নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :৫

0
512

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 5
#সুমাইয়া_আক্তার

আমি ভয়ে ভয়ে পার্সেল টা খুলতে শুরু করি…. পার্সেল টা খুলতেই একটা রক্তমাখা পুতুল দেখলাম…আর সাথে একটা কাগজে লেখা,,, এই পুতুল টা তোর জন্য উপরহার হিসেবে দিলাম…তোর জন্য আর ও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে….

আমি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠি…. পুতুল টা ছুড়ে ফেলে দেই ফ্লোরের এক কোণে…

মা আমার চিৎকার শুনে রুমে চলে আসে…কি হয়েছে তোর??এভাবে চিৎকার করছিস কেন???

আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করি…মা আমাকে শান্তনা দিতে থাকলেন…কিচ্ছু হয়নি তোর..

সামান্য পুতুল ই তো…এভাবে ভয় পেতে হয় নাকি??? দেখি কে দিয়েছে পুতুল টা???

এতো অনন্যা দিয়েছে…আর পুতুলের গায়ে কোন রক্ত নেই…এ কি করে হতে পারে???আমার দেখার ভুল??? না না এরকম হতে পারেনা…

আচ্ছা শোন তোর মন মানসিকতা ভালো নেই আমি জানি….তুই বিকেলে কোথাও গিয়ে ঘুরে আয়…ভালো লাগবে…

মা এই কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো…আমি ভয়ে ভয়ে পুতুল টা হাতে নিলাম…আসলেই পুতুলের গায়ে কোন রক্ত নেই…আমি পুতুল টা বিছানার এক পাশে রেখে মায়ের কাছে গেলাম…

মাকে গিয়ে বললাম,,মা আমি আয়েশা দের বাড়ি যাবো…কিছুক্ষন পরই চলে আসবো….

আচ্ছা, সাবধানে যাস…আর তারাতারি চলে আসিস…দেড়ি করবি না…কবরস্থানের পাশ দিয়ে আসবি না…বড় রাস্তা দিয়ে আসবি…

আচ্ছা মা….

বড় মাঠ পেরিয়েই আয়েশা দের বাড়ি…দশ মিনিট পর আয়েশাদের বাড়ি এসে পৌছালাম….আয়েশার কিভাবে মৃত্যু হলো তা জানতে চাইলাম আয়েশার মায়ের কাছে…

খালা কান্না করতে করতে বললেন,,,মা রে আমার মেয়েটা যেদিন মারা যায় সেদিন অনেক হাসিখুশি ছিলো…বাড়িতে আসতে চাইছিলো..
আমি আমার মাইয়ার জন্য কত পদের রান্না করলাম….আমার মাইয়া ঠিক ই বাড়িতে আসলো কিন্তু লাশ হইয়া…আমার মাইয়া আত্নহত্যা করার মতো মাইয়া না…ক্যান যে আত্নহত্যা করছে আমি আইজো বুঝতে পারলাম না…

আমি খালা কে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পেলাম না…আমার চোখের কোণে এক ফোটা পানি জমেছে….

খালাকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম বাহিরে….দেরি করতে চাইলাম না তাও দেরি হয়ে গেছে… সন্ধ্যা হয়ে গেছে…. এখন বড় রাস্তা দিয়ে বাড়ি যেতে গেলে রাত হয়ে যাবে…তাই ভাবলাম বড় মাঠ দিয়েই যাই…বড় মাঠের পাশেই একটা কবরস্থান আছে….

মা বারবার নিষেধ করেছিল যেন কবরস্থান দিয়ে না যাই…তারপর ও কবরস্থানের পাশ দিয়ে ভয়ে ভয়ে যাচ্ছিলাম…

কোনমতে কবরস্থান পার হয়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম….

কিন্তু একি আমি আবার ও কবরস্থানে কিভাবে আসলাম…আমি যতবার ই কবরস্থান ক্রস করছি ততবারই আবার সেই কবরস্থানেই এসে পড়ছি…

কবরস্থান থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে…আমাদের খুন করা হয়েছে..আমরা আত্মহত্যা করিনি…

আওয়াজ অনেক জোরালো ছিলো…আমি ভয়ে চোখ মুখ চেপে দাঁড়িয়ে থাকি…ওখান থেকে পালাবার চেষ্টা করি…কিন্তু আমার পা কেউ আটকে রেখেছে…কোনভাবেই নড়তে পারছিনা আমি….

আমি অনবরত সূরা পড়তে থাকি….তখনি দেখি আমার দিকে সেই তিনটি মেয়ের আত্না এগিয়ে আসছে…ওদের চোখ থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে…. এত বিদঘুটে চেহারা আমি আগে কখনো দেখিনি….

ধীরে ধীরে ওরা আমার কাছে চলে আসছে…ওরা তিন জন ওদের কালো লোমশ হাত আমার দিকে এগিয়ে দিতেই…

কেউ বলে উঠলো,,,এই ফাহমিন কি করছিস তুই এখানে???

পিছনে ফিরতেই দেখি আমার বাবা… আমি দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরি…

বাবা আমার ঘর্মাক্ত মুখ দেখে বললেন,,,,তুই এখানে কেন???আর তোর মা তোকে কেন বের হতে দিয়েছে ঘর থেকে???

আমি বললাম,,,বাবা আমি আয়েশাদের বাড়ি গিয়েছিলাম…মায়ের কোন দোষ নেই… তুমি প্লিজ মাকে বকো না…

বাবা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,,,পাগলী মেয়ে আমার…আচ্ছা কিছু বলবনা তোর মাকে…

বাবার সাথে বাড়ি ফিরে এসে…কিছুক্ষন টিভি দেখলাম….তারপর খেয়ে আমার রুমে শুতে গেলাম…

পার্সেল করা পুতুল টা নিয়ে আমি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছি…রাত 12টায় কারো হাসির শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে…

পাশ ফিরতেই দেখি,,, সেই পুতুল টা হাসছে…পুতুল টার চোখ দুটো রক্তবর্ণে পরিণত হয়েছে…

আমি ভয়ে শিউরে উঠি…আমি বিছানার এক কোণে গিয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছি….

সেই পুতুল টা এত বিশ্রীভাবে হাসছে…দেখেই আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে… আমি কাঁপতে কাঁপতে থাকি…পুতুল টা আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার গলায় চেপে ধরলো….

আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পুতুলের হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরি..তারপর আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে এগিয়ে যাই…তারপর নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে পুতুল টাকে পুকুরে ছুড়ে মারি…

আমি দৌড়ে আমার রুমে এসে বিছানার এক কোণে জড়সড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকি…..কাঁদতে কাঁদতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি…

সকাল 8টায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আমার….আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠতেই দেখি সেই পুতুল টা আমার পড়ার টেবিলে বসা…

পুতুল টা হাসতে হাসতে বলছে,,তুই মরবি..আগে তুই মরবি তারপর তোর মামা মরবে…

আমি ভাবতেই পারছিনা এই পুতুল টা এখানে এলো কি করে????আমি তো ফেলে দিয়েছিলাম পুতুল টা…. তাহলে কি করে এলো????

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here