একটুখানি পর্ব : ৪৮

0
615

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৪৮
কলরব অনেকক্ষণ ধরে কুহুর নাম্বারে ট্রাই
করছে। কল হচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ
রিসিভ করছে না। কলরব ঘড়িতে তাকিয়ে
দেখলো একটা বিশ বাজে। একবার ভাবলো কুহু
বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। আরো আগে ফোন করা
উচিত ছিল। কূজনকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে
দিয়েছে সে। বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে
কলরব রুমের ভিতর উঁকি দিল। ডিম লাইটের
আলোতে দেখলো কূজন উপুড় হয়ে বিছানায়
শুয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ডিম লাইটের নীল
আলোয় কূজনের চেহারা দেখে আরো
বেদনার্ত মনে হল কলরবের। ছোট্ট একটা
নিঃশ্বাস ফেলে কলরব বারান্দায় গিয়ে
বসলো। কলরবের হঠাৎ সিগারেট টানতে খুব
ইচ্ছে হলো। পর মূহুর্তেই নিজের ইচ্ছা দমিয়ে
ফেললো সে। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্হায়
বন্ধুদের সাথে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলে
সিগারেট টেনেছিল। বাসায় ফিরতেই মা
দেখে কলরবকে কিছু বলেনি শুধু ফ্যাচফ্যাচ
করে কেঁদে কেটে বাড়ি মাথায় তুলে
নিয়েছিল। ইরিন তখন ছোট। মায়ের কান্না
দেখে খুব ভয় পেয়েছিল। আর বাবা বাসায়
এসে মায়ের কান্নাকাটি দেখে অস্হির হয়ে
খুব মেরেছিল কলরবকে। কলরবের বাবা
জীবনেও কাউকে কোনোদিন বকা দেয় না।
নিতান্তই নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকেন। কলরব
সেদিন বাবার সে রূপ দেখে খুব ভয় পেয়েছিল।
তারপর থেকে আর কোনোদিন সিগারেট
হাতেও নেইনি। ভার্সিটিতে রঞ্জুরা কতো
বলতো। কিন্তু কলরবের কাছে বন্ধুদের আবদার
নাকোচ হয়ে যেতো। কলরব উল্টাপাল্টা
চিন্তা ভাবনা ছেড়ে আবার কল করলো কুহুকে।
পিহু ডাইনিংটেবিলে বসে পড়েছে এতক্ষণ।
বড্ড ঘুম পেয়েছে তার তাই বই খাতা গুটিয়ে
বেডরুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে যেয়ে
দেখলো রুমে ডিম লাইটও জ্বালেনি। পিহুর
আবার অন্ধকার দেখলেই ভয় শুরু হয়।
তাড়াতাড়ি করে ডিম লাইট জ্বেলে
ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো পিহু। ব্রাশ
করে রুমে এসে শুয়ে পড়লো কুহুর পাশে। কুহু
ঘুমের ঘোরেই জড়িয়ে ধরলো পিহুকে। পিহু
বিরক্ত হয়ে কুহুর হাত সরিয়ে দিয়ে বিড়বিড়
করে বলল,
– আপুণি যে আমাকে ধরে কি মজা পায়
আল্লাহ মালুম। কুহুর থেকে কিছুটা দূরে সরে
পিহু উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে চোখ বুজলো
সে। তারপর নিজেই আবার কুহুর দিকে কিছুটা
সরে এলো কিন্তু কুহুকে পিঠ দিয়েই শুয়ে
রইলো। পিহু কুহুর দিকে সরে আসতেই কুহু আবার
পিহুকে জড়িয়ে ধরলো। পিহু মুচকি হাসলো।
মনে মনে বলল,
– আর তো কয়েকটা দিন তারপর আর আমাকে
জ্বালাতে পারবি না।
আমি এই বিছনায় রাজত্ব করবো। আচ্ছা
আপুণির বিদায়ের দিন আমি কি কাঁদবো?
হয়তো! কিন্তু মানুষ যেভাবে মরা কান্না শুরু
করে সেরকম কিছুই পিহুর দ্বারা সম্ভব না। তবে
শিউর আপুণি যে কাঁদতে কাঁদতে এলাকায়
বন্যা করে ফেলবে। বেচারা কলরব ভাই বিয়ের
রাতে টিস্যু বক্সের সাথে রোম্যান্স করবে।
পিহুর হঠাৎ খুব হাসি পেল। তারপর বিড়বিড়
করে বলল,
– ধুর! এখন ঘুম আসছে না। অথচ পড়ার সময় মনে
হয়েছে ঘুমের নানী পিহু রাণী। আর একটু পড়লে
ম্যাথ চ্যাপ্টারটা শেষ করে ফেলতে পারতো।
কিছুতেই ঘুম আসছে না পিহুর। বাধ্য হয়ে
মোবাইলটা কোথায় রেখেছে মনে করতে
লাগলো। মনে পড়লো মোবাইলে তো চার্জই
নেই। পিহু বিছানা ছেড়ে উঠে ইয়ার ফোন আর
কুহুর মোবাইল হাতে নিল। মোবাইল হাতে
নিতেই দেখলো একুশটা মিসড কল তাও
কলরবের মোবাইল থেকে। এর মধ্যে আবার
কলরব ফোন করলো। পিহু ধরলো না। ধরে কি
বলবে সে? ভেবে না পেয়ে ইগনোর করলো।
কিন্তু বারবার কলরবের ফোন আসছে। মোবাইল
বন্ধ করতে যেয়েও বন্ধ করলো না। পিহু
একটুখানি ভেবে দেখলো তারপর হিসাব
মিলিয়ে নিলো। নিশ্চয় কলরব আর কুহুর মাঝে
কিছু হয়েছে নয়তো কুহু তখন রাগতো না। আর
কলরবই কেনো এমন পাগলের মতন ফোন করছে?
পিহু না চাইতেও ফোন রিসিভ করলো। এখন
যদি ফোন রিসিভ না করে তাহলে কলরব নিশ্চয়
রাগ করলেও করতে পারে। তাই ফোন ধরেই এক
নিঃশ্বাসে বলল,
– ভাইয়া! আসসালামু আলাইকুম। আপু ঘুমুচ্ছে আর
আপুকে ঘুম থেকে ডেকে তুললে আপু আমাকে
বকা দিবে।
কলরব ওপাশ থেকে পিহুর কথা শুনে বলল,
– ঠিক আছে মৌটুশী গুড নাইট। ওয়ালাইকুম
আসসালাম।
তারপর ফোন কেটে দিল সে। পিহু কলরবের
কথা শোনে ভ্যাবলি হয়ে রইলো কতক্ষণ।
তারপর মোবাইল রেখে কুহুকে জড়িয়ে ধরে
শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে বলল বেশ মজার
একটা দুলাভাই পেয়েছি।

ইরিনের ডাকে কূজনের ঘুম ভেঙেছে। কূজন
বিছানায় উঠে বসেই বলল,
– সোনার হরিণ কাল রাতে বোধহয় জ্বর
এসেছিল আমার।
– হুম এসেছিলই তো। ভাইয়ার কাছে সকালেই
শুনলাম।
তারপর ইরিন কূজনের কপালে হাত রেখে বলল,
– এখন তো নেই।
কূজন মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
– কলরব ভাই কোথায়?
– ভাইয়া তো ভাবীদের বাসায় গেছে।
– ওহ্!
– এই ভাইয়া বিছানা ছেড়ে উঠো তো। দেখো
এগারোটা বাজে। তোমার জ্বর তাই এতক্ষণ
ঘুমোতে দিয়েছি। আর নাহয় কখনো দিতাম না।
কূজন ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো।
সাহরা আর ইফতেখার সাহেব দুজনই স্কুলে।
ইরিন কূজনের প্লেটে পরোটা দিতে দিতে
বলল,
– কূজন ভাইয়া তুমি কাল বিকেলে হাওয়া হয়ে
কোথায় গেলে? ভাইয়া তো মহাব্যস্ত হয়ে
পড়েছিল।
– ঘুরাঘুরি করছিলাম আরকি।
– ধুর ছাই! কোথায় যে ছিলে.. খুব বড় একটা
মজা মিস করলে। জানো কালকে ভাইয়া আর
আমি মিলে ভাবীকে কি লজ্জাটাই না
দিলাম।
কূজন মোটেও কুহুর কথাগুলো শুনতে চাইছে না।
তারপরো চুপচাপ খেয়ে যেতে লাগলো। ইরিন
একাধারে বলেই চলছে,
– ভাইয়া আয়নায় ভাবীকে কি যেন ইশারায়
বলছিল। ভাবী উত্তর দিচ্ছিলো না দেখে
ভাইয়া দরজার আড়ালে দাঁড়িয়েছিল। ভাবী
ভাইয়াকে না দেখে যখন উশখুশ করছিল ভাইয়া
আবার চলে এলো। আর তখনি আমি আর ভাইয়া
একসাথে চোখ মেরে দিলাম ভাবীকে। আর
ভাবী তো লজ্জায় পুরা টমেটো। কোনোভাবে
পড়া দিয়েই ভাগলো। তবে ভাইয়াও কি
ছাড়বার পাবলিক নাকি? সেই রাস্তায়
আটকালো। যেতেই দেয়না। তারপর
ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলল আর ভাবীকে
যেতে দিল। হাহাহাহ। তুমি থাকলে আরো মজা
হতো। তিনজন একসাথে চোখ মারতাম
ভাবীকে।
কূজন একটু কেশে বলল,
– আমার হয়ে গেছে সোনার হরিণ।
রুমে ফিরে আসতেই কূজনের বেজায় মন খারাপ
হলো। কুহুর দেয়া চিঠিটা খুঁজতে লাগলো সে।
বুক পকেটে রেখেছিল মনে পড়তেই পকেট
থেকে চিঠিটা খুলে আরো একবার পড়লো।
তারপর নিজের লাগেজ খুলে কাপড়ের ভাঁজে
রেখে দিল চিঠিটা। হঠাৎ মনে পড়লো কলরব
ভাই দেখে ফেলেনিতো??
পর মুহূর্তেই মনে হল না দেখবে কেনো? চিঠি
চিঠির জায়গায় আছে। আর দেখলে নিশ্চয়
সকাল সকাল কুহুদের বাসায় যেত না। কূজনকে
বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করতো আগে।
আচ্ছা জ্বরের ঘোরে কিছু বলেছে কি?
ছোটবেলার অভ্যাস এটা। কলরব ভাইকে
ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে একবার।

– এই যে বোরকটা টান দিন।
কুহু চলন্ত রিকশায় বসে আড়চোখে কলরবের
দিকে তাকালো। কিন্তু বোরকা টান দেয়নি।
ইরিন, কুহু আর পিহু এক রিকশায় বসেছে। ইরিন
উপরে বসে আছে। ইরিন কুহুকে আহ্লাদী হয়ে
বলল,
– ভাবী ঠিক করে বসো তো। পরে তোমার কিছু
হলে আমার ভাইয়ের কি হবে?
কুহু মনে মনে বলল,
– কি আর হবে? আরেকটা ফুলটুশী ধরবে….
পিহু কুহুর চেহারা দেখেই বুঝলো কিছু একটা
হয়েছে। কলরব ভাই নয়তো সকাল সকাল বাসায়
এসে বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য
মাকে বলতো না। আর আপুণিই বা হুট করে
রেগে আছে কেনো? আসতেও চাইলো না মা
জোর করে পাঠিয়েছে। কি জানি আপুণির
থেকে কথা বের করতে হবে।

কূজন আর কলরব বাইকে এসেছে তাই ওরা
কুহুদের জন্য ওয়েট করছে। কুহু রিকশা থেকে
নেমেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে
রইলো। কলরব ভাড়া মিটিয়ে পিহুকে বলল,
– মৌটুশী! ইরিনের কাছে শুনেছি তুমি নাকি
নাগরদোলা চড়তে খুব পছন্দ করো?
কলরবের মুখে মৌটুশী শুনে কুহু চোখ ছোট করে
পিহুর দিকে তাকালো। পিহু খেয়াল করলো
না। সে এখন নাগরদোলার নাম শুনে
পাগলপারা। পারে না লাফালাফি শুরু করে
দেয়। বিনাবাক্য ব্যয়ে নাগরদোলার দিকে পা
বাড়ালো পিহু। ইরিন মেয়েটাকে পিহুর পাগল
পাগল মনে হয়। এত কথা বলে তাই ভালো লাগে
না। কিন্তু আজ বেশ পছন্দ হলো ওকে। ইরিন
যদি পটপট না করতো তাহলে ওর যে
নাগরদোলা পছন্দ তা জানতে পারতো না।
ইরিন কুহুর হাত ধরে নাগরদোলার দিকে হাঁটতে
লাগলো। আর বলল,
– আমি নাগরদোলা ভয় পাই তারপরো এতো
ইন্টারেস্টিং লাগে যে ভয়টয় মনে রাখি না।
– ইরিন তুমি যাও আমার ভালো লাগে না।
– আরে ভালো না লাগলেও কিছু করার নেই।
তোমাকে ছাড়বো না ভাবী।
ইরিন ঠিকঠিক টেনেটুনে কুহুকে বসালো।
একটায় ইরিন,কুহু আর কলরব বসলো। আরেকটায়
বসলো পিহু আর কূজন। ইরিন কুহু আর কলরবের
মাঝে বসেই বলল,
– আমি হলাম কাবাবমে হাড্ডি তাই না পিহু
আপু?
পিহু ম্লান হাসলো। কলরব তীক্ষ্ণ নজরে
কূজনকে দেখছে। কূজন ভাবলেশহীনভাবে
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। বাসা থেকে বের
হওয়ার পর থেকে কুহুর দিকে একবারো
তাকায়নি সে। তবে চেহারায় একটা চাপা কষ্ট
ফুটে উঠছে। কূজন থেকে চোখ সরিয়ে কলরব
কুহুর দিকে তাকালো। কুহুও অন্যদিকে
তাকিয়ে আছে। নাগরদোলা চলতে লাগলেই কুহু
চোখ বন্ধ করে ফেললো। চেহারায় স্পষ্ট
আতঙ্ক দেখা দিল তার। বিড়বিড় করে কি যেন
পড়ছে। ইরিন চোখ খুলে আছে তবে ভয়ে
চিৎকার করছে। ইরিনের চিৎকারের চুটে কুহুর
কথাগুলো কলরব বুঝতে পারলো না। কুহু এক
পর্যায়ে বেশ জোরেই বলতে লাগলো,
– ইরিন! প্লিজ থামাতে বলো। প্লিজ ইরিন
নয়তো আমি এখনি মরে যাব। ইরিন তোমার
ভাইয়াকে বলো থামাতে বলতে…
কলরব ইরিনের হাত ধরে কুহুর হাতের উপর ইরিন
হাত রেখে নিজে ইরিনের হাত চেপে ধরে
বলল,
– কিছু হবে না আমি আছি তো।
কুহু ভয়ের চুটে চোখ খুললো না কিন্তু হাত
সরাতে নিলেই কলরব আরো শক্ত করে ইরিনের
হাত দিয়ে কুহুর হাত চেপে ধরলো। ইরিন
ভাইয়ের কান্ড দেখে ভয় পাওয়া ভুলে গেল।
তারপর বলল,
– ইশ! কেনো যে আমি এখানে বসতে গেলাম!!!
পুরাই একটা বাচ্চা মেয়ে আমি।
ইরিনের কথা শুনে কলরব গগনবিহারী হাসি
হাসতে লাগলো। কলরবের হাসির শব্দ কুহুর বেশ
ভালো লাগছে। বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা
প্রশান্তি পাচ্ছে সে। নাগরদোলা থামতেই কুহু
চোখ খুলে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো কলরব
ইরিনের হাতের উপর হাত রেখে কুহুর হাত
চেপে ধরেছিল। এক মুহূর্তেই কুহুর মনটা ভালো
হয়ে গেল, খুব বেশি ভালো হয়ে গেল।

মৃদু ভলিউমে গান চলছে। খাবারের অর্ডার
দিয়ে বসে আছে সবাই। ইরিনের খুব বোরিং
লাগছে। কূজন চুপচাপ বসে মোবাইল চালাচ্ছে।
পিহু রেস্টুরেন্টের একটা কাপলকে ফলো
করছে আর কুহুর সাথে বিড়বিড় করে কি যেন
বলছে। কুহুও চুপচাপ পিহুর কথা শুনছে। মাঝে
মাঝে আস্তে করে কি যেন বলছে। কলরব
একদৃষ্টিতে কুহুকে দেখছে। ইরিন বিরক্ত হয়ে
বলল,
– চলো খেলা খেলি। ওয়েটারকে ডেকে একটা
কাঁচের বোতল জোগাড় করলো সে। তারপর
বোতলটা টেবিলে রেখে ঘুরালো। বোতলটা
ঘুরে কুহুর দিক বরাবর থামলো। ইরিন আগ্রহ
নিয়ে বলল,
– ভাবী তুমি যেটা সবচেয়ে ভালো পারো
সেটা করো।
– আমি আবার কি করবো?
– কেনো আবৃতি করো। তোমার ঘরে তো কত
প্রাইজ। আবৃতিতে তুমি বেস্ট না হলে কীভাবে
পেলে?
কুহু হেসে বলল,
– ঠিক আছি করছি।
কবিতার নাম-
তুই কি আমার দুঃখ হবি?শ্রদ্ধেয় আনিসুল হক
স্যার।
পিহু কুহুকে উদ্দেশ্য করে বিরক্তভরা কণ্ঠে
বলল,
– উনি কবে তোর স্যার ছিলেন?
– উনারা শ্রদ্ধাভাজন তাই স্যার বলতে হয়।
পিহু বিড়বিড় করে বলল,
– ভালোই ছিলাম এখন কবিতা শুনে মুডটাই নষ্ট
করতে হবে।
কুহু ইরিনের কথায় কান না দিয়ে কবিতা
আবৃতি শুরু করলো,
“তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি,
নীচের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?”
কলরব একদৃষ্টিতে মুগ্ধ চোখে কুহুর দিকে
তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি তার তীক্ষ্ণ। বুঝতে
চেষ্টা করছে কবিতাটার মানে কি?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here