একটুখানি পর্ব : ৬৬

0
776

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ৬৬
কলরব অনেকক্ষণ ধরে কুহুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। গতকাল রাতে ফোন দেয়নি। কুহু বলেছিল পিহুর সাথে সারারাত গল্পগুজব করবে। তাই আর ফোন করেনি। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই কুহুকে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। বিছানা ছেড়েও উঠেনি কলরব। কুহুর ফোন বন্ধ পেয়ে কলরব পিহুর ফোনে কল করলো। কুহুকে ফোনে পাচ্ছে না কেনো জানতে চাইলে পিহু বলল,
– আপুণির মোবাইলে চার্জ নেই আর ফোন কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছি না।হয়তো মা রেখেছে। মা তো এখন ব্যস্ত তাই জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না।
– সমস্যা নেই মৌটুশী। কিন্তু তোমার মোবাইলটা ফুলটুশীকে দাও তো।
– আচ্ছা ভাইয়া দিচ্ছি কিন্তু মনে হয়না আপুণির বান্ধবীদের জ্বালায় কথা বলতে পারবেন।
কলরব হেসে বলল,
– দেখি পারি কিনা।
পিহু কুহুকে ফোন ধরিয়ে চলে এলো।
– হ্যালো! ফুলটুশী কি অবস্হা?
– জ্বি ভালো।
– আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা করলে না?
– খারাপ থাকার কোনো কারণ আছে কি?
– অবশ্যই আছে।
কুহু আতঙ্কিত গলায় বলল,
– কেনো কি হয়েছে আবার?
– জানো না আমার তো মরি মরি অবস্হা!
– ওহ্ এখন ঐ ডায়ালগটা মারবেন তাইনা?
– কোন ডায়ালাগ??
– ওই যে পুরুষ মানুষ দুই প্রকার। জীবিত আর বিবাহিত।
কলরব কুহুর কথায় গগণবিহারী হাসি হেসে বলল,
– নাহ্ আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে কাল রাতে কথা বলিনি যে তাই।
কুহু লাউড দিয়ে কথা বলছে। বান্ধবীরা আসলে কাজটা করেছে। ওরা শুনবে কলরব কি বলে। কলরবের কথা শুনে কুহুর বান্ধবীরা সব মুখ চেপে হাসছে।কুহুরও মজা লাগছে। কিন্তু কি বলে কথা কন্টিনিউ করবে ভেবে পাচ্ছে না। কুহুকে চুপ থাকতে দেখে কলরব বলল,
– তোমার বান্ধবীরা তো আমাদের কথা শুনছেই তাই ওদের সাথেও কথা বলি, কি বলো ফুলটুশী? তুমি আবার রাগ করবে না তো?
কুহুর বান্ধবী নীরা কুহুর হাত থেকে খপ করে মোবাইল নিয়ে বলল,
– এতো ভয় পান কেনো?
কলরব বলল,
– নাকের ডগায় রাগ যে? পরে রেগে গেলে আমার ফুলশয্যার বারোটা বাজবে।
– তাই তো বলি।
– আরে শ্যালিকারা আমি তো আগে ভাবতাম বিয়ের পর ঝগড়া হলে আমি দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো। ফুলটুশী আমার রাগ ভাঙাবে কিন্তু এখন দেখছি আমার ইচ্ছা আর পূরণ হচ্ছে না। ফুলটুশী মজার মজার রান্না করে আমার রাগ ভাঙাবে তো দূরের কথা উল্টো আমারি রাগ ভাঙাতে হবে।
– কীভাবে রাগ ভাঙাবেন বলুন দেখি।
– বলা যাবে না।
– কেনো?
– উঁহু বলবো না।
– আচ্ছা বলা লাগবে না কিন্তু ফুলশয্যা নিয়ে কি প্ল্যান বলে ফেলুন।
কুহু নীরার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো তারপর বলল,
– এখন রাখছি।
নীরা বলল,
– না না তোর ভালো না লাগলে নেই আমরা কথা বলছি তো।
কলরব হেসে বলল,
– আচ্ছা রাখি।
নীরা বলল,
– এই না বউকে এতো ভয় পেতে নেই। আমরা আপনার সাথে আছি তো সমস্যা নেই।
কলরব কুহুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– ফুলটুশী বলেই ফেলি। ওরাও তো তোমারি বান্ধবী। ওদেরও হয়তো তোমার মতোই নাগের ডগায় রাগ। না বললে যদি রাগ করে তোমাকে বাজে করে সাজিয়ে দেয় তখন কি করবো বলো?
নীরা বলল,
– হুম আমাদের নাকের ডগায় রাগ না থাকলেও রাগ তো আছেই ঠিক না? এখন বলে ফেলুন তো??
– কলরব কেশে বলল,
“যেমন আছ তেমনি এসো, আর কোরো না সাজ।
বেণী নাহয় এলিয়ে রবে, সিঁথি নাহয় বাঁকা হবে,
নাই-বা হল পত্রলেখায় সকল কারুকাজ।
আঁচল যদি শিথিল থাকে নাইকো তাহে লাজ।
যেমন আছ তেমনি এসো, আর করো না সাজ।”
এইটুকু শুনাবো ফুলটুশীকে।
নীরা কুহুকে চিমটি কেটে বলল,
– তোর রবীন্দ্রনাথ!
কুহু লজ্জা পেয়ে বলল,
– রবীন্দ্রনাথ না ছাই!
তারপর নীরার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে কল কেটে দিলো।
নীরা বলল,
– তোর কলরব দেখি বেশিই স্মার্ট।
কুহু লাজুকভাবে বলল,
– সবসময় বেশি বুঝে। আমাকে বলতেই হয় না কিছু।
কুহু কথা বলতে বলতেই দেখলো পিহুর মোবাইলে মেসেজ এলো। কুহু মেসেজ ওপেন করে পড়লো,
” কুহু! তুমি নতুন রঙে জীবন রাঙাও।
আর ক্ষণে ক্ষণে আমায় পুড়াও।
জীবন্ত লাশ হয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই শ্রেয়।
কূজন!”
মেসেজ দেখে কুহুর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। মাথা ঘুরতে লাগলো। নীরাকে বলল,
– একটু পানি খাওয়া তো।
– হুম আনছি কিন্তু তুই এভাবে কাঁপছিস কেনো?
আরেকজন বলল,
– ফুলশয্যার কথা শুনেই ভয় পেয়ে গেছে।
হাসির রোল পড়লো ঘরে কিন্তু কুহুর ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। কোনোমতে বলল,
– বড্ড পিপাসা পেয়েছেরে।
নীরা বলল,
– আচ্ছা আনছি।
কুহু মেসেজটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখজোড়ায় একরাশ ভয়। এর মাঝেই এই নাম্বার থেকে আবার কল এলো। কুহু রুম ছেড়ে বারান্দায় চলে এলো। সবাইকে বলেছে কলিগ ফোন করেছে নয়তো আসতে পারছিল না। কলরবের ফোন ভেবে আটকে রেখেছিল। কুহু বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করলো। কাঁপা গলায় বলল,
– হ্যালো!
কূজন ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
– যাক তোমাকে পেয়েছি। ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে তো তাই ভাবলাম মরার আগে তোমার সাথে শেষবারের মতন কথাও বলতে পারবো ন।
কুহুর মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছে না। তবুও বহু কষ্টে বলল,
– কি বলছেন এসব?
– কেনো জানো না? আজই তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড়দিন। এদিনটায় মরবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আচ্ছা আমি না চেয়েছিলাম ছাদ থেকে লাফ দিতে কিন্তু বেঁচে যাওয়ার চান্স আছে। বিষ খেলেও বেঁচে যেতে পারি। তাই ভাবলাম ফাঁসি দিয়ে মারা যাব।
কূজনের কথা শুনে কুহুর হাঁটু ভেঙে আসলো। পা গুলোতে শক্তি পাচ্ছে না যেন। ধপ করে বসে পড়লো কুহু।
কূজন আরো বলল,
– আমি কিন্তু সত্যি বলছি কুহু। তিন সত্যির পরো যে সত্যি থাকে জানো তো?
কুহু এবার কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
– আপনি না আমায় ভালোবাসেন?
– হুম বাসিতো তাই তো মরে যাব।
– প্লিজ চুপ করুন কূজন। এরকম কথা বলবেন না। যদি সত্যি ভালোবাসেন তাহলে আমার জন্য বাঁচুন।
– তুমি অন্য কারো বুকে মাথা রাখবে, জীবনের গল্প গুলো তাকেই শুনাবে আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না কুহু। বিশ্বাস করো কুহু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমার বুকের ভিতর যে কিরকম কষ্ট হচ্ছ তা তুমি বুঝবে না কুহু। আমি চাইলেই কলরব ভাইকে মেরে ফেলতে পারি কিন্তু ভাই তো আমার।
কলরবকে মেরে ফেলার কথা বলার সময় কূজনের গলা ধরে এসেছিল। কুহু সেটা শুনে আকুতির স্বরে বলল,
– প্লিজ ওকে কিছু করবেন না।
– আরে না ভাই হয় আমার। ভাইকে কীভাবে মেরে ফেলি বলো? কিন্তু অনুভূতি গুলোকেও যে মারতে পারছি না। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস তোমার জন্য গুঁমড়ে কাঁদে। এই বুকের মাঝে এতো বেশি যণ্ত্রনা যে আর নিতে পারছি না কুহু। একদিকে ভাই,অন্যদিকে তুমি। তাই বলছি নিজেকেই মেরে ফেলি সবচেয়ে ভালো হবে।
কুহু বলল,
– প্লিজ এমন করবেন না।
– তুমি কলরব ভাইকে বিয়ে করো না প্লিজ। আমি সহ্য করতে পারবো না।
কুহু ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তারপর বলল,
– আমি কলরবকে ছাড়া বাঁচবো না। আপনি কেনো জোর করছেন?
– আমি জোর করিনি কুহু মিনতি করছি। জোর করতে চাইলে কবেই তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারতাম।
– ইমোশনাল ব্লেকমেইল করছেন।
– নাহ্ আমি শুধু জানান দিচ্ছি এই কূ্জন কুহুকে কতো ভালোবাসে। শুনুন আমার আগের ডায়রিটা যেটায় কবিতা লিখেছিলাম সেটা পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। আরো দুইটা আছে যেগুলোতে কবিতা নেই কিন্তু শুধু তোমাকে নিয়েই অনেক লেখা। ওগুলো তোমার আর ভাইয়ের বিয়ের উপহার। বাবা মা হয়তো তোমাকে খুব দামি কিছু গিফ্ট করবে কিন্তু আমার পক্ষ থেকে আমার অনুভূতিগুলোই দিব। আমার কাছে এগুলোর চেয়ে দামি কিছুই আর নেই। আমার লাগেজে রেখে যাব পরে নিয়ে নিও। আমায় তো আর ভালোবাসবে না কখনো কিন্তু মাঝে মাঝে ডায়েরীর পাতায় চোখ বুলিয়ো। বহুদূর থেকে আমি এতেই সুখ খুঁজে নিব। কিন্তু জীবদ্দশায় তোমাকে অন্য কারোর হতে দেখতে পারবো না।
– প্লিজ একটু শান্ত হোন।
– নাহ্ আমি অনেক চেয়েছি কিন্তু পারছি না নিজের সঙ্গে। বেঁচে থাকলে হয়তো তোমার আর ভাইয়ের ক্ষতি করবার ইচ্ছা জাগতে পারে। আমি না আসলেই কেমন পাগলের মতন হয়ে গেছি। বিশ্বাস করো অনেক লড়াই করেছি নিজের সাথে কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। রাখছি জানালার পাশের কুহু! ভালো থেকো আর মাঝে মাঝে আমায় নাহোক আমার অনুভূতিগুলোকে ভালোবেসো।
কুহু কিছু বলতে পারলো না। এর আগেই কূজন ফোন বন্ধ করে দিলো। কুহু মোবাইল হাতে নিয়েই কাঁদতে লাগলো। চুল টানতে লাগলো তারপর নিজের গালেও কয়েকটা চড় দিলো। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। নীরা পানি নিয়ে এসে কুহুকে এই অবস্হায় দেখে পিহুকে ডেকে নিয়ে এলো। তারপর দুজন মিলে কুহুকে স্বান্তনা দিতে লাগলো। কবরীও এসে মেয়েকে বুঝাচ্ছেন এটাই মেয়েদের জীবন,আর কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তেই হয়। ভালোবাসার ঘর বাঁধতে স্নেহের বন্ধন হৃদয়ে নিয়েই দূরে চলে যেতে হয়। আর কুহু তো কাছেই থাকবে। যখন ইচ্ছা চলে আসতে পারবে। কুহুকে এসব বুঝিয়ে সবাই চুপ করালো। তারপর পার্লারে পাঠাতে চাইতেই কুহু গেল না। কুহু কাঁদতে কাঁদতে আধা মরা হয়ে আছে। পার্লারে যাওয়ার মতন কোনো মানসিকতাই নেই। তাই কবরী পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান বাসা নিয়ে এলেন। কুহু সাজতে চাইলো না জোর করে সাজালো। সাজানো শেষ হতেই বিউটিশিয়ানকে নিয়ে পিহু বাইরে গেল। কুহুর বান্ধবীরাও সবাই সাজতে ব্যস্ত। কুহু দরজা বন্ধ করে একে একে সব গহনা খুলে ফেললো। তারপর সব আলমারিতে রেখে আলমারি থেকে ব্যাগ নামালো। কিছু কাপড় চোপড় নিলো, আর কুহুর কাছে যা টাকা ছিল নিয়ে নিলো। ইরিন,কোচিং আর স্কুল এর বেতন জমিয়ে কুহুর কাছে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আছে। এছাড়া সবসময় যে কানের দুল জোড়া পড়তো সাথে নিয়ে নিলো। পিহু রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখলো ভিতর থেকে আটকানো। তাই কুহুকে ডাকলো। কুহু দরজা খুলেই পিহুকে টেনে ভিতরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। পিহু কুহুকে দেখে বলল,
– কিরে সব গহনা খুলে ফেলেছিস যে? সারাদিনই কিন্তু এই ভারি জিনিসগুলো পরে রাখতে হবে। কীভাবে পরে থাকবি এগুলো?
কুহু বলল,
– তুই খেয়েছিস?
– নাহ্ এতো তাড়াতাড়ি নাকি?
– আচ্ছা আমার না ক্ষিধে পেয়েছে একটু খাবার নিয়ে আয় তো।
পিহু খাবার নিয়ে আসতেই কুহু নিজ হাতে মেখে পিহুকে খাইয়ে দিলো। পিহু খেতে চাইলো না কিন্তু কুহু খাওয়ালো নিজেও দুই এক লুকমা মুখি দিলো। খাওয়া শেষ হতেই কুহু বলল,
– আমি চলে যাচ্ছি পিহু।
– হুম তা তো জানি আবার প্লিজ কান্না কাটি শুরু করিস না।
কুহু পিহুকে আঙুলের ইশারায় ব্যাগটা দেখালো তারপর সব বলল। পিহু সাথে সাথে ঝাড়ি দিয়ে বলল,
– তোর আসলে নিজেই ঠিক নেই। কয়েকদিন কলরব কলরব করে পাগল ছিলি আবার আজকে কূজন কূজন শুরু হয়েছে। এতো কারখানা করে ঢাকা থেকে ডেকে আনলি, দুদিনে বিয়ের ব্যবস্থা করলি আর এখন কূজনের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছিস।
কুহু শান্ত স্বরে বলল,
– আমি কারোর সাথে পালিয়ে যাচ্ছি না, সবার থেকে পালিয়ে যাচ্ছি।
– গাধামী করিস না আপুণি। কূজন মরলে মরুক তোর কি?
কুহু কিছু বললো না। ওড়না দিয়ে পিহুর হাত মুখ সব বাঁধলো। পিহু হঠাৎ করে কিছুই বুঝতে পারলো না। যখন বুঝলো ততক্ষণে কুহু পিহুকে টেনে বাথরুমে নিয়ে আরো আঁটসাঁট করে বাঁধলো। তারপর পিহুর সারা মুখে চুমু দিয়ে বলল,
– সরি! পিহুন। সোনা বোন আমার আমি যেখানে যাওয়ার সেখানে যেয়েই সবাইকে ইনফরম করে দিব। তারপর তুই ছাড়া পেয়ে যাবি। আর এর আগে জানাজানি হয়ে গেলেও সবাই তোকে খু্ঁজে বের করবে। আর খাইয়ে দিয়ে গেলাম কতক্ষণ থাকতে হয় তাই। আসলে কিছু করার নেই।
পিহু কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখ বাঁধা তাই বলতে পারছে না। কুহু ইচ্ছে করে মুখের বাঁধন খুলছে না কারণ সে জানে পিহুর কথা শুনলে আর যেতে পারবে না সে। পিহুর চোখ দিয়ে অজস্র পানি ঝরছে। কুহু পিহুর চোখের পানি মুছে দিয়েই বাথরুমের দরজা আটকে বেরিয়ে পড়লো। তারপর ব্যাগ হাতে বেরুতে যেয়েও থমকে দাঁড়ালো। আলমারি খুলে রেখে যাওয়া গহনাগুলো থেকে কলরবের মায়ের দেয়া টিকলি আর নিজের মায়ের দেয়া বালা জোড়া নিয়ে নিলো। টিকলি আর বালা জোড়া পরে দরজা খুলে বেরুতেই কুহুর ভাই সঞ্জুর বউ বললেন,
– ননদিনী কিসের ব্যাগ? আর গহনা খুলে ফেলেছো যে?
কুহু হেসে বলল,
– ভাবী আমার স্কুল এর কলিগরা এসেছে। ওদের এগিয়ে আনতে যাচ্ছি।
– উমা তুমি কেনো যাবে? দাঁড়াও আমি সঞ্জুকে বলছি।
– ভাইয়া কেটারিং এর কাজে ব্যস্ত তাছাড়া আমি পিহুকেই পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ও আসলে এই ব্যাগটা নিতে ভুলে গেছে।
– কি এটায়?
– পরীক্ষার খাতা। কিছু দেখা শেষ কিন্তু বিয়ের পর কয়েকদিন তো ছুটিতে থাকবো তাই যা সবগুলো দেখতে পারবো না। কিছু দেখেছি আর কিছু বাকি। পিহু নিতে ভুলে গেছে ভালোই হলো। আমি যেগুলো দেখা হয়নি সেগুলো আলাদা করে বুঝিয়ে দিতে পারবো যে এগুলো দেখতে হবে আর এগুলো না।
– সিরিয়াল মেন্টেন করে দেখোনি কেনো?
– আসলে ভুল করেছি।
– ওরা আসলেও তো দিতে পারতে।
– নাহ্ যাকে দিবো সে বিয়েতে আসতে পারবে না। উনার আবার নিকটাত্মীয়র বিয়ে এখানে শুধু খাতাটা নিতেই এলেন আর তাই ভিতরেও আসতে চাইছেন না।
– ওহ্ তাহলে যাও দিয়ে দাও।
– হুম গলির ভিতর বোধহয় এসেও গেছে আমি যাই। আর গহনাগুলো পরে আমি নীচে যাব না ভয় করে তাই খুলে রেখেছি। আমি আসলে আমাকে পরিয়ে দিও।
কুহু ভাবীকে এ কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কবরী আর তৈয়ব সাহেব কাজে ব্যস্ত তাই ওদের মুখোমুখি হতে হয়নি। কুহু বাসা থেকে বেরিয়ে বাড়ির পিছন দিকের কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলে এসেছে। গলির রাস্তায় যায়নি। পিছন দিকের রাস্তায় মানুষের চলাচল নেই কিন্তু কুহু রাস্তাটা চিনে। দুই বোন শর্টকাটের জন্য এই রাস্তা দিয়ে প্রায় যায়,হেঁটে যেতে হয় আরকি, রিকশা নেই তেমন একটা। কুহু হেঁটে হেঁটেই রাস্তাটা পেরুলো তারপর মেইন রাস্তায় উঠে রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করে উঠে পড়লো।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here