একগুচ্ছ রক্তজবা পর্বঃ১৭ (অন্তিম পর্ব)

একগুচ্ছ রক্তজবা পর্বঃ১৭ (অন্তিম পর্ব)
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

সাদাফ রুমে এসে দেখে সাবিহা ঘরের কোথাও নেই।সাদাফ এবার বুঝতে পারে যে সাবিহা পালিয়েছে।আর সাবিহা এখন যা করেছে তা সবটাই নাটক করেছে।সবটা বুঝতে পেরে সাদাফ রেগে হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে আর বেরিয়ে যায় রুম থেকে।উদ্দেশ্য সাবিহাকে খুঁজে বের করা।

অন্যদিকে আমি ছুটে চলেছি রাস্তা দিয়ে,কোথায় আছি,কোন দিক দিয়ে বাড়িতে যাব কিছু বুঝতে পারছি না।শুধু একটা কথাই আমার মাথায় ঘুরছে যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে আমাকে।কোন দিকে না তাকিয়ে শুধু দৌড়ে চলেছি,বেশ অনেকক্ষণ দৌড়ানোর পর আমার পিছনে একটা গাড়ির আওয়াজ পাই।সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে যাই আমি,গাড়িটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আমি হাতের ইশারায় কিছু বলব তার আগেই কেউ দরজা খুলে আমাকে গাড়ির ভিতরে নিয়ে ফেলে।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি,হঠাৎ পরিচিত একটা গলার আওয়াজে চোখ খুলে দেখি সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলি,সাদাফ এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“আমাকে এভাবে বোকা বানিয়ে ফাঁকি দিয়ে চলে আসবে সেটা ত হতে দিচ্ছি না মিসেস সাদাফ তাহসান।ভেবেছিলাম তুমি ক্ষমা করা না অবধি তোমাকে আমার কাছে রাখব তারপর বাড়িতে চলে যাব।আর আমারও দেশের বাইরে একটা কাজ আছে কিছুদিন পর ত সেটার জন্য চলে যাব।কিন্তু এখন তুমি যা করলে তাতে করে আমি সেটা আর করব না।কারন আমি চলে গেলেই তুমি আবার পালাবে,আর সেটা হতে দিব না।তোমার সাথে সংসার করতে চাই আমি।আমি বুঝেছি যে মানুষ বিয়ে একবারই করে,তাই তোমাকে আর ছাড়ব না তোমার সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।তাই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে অন্য দেশে চলে যাব।তোমার পাসপোর্ট,ভিসা সব তোমার বাড়ি থেকে আনিয়ে ফেলব এ কয়দিনে।তারপর দেখব তুমি কীভাবে পালাও,সারাক্ষণ আমার চোখে চোখে রাখব।তুমি যা শুরু করেছ তাতে করে সবটা এত সহজে হবে না।তাই আমাকে একটু বাঁকা পথ অবলম্বন করতে হল।”

কথাগুলো এক নাগাড়ে সাদাফ বলে থামে,আর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আমার নাকে চেপে ধরে।আমি কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে যখন আর পারি না তখন হাল ছেড়ে দেই।আর কিছুক্ষণ পর ডলে পড়ি,উনি সেটা দেখে আমার কপালে চুমু একে আমাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে উনার,বেশ অনেকক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখার পর উনি পকেট থেকে ফোন বের করে।আর কাউকে ফোন লাগায়,ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করলে উনি বলে উঠে।

“দোস্ত ধন্যবাদ আমাকে বুঝানোর জন্য,আমি সাবিহাকে ছাড়ব না দোস্ত।আমি বুঝতে পেরেছি সাবিহার জন্য আমার মনে ফিলিংস আছে।সাবিহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমি এক অন্যরকম সুখ অনুভব করছি।”

“যাক অবশেষে তুই বুঝলি,তা এখন কী করবি?”

“এখন আর কী সাবিহাকে নিয়ে ডুবাই যাব,ওখানে আমার বিজনেস নিয়ে কাজ আছে।ত ওকে সাথে নিয়েই যাব,কারন আজ পালাবার চেষ্টা করেছে।ত আমি চলে গেলে ও পালানোর চেষ্টা করবে।তারপর ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হবে।জানিসই ত অর ভাই একটা জল্লাদ অর কাছেও যেতে দিবে না তাই সাথেই নিয়ে যাব।আর আমার সাথে নিয়ে গেলে আমার সাথে সবসময় থাকলে হয়ত অর মন একটু নরম হবে।ত সবদিক বিবেচনা করে মনে হল ওকে সাথে নিয়ে যাওয়াই ভালো।”

“হুম একদম ঠিক বলেছিস,তোর সিদ্ধান্ত একদম সঠিক।চালিয়ে যা দোস্ত আমি তোর পাশে আছি,কোন সাহায্য লাগলো বলিস।”

“হুম তোর সাহায্য ত লাগবেই,আর আজই লাগবে।”

“কী সাহায্য লাগবে বল আমাকে?আমি চেষ্টা করব আমার সাধ্য মতন।”

সাদাফ বাঁকা হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাবিহার বাড়িতে গিয়ে অর বাবাকে বুঝাতে হবে তকে।আর সাবিহার পাসপোর্ট,ভিসা যা আছে সব উনার থেকে নিয়ে আসতে হবে।”

রকিবুল সাদাফের কথাশুনে একটা ঢোক গিলে বলে।

“অর বাবার কাছে তোর কথা বললে আমাকে পায়ের জুতা খুলে মারবে।”

সাদাফ হাসল আর হেসেই আবারও বলে উঠল।

“মারবে না,উনাকে ভালো করে বুঝালেই বুঝবে।আর তুই খুব ভালো করেই বুঝাতে পারিস সেটা আমি জানি।ত কোন বাহানা নয় তুই আজ নয় কালই যাবি সাবিহার বাবার সাথে কথা বলতে।”

“আচ্ছা দোস্ত যাব আমি।”

“আচ্ছা এখন রাখি তবে।”

“আচ্ছা,ভালো থাকিস আর সাবিহারও খেয়াল রাখিস।”

“হুম।”

কথাটা বলেই সাদাফ ফোনটা রেখে সাবিহার দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে।

এক ঘন্টা পর,,,

আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি আগের সেই রুমটায় শুয়ে আছি।আমার বুঝতে বাকি রইল না যে সাদাফই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।আমি শোয়া থেকে উঠেই দেখতে পাই সাদাফ একটা চেয়ারে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি রেগে উনাকে হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“এসবের মানে কী?কেন করছেন এসব?”

সাদাফ বসা থেকে উঠে আমার পাশে বসে আমার হাতটা তার মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।

“আমি তোমাকে আমার সাথে চাই সাবিহা।সারাজীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই।তুমি কী পারো না আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে বাকি জীবনটা আমার সাথে কাটাতে!”

সাদাফের এমন কথাশুনে আমার সারা শরীর শিউরে উঠে।পরক্ষণেই উনার আগের করা সেই নাটকের কথা মনে পড়ে যায়।আমি উনার থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে হাতের ইশারায় বলি।

“ক্ষমা করব যাতে আমাকে আবারও ঠকাতে পারেন তাই না!আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না আর না আপনার সাথে থাকব।”

আমার কথাশুনে সাদাফ এবার রেগে যায় আর বলে উঠে।

“জানতাম তুমি সোজা কথায় মানবে না তাই আমাকেও বাঁকা পথ অবলম্বন করতে হবে।”

কথাটা বলেই সাদাফ ঘর থেকে চলে যায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে।আর আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।

“উনার এমন কাজে আমি সত্যি বুঝতে পারছি না উনি ছলনা করছেন নাকি সবটা সত্যি।কিছু বুঝতে পারছি না আমি।”

এসব ভেবে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।ঘুম ভাঙ্গে সাদাফের ডাকে।উনি রাতের খাবার নিয়ে এসেছেন,আমি খাব না বললে উনি জোড় করে খাইয়ে দিয়ে উনি নিজেও খেয়ে নেয়।আর আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।আমি ছোটার চেষ্টা করলে উনি ধমকে বলে উঠে।

“চুপচাপ ঘুমাও নয়ত চুমু দিয়ে দিব।”

তারপর আর কিছু বলি নি আমি ওমনি ঘুমিয়ে পড়ি।পরেরদিন সকালে উনি আমাকে সকালের খাবার রুমে দিয়ে কোথায় যেন চলে যায়।ফিরে দুপুর গড়িয়ে বিকালে,আর এসেই আমাকে কোলে তুলে হাঁটা দেয়।আমি নামার চেষ্টা করলে উনি ছাড়ে না,ওভাবেই আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে আর চোখটা বন্ধ করে দেয়।আমি কিছু বুঝতে পারছি না উনি ঠিক কী করতে চাইছে।
বেশকিছুক্ষন পর গাড়ি থামে আর উনি আমাকে আবারও কোলে তুলে হাঁটা দেয়।আর একটু পর আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয়।আমি তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই,উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে যেটা ছাদের উপরে।চারপাশটা খুব সুন্দর করে সাজানো,আমি অবাক চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে চলেছি তখন বেলুন ফাটানোর আওয়াজে পিছন ফিরে তাকিয়ে আরো অবাক হয়ে যাই।আমার পিছনে আমার আর সাদাফের পুরো পরিবার।কিন্তু এখানে সাদাফ নেই,সবাইকে এখানে দেখে আমার চোখের কোনে পানি জমা হয়।সেটা দেখে সাদাফের আব্বু এগিয়ে এসে মাথায় হাত রেখে বলে উঠে।

“কাঁদিস না মা,তোর কাঁদার দিন শেষ।আজ থেকে তোর সুখের দিন শুরু।”

কথাটা বলে উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে চলে যায়।তখন সাদাফ হাতে একগুচ্ছ রক্তজবা ফুল নিয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠে।

“একটা শেষ সুযোগ দিবে আমাকে?শেষ বারের মত একটু বিশ্বাস করবে কী আমায়?তোমাকে ভালাবাসার অধিকার দিবে কী আমায়?”

কথাগুলো বলে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে উওরের আশায়।আমার চোখের কোনে ততক্ষণে জল জমা হয়ে গেছে।আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি,উনার এসব কথাগুলো বিশ্বাস করতে বড্ড ইচ্ছে করছে।কিন্তু আবারও সেই ঠকানোর কথাটা মনে হলে বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠছে।আমি যখন এসব ভাবনায় মশগুল তখন পাশ থেকে সবাই বলে উঠে শেষ সুযোগ দেয়ার জন্য।তারপরও আমি কিছু না বললে তুষার ভাইয়া আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে।

“সবাইকেই একটা শেষ সুযোগ দেয়া দরকার বোন,আর তুইও ত সাদাফকে ভালবাসিস।তাই ভালাবাসার মানুষকে শেষ একটা সুযোগ দিয়ে জীবনটা নতুন করে সাজিয়ে নে বোন।”

আমি অবাক চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালে চোখের ইশারায় বলে মেনে নিতে।আমিও মুখে হাসি টেনে সাদাফের হাত থেকে রক্তজবা ফুল গুলো নিয়ে নেই।তখন উনি বসা থেকে উঠে আর জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।আমাদের এভাবে দেখে সবাই হাসিমুখে স্থান ত্যাগ করে।

#সমাপ্ত,,,

(বিঃদ্রঃ গল্পটা অন্য রকম ভাবে সাজানোর ইচ্ছে ছিল।এই গল্পটার মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরার ইচ্ছে ছিল খুব।কিন্তু আমি পারলাম না,গত ২৬ তারিখ পড়ে গিয়ে কানের পাশে আর হাতে কেটে যায় অনেকটা।যার জন্য এতদিন গল্প দেয়া হয় নি,কাটা জায়গা শুকালেও কানের পাশের ব্যাথাটা সারে নি।বেশিক্ষণ ফোন টিপতে পারি না,মাথা খুব খারাপ লাগে।আর কানও খুব ব্যাথা করে,তাই এতদিন সবাইকে অপেক্ষা করিয়েছি।সবাইকে অপেক্ষা করাতে নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগছিল তাই গত পাঁচদিনে অনেক কষ্টে এতটুকু লিখেছি।জানি তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য এই পর্বটা অনেক খাপছাড়া লাগছে তার জন্য দুঃখিত আমি।আর এখানেই সমাপ্ত টেনেছি,কারন আমার পক্ষে গল্পটা এখন কন্টিনিউ করা অসম্ভব।আমার শরীর শায় দিচ্ছে না গল্পটা চালিয়ে যাওয়ার।তাই এখানেই ইতি টানলাম,সবাইকে এতদিন অপেক্ষা করানোর জন্য আমি খুবই দুঃখিত।পারলে মাফ করবেন সবাই,আর আমি পুরোপুরি সুস্থ হলে ইনশাআল্লাহ নতুন গল্প নিয়ে হাজির হব।
রিচেক করা হয় নি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here