নিশি রাতের ডাক ‘পর্ব :৬

0
433

#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 6
#সুমাইয়া_আক্তার

আমার মাথা কাজ করছেনা…. কি রহস্য আছে এখানে???
সকাল সকাল মুড টাই নষ্ট করে দিলো….আমি পুতুল টা কে নিয়ে আবার ও পুকুরে ফেলে দিলাম….

তারপর নাস্তা করতে গেলাম…নাস্তা সেরে বসে বসে টিভি দেখছিলাম…মা ডেকে বললেন,,এই ফাহমিন তোর জন্য আবার পার্সেল এসেছে… এতো পার্সেল পাঠায় কে তোকে???নাকি তোর বিএফ আছে রে???

আমি মুচকি হাসি দিয়ে বলি,,, কি যে বলো না মা….আমার কি প্রেম করার বয়স হয়েছে??

মা মেয়ে দুজনেই স্বজোরে হেসে উঠি…

তারপর পার্সেল নিয়ে আসলাম…দেখে মনে হচ্ছে কেউ খাবার পাঠিয়েছে…কিন্তু কে পাঠাবে???

ডেলিভারি বয়কে জিজ্ঞেস করলাম,, কে পাঠিয়েছে পার্সেলটি???

যা বলল তা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না…
বলল,,,,,সামান্তা পাঠিয়েছে….

আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা…ধীরে ধীরে পার্সেল টা খুললাম…..খুলে দেখলাম বিরিয়ানীর প্যাকেট…

বিরিয়ানীর প্যাকেটের উপর একটা কাগজে লেখা,,,ফাহমিন আপু বিরিয়ানী খেয়ে কেমন লাগলো জানাবে কিন্তু….

বিরিয়ানীর প্যাকেট হাতে নিয়ে থ মেরে বসে আছি আমি….আস্তে আস্তে বিরিয়ানীর প্যাকেট খুললাম….

বিরিয়ানীর প্যাকেট খুলতেই আবার ও চিৎকার দিয়ে উঠি আমি…বিরিয়ানীর সাথে দুটো চোখ, কান, নাক মিশানো আছে…

মা চিৎকার শুনেই দৌড়ে আসেন রুমে…আমি অনর্গল বলতে থাকি,, মা বিরিয়ানী তে চোখ,কান, নাক আছে…আর বিরিয়ানি টা পাঠিয়েছে সামান্তা যে কয়েকদিন আগে আমাদের হোস্টেল এ আত্নহত্যা করেছে….

মা ভ্রু কুঁচকে বিরিয়ানীর প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখেন বিরিয়ানী ঠিক আছে…আর পার্সেল টা পাঠিয়েছে আমার বড় মামা….

মা আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,,, তোর কি চোখ ও ইদানিং নষ্ট হয়ে গেছে???চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে তোকে বুঝতে পারছি আমি….

রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন মা…আমি ভাবতে থাকি কি হচ্ছে এসব???কেন করছে???আমি তো তাদের ক্ষতি করিনি…

মনে হচ্ছে আমার পিঠে একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো…. আমি পিছনে তাকাতেই দেখি সেই পুতুল টা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে খুব বিশ্রী ভাবে হাসছে…আর বলছে,,, কি এবার সবাই তোকে পাগল বলছে তো???

আমি ধাক্কা দিয়ে পুতুল টাকে মাটিতে ফেলে দেই….আর পারছিনা আমি….কিভাবে মুক্তি পাবো আমি???

রাতের বেলা খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না…মা জোর করে খাইয়ে দিয়েছে….খাওয়া শেষ করে ভাবলাম অনেকদিন ছবি আকি না…একটা ছবি আকতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব….

একটা মেয়ের মুখোচ্ছবি আঁকছিলাম… আঁকতে আঁকতে নেশায় ডুবে গিয়েছিলাম আমি….

আকা শেষে দেখলাম আমি এমন একটা ছবি এঁকেছি যা আমি জীবনেও আকি নি…. ছবি টা ছিলো এরকম যে কোন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করছে…

আমি এরকম ছবি কখনো আকিনি আর আকার কথাও না…কারণ আমি এতো জটিল ছবি আঁকতে পারিনা…টুকটাক মানুষের মুখোচ্ছবি আঁকতে পারি….

আমি ছবি টার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি…আর ভাবতে থাকি আমি কিভাবে আঁকলাম ছবিটা???আমি ছবির উপরেই মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি….

হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙ্গে…কে কান্না করছে এতো রাতে???বাহিরে বের হয়ে কাওকে পেলাম না…

তাই আবার রুমে চলে আসি…এবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম…কিন্তু ঘুম আসছেনা…কান্নার আওয়াজ টা বেড়েই চলেছে….

এবার উঠে ছাদে চলে গেলাম…ছাদে গিয়ে দেখি একটা সাদা শাড়ি পড়া মেয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে…আর অনবরত কান্না করে যাচ্ছে….

আমি মেয়েটার পিঠে হাত দিয়ে ডাক দিতেই মেয়েটা আমার হাত হেচকা টানে ছাদ থেকে ফেলে দিলো….

যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি হাসপাতালের বেডে শোয়া….আমার এক পা ব্যান্ডেজ করা…আমি পা নাড়াতে পারছিনা….

মা আর বাবা আমার মাথার কাছে মন মরা হয়ে বসে আছে….আমার জ্ঞান ফিরতেই মা আর বাবা এতো খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে তারা আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে….

দ্রুত ডাক্তার ডেকে আনলো…ডাক্তার আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,,তোমার ভাগ্য ভালো যে তোমার পা ভেঙ্গে যায়নি…আবার আগের মতো হাটতে পারবে… আমরা তো ভেবেছিলাম তুমি কোমায় চলে গেলো…আল্লাহ এর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তোমার জ্ঞান ফিরেছে….

আমি এক মাস কোমায় ছিলাম….আমার মাথায় আঘাত লাগায় আমি জ্ঞানহীন ছিলাম….

তাহলে এই এক মাস আমি এভাবেই বিছানায় পড়ে ছিলাম???আমাকে দেখতে অনন্যা, রিদিতা, সায়মা, নাফিসা আর বড় মামা এসেছে হাসপাতালে…

আমি মা কে বললাম,,, মা তোমরা একটু বাহিরে যাবে???আমি অনন্যাদের সাথে কথা বলব..

আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বেশি কথা বলবিনা…তাহলে তো ব্রেইনে ইফেক্ট পড়তে পারে… মা,বাবা আর বড় মামা বেরিয়ে গেলেন….

আমি ওদের আমার সাথে এতোদিন যা ঘটেছে সব বললাম….এবার অনন্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,,আসলে কি বলব আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা….তোর কথা শুনে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে যে আসলেই তুই সত্যি বলছিস…..এখন কি করবি ভাবছিস???

আমি হালকা নড়ে বসলাম…..আমি কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা…একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমার সাথে…মাকে বলতেও ভয় পাচ্ছি আমি….
তবে এর একটা বিহিত তো করতেই হবে….মামার সাথে কথা বলব আমি….আচ্ছা তোরা এক কাজ কর…তুই মামাকে বল আমার কাছে আসতে….

মামা এসে আমার পাশে বসলেন…আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,,কি করে হলো এসব??? তোর শত্রু কে বলতো???

আমি মামা কে বললাম,,,,শত্রু তো তোমার আমার না…তুমি কি করেছো ওদের সাথে??? কেনইবা ওরা তোমাকে আর আমাকে মারতে চায়???

মামা কিছুটা ভয়ে বললেন,,,কি বলছিস এসব???কারো সাথেই কিছু করিনি আমি….আমার শত্রু আসবে কোথা থেকে???

আমি মামার মধ্যে রহস্যের জট দেখতে পারছি… মামাকে আবার ও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললাম,,,তুমি সত্যি করে বলো মামা..কি করেছো তুমি ওদের সাথে???

মামা এবার চটে গিয়ে বললেন,,, দেখ ফাহমিন এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে…..এই কথা বলেই মামা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন…

আমি কিছু একটা আন্দাজ করতে গিয়েও করছিনা…কারণ সে তো আমার মামা…. কিভাবে এত খারাপ চিন্তা করতে পারি আমি তাকে নিয়ে????

মামা বেরিয়ে যেতেই,,,, সেদিন রাতের সেই মেয়েটি পিছন দিক থেকে ফিরেই বলছে… আমি তোমার ক্ষতি করতে চাইনি..আমি তোমাকে সত্যি কথা বলতে এসেছিলাম….কিন্তু তোমাকে কিছু বলার আগেই অন্য কেউ তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়….আমি তোমাকে বাঁচাই… কিন্তু তোমার মাথায় আঘাত টা আর পায়ের আঘাত টা অন্য কেউ করেছিল….আমি আবার আসবো…সব সত্যি জানতে পারবে তুমি….

এই কথা বলেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়….

কে সে???কি সত্যি বলতে এসেছিলো সে???আবার ও রহস্যের জট জটিল হয়ে গেলো…

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here