একটুখানি পর্ব : ৬৭

0
909

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী
পর্বঃ৬৭
কুহু স্টেশনে নেমে খোঁজ নিলো চিটাগাং এর
ট্রেন কয়টায়। ভাগ্য ভালো ছিল তাই টিকিট
পেয়ে গেল কিন্তু স্ট্যান্ডিং। কুহু ভাবছে
কীভাবে এতদূর দাঁড়িয়ে যাবে। দাঁড়িয়ে
যাওয়ার শক্তি তার অবশিষ্ট নেই। তাছাড়া
একটা মেয়ে বধূবেশে সারা রাস্তা দাঁড়িয়ে
যাবে উদ্ভট দেখায়। কুহু অবশ্য গায়ে চাদর
জড়িয়ে রেখেছে তারপরো ওর সাজ দেখলেই
মানুষ বুঝে ফেলবে। কুহু মনে মনে ভেবে নিলো
কেউ কিছু প্রশ্ন করলে বলবে সে থিয়েটার
করে। কুহু নিজেই বুঝতে পারছে না ও এতোসব
কীভাবে করছে, বানিয়ে বানিয়ে হাজারটা
মিথ্যেও বলছে। এতো মিথ্যা কথা সে তার
এতো বছরের জীবনেও মনে হয় বলেনি।
ভাবিকে কিরকম ধোকা দিয়ে এসেছে সে।
আল্লাহ্ ক্ষমা করবে তো? নাকি এর শাস্তি
পেতে হবে তাকে? কুহুকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা
করতে হলো না। দুই লাইন হওয়ায় এখন ট্রেন
অনেকটাই ঠিক সময়ে পৌঁছায়। ভাগ্যিস কুহু
সময় মতো ডিসিশন নিয়েছে। একটু পর এলেও এ
ট্রেনটা পেতো না সে। তখন আবার বাসে
যেতে হতো। এমনিতেই কুহু বাস জার্নি করতে
পারে না,বমি হয় তার উপর আজ কুহুর শরীর
চলছে না। কোনোরকম ধাক্কিয়ে চলছে।
ট্রেনে উঠতেই কুহু ব্ল্যাকে সিট সহ টিকিট
পেয়ে গেল। কুহু মনে মনে আল্লাহকে
হাজারবার ধন্যবাদ জানালো। কুহুর আজকের
সিটটাও জানালার পাশের সিট। জানালার
পাশে বসেই কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কূজনের
বলা জানালার পাশের কুহু কথাটা মনে পড়লো।
কুহুর কাছে কূজনের সাথে দেখা হওয়ার দিনটা
আজ বিভৎস এক স্মৃতি। সেদিনের এই একটুখানি
পরিচয়ে কূজন কুহুর জীবন লন্ডভন্ড করে
দিয়েছে। সেদিন বোধহয় কূজনকে হেল্প না
করলেই ভালো হতো। কুহুকে আজ এতো কষ্টের
মাঝে থাকতে হতো না। কুহুর জীবনটাও
সাধারণ নিয়মেই চলতো। কুহুর দৃষ্টি স্টেশনের
প্লাটফর্মের দিকে। ট্রেনটা প্লাটফর্ম ছেড়ে
ধীরে ধীরে সামনে এগুচ্ছে আর কুহু চেয়ে
ভাবছে সেও নিজের নিজেকে ছেড়ে চলে
যাচ্ছে। কিন্তু মা ঠিক বলে কিছু পেতে হলে
কিছু ছাড়তে হয়। ট্রেন এই স্টেশনে পড়ে
থাকলে সামনের স্টেশনে পৌঁছুতে পারবে না।
কুহুও তাই আজ ছেড়ে চলছে। এসব থেকে বহুদূরে
চলে যাবে সে। এসব ভাবতে ভাবতেই কুহু ব্যাগ
থেকে পার্স বের করে মোবাইল বের করলো।
আসার সময় কুহু নিজের মোবাইলটা খুঁজে
পায়নি তাই পিহুরটা নিয়ে এসেছে। আফসোস
হতে লাগলো মোবাইলটার জন্য, কলরব
দিয়েছিল। কলরবের কথা মনে পড়তেই কুহুর
চোখ জোড়া ভিজে উঠলো। দুহাত দিয়ে মুখ
ঢেকে অঝরে কাঁদতে লাগলো। ট্রেনের নিচে
পড়ে মরতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতো।
বুকের ভিতর এক নিদারুণ কষ্ট এসে হানা
দিচ্ছে। কান্নার দাপটে কুহু কোলাতে পারছে
না। কাঁদতে কাঁদতেই কুহু পার্স থেকে কলরবের
দেওয়া আয়নাটা বের করলো। আয়নাটায় হাত
বুলিয়ে চেহারার সামনে ধরলো তারপর বলল,
– আমি একদম কাঁদবো না, কলরব একদম না।
কাঁদলে তো তোমার ফুলটুশীকে তোমার কাছে
ভালো লাগে না তাই কাঁদবো না।
কুহু দুহাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে
আয়নাটা সযত্নে পার্সে রেখে দিল। এরপর
মুখস্হ একটা নাম্বার মোবাইলে ডায়াল করলো।
দুবার বাজতেই ওপাশ থেকে মোবাইল রিসিভ
করা হলো।
– হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
কুহু বলল,
– এটা কি সোনালী আপুর নাম্বার?
– জ্বি আপনি কে বলছেন?
– বুবু আমি কুহু।
– আরে কুহু এটা তো তোর নাম্বার না।
– হুম আমার বোনের নাম্বার।
আমি না চলে আসছি বুবু।
– শ্বশুরবাড়িতে এসেই বুবুকে ফোন দিলি মনটা
খুশি হয়ে গেল। ভাগ্যিস আমার কথা মনে আছে
নয়তো কেরাত বেত জুটতো তোর কপালে।
– আমি তোমার কাছেই চলে আসছি বুবু।
– ওমা ঘুরতে আসছিস? চিটাগাং তো ঘুরারই
জায়গা। ভালো করছিস তা কলরব এর অফিস
ম্যানেজ করে আসিস কিন্তু। তুই তো আবার
আমার রাগী ছানাপাখি।
– আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি
বুবু,বিয়ের আসর থেকে।
– কি বলছিস কি?
কুহু সবটা খুলে বলল। কুহুর কাছ থেকে সব শুনে
বলল,
– এমন ভুল কেউ করে নাকি?
– বুবু তুমি প্লিজ এমন বলো না। আমি এছাড়া
আর কোনো উপায় দেখছি না। বেশি দিন না
তোমার বাসায় কয়েকটা দিন থাকবো তারপর
পরিস্হিতি ঠাণ্ডা হওয়ার পর যা করার করবো।
আচ্ছা তুমি এলে না যে বিয়েতে? তাহলে
আমার এতো কষ্ট করে পালাতে হতো না, তুমি
হেল্প করতে।
– আরে আমার ছোট ছানাটার যে জ্বর তাই
আসতে পারিনি তুই আবার আমার সাথে রাগ
দেখাতে আসবি না তাহলে কেরাত বেতের
বারির চোটে অবস্হা খারাপ হয়ে যাবে।
কুহু হাসতে চাইলেও হাসতে পারলো না।
অন্যসময় একথা শুনেই কুহু এমন রাক্ষসী হাসি
হাসতো শিউর পাশের বগিতেও হালকা পাতলা
হাসির শব্দ শুনা যেত। আজ আর সেই হাসি
আসছে না। কুহু কথা শেষ করে মোবাইল রেখে
দিলো। জানলায় মাথা ঠেকিয়ে ভাবছে এই
সোনালী আপুর সাথেও তো পরিচয় এই হেল্প
করা নিয়েই এমনকি রেল স্টেশনেই দেখা
হয়েছিল। সোনালী আপুর মোবাইল আর পার্স
ওয়েটিংরুমে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।
পার্সে বেশ ভালো টাকা ছিল। পরে কুহুর
চোখে সেটা পড়তেই কুহু মোবাইল আর পার্স
ফিরিয়ে দিয়েছিল। সোনালী আপুকে খুঁজতে
খুঁজতে কুহু নিজের ট্রেনই মিস করেছিল। সাথে
পিহু ছিল কুহুকে ইচ্ছে মতন বকেছিল সে। পরে
বাসে করে যেতে হয়েছে তাদের।
সারারাস্তা পিহুর কথা শুনতে শুনতে আর বমি
করতে করতো গিয়েছিল। বিয়ের দাওয়াত ছিল
কিন্তু অসুস্হ হয়ে যাওয়ায় মজা করতে
পারেনি। কিন্তু এতোকিছুর পর ভালো যেটা
সেটা হলো উনার সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক
গড়ে উঠেছে। নিয়মিত যোগাযোগও হয়। বিয়ের
দাওয়াত দিয়েছিল কিন্তু সোনালী আপু
আসতে পারেননি। পিহু ঠিক কথা বললেও
সবসময় সে ঠিক না। কূজনকে হেল্প করতে
যেয়ে কুহু যেমন ফেসেঁছে ঠিক তেমনি
সোনালী আপুকে হেল্প করে নতুন একটা
কাছের মানুষও পেয়েছে। সবসময় কোমলতা
খারাপ না কিন্তু কখনো কখনো তা কন্টকময়
পথের সিঁড়িও বটে।
– ফুলটুশী!
– হুম।
– চলে এলে যে?
কুহু কিছু বলল না। চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলো।
কলরব আবার বলল,
– ফুলটুশী উঠো না? চোখ খুলো!
কুহু ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেললো। চোখ খুলেই
দেখলো কলরবকে। কুহুর সামনের সিটে বসে
আছে। রয়েল ব্লু রঙের মাঝে গোল্ডেন কাজ
করা শেরওয়ানী সাথে গোল্ডেন পাগড়ী।
পাগড়ীতে খুব সুন্দর একটা ব্রোঞ্জ। কলরবকে
দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল কুহুর। কুহুর কাছে
কলরবকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে। কুহু নানান
কথা ভাবতে ভাবতে ট্রেনের জানালার সাথে
মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কলরবকে
দেখে কুহু ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
– শুনেছিলাম বউ সাজে মেয়েদের দেখে নাকি
মানুষ চোখ ফেরাতে পারে না। আজ দেখলাম
বর সাজে কোনো ছেলের থেকেও যে চোখ
সরানো যায় না। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে
কলরব।
– কুহু! প্লিজ জানালার পাশের সিটটায় একটু
বসতে দিবে?
কুহু ধড়মড় করে জানালা থেকে মাথা উঠিয়ে
চারিদিকে চোখ বুলালো। কূজনকে দেখেই কুহু
আরো চেপে বসলো। তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে
কুহুর মাথা জানালায় বারি খেতে নিতেই
কলরব হাত দিয়ে কুহুর মাথা সরিয়ে দিলো।
কূজনের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে
কুহু। কুহুর বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হতে
লাগলো। চোখ সরিয়ে সামনের সিটে মুখোমুখি
হয়ে বসে থাকা কলরবকে দেখলো। কুহু
ভেবেছিল কুহু ঘুমের ঘোরে কলরবকে স্বপ্ন
দেখেছে। কিন্তু কলরব যে সত্যি বসে আছে তা
দেখে কুহুর হাত পা কাঁপতে লাগলো। একবার
কলরবের দিকে একবার কূজনের দিকে
তাকাচ্ছে সে। কুহুর চোখ জোড়ায় একরাশ ভয়
এসে গ্রাস করেছে। কুহু বাইরের দিকে দৃষ্টি
নিক্ষেপ করে বুঝলো ট্রেনটা চলন্ত। ঢোক
গিলে সে কলরবের দিকে তাকালো। তারপর
বলল,
– আপনারা এখানে?
কলরব বলল,
– তুমি এখানে যে? তোমার তো এখন আমার
বাসায় থাকার কথা ছিল।
কুহু কূজনের দিকে আবারো ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে
তাকালো। কুহুকে তাকাতে দেখে কূজন বলল,
– জানালার পাশে ছাড়া আমার বসে অভ্যাস
নেই, কাইন্ডলি?
কুহুর শরীরের কাঁপুনী আরো বাড়তে লাগলো
কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
কূজন উত্তরের আশায় কুহুর দিকে চেয়ে আছে
কিন্তু কুহু কলরবের দিকে চেয়ে আছে। কলরব
উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– কূজন! তুই নাহয় এখানে বস। এটাও জানালার
পাশের সিট।
কূজন কলরবের সিটে বসে বলল,
– ধন্যবাদ ভাই।
কলরব কুহুর পাশে বসলো। তারপর বলল,
– কুহু তুমি পালিয়ে এলে কেনো?
কুহু কোনো উত্তর দিচ্ছে না, চুপ করে নতমুখ
নিয়ে বসে আছে। কুহু কোনো উত্তর দিচ্ছে না
বলে কলরব কুহুকে ধমকে উঠলো। কড়া গলায়
বলল,
– কথা বলছো না কেনো? জবাব দাও বলছি।
একদম মুখ খেটে বসে থাকবে না।
কুহু কলরবের ধমক শুনে আৎকে উঠলো। অসহায়
দৃষ্টিতে কলরবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কুহুকে এভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে
থাকতে দেখে কলরবের মেজাজ আরো চাউড়
হলো। কুহুকে আরো কঠিন স্বরে বলল,
– তুমি কি জানো তুমি যে পাগল? আস্ত একটা
গাধী তুমি। এখন আবার দেখছি বয়রা আর
বোবাও। কি আশ্চর্য কোনো কথার জবাব
দিচ্ছো না কেনো?
কলরবের ধমক শুনে কুহু বলল,
– আমি পাগল নাকি আপনার ভাই পাগল?
আমাকে এভাবে ধমকাচ্ছেন কেনো? আমি কি
করেছি?
কুহু কথা বলতে বলতে কেঁদে দিলো। চোখ
থেকে একের পর এক পানি গড়িয়ে পড়তে
লাগলো। কুহুকে কাঁদতে দেখে কলরব অপ্রস্তুত
হয়ে গেল। অস্হির হয়ে বলল,
– কেঁদোনা প্লিজ!
কুহু কান্না থামালো না বরং চোখ থেকে
আরো বেশি পানি ঝরাতে লাগলো। কলরব
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
– সামনে একটা স্টেশন আছে ট্রেন থামবে
সেখানে আমরা নেমে পড়বো।
কুহু বলল,
– না আপনারা নেমে পড়ুন আমি নামবো না।
– কেনো আমাদের দুই ভাইকে পিছন পিছন
ঘুরিয়ে এখন নতুন নাগর পেয়ে গেছো?
কলরবের কথা শুনে কুহু স্তব্ধ হয়ে গেল। কলরব
আরো বলল,
– এটাই যেহেতু মনে ছিল তো এতো প্যাচাল
পারলে কেনো?
কুহু অবাক হয়ে বলল,
– কলরব এসব কি বলছেন?
– কি বলছি মানে তুমি চলে এলে কেনো
তাহলে? আর কোথায় যাচ্ছো তুমি?
– আমি তো চট্টগ্রাম যাচ্ছি,হালিশহর।
সেখানে আমার এক বড় আপু আছে।
– আমাকে ঢাকা থেকে এতো প্রেশার দিয়ে
এনে দুই দিনের মাঝে সব ঠিক করে এখন তুমি
কেনো পালাচ্ছো? আনসার মি কুহু।
কুহু কিছুটা রেগে গেল এবার। রাগতস্বরেই বলল,
– কেনো জানেন না? আপনার এই ভাই আমাকে
থ্রেট দিয়েছে।
– কি থ্রেট দিয়েছে?
কুহু এবার প্রচন্ডরকমের চিৎকার করে বলল,
– কি থ্রেট দিয়েছে তাকেই প্রশ্ন করুন।
আপনার গুনধর ভাই তো এখানেই
আছে,জানালার পাশে। যতসব ঢং!
কুহুকে এভাবে চিৎকার করতে দেখে কলরব
বলল,
– আস্তে কথা বলো। আশেপাশের মানুষ
তাকিয়ে আছে।
কুহু চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষ সত্যি
তাকিয়ে আছে। লজ্জায় কুহুর মাথা কাটা
যাচ্ছে। এভাবে মানুষ কথা বলে নাকি? কুহু
তাই চুপ করে ফেললো। কলরব বলল,
– সামনের স্টেশনে আমরা নেমে যাব তারপর
আবার ফেণী ব্যাক করবো।
কুহু বলল,
– না আমি ফেণী যাব না, আর কোনো বিয়েও
হবে না।
– তোমার মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে
চেক করো তো।
কুহু রাগে লাল হয়ে বলল,
– করবো না।
কলরব কুহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে
ফিসফিসিয়ে বলল,
– তুমি যদি এখন ভালোই ভালোই আমার সাথে
না এসো তাহলে আমি কিন্তু বাধ্য হবো..
কুহু ভ্রু কু্ঁচকে কলরবের দিকে জিজ্ঞাসু
দৃষ্টিতে তাকালো।
কলরব গলার স্বর আরো নীচু করে ফিসফিস করে
বলল,
– তোমার লেহেঙ্গার টপসের ফিঁতাটা খুলে
ফেলবো।
কলরবের কথা শুনে কুহু দূরে ছিটকে গেল।
লজ্জায় আর রাগে কুহু মুখ তুলে তাকাতেই
পারছে না। কলরব কুহুকে আর ঘাঁটালো না।
বাদামওয়ালাকে বলল বাদাম দিতে। কূজন আর
কুহুর জন্যও নিলো। কূজনকে বাড়িয়ে দিতেই
কূজন চুপচাপ নিয়ে নিলো এমনকি কুহুও নিলো
কিন্তু হাতে নিয়েই বাদামগুলো ফেলে দিলো।
কলরব কিছুই বলল না, মন দিয়ে বাদাম খেলো।
স্টেশনে ট্রেন থামতেই কলরব বলল,
– কূজন! তুই যা নেমে তোদের ড্রাইভারকে বল
চলে আসতে। তাহলে তাড়াতাড়ি যেতে
পারবো আমরা।
– আচ্ছা ভাই আমি নামছি।
কূজন চলে যেতেই কলরব কুহুকে বলল,
– চলো ফুলটুশী।
– আমি যাব না।
কলরব কিছু না বলে কুহুর পিছনে হাত নিতেই কুহু
ধরমর করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর দাঁতে দাঁত
চেপে বলল,
– ফাজলামির একটা সীমা থাকা দরকার।
কলরব সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে কুহুর ব্যাগটা নিয়ে
বলল,
– চলো!
কুহু কিছু বলল না কলরবের সাথে নেমে এলো।
প্লাটফর্মে নেমে কলরব কূজনেকে খুঁজতে
লাগলো। এতো ভিড়ের মাঝে খুঁজে পেলো না।
ট্রেন স্টেশন ছাড়তেই স্টেশনের ভিড় কমে
গেল। কূজনকেও দেখতে পেলো। কূজন কলরব আর
কুহুকে দেখতে পেয়ে ওদের কাছে এলো।
– কিরে কতোক্ষণ লাগবে?
– এক ঘণ্টা সর্বোচ্চ।
– ভালোই হলো এই সময়ে সবটা ক্লিয়ার করে
নিতে পারবো।
কূজন কিছু বলল না। নিরবতা ভেঙে কলরব বলল,
– ফুলটুশী! তোমার সাথেই কথাটা।
কুহু অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। কুহুর
কলরবকে এই মুহূর্তে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কথার কোনো শ্রী নেই এই ছেলের। ফালতু
ছেলে এক নাম্বারের। কলরব কুহুর সামনে
দাঁড়িয়ে বলল,
– ভালোবাসো?
কুহু কলরবের চোখে চোখ রেখে বলল,
– না বাসি না।
– আচ্ছা কাকে ভালোবাসো না আমাকে
নাকি কূজনকে?
– শুনুন আমি জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছি
আর সে মানুষটা আপনি।
– একটু আগে যে বললে বাসো না?
– ওইটা তো এমনি বলেছি।
– নাহ্ এমনি এমনি বলোনি সত্যিটাই বলেছো।
– নাহ্ কলরব আমি আপনাকেই ভালোবাসি।
এভাবে বলবেন না প্লিজ।
– কুহু! যদি ভালোবাসতে তাহলে পালিয়ে
আসতে না।
– কূজন বলেছে মরে যাবে তাই চলে এসেছি।
আর আমি তো উনার সাথে আসিনি। তাহলে
এমন প্রশ্ন কেনো করছেন?
– কূজন মরুক কিংবা বাঁচুক তাতে তোমার কি?
তুমি তো ওকে কোনো আশা দাওনি।
তাহলে ওর জন্য এতো চিন্তা কিসের তোমার?
– কি বলছেন এসব? একটা মানুষ আমার জন্য
মরতে বসবে আর আমি বুঝি সুখের সংসার
সাজাবো? আমি কি এতোটাই স্বার্থপর?
– বাহ্ কূজনের কথা ভেবেছো কিন্তু আমার কথা
ভেবেছো কি? তুমি যে আমায় ধোকা দিলে
আমিও তো সুইসাইড করতে পারি,পারি না?
কুহু কাতর হয়ে বলল,
– এগুলো কি বলছেন? আপনারা দুইজন আমাকে
পেয়েছেন কি? আমাকে একেকজন অপশন
দিয়ে বলছেন একটা অপশন আমাকে চুজ করো।
দ্বিতীয় অপশন নয়তো মরে যাব।
কলরব কুহুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– আমার কথা নাইবা ভাবলে নিজের
পরিবারের কথা ভেবেছো? মানুষ তো এখন
তোমার বাবা মায়ের মুখে চুনকালি দিবে।
আমার পরিবারের কথা তো বাদই দিলাম।
নিজের বোনটার কথাও ভাবোনি। হাত,পা
বেঁধে বাথরুমে আটকে দিয়ে পালিয়ে
এসেছো। দুদিন পর যখন মেয়েটার বিয়ের বয়স
হবে তখন সবাই বলবে ওর বড় বোন যে কান্ড
ঘটিয়েছিল সেও একই কাজ করবে। কার কথা
ভেবেছো তুমি?
– আমি না এসব ভেবে দেখিনি। যা মাথায়
এসেছে তাই করেছি। এসব কথা তখন ভাববার
সময়ই ছিল না।
কলরব তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
– শুধু কূজনের কথা ভাবতেই সময় ছিল। কূজন
ভালোবেসেছিল আমি কি বাসিনি?
– কলরব এমন করে বলছেন কেনো আমি তো
কূজনকে ভালোবাসি না।
– আলবাত বাসো! নয়তো এতগুলো মানুষের
চিন্তা ছেড়ে শুধু ওর চিন্তা করতে না।
কুহু কলরবের কথা শুনে অঝরে কাঁদতে লাগলো।
ফু্ঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
– আমি শপথ করে বলছি আমার আর কূজনের
মাঝে এরকম কিছুই নেই। আমি আপনাকে
নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলাম আর আপনাকেই
ভালোবাসি। আপনি তো জানেন আমি
অতোশতো বুঝি না। যখন যা ভালো মনে হয়
তাই করি।
– হুম এটাই সমস্যা। হঠাৎ করে তোমার আমাকে
ভালো মনে হলো আর সেটাতেই ভালোবাসি
ভালোবাসি বলতে লাগলে। আদৌ
ভালোবাসো কিনা মনের খোঁজ নাওনি।
আমাকে তো তুমি প্রথম থেকেই অপছন্দ করতে।
আমি সেধে সেধে তোমার পিছনে পড়ে
থাকতাম। পরে ভেবেছি সত্যি ভালোবাসো
কিন্তু ভুল ছিল আমার। তুমি শুধু আমার সাথে
টাইমপাস করেছো।
কুহু ধীর গলায় বলল,
– কলরব!
– এটাই সত্যি কুহু। তুমি আমাকে কখনোই
ভালোবাসোনি। আমাকে নিয়ে খেলেছো।
কুহু ব্যাকুল হয়ে বলল,
– আপনি যদি বলেন আমি এখন ট্রেনের নিচে
চাপা পড়তেও রাজি। আপনাকে কতোটা
ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারবো না। আপনার
জন্য সব করতে পারবো।
– দেখাই যাচ্ছে!
– আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না কেনো?
– শুনো তুমি মনে করে দেখো প্রথম থেকেই তুমি
কূজনকে পছন্দ করতে আর আমার জন্য মনে ছিল
শুধু তিক্ততা। তোমার চাহনীতেই বুঝা যেত তুমি
আমাকে ফালতু একটা ছেলে ভাবতে।
– হ্যা্ঁ সত্যি কিন্তু এখন তো আপনাকে এমন মনে
করি না। আপনাকে সবচেয়ে ভালো মানুষ মনে
হয়।
– শুনো বাস্তবতা মেনে নিতে শিখো। তুমি
জাস্ট আমার প্রতি এটরাকটেড ছিলে। তুমি
আর আমি বিপরীত মেরুর মানুষ তাই আমার
প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল তোমার। আর এটাকে
ভালোবাসা বলে চালিয়ে দিয়েছো। আসলে
তুমি না জানো ভালোবাসা কি আর না
ভালোবাসতে জানো।
কুহু এবার কলরবকে কিছু না বলে পাশে
দাঁড়িয়ে থাকা কূজনের দিকে তাকালো। অফ
হোয়াইট এর মাঝে সোনালী কাজ করা একটা
শেরওয়ানীর সাথে মেরুন রঙের পাগড়ী পরে
আছে কুহু। কুহু কূজনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে
তাকিয়ে বলল,
– এবার খুশি? আমার কলরবের কাছে আমাকে
দোষী বানিয়ে মনের স্বাধ মিটেছে?
কূজন অপরাধীর মতন মাথানত করে দাঁড়িয়ে
আছে। আর কুহু এক নাগাড়ে বলেই চলছে,
– আমি নাকি ভালোবাসতেই জানি না।
নিদারুণ সত্য কথা এটা। আচ্ছা এতোই যেহেতু
মরার ইচ্ছা ছিল আপনার তাহলে মরে গেলেই
পারতেন। আমাকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে
জানানোর দরকার ছিল না । মরে যেতেন,
আমাকে একটু বাঁচতে দিতেন। আচ্ছা আপনার
না মরার শখ যান তাহলে এখন মরুন আমি
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো।
কুহু আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় রেললাইন দেখিয়ে
বলল,
– যান শুয়ে পড়ুন সেখানে। দেখবো মরতে
পারেন কিনা? আমার তো মনে হয়না আপনি
সত্যি সুইসাইড এটেম্প নিতেন। আপনি তো বর
সেজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে ব্ল্যাকমেইল
করে বিয়ে করবেন ভেবেছিলেন কিন্তু ভুল
ধারণা আপনার। আমি মরে যাব তারপরো
কলরবকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।
আমি তো আপনাকে বাঁচানোর জন্য এমন
করেছিলাম। মানবতা দেখিয়েছিলাম কিন্তু
এখন দেখছি আপনি একটা অমানুষ। বাহ্ কি
সাজ।
কুহু কথা বলতে বলতেই হাত দিয়ে কূজনের
পাগড়ী ফেলে দিয়ে পাগড়ীটায় পা দিয়ে
লাথি দিলো সাথে সাথেই কলরব কুহুর গালে
কষিয়ে চড় বসালো। কুহু কিংবা কূজন কেউ
এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কূজন হা হয়ে রইলো
আর কুহু গালে হাত দিয়ে নতমুখে দাঁড়িয়ে
রইলো। কলরব এতোটাই জোরে মেরেছে যে
কুহুর মাথা ঘুরাচ্ছে। কান সহ ব্যাথা করছে,গাল
জ্বলছে অনবরত। কুহুর সব কান্না যেন গলায়
আটকে গলা ব্যাথা করছে। কুহু মনে করতে
পারছে না লাস্ট ওর মা কিংবা বাবা ওকে
কবে মেরেছিল। কুহু আশেপাশে তাকিয়েই
দেখলো অনেকেই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে।
কুহু জোরে নিঃশ্বাস ফেললো সাথে কয়েক
ফোঁটা চোখের জলও পড়লো। অশ্রুভেজা
চোখে কলরবের চোখে চোখ রেখে বলল,
– আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার কে
দিয়েছে আপনাকে? এতো বড় স্পর্ধা কোথায়
পেয়েছেন?
অপমানে,লজ্জায়,রাগে কুহুর দম বন্ধ হয়ে
আসছে। মুখ দিয়ে আর কথা বের করতে পারছে
না, কানে প্রচণ্ডরকমের ব্যাথা করছে। রাগে
কাঁপছে সে কিন্তু কলরবকে কিছু বলতেও
পারছে না। হাত দিয়ে কলরবের বুকে বার বার
ধাক্কা দিয়ে কুহু কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু
চোখ দিয়ে পানি ঝরানো ছাড়া সে কিছুই
করতে পারছে না। বাকশক্তি যেন লুপ পেয়ে
গেছে। কুহুর ধাক্কা দেওয়ার চোটে কলরব
পিছিয়ে যাচ্ছে বারবার কিন্তু কুহুর রাগ
আরো বাড়ছে। রাগে কি থেকে কি করে
ফেলবে কুহুর মাথায় আসছে না। কুহুর মাথাও
ঘোরাচ্ছে, পায়ের জোর হারিয়ে ফেলছে,
দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও নিঃশেষ হয়ে
এলো। ধপ করে সেখানেই বসে পড়লো। তারপর
দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো।
চিৎকার করে কাঁদছে কুহু, আশেপাশের সব ভুলে
গেল সে। কে কি ভাবছে,কে কি বলছে
সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। কলরব কুহুর
অবস্হা দেখে দোকান থেকে একটা পানির
বোতল নিয়ে এলো। কুহুর পাশে হাঁটু মুড়ে বসে
বলল,
– পানিটা খাও।
কুহু কলরবের কথা শুনে ওর দিকে আগুন ঝরা
দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। কলরবকে আবার ধাক্কা
দিয়ে দূরে সরিয়ে কুহু উঠতে চাইলো কিন্তু
দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না। তাই বসে বসেই
কাঁদতে লাগলো। একসময় শামসু গাড়ি থেকে
পানি এনে দিতেই কুহু পানি খেলো। পানি
খেয়ে যেন কিছুটা শক্তি ফিরে পেল। তারপর
দাঁড়িয়ে কলরব আর কূজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আপনারা দুজনের একজনও আসলে
ভালোবাসতে জানেন না। একজন আমার সুখের
পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন আর আরেকজন
আমাকে অপমান করেছেন, আমার
ভালোবাসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আমার
কথার উপর বিশ্বাসই নেই। এতটুকু বলে কুহু একটু
শান্ত হলো।
কুহু থামতেই কলরব বলল,
– হয়েছে এখন? তাহলে চলো আজ তো তোমার
বিয়ে।
– আমি আপনার মতন এতো নীচু মন মানসিকতার
মানুষকে কখনোই বিয়ে করবো না। আপনার
থেকে তো আপনার পাগল ভাইও ভালো। আমি
ভালোবাসিনা বলার পরও হাজারবার আমার
পিছন পিছন ঘুরেছে আর আপনাকে
ভালোবাসি বলার পরও বলছেন আমি নাকি
টাইমপাস করেছি। আমাকে কি এমন মেয়ে
মনে হয়? আপনার থেকে এই সাইকোটাও
ভালো।
– হুম ওর সাথেই তোমার বিয়ে হবে। তুমি
আসলে ওকেই যে ভালোবাসো তা আবারো
প্রমাণিত হলো। মানুষ রেগে গেলে সত্যটাই
বলে। আমি যে তোমার কাছে ভালো না তুমি
আবারো বললে।
– ঠিকই তো বলেছি। যে বিয়ের আগেই এভাবে
গায়ে হাত তুলতে পারে তাও মাঝরাস্তায়
দাঁড়িয়ে সে কি ভালো নাকি? আর কিসব
বললেন না কোন নাগরের কাছে যাচ্ছি ছিঃ!
শেইম অন ইউ মিস্টার ইবনাত কলরব।
– হুম যাকে নিয়ে গর্ব করতে পারবে তার
হাতেই তুলে দিচ্ছি তোমাকে।
– আপনি তুলে দেওয়ার কে? আমি নিজেই
উনাকে বিয়ে করবো। উনি জানেন আমি অন্য
কাউকে ভালোবাসি তারপরো আমাকে
ভালোবেসে মরতে বসেছিলেন। উনি তো এও
বলেছেন আমি যদি বিবাহিত হতাম
বাচ্চাকাচ্চার মা হতাম তাহলেও আমাকেই
চাইতেন। আর দেখুন কোথায় আপনি আমি কার
কাছে যাচ্ছি জিজ্ঞাসা করছেন। আমি নাকি
দুই ভাইকে একসাথে….
– চলো কুহু সবাই জানার আগেই বাসায় পৌঁছুতে
হবে। মানুষজন জানে না।
– হুম যাবই তো আর আপনার চোখের সামনে
কূজনকে বিয়ে করবো। ওর সাথে থাকলে অনেক
বেশি ভালো লাইফও লিড করতে
পারবো,লাক্জারিয়াস লাইফ যাকে বলে।
আপনার মতন ফালতু মন মানসিকতার ছেলেকে
ভালোবেসে ভুল করেছি,চরম ভুল। এর চেয়ে
কূজনের বাবার টাকা দেখে কূজনকে বিয়ে
করে নেওয়াই ভালো ছিল।
– তোমাকে আটকেছে কে?
এখনো সুযোগ আছে।
– হুম তাই করবো।
– চলো।

কুহুকে দেখেই কুহুর মা কুহুর দিকে তেড়ে এলেন
এরপর এলোপাথাড়ি কানে গালে একের পর
এক থাপ্পর দিতে লাগলেন। কুহুর বাবা
অসহায়ের মতন কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে, পিহু
নির্বাক। কুহুর মায়ের মারের চোটে কুহুর দম
বন্ধ হয়ে আসছে, কান,গাল একাধারে জ্বলছে,
কুহু ফু্ঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে কিন্তু কুহুর মা যেন
থামার নামই নিচ্ছে না। সাহরা বাধা দিতে
যেতেই বলল,
– আপনাদের মতন সুকপাল না আমার। চরিত্রহীন
মেয়ে পেটে ধরেছি।
কুহুর মায়ের হাত ধরে কলরব
থামিয়ে বলল,
– আন্টি কুহু অবুঝ, নিজেই জানে না কি করে
আর কি ভাবে।
– কিসের অবুঝ সে? এই মেয়ে নিজেই বলেছিল
তোমাকে বিয়ে করতে চায় আর এখন
পালাচ্ছে।
– ভালেবাসার উপর জোর খাটানো চলে
না,মনের উপরও মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই।
কলরব কুহুর মাকে শান্ত করে নিজের মতন করে
পরিস্হিতি সামাল দিলো। এমনকি নিজে
দাঁড়িয়ে থেকে কুহু কূজনের বিয়েও দিলো।
কুহুকে কবুল বলার জন্য বলতেই কুহু একজর
কলরবের দিকে তাকালো তারপর চোখ বন্ধ
করে দম আটকে কবুল বলল। হাসনাদ সাহেব এসে
দেখলেন ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে। অবাক
হলেন প্রচন্ডরকমের। একটা ঘোরের মাঝেই
কুহুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সবকিছু ব্যবস্হা
করলেন। কুহু চলে যাওয়ার সময় কুহুর মা কিংবা
বাবা কুহুকে বিদায়ও দেয়নি। সাহরা,ইফতেখার
সাহেব,ইরিন কলরব, সঞ্জু অন্যরা সবাই মিলে
কুহুকে বিদায় দিলো। পিহু অবশ্য রাগ করে
থাকতে পারেনি। পিহু বোনকে জড়িয়ে দু
ফোঁটা চোখের জলও ফেলেছে। পিহুকে আর
ইরিনকে জড়িয়ে কুহু অনেক অনেক কাঁদলো।
ইরিনও কুহুকে জড়িয়ে পাগলের মতন কেঁদেছে
আর বলেছে,
– ভালো থেকো ভাবী আমাকে কিন্তু ভুলে
যেও না।
কুহু এর কোনো উত্তরই দিতে পারেনি কিন্তু
যাওয়ার সময় সাহরাকে বলে গেছে,
– মা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
কুহু টিকলিটা খুলে সাহরাকে দিয়ে দিলো
কিন্তু সাহরা সেটা কুহুকে ফিরিয়ে দিয়ে
বলেছে,
– কূজনও আমার আরেক ছেলে। রেখে দাও
তাহলে আর কোনো রাগ থাকবে না।
কলরবের দিকে একরাশ ঘৃণা নিয়ে কুহু
তাকাতেই কলরব এগিয়ে এসে হাসি মুখে
কূজনের হাতে হাত রেখে কূজনের হাত দিয়ে
কুহুর গালে হাত রেখে বলল,
– ফুলটুশী জীবনে অনেক অনেক বেশি সুখী হও।
তারপর আবারে হেসে বলল,
– সরি! আসলেই তোমার উপর আমার কোনো
অধিকার ছিল না তাই হাত তুলাটা ঠিক হয়নি।
ফুলটুশী আমার উপর রেগে থেকো না।
কুহু কূজনের হাত সরিয়ে কলরবের চোখে চোখ
রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দু’জনেই দু’জনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয়নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বৎসরের পর বৎসর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা
আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।”
কলরব বলল,
– খুব সুন্দর আবৃতি করো তুমি। যতদূর মনে পড়ে
তারাপদ রায়ের লিখা।
কুহু কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
– তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না কলরব,
বিশ্বাস করলে না। যে মেয়ে ভালোবাসতে
জানে সেরকম মেয়েকে খুঁজে বিয়ে করে
নিও,সুখের সংসার সাজিয়ো তার সাথে।
কুহু কথাগুলো বলতে বলতে রাস্তায় বসে
কাঁদছিল। কলরব ইরিনকে ডেকে বলল,
– তোর ভাবীকে তুলে গাড়িতে বসিয়ে আয়।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here