একগুচ্ছ রক্তজবা পর্বঃ৭_৮

একগুচ্ছ রক্তজবা পর্বঃ৭_৮
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

রাতে ডিনার করার জন্য সবাই টেবিলে বসে আছে।আমি আর আম্মু রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে রেখে সবাইকে সার্ভ করে মাত্র বসেছি।তখন সাদাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর টেবিলে রাখা সমস্ত খাবার গুলোর ঢাকনা খুলে খুলে দেখছে।সেটা দেখে আম্মু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,

“কী লাগবে!এভাবে কী খুজছিস বল আমাকে আমি দিচ্ছি।”

“ইলিশ মাছের বড়া খুঁজছি।”

সাদাফের কথায় আম্মু,সাফা,সুজন ভাইয়া অবাক চোখে তাকালেও আব্বু মুচকি হেসে চলেছে।সুজন ভাইয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,,

“ভাইয়া তুই ত ইলিশ মাছই খাস না,আর সে তুই বড়া খুঁজছিস তাও ইলিশ মাছের?”

“খাই না বলে কী খেতে পারব না নাকি!আগে খাই নি কিন্তু এবার থেকে খাব,তোর কোন সমস্যা?”

“না আমার কীসের সমস্যা হবে,কোন সমস্যা নাই।”

সুজন ভাইয়া কথাটা বলেই খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।আর আমি সবটা নিরব দর্শক হয়ে দেখছি।আম্মু এবার সাদাফের প্লেটে একটা বড়া দেয় আর সাদাফও কেমন খুশি হয়ে যায়।বাচ্চারা যেমন চকলেট পেলে খুশি হয় তেমনি সাদাফও বড়া পেয়ে খুব খুশি।উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে খাওয়ায় মনোযোগ দেই আমি।

__________________________________

ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে ড্রয়িং রুম পেড়িয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই চোখ পড়ে সোফায় বসে থাকা সাদাফের উপর টিভি দেখছেন উনি।আমি একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে হাঁটা ধরি তখন সাদাফ পিছন থেকে ডাকে আমায়।আমিও বাধ্য মেয়ের মত উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।উনি হাতের রিমোটটা রেখে পকেট থেকে কতগুলো চকলেট বের করে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে চলেছি!
চকলেট কী আমার জন্য এনেছে!কথাটা মনে হতেই আবারও মনে হল উনি ত আমাকে দেখতেই পারে না৷তবে আমার জন্য কেন চকলেট আনবে?আমার ভাবনার মাঝেই উনি চকলেট গুলো আমার সামনে ধরে আর বলে উঠে।

“এখানে দশটা চকলেট আছে পাঁচটা তুমি রেখে পাঁচটা সাফাকে দিয়ে দিও।”

উনার কথাশুনে এবার যেন আমার চোখ কোটর থেকেই বেরিয়ে আসবে।আমি ঠিক শুনছি ত উনি কী সত্যিই আমার জন্য চকলেট এনেছে!নাকি জেগে থেকে স্বপ্ন দেখছি।আমার মাথা ভনভন করছে এসব ভেবে।
উনি এবার হালকা ধমকে বলে উঠেন।

“এই যে কোথায় হারালে?চকলেট গুলো কী নিবে নাকি আমি এভাবেই ধরে রাখব সারারাত!”

উনার কথায় আমি ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসি আর মাথা দুই পাশে নেড়ে না বুঝাই।আর সাথে সাথে উনার হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে চকলেট গুলো নিয়ে নেই।
আমি এভাবে নেয়াতে উনি মুচকি হাসেন।আমার এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম,একের পর এক ঝটকা খেয়ে চলেছি।এবার আমার সত্যি মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।এত ভালো আচরন করছে উনি!হাসছেন উনি?তাও কার সাথে আমার সাথে?

“চকলেট দিলাম তার জন্য ত একটা ধন্যবাদ পেতেই পারি।আর সেটা যদি হয় Cappuccino Coffee তে লেখা তবে পুরো জমে যাবে।হবে নাকি এক কাপ Cappuccino Coffee হুম!”

ব্যাস আর নিতে পারলাম না হাত থেকে চকলেট গুলো পড়ে যায়।চারদিক যেন ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে শরীরের বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছি না দাড়িয়ে থাকতে।
চোখ বন্ধ করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ার আগেই সাদাফ ধরে ফেলে সাবিহাকে।সাদাফ সাবিহার গালে আস্তে করে থাপ্পড় দেয় আর বিচলিত কন্ঠে ডাকতে থাকে সাবিহাকে।

“সাবিহা,কী হয়েছে তোমার?এই সাবিহা চোখ খোল।”

এভাবে ডাকার পরও যখন সাবিহা চোখ খুলে না তখন সাদাফ জোড়ে জোড়ে সবাইকে ডাকতে থাকে।
সাদাফের এমন গলার আওয়াজে সবাই দৌড়ে বেরিয়ে আসে যার যার ঘর থেকে।
ততক্ষণে সাদাফ সাবিহাকে কোলে তুলে সোফায় শুইয়ে দিয়ে মাথাটা তার কোলে তুলে নিয়েছে।

“কী রে সাবিহার কী হয়েছে?এভাবে এখানে শুয়ে আছে কেন?”

“আম্মু জানি না কী হল?ডাক্তারকে ডাকো আম্মু হঠাৎ কী হল বুঝতে পারছি না আমি!”

“ভাইয়া তুই শান্ত হ,আমি দেখছি কী হয়েছে বউমনির।”

কথাটা বলে সুজন এগিয়ে আসতে নিলেই সাদাফ কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠে।

“তুই কী দেখবি!তুই কী ডাক্তার?সর তুই তোর দেখতে হবে না আমিই ডাক্তারকে কল করছি।”

“সাদাফ তুমি শান্ত হও,আর সাফা যাও ত এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।”

সাফাও তার বাবার কথামত চলে যায় পানি আনতে।আর সাদাফ তার বাবাকে অস্থির হয়ে বলে উঠে।

“আব্বু এমন সময়েও তোমার পানির পিপাসা লেগে রয়েছে?কই ডাক্তারকে কল করবে তা না তোমরা সবাই এমন নিশ্চিন্তে রয়েছো কীভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি!”

আনোয়ার হোসেন কিছু বলবেন তার আগেই সাফা পানি নিয়ে এসে হাজির।উনি আর সাদাফকে কিছু না বলে সাফার থেকে পানি নিয়ে সাবিহার মুখে ছিটিয়ে দেয়।কিছুক্ষণের মধ্যেই সাবিহার চোখের পাতা নড়ে উঠে।সেটা দেখে সাদাফ সাবিহার গালে হালকা চাপড় মেরে আবারও ডাকতে থাকে।

সুজন মুচকি হেঁসে তার বাবার কানে কানে বলে উঠে।

“আব্বু কী ব্যাপার বলো ত!ভাইয়া ত কাল অবধি বউমনিকে শয্যই করতে পারত না আর আজ বউমনি জ্ঞান হারানোতে ভাইয়া এতটা অস্থির কেন হয়ে আছে?”

“সেটা তোমার ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করো।”

সুজন দমে যায়,তার ভাইয়াকে এসব জিজ্ঞেস করলে ঝাড়ি ছাড়া আর কিছু পাবে না।আর তার বাবাকে উল্টো প্রশ্ন করারও সাহস নেই তাই সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়।
একটু পরেই সাবিহা পিটপিটয়ে চোখ খুলে তাকায় আর দেখে তার মাথার কাছে সাদাফ বসা আর তার গালে সাদাফের হাত।সাবিহা হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে,আর সামনে তাকিয়ে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।সাবিহা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়।
মিসেস রোজা এবার সাবিহার কাছে গিয়ে গালে হাত রেখে প্রশ্ন করে।

“কী হয়েছিল?জ্ঞান হারালে কীভাবে?”

আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে আড়চোখে সাদাফের দিকে তাকাই।উনার দৃষ্টিও আমাতে আবদ্ধ আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেলি।আব্বু এবার আম্মুকে হালকা ধমকে বলে উঠেন।

“এখন কী এসব প্রশ্ন করা খুব জরুরি?এসব প্রশ্ন পরে করো এখন সাবিহাকে রেস্ট নিতে দাও আর এক গ্লাস গরম দুধ দাও।সাদাফ সাবিহাকে নিয়ে রুমে যাও।”

সাদাফের সাথে যাওয়ার কথা শুনে আমি আব্বুকে হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“আমি ঠিক আছি আব্বু,আমি একাই যেতে পারব।আর দুধেরও প্রয়োজন নেই আব্বু।”

আব্বু আমার কথা বুঝতে পেরে চোখ রাঙায় আমি মাথা নিচু করে ফেলি।আব্বু এবার আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন।

“তুমি কী বসে থাকবে নাকি যাবে!”

আম্মু এবার আমার পাশ থেকে উঠে চলে যায় রান্নাঘরে।আমি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারি নি।
আম্মু চলে যাওয়ার পর আব্বু সুজন ভাইয়া আর সাফাকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বললে অরাও মুচকি হেঁসে চলে যায়।আব্বু আবারও সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলেন।

“সাবিহাকে রুমে নিয়ে যাও।”

কথাটা বলে আব্বু মুচকি হেঁসে চলে যায় সেখান থেকে।আর সাদাফ তার বাবার কথামত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে উঠেন।

“হাত ধরে উঠে আসো,নয়ত আবার মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আমাকেই দোষী বানাবে।”

আমি উনার দিকে না তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারায় বলি।

“আমি যেতে পারব।”

উনি আমার ইশারা বুঝতে পেরেছে কী না জানি না।আমি কথাটা বলেই উনার দিকে না তাকিয়ে উঠে দাঁড়াই রুমে যাওয়ার জন্য।তখন উনি আমার এক হাত উনার এক হাত দিয়ে ধরে আর আরেকহাত আমার কাঁদে রাখে।
আমি শিউরে উঠি উনার ছোঁয়ায়,কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি।আমি না হেঁটে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি স্থির হয়ে।এই বুঝি আবারও জ্ঞান হারাব আমি,আমার এমন অবস্থা দেখে উনি এবার আমাকে কোলে তুলে নেয়।আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছি উনার এমন হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণে।

#চলবে,,,

বিঃদ্রঃ সাদাফের হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারন কী🤔?

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮

সাদাফ আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে।আমি এখনও অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি এবার আমাকে বেডে বসিয়ে দেয়,আর উনি সমানে পায়চারি করে চলেছে।আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,কী হয়েছে উনার,এমন অস্থির কেন উনি?প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেয়ে চলেছে,উনাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারছি না।কারন উনি ত আমার ইশারা বুঝতেই পারে না।বেশ কিছুক্ষন উনি এমন পায়চারি করে চলেছে,আর আমি সেটা পর্যবেক্ষণ করে চলেছি।হঠাৎ আম্মু দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।আম্মু রুমে ঢুকেই সাদাফ এমন পায়চারি করতে দেখেই উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,,

“কী রে তোর কী হয়েছে?এমন অস্থির লাগছে কেন তকে?সাবিহা ত এখন ঠিকই আছে তারপরও এত অস্থির কেন তুই?”

“আমি ঠিক আছি আম্মু,তুমি দুধটা আমাকে দাও আমি খাইয়ে দিব সাবিহাকে।”

উনার কথা শুনে আমার চোখ কপালে,উনার এ কেমন রূপ দেখছি আমি!আম্মু উনার কথায় দুধের গ্লাসটা দিয়ে আমার কপালে একটু চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।
সাদাফ এবার আমার সামনে এসে দুধের গ্লাসটা ধরে বলে উঠেন।

“সাবিহা দুধটা খেয়ে নাও।”

আমি কিছু না বলে উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।উনাকে বড্ড অচেনা লাগছে,উনি ত এমন নন।বিকালেও ত আমাকে কত কী বলে রাগ দেখাল।আর রাতের খাওয়ার পরই এমন পাল্টে গেলো কীভাবে!এমন হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়ে চলেছে।আমার ভাবনার মাঝেই উনি আমার সামনে মুখোমুখি হয়ে বসেন।আর দুধের গ্লাসটা মুখের সামনে ধরে বলেন।

“এতকিছু ভেবে ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিও না।মাথায় চাপ দিলে নির্ঘাত আবার জ্ঞান হারাবে।ত এত কিছু না ভেবে দুধটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আমি কিছু না বলে উনার দিকে তাকিয়ে থেকেই দুধের গ্লাসটা নিয়ে গ্লাসের দুধ টুকু শেষ করে গ্লাসটা উনার দিকে এগিয়ে দেই।আর উনি মুচকি হেঁসে টিস্যু দিয়ে আমার মুখটা মুছে দিয়ে বলে উঠেন।

“এখানে শুয়ে পড়ো তুমি,আজ আর অন্য ঘরে থাকতে হবে না।দুজন একসাথেই থাকব এবার থেকে।”

আমি অবাক হয়ে হাতের ইশারায় বলি,,,

“একসাথে থাকব মানে?”

উনি হয়ত আমার ইশারা বুঝতে পেরেছে,তাই উনি বলে উঠেন।

“বিয়ের পর স্বামী,স্ত্রী একসাথে থাকে এটাই ত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।”

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার হাত উনার মুঠোয় নিয়ে আবারও বলে উঠেন।

“সাবিহা আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে সংসার করতে চাই অন্য সবার মত।এ কয়দিন তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি তার জন্য ক্ষমা চাইছি।তুমি কী আমাকে ক্ষমা করে স্বামীর দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিবে?”

উনার কথাশুনে আমার চোখের কোনে জল জমা হল।আমি বিশ্বাস করতে পারছি না উনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে।সব কেমন স্বপ্নের মত লাগছে আমার,নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটলাম ব্যাথায় আহহ করে উঠলাম।নাহ এটা ত স্বপ্ন নয় বাস্তব,আমি নিজেকে সামলে উনার দিকে তাকাই।দেখি উনি এখনও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার উওরের অপেক্ষায়।
আমি কী সব ভুলে উনাকে মেনে নিব?বিয়ের রাত থেকে যা হয়ে আসছে সব ভুলে কী নতুন করে জীবন শুরু করব উনার সাথে?
বেশ কিছুক্ষণ এসব ভেবে আমি ঠিক করি উনাকে ক্ষমা করে দিব।কেউ ভুল করলে তাকে প্রথমবার ক্ষমা করে দিয়ে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে হয়।আর আমি তাই করব উনাকে ক্ষমা করে দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করব।আমার ভাবনার মাঝেই উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বলে উঠেন।

“জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,,,

আর কিছু বলতে পারল না সাদাফ,তার আগেই আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠি।

আর সাদাফও সাবিহাকে দু হাতে আগলে নেয় আর সাবিহার আড়ালে বাঁকা হাসে।যে হাসির রহস্য একমাত্র সাদাফ ছাড়া কেউ জানে না।

_____________________________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আমি মুচকি হেঁসে ফ্রেশ হতে চলে যাই,ফ্রেশ হয়ে নিচে রান্নাঘরে চলে আসি।রান্নাঘরে আসতেই আম্মু হাতে খুন্তি নিয়ে এগিয়ে আসেন আর ধমকে বলেন।

” আজ একটা কাজও করবে না,চুপচাপ ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো।রান্না হলে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে যাবে।”

আমি এবার হাতের ইশারায় বলে উঠি।

“আম্মু এমনি বসে থেকে বোর হব শুধু শুধু,তার থেকে ভালো তোমাকে একটু সাহায্য করি।”

আম্মু চোখ পাকিয়ে বলে উঠেন,,,

“একদম নয়,চুপচাপ এখান থেকে যাও।”

আর কী আম্মু আজ আমাকে কোন কাজই করতে দিবে না এটা খুব ভালো করে বুঝে গেছি।তাই আর কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বের হয়ে আসতে নিলেই আম্মু আমার হাত ধরে আটকে দেন।আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই আমার কপালে চুমু একে দিয়ে মুচকি হেঁসে বলেন।

“যাও।”

আম্মুর কাজে আমি হেঁসে ফেলি,আমার মনেই হয় না এই বাড়ির বউ আমি।মনে হয় এই বাড়ির মেয়ে আমি সবাই কত ভালবাসে আমাকে।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই এমন একটা পরিবার পাওয়ার জন্য।
রান্নাঘর থেকে সোজা নিজের রুমে এসে পড়ি।লাগেজ থেকে প্রয়োজনীয় বই,খাতা বের করে ব্যাগে নিয়ে নেই।সাদাফ এখনও ঘুমাচ্ছে,আমি এবার উনার দিকে তাকিয়ে একটা মেরুন রঙের গাউন নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।গোসল সেরে রুমে এসে দেখি সাদাফ নেই,হয়ত উঠে গেছে উনি।
কথাটা ভেবে তৈরি হতে থাকি আমি,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেঁসে চলেছি।সাদাফ আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে কথাটা ভাবতেই খুশিতে নাচতে ইচ্ছে হল।

“এত খুশি কেন?”

কারো গলার আওয়াজে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য রুম থেকে গোসল করে এসেছে বোধহয়।আমি কিছু বলছি না বলে উনি বলেন।

“জিজ্ঞেস করছি এত খুশি কেন?কারন কী?”

আমি এবার হাতে ইশারায় বলি।

“অনেক দিন পর কলেজে যাব ভেবেই খুশি লাগছে।”

মিথ্যা বললাম কারন সত্যিটা বলতে কেমন যেন লজ্জা লাগছে।
উনি আমার কথা বুঝল কী না জানি না উনি আর কোন কথা না বলে রেডি হয়ে নিচে চলে যায়।আমিও রেডি হয়ে উনার পিছন পিছন নিচে চলে আসি।তারপর সবাই নাস্তা করে নেই।নাস্তা প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন কলিং বেল বেজে উঠে।সাফা উঠে যায় দরজা খুলতে,সাফা যাওয়ার একটু পরই হঠাৎ চিৎকার করে উঠে সাফা।আমরা সবাই ভয় পেয়ে ছুটে যাই দরজার কাছে।গিয়ে দেখি সাফা একটা ছেলের চুল টানছে আর বলছে।

“কয়লার বাচ্চা কয়লা এতদিনে তোর আসার সময় হল?ভাইয়ার বিয়েতে তকে কত মিস করেছি জানছ তুই?তুই এখন কেন আসছত,এখন না আসলেও পারতি তুই।”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে সাফা আবারও ছেলেটার চুল টানায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।আর ছেলেটাও হাসতে হাসতে সাফার থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
ছেলেটাকে আমি চিনি না তাই আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করার জন্য পাশে তাকালেই দেখি সবাই মুখ টিপে হাসছে।সবার মুখে হাসি থাকলেও সাদাফের মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে আছে।উনার এমন গম্ভীর ভাবের কোন কারন খুঁজে পেলাম না আমি।
আম্মু এবার হাসি থামিয়ে সাফার কাছে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন।

“সাফা কাব্যকে ছাড়,ছেলেটা কতদিন পর এল আর তুই এমন করছিস?ছাড় ওকে নয়ত তোর কানের নিচে দিব একটা।”

সাফা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে,আশেপাশে যে এতক্ষণ সবাই ছিল বেচারি খেয়ালই করে নি।সবাইকে অর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফা ছেলেটাকে ছেড়ে সরে আসে।এবার ছেলেটা আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে।

“ওপস ফুপি আম্মু তুমি কত্ত কিউট।এই রাক্ষসীর হাত থেকে আমাকে বাঁচালে এটা খবরের হেডলাইনে দিব আমি।একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা রাক্ষসীর হাত থেকে বাচাঁল সাহসী নারী।”

ছেলেটার কথায় বুঝলাম ছেলেটা সাদাফের মামাত ভাই।ছেলেটার কথা শুনে সাফা রাগে ফুঁসছে আর আম্মু খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠেন,আর ছেলেটার কান টেনে বলেন।

“মজা করা হচ্ছে আমার সাথে হুম!”

ছেলেটা আবারও হেঁসে উঠে,হাসতে হাসতেই ছেলেটার চোখ আমার উপরে পড়ে।ছেলেটা এবার হাসি থামিয়ে আমাকে ইশারা করে বলে উঠে।

“এটা নিশ্চয়ই সাবিহা,সাদাফের বউ!”

“সাদাফ ভাইয়ার বউ আর তোমার ভাবি হয়।”

পাশ থেকে সুজন ভাইয়া বলে উঠে।এবার কাব্য নামের ছেলেটা হেঁসে বলে উঠে।

“আমি এসব ভাবি টাবি বলতে পারব না আমি নাম ধরেই ডাকব।কারন বয়সে আমি সাবিহার অনেক বড়।তাই নাম ধরেই ডাকব কী বলো তুমি সাবিহা?”

ছেলেটার কথায় আমি শুধু মাথা নাড়ি আর কী বলব আমি!ছেলেটার থেকে চোখ সরিয়ে আড়চোখে একবার সাদাফের দিকে তাকাই।দেখি উনি পকেটে হাত গুজে নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্লোরে ঘষছে।

#চলবে,,,

বিঃদ্রঃ কাব্যকে মিস করছিলাম তাই নিয়ে এলাম🥳।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here