদা আকাশের প্রতিচ্ছবি লেকের পানিতে পড়ে অন্য রকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। দূর পাহাড়ের উপর বরফ পড়েছে দেখা যাচ্ছে। ইরতিজার ইচ্ছা হলো ডানা মেলে উড়ে উড়ে দেখে পাহাড়গুলো। কিন্তু ডানা দুটোই যে নেই!
নীল জল টলমল করছে। এই জলে হঠাৎই ভেজার শখ জাগলো ইরতিজার। আনমনে কথাটা ভাবার কিয়ৎক্ষণ পর আচমকা পানির ঝাপটা এসে মুখ ভিজিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে নিতে হলো ইরতিজার। চোখ মেলে এক জোড়া কমলা রঙা চোখের হাসি দেখতে পেল। খারাপ লাগলো না ইরতিজার। বরং অদ্ভুতভাবে তার ক্যানিয়লের করা দুষ্টুমিটা ভালো লাগলো। অধর কোণ খানিক প্রশস্ত হলো এই ভালো লাগা থেকে।
ইরতিজার ঠোঁটের কোণে নির্মল হাস্যভাব লক্ষ করে ভ্রু কুঁচকে গেল ক্যানিয়লের। অবাক চিত্তে বললো,
“হাসছো কেন তুমি?”
মিলিয়ে গেল ইরতিজার হাসি। নিজের কাছে নিজের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো। হ্যাঁ সেটাই তো, হাসছে কেন সে? ক্যানিয়লের দিকে বিচলিত চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
“কোথায় হাসলাম?”
“স্পষ্ট দেখেছি তোমাকে হাসতে।”
ক্যানিয়ল চোখ সরু করে সন্দ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো,
“তুমি সত্যিই পাগল নও তো গার্ল?”
“তুমি পাগল!”
ক্যানিয়ল হেসে বললো,
“পাগল হলে ভালো হতো, কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমি তা নই।”
ক্যানিয়ল এমনভাবে বললো যেন পাগল না হতে পেরে তার ভীষণ আফসোস হচ্ছে।
ইরতিজা ভ্রু কুঞ্চন করে চেয়ে রইল।
জুহি ইরতিজার কাছ থেকে সরে আন্দ্রেজের কাছে এসেছিল। এখন ইরতিজার দিকে চোখ পড়তে ওর সামনে ক্যানিয়লকে দেখতে পেল। খুব রাগ হলো তার। সে হনহন করে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ইরতিজার একহাত ধরে বললো,
“ওদিকে চলো।”
জুহি ইরতিজাকে নিয়ে যেতে লাগলো। ক্যানিয়ল বললো,
“আমাকে অবহেলা করছো প্লে গার্ল? এতে কিন্তু আমি একটুও দুঃখ অনুভব করছি না। কারণ আমি অবহেলায় বাড়ন্ত! অবহেলা অগ্রাহ্য করতে জানি আমি।”
ক্যানিয়লের কথাগুলো জুহি বিশেষ গায়ে না মাখলেও কথাগুলো ইরতিজা ভালো করে খেয়াল করলো। একটা লাইন বিশেষভাবে প্রভাব ফেললো তার মস্তিষ্কে, ‘কারণ আমি অবহেলায় বাড়ন্ত!’ এটার মানে কী?
ক্যানিয়ল থাকলো না বেশিক্ষণ। যাওয়ার আগে সামুরাকে কী যেন বলে গেল। আর যাওয়ার ক্ষণে বললো ইরতিজাকে। ইরতিজা তখন চেয়ারে বসে ছিল। হাতে ছিল একটা সাদা বুনোফুল। ইরতিজার দিকে এগিয়ে এসে ওর মাথার উপর শূন্যে হাত রেখে বললো,
“এখন আর তোমার চুলগুলো চাইলেই হাত দিয়ে এলোমেলো করে দেওয়া যাবে না পাকিস্টানি গার্ল।”
বলে সে আপন মনে হাসতে হাসতে চলে গেল।
ইরতিজা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না ক্যানিয়ল চোখের আড়াল হয়ে গেল।
তার নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকার ধরন এবার পরিবর্তন হলো ফোনের রিংটোনের শব্দে। মোবাইল বের করে সাজিদের নামটা দেখতে পেল। সাজিদের নাম দেখে ইরতিজার শরীর দুর্বল হয়ে এলো। হঠাৎ খুব ক্লান্ত অনুভব করলো সে। কল রিসিভ করে কথা বলতে খুব ক্লান্ত লাগছে। কল রিসিভ না করে মোবাইল সাইলেন্ট করে চোখ বুজলো সে। সাজিদের জন্য আসলেই মেয়ে খোঁজা শুরু করবে কি না ভাবছে। লোকটার জন্য একটা মেয়ে খুঁজে পেলেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যেতো। ঝামেলা আর ভালো লাগছে না! কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে সাজিদকে একটা ম্যাসেজ টাইপ করতে লাগলো,
‘আগামী তিন দিনের ভিতরই আপনার জন্য বউ খোঁজার কাজ সম্পন্ন করবো সাজিদ। আপনার হবু বউ পরিচয়ে থাকতে একদম…”
ইরতিজার ম্যাসেজ টাইপিংয়ের মধ্যেই হঠাৎ জোনাসের ম্যাসেজ এলো। কী-বোর্ডে চলিত হাত থেমে গেল ইরতিজার। সে সাজিদকে ম্যাসেজ না পাঠিয়ে জোনাসের ম্যাসেজ সিন করলো। চোখ ছানাবড়া হলো তার। শুধু চোখই বিস্মিত হলো, না সাথে মনও বিস্মিত হয়েছে বোঝা গেল না। জোনাস একটা মেয়ের সাথে সেলফি পাঠিয়েছে তাকে। সাথে দিয়েছে একটা ম্যাসেজ,
‘পিকটা কেমন টিজা? সুন্দর না? এটা আমার গার্লফ্রেন্ড। প্রোপোজ করার পর তোমার মতো রিজেক্ট করে দেয়নি, বরং সাদরে গ্রহণ করেছে।’
_______________
বাবার পাশে বসে আছে ইরতিজা। কেমন মনমরা দেখাচ্ছে তাকে। হৃদয় কালো পুঞ্জমেঘ ঢেকে ফেলছে। মানুষ সর্বদা তার সাথে মজা করে। সে কি মজার পাত্রী? কেন এরকম মজা করলো জোনাস? ইরতিজা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো। নিউ ইয়র্কের ফ্রেন্ড নাবাকে কল দিয়ে জেনেছে ইরতিজা–জোনাসের কারো সাথে রিলেশনশিপ তৈরি হয়নি। জোনাস যার সাথে ছবি দিয়েছে ওটা জোনাসের কাজিন।
আজাদ চৌধুরী এতক্ষণ চুপ ছিলেন। তার মেয়ে সাধারণত মন খারাপ থাকলে এমন নীরব থাকে। চেয়েছিলেন কিছু বলবেন না, কিন্তু আবার প্রশ্ন করলেন,
“কী হয়েছে তোমার?”
“আব্বু…” মন্থর ক্লান্ত কণ্ঠে ডাকলো ইরতিজা।
“বলো।”
“আমি সাজিদ আহসানকে বিয়ে করবো না!”
আজাদ চৌধুরী বিচলিত হলেন না। শান্তভাবে প্রশ্ন করলেন,
“কেন?”
এই প্রশ্নের উত্তর নেই। কেন জানে না। শুধু জানে সাজিদকে সে কখনোই বিয়ে করতে পারবে না। উঠে দাঁড়ালো ইরতিজা। বললো,
“ওনাকে বিয়ে না করার কোনো কারণ নেই, তারপরও ওনাকে বিয়ে করবো না আমি।”
“আচ্ছা?”
“হ্যাঁ।”
আজাদ চৌধুরীও উঠে দাঁড়ালেন। বেশ শান্ত স্বরে বললেন,
“আর কখনও এমন করে বলবে না। এটা ছেলেখেলা নয়।”
সে ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ইরতিজা বললো,
“হ্যাঁ এটা ছেলেখেলা নয়। আর আমিও ছেলেমানুষি করছি না। আব্বু…”
ডেকেও আর সাড়া পাওয়া গেল না আজাদ চৌধুরীর। অসহায়ত্ব বোধ ইরতিজার ভিতরকে একেবারে দুর্বল করে দিলো। বুক চিরে দুর্বল নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। আকাশের দিকে তাকালো। সন্ধ্যাতারা মিটমিট করে জ্বলছে। মৃদু বাতাস বইছে। আজ শীত অনেক কম। বেশি পুরু কাপড় জড়ানোর প্রয়োজন পড়েনি। ইরতিজা ঘাসে মোড়ানো জমিন পেরিয়ে রাস্তায় উঠে এলো। হাঁটতে লাগলো শিথিল পা ফেলে। নিজের জীবনটাকে কেমন এলোমেলো, অগোছালো মনে হয়!
কতক্ষণ হেঁটেছে, কতটুকু হেঁটে এসেছে খেয়াল নেই ইরতিজার। কানে ভেসে আসা অদ্ভুত ধরনের শব্দে সে দাঁড়িয়ে গেল। ভালোভাবে শব্দ অনুধাবন করার চেষ্টা করলো। কেমন হট্টগোলপূর্ণ শব্দ। মনে হচ্ছে কেউ কাউকে আঘাত করছে। পালাক্রমে আঘাত-প্রতিঘাত চলছে। কোথায় হচ্ছে এই হট্টগোল? ইরতিজা আশেপাশে তাকালো। শব্দটা মূলত সামনে থেকে আসছে। সামনে রাস্তার বাম দিকে যে বাঁক আছে ওখানে হচ্ছে। ইরতিজার হঠাৎ ভয় করতে লাগলো। তবুও ভয়ে কৌতূহল কমলো না। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। রাস্তার বাঁকের মুখে এসে দাঁড়াতেই সামনের দৃশ্যটা দেখে বিস্ময়ে চোখ বিস্ফোরিত হলো তার। হ্যাঁ সত্যিই মারামারি চলছে এখানে! হকিস্টিক দিয়ে সোনালি চুলের ছেলেটাকে যে মানুষটা আঘাত করে চলেছে সে তো ইরতিজার পরিচিত। পুরো বিষয়টা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল ইরতিজা। এখানে মোট ছয়-সাতজন উপস্থিত। একে অপরকে আঘাত করতে ব্যস্ত এরা। ইরতিজার চোখ সবাইকে উপেক্ষা করে একজনের উপরই স্থির হয়ে আছে। পুরো দৃশ্যটা তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়েছে। সোনালি চুলের ছেলেটাকে দুর্বল হয়ে পড়ে যেতে দেখা গেল। ইরতিজার পরিচিত মানুষটা তার দিকে ফিরলো ঠিক তখনই। মানুষটার দৃষ্টি সব সময়ের মতো পরিচিত মনে হলো না। খুব ভয়ঙ্কর লাগলো। রক্তহিম করা চাহনিতে বললো,
“তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও কি মার খেতে চাও পাকিস্টানি গার্ল?”
কথাটায় ইরতিজার হৃৎপিণ্ড আঁতকে উঠলো। এতটাই ভয় পেল যে দৌড়ে চলে এলো ওখান থেকে।
(চলবে)