একগুচ্ছ রক্তজবা পর্বঃ৪
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
“তুমি এখানে!এই ঘরে কী করছো?”
সাদাফ লাফিয়ে খাট থেকে নামে আর রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেগে সাবিহাকে প্রশ্নটা করে।
অন্যদিকে আমি কারো চিৎকারে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠি।আর উনাকে এখানে দেখে এতটাই অবাক হয়েছি যে কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি।শুধু ড্যাবড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,উনি সেটা দেখে এবার ধমকে উঠে।
“এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন হে?যা জিজ্ঞেস করছি তার উওর দেও।এখানে কী করছো তুমি?”
আমি উনার ধমকে কেঁপে উঠি,আর হাত দিয়ে ইশারা করে কিছু বলতে গেলে উনি উনার হাত উঠিয়ে বাঁধা দিয়ে আবারও ধমকে বলে উঠে।
“এই ইশারা টিশারা একদম করবে না।যা বলার ফোনে টাইপ করো,তোমার ইশারা গুলো জাস্ট বিরক্ত লাগে আমার।”
উনার কথায় আমার খুব রাগ হল।
“ইশারা করে কী শখে কথা বলি আমি!কথা বলতে পারি না বলেই ত হাতের ইশারায় বুঝানোর চেষ্টা করি কী বলতে চাইছি।কিচ্ছু বলব না ফোনেও টাইপ করব না,খাতায়ও লিখব না আর না হাতের ইশারায় কিছু বলব।একদম চুপ করে বসে থাকব,বয়েই গেছে আমার উনার ধমক খেয়ে বর্ননা দিতে যে এখানে কী করছি!”
কথাগুলো নিজ মনে আওড়ে আমি এবার খাটে বসে পড়লাম।আর খাটে বসে আড়চোখে উনার দিকে তাকালে দেখতে পাই উনি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বালিশ ঠিক করে যেই না শুতে যাব ওমনি উনি আবারও ধমক দিয়ে বলে উঠে,,,
“এই একদম এখানে শুবে না,যাও এই রুম থেকে।নিশ্চয়ই আমাকে ফলো করে এখানে চলে এসেছো!কী নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা একটা ছেলের রুমে এসে কীভাবে তার পাশে শুয়ে পড়ে!”
উনার কথায় এবার আমার আর শয্য হল না,বসা থেকে দাঁড়িয়ে রেগে হাতে ইশারা করে কিছু বলতে যাব।তার আগেই উনি আমার হাতে উনার ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“যা বলার টাইপ করে বলো।”
উনার এমন কাজে আমার রাগটা যেন আরো বেড়ে গেলো।তাই রেগে উনার ফোনটা উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে উনাকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দরজা দিয়ে দিলাম।
সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে ঘটনা কী ঘটেছে সেটা বুঝতে সাদাফের একটু সময় লাগল।যখন বুঝতে পারল তাকে সাবিহা রুম থেকে বের করে দিয়েছে তখন সাদাফ দরজা ধাক্কাতে শুরু করে আর রেগে বলতে থাকে।
“হেই ইউ তোমার সাহস হল কী করে এই সাদাফ তাহসিনকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার।আমার বাড়ি আমার ঘর আর সেই আমাকেই ঘর থেকে বের করেছো তুমি!দরজা খুলো তুমি তারপর তোমাকে বুঝাব এই সাদাফ তাহসিন কী?দরজা খুলো বলছি নয়ত আমি দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকব।”
কথাগুলো বলে সাদাফ দরজায় প্রতিনিয়ত লাথি দিয়ে চলেছে।
আর আমি উনার এমন কথাশুনে আশেপাশে কাগজ আর কলম খুঁজছি।একটা সময় পেয়েও যাই,আর উনি এক নাগাড়ে দরজা ধাক্কিয়েই চলেছে।থামার নাম গন্ধও নাই,আমি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে লেখা শুরু করি।
“For your kind information এটা আমার শ্বশুর বাড়ি,আমার শ্বশুরের টাকায় এ বাড়ি হয়েছে।আপনার টাকায় না,ত এটা নিজের বাড়ি বলা বন্ধ করুন আর বলুন বাবার বাড়ি।আর নিজের টাকায় বাড়ি করে দেখান তারপর বলবেন কথাটা।
আর আমি এই বাড়ির বড় বউ।আপনার যতটা অধিকার ঠিক ততটা অধিকার আমারও আছে।আর এই বাড়ির যেখানে খুশি আমি সেখানে যেতে পারি আমার সে অধিকার আছে।আর আমি আপনার আগে এই ঘরে এসেছি তাই আমি আজ এই রুমেই থাকব।কারন আপনার সাথে একই ঘরে থাকার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।যে আমার সাথে এক টেবিলে বসে খেতে চায় না,এক বেডে শুতে চায় না তার সাথে একই ঘরে থাকার ইচ্ছে নেই আমার।আর আমার আপনাকে ফলো করে এই ঘরে আসতে বয়েই গেছে।আমকেই ফলো করে অন্যরা আর আমি ফলো করব আপনাকে!
নো,নেভার,কাভি নেহি।
নিজে যে আমাকে ফলো করে এখানে এসেছেন বুঝি না আমি!ভালো করে বলছি দরজা ধাক্কানো বন্ধ করুন আর এখান থেকে ফুটুন।নয়ত আব্বুকে ডাকতে বাধ্য হব,আর আব্বু আসলে আপনার কী হবে সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।”
কথাগুলো লিখে দরজার নিচ দিয়ে বাইরে ঠেলে দিয়ে লাইট অফ করে বেডে এসে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লাম।আমি ডিনার করে সাথে সাথে এ ঘরে এসেছি আর বিছানা গুছিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি ঘর অন্ধকার,লোডশেডিং হয়েছে ভেবে আমিও বেডে এসে শুয়ে পড়ি।আর তখনই উনি এভাবে চিৎকার করে উঠে।
অন্যদিকে সাদাফের চোখ যায় নিচে যেখানে কাগজটা আছে।সাদাফ ভ্রু কুঁচকে কাগজটা হাতে নেয়,আর তাতে যা লেখা আছে সেগুলো পড়ে আর সাদাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
“আমাকে থ্রেট করা তাই না,এই ঘরে থাকবে ত!থাকো তুমি ভালো করে এই ঘরেই থাকো,এই ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করছি আমি।”
কথাটা বলেই সাদাফ দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দেয় আর সেখান থেকে চলে যায়।একটু পর হাতে তালা আর চাবি নিয়ে আবার সেখানে এসে দরজাটা তালা মেরে বাঁকা হেঁসে চাবি হাতের ডগায় ঘুরাতে ঘুরাতে শিস বাজিয়ে চলে যায়।
____________________________________
সকাল ৯ টা বেজে ৪৫ মিনিট,সাদাফ এখনো বেঘোরে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না,বাইরে থেকে একনাগাড়ে সাফা চেচিয়ে চলেছে দরজা খোলার জন্য।সাদাফ কানে বালিশ চেপে ধরে আবারও ঘুমানের চেষ্টা চালায় কিন্তু সে ব্যার্থ হয়।সাফার সাথে এবার সুজনও চেঁচাচ্ছে সাদাফ এবার রেগে কান থেকে বালিশটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে আর বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ায়।
দরজা খুলে রেগে যেই না কিছু বলতে যাবে তার আগেই হুরমুরিয়ে সাফা আর সুজন রুমে ডুকে পড়ে।দুজনে আশপাশে তাকিয়েও যখন সাবিহাকে দেখতে পায় না।তখন সাফা সাবিহাকে ডাকতে ডাকতে ওয়াশরুমে যায় কিন্তু সাবিহা সেখানেও নেই।
“ভাইয়া বউমনি কোথায়?”
সাফার প্রশ্নে চমকে উঠে সাদাফ,তার মনে পড়ে যায় যে সাবিহাকে অন্য রুমে সে গতরাতে তালা মেরে এসেছে।এখন সে কী বলবে?সাফা যদি জানতে পারে সাবিহা রুমে ঘুমায় নি আর সে তাকে অন্য রুমে তালা মেরে রেখেছে।তবে নির্ঘাত তার বাবা জানবে আর তাকে বাড়ি থেকে বের করবে+তেয্যপুত্র করবে।কথাটা ভাবতেই সাদাফের গাঁয়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।সে আমতা আমতা করে বলে উঠে,,
“সাবিহা ত সকালেই ঘুম থেকে উঠে গেছে।”
কথাটা বলেই সাদাফ মনে মনে বলে উঠে।
“আল্লাহ মাফ করো সকাল সকালই মিথ্যা বলে ফেললাম।”
এবার সুজন সাদাফের উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
“সকালে উঠে গেছে মানে?কই বউমনিকে ত দেখলাম না একবারও!”
সাদাফ এবার কিছুটা ধমকে বলে।
“তুই না দেখলে এখন আমি কী করব?তোদের সামনে গিয়ে কী ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলব সাবিহা উঠে গেছে ওকে দেখে নে?”
“তুমি এভাবে কেন কথা বলছো ছোট ভাইয়ার সাথে!ভাইয়া দেখে নি বলেই ত জিজ্ঞেস করেছে,আর আমিও ত বউমনিকে দেখি নি।তাই ত ডাকতে এখানে চলে এলাম,সবাই একসাথে নাস্তা করব বলে।আর তুমি এভাবে রাগ দেখাচ্ছো!”
সাফা কথাটা অভিমান করেই বলে উঠে,আর সুজন সে আর কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।সাদাফ বুঝতে পারে সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে আর সুজনের খারাপও লেগেছে তার কথায়।তাই সাদাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফাকে নরম স্বরে বলে উঠে।
“আরে আমি দেখেছি সকালে ঘর থেকে বের হয়েছে তখন আমিও ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছি।এখন সে কই গেছে না গেছে সেটা আমি জানি না।”
“ভালো করে বললেই পারতে সেটা।”
গাল ফুলিয়ে কথাটা বলেই সাফা ঘর থেকে চলে যায়।আর সাদাফ সাফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর তার মাথায় সাবিহার কথাটা আসে।
“এবার যাই গিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করি,নয়ত আমার কপালেই শনি আছে।কী কাজ আমার!আমিই আটকাই আবার আমিই খুলে দেই।সবই কপাল আমার।”
কপাল চাপড়ে সাদাফ কথাটা বলেই দৌড়ে বের হয় সাবিহাকে যেখানে আটকে রেখেছে সেখানে যাওয়ার জন্য।দরজার সামনে এসে দেখে ঘরে তালা মারা তখন সাদাফের মনে হয় সে তালা মেরে গিয়েছিল আর চাবি আনতে ভুলে গেছে।
“দেৎ তাড়াহুড়ো করতে গেলেই যত ঝামেলা হয়।”
বিরক্তি নিয়ে সাদাফ কথাটা বলে আবারও তার ঘরে দৌড়ে আসে আর চাবিটা নিয়ে আবারও দৌড় লাগায়।
#চলবে,,,