উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৩২

0
517

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩২
_________________

ক্যানিয়লের গাড়িটা ইরতিজাদের বাসা হতে খানিক দূরে পার্কিং সাইডে এসে দাঁড়িয়েছে। সে নামলো গাড়ি থেকে। এগিয়ে যেতে লাগলো ইরতিজাদের বাসার দিকে।
দরজায় নক করলো। পরপর চারবার নক করার পর দরজা খুললো। সামনের ব্যক্তিটা দরজা খুলে কেবল দেখলো তাকে, সাথে সাথেই অপ্রস্তুতভাবে জোরে শব্দ করে বন্ধ করে ফেললো দরজাটা।
এমন একটা ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে গেল ক্যানিয়ল!

ইরতিজার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়েছে! বাইরে কি সে এইমাত্র ক্যানিয়লকে দাঁড়ানো দেখলো? চোখের ভ্রম হয়নি তো আবার? ইরতিজা বিষয়টা খতিয়ে দেখতে ডোর ভিউতে উঁকি দিলো। ক্যানিয়লের কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুখটা চোখে পড়লো তার। হৃদয়ের ঢিপ ঢিপ শব্দটা ক্রমশ বেড়ে চলছে। ক্যানিয়ল তার বাড়িতে এসেছে কেন? আবার দরজায় পড়া করাঘাতে ইরতিজার কর্ণকুহর কম্পিত হয়ে উঠলো। ওপাশ থেকে ক্যানিয়লের গাম্ভীর্য ভরাট কণ্ঠ শুনতে পেল,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল, ডোর ওপেন করো। আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে কি তুমি আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছো? দরজা খো’লো বলছি।”
ক্যানিয়লের কণ্ঠে আদেশের সুর।

ইরতিজার মুখে ভীতির ছায়া। ক্যানিয়ল যেরকম উচ্চ গলায় কথা বলছে এতে তো অন্যদের কানে গিয়েও পৌঁছবে ওর কণ্ঠস্বর। যদিও কেউ এখন বাসায় নেই। পাশের ইউনিট, অর্থাৎ চাচাদের বাসায় গিয়েছে। বিরিয়ানি রান্না হয়েছে তাদের বাসায়, তাই খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিল। ইরতিজাও এখনই যেত তাদের ওখানে, কিন্তু এরই মধ্যে ক্যানিয়ল এসে গেল। ক্যানিয়লকে এরকম বাসার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা অনুচিত মনে হলো। সে ফট করে বেডরুমে গিয়ে একটা ওড়না মাথায় জড়িয়ে নিয়ে এসে দরজা খুললো।
ক্যানিয়ল বলে উঠলো,
“তোমার সাহস দেখে আমি স্তব্ধ ইজা!”

“কী চাই? আমার বাড়িতে কেন এসেছো?” ক্যানিয়লের কথায় কর্ণপাত না করে বললো ইরতিজা।

“তোমাকে চাই। কি/ড/ন্যা/প করতে এসেছি তোমাকে।”

ইরতিজা ভ্রু কুঞ্চন করে বললো,
“হোয়াট?”

“শুধু পাঁচ মিনিট সময় আছে তোমার কাছে। আমার সুন্দর গাড়িটা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক পাঁচ মিনিট পর চলে আসবে ওখানে। বাই দ্য ওয়ে, তোমার পরিবারের বাকি সদস্যরা কোথায়?”
ক্যানিয়ল দেখার জন্য ইরতিজাকে উপেক্ষা করে বাসার ভিতরে দৃষ্টিপাত করলো।

“আমার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে তোমার কাজ কী? নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো। আসছি আমি।”
কোনো রকম ঝামেলাযুক্ত কথা না বলে বিষয়টা মিটমাট করে নিলো ইরতিজা।
ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় বের হলো বাসা থেকে। কর্টইয়ার্ডে নওরিনের সাথে দেখা হলো।

“কোথায় যাচ্ছ?”

“এই কাছেই। এখনই এসে পড়বো।”

ইরতিজা চরণ ফেলতে লাগলো খুব ধীরে। কারণ নওরিন এখান থেকে না যাওয়া পর্যন্ত তো সে ক্যানিয়লের গাড়ির ওখানে যেতে পারবে না। ইরতিজা বিভ্রান্ত বোধ করছিল। এই সময় নওরিনের মোবাইলে আসা ফোনকলটা তাকে বাঁচিয়ে দিলো। নওরিনের কর্মক্ষেত্রের একজন লোক কল করেছে। নওরিন কথা বলতে বলতে বাসার অভ্যন্তরে চলে গেল।
ইরতিজা সুযোগ পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে এলো। ক্যানিয়ল গাড়ির ভিতরে বসে আছে। ইরতিজা জানালা দিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“এখানে আসতে বলেছো কেন?”

“গাড়িতে উঠে বসো।”

“কেন?”

ক্যানিয়ল দরজাটা খুলে দিয়ে বললো,
“ওঠো।”

ইরতিজা উঠে বসলো। তবে ওঠার সময় ক্যানিয়ল হঠাৎ তাকে থামিয়ে দিয়েছিল,
“স্টপ স্টপ…এই পিচ্চি ভায়োবিন ফুলগুলোর উপর যদি তোমার মতো বৃহৎ একটি প্রাণী উঠে বসে তাহলে তো এগুলো মৃ’ত্যু বরণ করবে।”
ক্যানিয়ল ফুলগুলো সরিয়ে রেখেছে সিট থেকে।

“সিটবেল্ট বেঁধে নাও।” ইরতিজাকে বললো ক্যানিয়ল।

“মানে কী? আমরা কি এখন কোথাও যাব?”

“ইয়াহ, বেলভিউ।”

“বেলভিউ?” চোখ কপালে উঠলো ইরতিজার।
“নামবো আমি।”

“কেন?”

“তোমার কী ধারণা, আমি শুধু তোমার একার সাথে বেলভিউ যাব?”

“যাবে না? কিন্তু আমি একা তো তোমার সাথে নেই। তোমার ওপাশেই তো আরও একজন বসে রয়েছে।”

ইরতিজা চকিতে একবার নিজের অন্য পাশে তাকালো। তারপর আবার ক্যানিয়লের দিকে ফিরে বললো,
“মজা করছো?”

“তুমি দেখতে পাচ্ছ না? অবশ্য দেখতে না পাওয়ারই কথা। এদের যে দেখতে পাওয়া যায় না। অনুভব করতে হয় এদের অস্তিত্ব।” শেষের কথাটা বলতে বলতে ক্যানিয়লের কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে আসছিল।

“আমি কোনো কিছু অনুভব করতে পারছি না, আর অনুভব করতে চাচ্ছিও না। দরজা খুলে দাও, নামবো।”

“নেমে যাবে বলে কি তোমাকে গাড়িতে উঠতে বলেছি? উঠেছো যখন চুপচাপ বসে থাকো। নয়তো চুপচাপ রাখারও ব্যবস্থা আছে আমার কাছে।”
ক্যানিয়ল সামনের একটা ড্রয়ার খুলে দেখালো। যেখানে ছোটো একটা ধারালো ছু/রি শোভা পাচ্ছে।
“আশা রাখি এটাকে নিশ্চয়ই তুমি ভুলে যাওনি।”

ইরতিজা চুপচাপ হয়ে গেল। ভয় পেয়ে চুপ হয়েছে এমনটা না, এমনিতেই চুপ হয়ে গেছে সে। এমন পা/জি একটা ছেলের প্রেমে পড়েছে ভাবতেও লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসছিল তার। হুট করে আফসোস বোধও করলো। আফসোস বোধের কারণ, ক্যানিয়লের কথা অনুযায়ী ওর কাছে আসতে গিয়ে সে বিরিয়ানি মিস করেছে।

গাড়ি বেলবিউতে প্রবেশ করার পর সোজা চলে এলো বেলভিউ ডাউনটাউন পার্কে। ইরতিজার এই পার্কে ঘুরতে আসার ইচ্ছা হয়েছিল আরও অনেক আগেই। কিন্তু সেখানে সে এসেছে আজ অনেক অনেক দিন পর। তাও কি না আবার অনাহুতভাবে।
বেলভিউ ডাউনটাউন পার্কটি ২০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। যা ওয়াশিংটন, সিয়াটলের একটি শহরতলির বেলভিউ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। পার্কটিতে একটি বৃত্তাকার বলয় রয়েছে, যার চারপাশে একটি পরিখা এবং হাঁটার পথ রয়েছে। এটি উত্তরে বেলভিউ স্কয়ার মল, পূর্বে বেলভিউ ওয়ে এবং দক্ষিণে প্রধান রাস্তার মধ্যে অবস্থিত।
পার্কের পশ্চিম সীমানা বরাবর একটি পার্কিং লট নির্মিত। পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মিত একটি বিশ্রামাগার এবং শিশুদের খেলার জায়গা। পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে নামার পর ক্যানিয়ল ইরতিজাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো একবার। ইরতিজার মাথায় ভায়োলেট রঙের হিজাব। পরনেও একটা ভায়োলেট কুর্তি। নিজের প্রিয় ভায়োবিন ফুলদের রঙে ইরতিজাকে দেখতে পেয়ে হঠাৎই ভীষণ ভালো লাগলো তার। হাতের ভায়োবিন ফুলগুলো ইরতিজার হাতে দিতে দিতে বললো,
“চেয়েছিলাম আজ শুধু এই ফুলগুলো সঙ্গে নিয়ে ঘুরবো, কিন্তু হুট করে এদের রানিও সঙ্গে চলে এলো। ভায়োবিন ফুলদের রানি মিস ভায়োলেট কুইন, ভায়োবিনদের রঙে ভালোই মানিয়েছে তোমায়। আজ আমার সঙ্গে দুই সঙ্গী আছে। এক এই ভায়োবিন, আর দ্বিতীয় তাদের রানি! আমি এখন আর একা নই। আমার বিষাদ আকাশেও এখন একটা নক্ষত্র দেখা যায়।”

বলে ভারি মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে ওদিকটায় হেঁটে যেতে লাগলো ক্যানিয়ল।
এদিকে ইরতিজার মন ভরে উঠলো শীতল অনুভূতির ছোঁয়ায়। এই অনুভূতিতে ভালো লাগার ঢেউ রিমঝিম নৃত্যের উল্লাসে মেতে উঠলো। সে তাকালো হাতের ভায়োবিন ফুলগুলোর দিকে। মনে মনে ভাবলো, ক্যানিয়লের বিষাদ আকাশে যে নক্ষত্রটা দেখা যায় সেটা কি সে? ইরতিজার মনে হলো ক্যানিয়লের ওই কথাটায় সে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ডটা দারুণ সুন্দর। এটা বাচ্চাদের জন্য হলেও বড়োদের উপস্থিতিও এখানে কম নয়। আজকে ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের সমাগম বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইরতিজা ঘুরে ঘুরে দেখছিল। এর ভিতর সাত-আট জনকে নজরে পড়লো যাদের দেখে মনে হলো এরা ভারত অথবা বাংলাদেশের অধিবাসী হবে। প্লে গ্রাউন্ডে পাশাপাশি দুটো দোলনা ছিল। ক্যানিয়ল একটায় গিয়ে বসলো, ওর দেখাদেখি ইরতিজাও কিছুক্ষণ বসেছিল। এরপর ওরা গেল লেকের ওদিকটায়। গোলাকার একটা জায়গা নিয়ে অনেকটা জলে বিস্তীর্ণ এলাকা এটা। লেকের পাশ দিয়েই ওয়াকওয়ে চলে গিয়েছে পুরো লেককে প্রদক্ষিণ করে। ওরা কিছু সময় হাঁটলো লেকের পাড় ধরে। আরও অনেকে হাঁটছিল। বেঞ্চিও আছে একটার থেকে আরেকটা খানিক পরিমাণ দূরত্ব রেখে। গাছের ছায়ায় ছিল বেঞ্চিগুলো। ক্লান্ত হয়ে গেলে বসে যাও ওই বেঞ্চিতে। কোনো বাধা নিষেধ নেই।
আজকে একটু বেশি ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। যদিও সূর্য পূর্ণ আলো দিয়ে যাচ্ছে অবিরাম। এখানে একটা ডগ কমিউনিটি আছে। সেখানটায় গেল এরপর।
এসে দেখা গেল এখানে প্রায় সকলের কাছেই ডগ রয়েছে।
ক্যানিয়ল ইরতিজাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে কোথায় যেন গেল।
ইরতিজা আশপাশটা দেখছিল। সকলের কাছেই সুন্দর দেখতে কুকুর রয়েছে। অনেকগুলো তো এমন সুন্দর যে মনে হয় ওগুলো কুকুর নয়, কোনো পুতুল।
ক্যানিয়ল কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে বললো,
“চলো।”

“এখনই ফিরে যাব?”

“তো? সবই তো ঘুরে দেখা হয়েছে। আর কী দেখা বাকি আছে?”

ইরতিজা কথা না বাড়িয়ে বললো,
“না, কিছু বাকি নেই।”

পার্কিংয়ে এসে ওরা গাড়িতে উঠলো। ইরতিজা যেতে যেতে পার্কের নামটাকে গভীর চক্ষুতে দেখছিল। আসলে এখানের কোনো কিছুই ভালো করে দেখা হয়নি তাদের। অথচ ক্যানিয়ল বললো সবই তো ঘুরে দেখা হয়েছে! যেদিক দিয়ে ওরা এসেছিল গাড়িটা সেদিকে না গিয়ে বরং উল্টো দিকে যাচ্ছে। ইরতিজা বিষয়টা লক্ষ করে বললো,
“এদিক দিয়ে যাব আমরা?”

“আমরা তো যাচ্ছি না।”

“মানে?”

“অন্য একটা জায়গায় যাব আমরা।”

“কোন জায়গা?”

________________

মাঝারি ধরনের একটা ট্রি হাউজ। সুন্দর করে সব পরিপাটি করে রাখা এই হাউজের ভিতর। সব কিছুই চকচকে পরিষ্কার। হাউজটির মালিক এখানে খুব একটা না আসলেও মনে হয় যেন এখানে কারো নিয়মিত বসবাস। আসলে এটা পরিপাটি করে রাখার জন্য লোক নিয়োগ প্রাপ্ত আছে। ক্যানিয়ল এখানে আসার আগে তাদের জানিয়ে রাখে। আর তারা সবকিছু এমন সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে।
এই ট্রি হাউজটা ক্যানিয়লের। ওর নামেই উইল করা। রেডমন্ডে যে ট্রি হাউজটা রয়েছে সেটা মাদার সোফিয়ার প্রোপার্টি। ওটা মাদার সোফিয়ার নামে হলেও বলতে গেলে সেটা এক প্রকার ক্যানিয়লেরই। ক্যানিয়লের আসলে সব সময় এক জায়গায় থাকতে ভালো লাগে না। তাই থাকার জন্য এমন অনেক জায়গা রয়েছে ওর। যখন যেখানে খুশি সেখানে এসে থাকতে পারে। এন্ডারসন হাউজটাও মূলত মাদার সোফিয়ার। যেটা সে ক্যানিয়লের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ আগে ইরতিজার কাছে কল এসেছিল বাসা থেকে। বাবা-মা দুজনই কল করেছিল। কোথায় আছে জানতে চেয়েছিল সেটা। বেলভিউ এসেছে জানায়নি। বলেছে এক ফ্রেন্ডের সাথে গাম ওয়াল ঘুরতে গিয়েছে। মিথ্যাটা না বলে উপায় ছিল না। সে চায়নি এটা নিয়ে কোনো প্রকার কথাকথি হোক।

ক্যানিয়ল আর ইরতিজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। একজন যুবতী মেয়ে, যে মূলত ওরা আসার আগে সবটা পরিপাটি করে রেখেছে সে এসে দুই কাপ কফি দিয়ে গেল। আর স্প্যানিশ ভাষায় কী যেন বলে গেল।
ইরতিজা বুঝতে পারলো না কিছু। কী বলে গেল জানার আগ্রহও জাগলো না তার মাঝে। সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুধু অরণ্যের বুকে এই এক টুকরো বাসভূমিকেই মুগ্ধ আলাপনে দেখতে লাগলো। এই জায়গাটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে তার। লোকালয় থেকে একটুখানি দূরে। এখানে বসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে নিবিড়ভাবে অনুভব করা যায়। পাখির কলকাকলি সবুজের সমারোহের সাথে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে নতুন মাত্রার মুগ্ধতা। শুনতে বেশ ভালো লাগছে ইরতিজার। তার খুব ইচ্ছা জাগলো এমন সবুজে বেষ্টিত অরণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে সে একদিন বৃষ্টি বিলাস করবে। আজ এখন যদি টুপ করে আকাশের পৃষ্ঠদেশ হতে ঝিমঝিম শব্দ করে বৃষ্টি ঝরে পড়তো তাহলে ভালো হতো না? কিন্তু বৃষ্টি তো ঝরবে না আজকে। আকাশ একেবারে ঝকঝকে। আকাশের দিকে তাকালো ইরতিজা। হঠাৎ মনে পড়ে গেল ক্যানিয়লের সেই কথাটাকে,
‘আমার বিষাদ আকাশেও এখন একটা নক্ষত্র দেখা যায়।’
ক্যানিয়লের দিকে চোখ চলে গেল। ছেলেটা দূরের পাহাড়ের চূড়ায় তাকিয়ে কাপে চুমুক দিচ্ছে।
ইরতিজার অন্যমনা চিত্তে গুড়ুম গুড়ুম গর্জনে কেমন এক উন্মাদিনী অনুভূতি ঝিরঝির করে কেঁপে উঠছে। তার সকল জাগতিক চিন্তা ধারাকে ছাপিয়ে গিয়ে সেই উন্মাদিনী অনুভূতিটা ক্যানিয়লকে বলে উঠলো,
“তোমার বিষাদ আকাশে যে নক্ষত্রটা দেখা যায় ওটা কি আমি ক্যানিয়ল?”

হঠাৎ অদ্ভুত একটা প্রশ্ন কানে এসে লাগায় চমকালো ক্যানিয়ল। ইরতিজার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
“কী বলছো?”

“ওই নক্ষত্রটা কি আমি?”

ক্যানিয়লের দৃষ্টি শীতল। বেশ কিছুটা সময় নীরব চেয়ে রইল সে। তখন ওই কথাটা যে সে বলেছিল সেটাই তার মনে ছিল না। নিজেই চিন্তায় পড়ে গেল, তখন কি ওই কথাটা সে বেখেয়ালে বলে ফেলেছিল? যেভাবেই বলুক কথাটা, ওই নক্ষত্রটা যে ইরতিজা সেটা জানে সে। কিন্তু তবুও গলায় দ্বিধা রেখে বললো,
“ওই নক্ষত্রটা তুমিই হবে, আবার নাও হতে পারো। আমি বুঝতে পারছি না সঠিক। তবে ইদানিং একটা নক্ষত্রর অস্তিত্ব টের পাই। একটা নক্ষত্র আছে আমার বিষাদের আকাশে। তোমার কী মনে হয়? তুমিই সেই নক্ষত্র?”

ইরতিজা স্মিত হাসলো। ক্ষুদ্র একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে জানতে চাইলো,
“বৃষ্টি কবে নামবে ক্যানিয়ল?”

ক্যানিয়ল নিজের প্রশ্নের উত্তরের আশায় বসে ছিল। কিন্তু ইরতিজা উল্টো তাকে আরেকটা প্রশ্ন করে সেই প্রশ্নটা চাপা দিয়ে দিলো। ক্যানিয়ল বললো,
“বৃষ্টির খোঁজ কেন নিচ্ছ? বৃষ্টি তো তোমার অপছন্দ!”

“কখনো কখনো অপছন্দের জিনিসগুলোও পছন্দের হয়ে ওঠে। যেমন তুমিই সেরকম একজন।”

ক্যানিয়ল ইরতিজার কথাটা একটু মনোযোগ সহকারে শোনার কারণে বুঝতে সক্ষম হলো। আর বুঝতে পেরেই হাসলো সে। তার হাসি দেখে ভ্রু কুঞ্চন করলো ইরতিজা।
ক্যানিয়ল হাসিটা সরাতে পারলো না ওষ্ঠাধর থেকে। হাসিটা লেগেই রইল। সরল এবং শান্ত কণ্ঠেই প্রশ্নগুলো করলো সে,
“আমি কি তোমার প্রেমে পড়েছি ইজা? না কি তুমি পড়েছো? না কি আমরা কেউই পড়িনি? না কি আবার দুজনই পড়েছি?”

প্রশ্নগুলো শুনে ধক করে উঠলো ইরতিজার বুক। মনে হলো এত কঠিন প্রশ্ন এর আগে কেউ কখনও করেনি তাকে। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে যে আনকমন প্রশ্নগুলো আসতো, সেগুলোও বোধহয় এত কঠিন লাগতো না!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here