একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ৬৩
মাঝরাতের দিকে কুহুর আবার ঘুম ভেঙেছিল। কতক্ষণ এপাশ ওপাশ ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিলো চুড়িগুলোর জন্য। কলরব কতো শখ করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ এসব ভেবে নিজেই মনস্হির করলো যা করেছে ঠিকই করেছে। দরকার নেই এসব আদিক্ষেতার। যে সিচুয়েশনটায় পাশে থাকা জরুরি সেময়ই কলরব পালিয়ে বেরাচ্ছে। দরকার নেই এমন মানুষের দেওয়া উপহার কাছে রাখার। সে কি চাকুরী ছাড়তে বলেছিল? তা তো বলেনি, বলেছে ছুটি নিয়ে আসতে, বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর আবার চলে গেলেই তো পারতো। এতো ঘটা করে বিয়ের দরকার নেই কুহুর। শুধু কলরবকে দরকার কিন্তু কলরবই তো বুঝতে পারছে না। এগুলো ভাবতে ভাবতে আর কাঁদতে কাঁদতে কুহুর একটু চোখ লাগতেই এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। হাত বাড়িয়ে এলার্ম বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলো তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে পিহুকে ডেকে তুললো। পিহু উঠতে চাইলো না কুহু জোর করে উঠিয়ে নামাজ পড়তে বলল। এই শীতের সময় পিহু সকালে উঠতেই চায় না তবে কুহু প্রতিদিনই টেনেটুনে বিছানা থেকে নামায় তারপর ধাক্কিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায়। আজও তাই করলো। পিহুকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে নামাজ সেড়ে নিলো তারপর চুপচাপ কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। কবরী এসে কুহুকে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন,
– কিরে পিহু উঠে গেল আর তুই উঠলি না যে?
– আমি নামাজ পড়ে মাত্রই বিছানায় এলাম।
কবরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– এখন আর শুয়ে থাকতে হবে না উঠে পড়।
– মা আমার উঠতে ইচ্ছা করছে না।
কবরী কুহুকে টেনে বসালেন। কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,
– আশ্চর্য আম্মু একদিন শুয়ে থাকলে কি হবে?
কবরী হেসে বললেন,
– কলরব যে এসে বসে আছে।
কুহু মায়ের কথা শুনে হা হয়ে গেল। কুহুর মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমার মেয়ের কি তেজরে বাবা! আমি এখনো পারলাম না তোর বাবাকে দিয়ে মতের বিরুদ্ধে একটা কাজ করাতে আর আমার মেয়েতো বিয়ের আগেই বরের মন কেঁড়ে নিয়ে বসে আছে। কি ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে না কি হয়েছে রাতের মধ্যেই এসে হাজির।
অন্য যেকোনো সময় হলে কুহু লজ্জা পেত কিন্তু এখন লজ্জা পাচ্ছে না বরং রাগ হচ্ছে খুব। মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কুহু আবার শুয়ে পড়লো। কবরী বিস্ময়ভরা কণ্ঠ নিয়ে বললেন,
– শুয়ে পড়লি যে?
কুহু শান্ত স্বরে বলল,
– তুমি আনিয়েছো তাইনা?
– আরে না আমি তো ফোনই করিনি। তুই যা বললি তারপর কি আর সাহস আছে নাকি?
কুহু কিছু বলল না কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে চুপচাপ শুয়ে রইলো। কবরী আর কথা বাড়ালেন না। মেয়েকে কষিয়ে দুইটা থাপ্পর দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু দিলেন না। এখন নাস্তার ব্যবস্হা করা উচিত। ছেলেটার অবস্হা হয়েছে দেখার মতন। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চোখজোড়া ঘুমে ভেঙে আসছে। কলরবকে দেখেই কবরীর খুব মায়া হলো। কুহুর উপর প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত তিনি। কি হয়েছে না হয়েছে না জানলেও কবরীর ধারণা কুহু শুধু শুধুই এতো রাগ দেখাচ্ছে। কলরবকে জিজ্ঞাসাও করেছেন কিন্তু কলরব মুখ খুলেনি বরং কথা ঘুরিয়ে নিয়েছে। কবরীও আর বেশি প্রশ্ন করেননি এমনিতে নিজের মেয়ের কর্মকাণ্ডে তিনি লজ্জিত। কুহুর ভাবনা ছেড়ে কবরী রান্নাঘরে কলরবের জন্য খাবার রেডি করতে লাগলেন। পিহু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো কুহু শুয়ে আছে। কুহুকে ঘাঁটালো না সে। বইখাতা নিয়ে ডাইনিংরুমে চলে এলো পিহু। নামজটা সেড়েই পড়তে বসবে। ড্রয়িংরুমে লাইট জ্বলতে দেখে পিহু মনে করলো বাবা বোধহয় নিভাতে ভুলে গেছে। লাইটের সুইচ অফ করতে ড্রয়িংরুমে যেতেই পিহু কলরবকে দেখলো। ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে। পিহুকে ভীষণভাবে অবাক হতে দেখে কলরব হেসে বলল,
– কি খবর মৌটুশী?
– জ্বি ভাইয়া ভালো, আপনি?
কলরব হেসে বলল,
– তোমাকে কানে কানে একটা কথা বলি।
পিহুর বিস্ময়ভরা চাহনী দেখে কলরব গগনবিহারী হাসি হেসে বলল,
– আরে কথার কথা বলেছি আরকি কিন্তু কথাটা সিক্রেট কাউকে বলো না কিন্তু।
পিহু অবুঝের মতন বলল,
– কি?
কলরব সোফা ছেড়ে উঠে এসে পিহুর সামনে দাঁড়ালো তারপর নীচু গলায় বলল,
– ফুলটুশী অনেক ক্ষেপেছে। কীভাবে ভালো থাকি বলো তো? ফুলটুশীর সাথে কথা বলতে না পারলে ভালো থাকা কাকে বলে আমি তাও ভুলে যাই।
পিহু কলরবের কথায় ম্লান হেসে বলল,
– আপুণির রাগ যেমন বেশি আবার মনটাও বেশি নরম। অনেস্টলি একটা কথা বলি আমি যদি আমার বোনের জায়গায় থাকতাম তাহলে আপনার ভাইকে প্রতিবেশীদের দিয়ে মার খাওয়াতাম। ও তো অনেক সহ্য করেছে ইভেন প্রথমে আপনাকে জানাতেও চায়নি পাছে আবার না আপনাদের দুই ভাইয়ের মাঝে প্রব্লেম ক্রিয়েট হয়। পরে নিরুপায় হয়ে জানিয়েছে।
কলরব পিহুর কথায় তাল না মিলিয়ে বলল,
– আচ্ছা কোমল বললে বেশি ভালো হতো না?
পিহু কণ্ঠে হতাশা মিশিয়ে বলল,
– আপুণির সঙ্গে থেকে থেকে আপনিও আপুণির মতন হয়ে যাচ্ছেন।
কলরব হেসে বলল,
– আগে একটা প্রেম করো তারপর বুঝবে।
পিহু দুই পাশে হাত নাড়িয়ে বলল,
– ওরে বাবা আমি এসব ছঙ করতে পারবো না কখনো।
কলরব কিছু বলল না শুধু হাসলো। তারপর বলল,
– তা আমার মেডাম কোথায়?
– শুয়ে আছে।
– ও তো এসময়ে ঘুমায় না শরীর খারাপ না তো আবার?
– নাহ্ হয়তো আপনি এসেছেন শুনেছে তাই জিদ করে শুয়ে আছে।
– হয়তো! আচ্ছা আমি কি তোমাদের রুমে যেতে পারি? আঙ্কেল আন্টি কিছু বলবেন না তো?
পিহু একটু ভেবে বলল,
– আম্মু রান্নাঘরে টের পাবে না আর আব্বু তো মসজিদে।
– মৌটুশী তুমি মাইন্ড করবে না তো?
– নাহ্ দুলাভাইয়ের কোনো কথায় মাইন্ড করা মোটেও ঠিক না।
– হুম শ্যালিকার কোনো কাজেও মাইন্ড করা ঠিক না।
– ভাইয়া বুঝলাম না।
– আমার বাস্কেটবলটা তোমাদের কাছে তাইনা?
পিহু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো তারপর ইনিবিনিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তখন কলরব বলল,
– মৌটুশী আমি কিন্তু জানতাম।
– মজা করে নিয়েছিলাম।
– আরে চাপ নিচ্ছো কেনো আমিও মজা করেই বলেছি।
পিহু লজ্জায় আর কথা না বাড়িয়ে বলল,
– চলুন আপুণির সাথে দেখা করবেন।
– হ্যাঁ চলো, মেডামের রাগ ভাঙাতে হবে।
কলরব কুহুপিহুর বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পিহুকে বলল,
– আগে ফুলটুশীকে জানান দাও আমি আসছি।
– আপুণি তো জানেই।
– নাহ্ আমি বলতে চাচ্ছি ও তো শুয়ে আছে ওকে বলো আমি কথা বলতে আসছি।
পিহু বুঝতে পারলো বিষয়টা। কলরবকে রুমের বাইরে দাঁড় করিয়েই পিহু কুহুকে ডাকলো।
– আপুণি উঠ না।
– ভালো লাগছে না আমার।
– ভালো লাগার মানুষ এসে গেছে।
– একদম দালালি করবি না, কয় টাকা খেয়েছিস?
– নারে টাকা খাইনি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়েছিলাম।
কুহু মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে পিহুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। পিহু কুহুর দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,
– কলরব ভাই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
– আমি কোনো কলরবকে চিনি না।
কলরব দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিল তাই জবাব দিল,
– ভিতরে আসি তারপর চিনে নিও।
কলরবের কন্ঠ শুনে কুহু হুড়মুড় করে উঠে বসলো। পায়ের কাছে উড়না পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি শরীরে জড়িয়ে পিহুকে বলল,
– উনি যেন এখানে না আসেন। এটা তো অফিস না, রাস্তা ভুলে এলেন নাকি?
কলরব কুহুকে উঠে বসতে দেখে দরজা ঠেলে ভিতরে চলে এলো।
পিহু বলল,
– আমি আসছি আর আপুণি আস্তে চিৎকার করিস আম্মু কিন্তু জানে না।
কুহু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– আস্তে চিৎকার কীভাবে করে?
কলরব পিহুকে তাড়া দিয়ে বলল,
– মৌটুশী আস্তে চিৎকার পড়ে বুঝিয়ো এখন যাও তাড়াতাড়ি কথা বলতে হবে আমাদের।
কুহু প্রতিবাদী সুরে বলল,
– কিসের কথা আমাদের? পিহু কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। উনাকে বল চলে যেতে।
পিহু কুহুর কথায় কান না দিয়ে চলে যেতেই কলরব চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসলো। তারপর বেশ রস মিশিয়ে বলল,
– কলরবকে চিনো না ফুলটুশী?
কুহু কলরবের দিকে তাকিয়ে বলল,
– না।
– আচ্ছা আমি চিনিয়ে দিচ্ছি। কিচিরমিচিরকে চিনো? ওদের আব্বু। কুহুরব…..
– একদম অশ্লীল কথা বলবেন না।
– অশ্লীল কথা কই বললাম?
– কোনো কথাই বলবেন না আপনি বরং অফিসের বস,কলিগদের ফোন দিয়ে কথা বলুন।
– আহা ফুলটুশী চলে এলাম তো।
– কেনো এসেছেন জানি তো আম্মু আব্বু ফোন করিয়ে আনিয়েছে তাইনা?
কলরব পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কুহুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
– চেক করো!
– মোবাইলটা কিন্তু ভেঙে ফেলবো।
– কেনো?
– কল হিস্ট্রি ডিলিট করে…
– আরে বাবা তোমার বিশ্বাস না হলে একটু পর কল হিস্ট্রির কাগজ তুলে চেক করে নিও।
কুহু এবার একটু শান্ত হলো। কুহুর চেহারার পরিবর্তন দেখে কলরব বলল,
– ফুলটুশীর কি রাগ পড়েছে?
কুহু কোনো কথা বলল না। কুহুর কাছে জবাব না পেয়ে কলরব আবারো একই প্রশ্ন করলো। কুহু এবার চুপ না থেকে কলরবকে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা একটা মেয়েকে জোর করে ছাদে আটকে রাখাটা কি খুব বেশি সাধারণ বিষয়? পিছু নেওয়া, পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকা,বাসা পর্যন্ত চলে আসা, জোর করে হাত ধরে রাখা এগুলো খুব সাধারণ না? হয়তো সাধারণ কিন্তু আমার কাছে এগুলো ভয়ঙ্কর মনে হয়। এরকম পরিস্হিতিতে কোনোদিনও পড়িনি। কাউকে যে বলবো তাও পারছি না। আম্মু,আব্বুকেও বলছিনা কারণ আমি চাচ্ছিলাম না কোনো ভেজাল লাগুক। আপনাকে বলেছিলাম শুধু। ভেবেছি আপনি তাড়াতাড়ি সব ঠিক করে দিবেন। আমি কিরকম ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি এটা কখনোই বুঝবেন না। কোথায় ভাইকে বুঝাবেন তা না করে আমাকে বুঝাচ্ছেন। আপনি তো কি সুন্দর চাকুরী চাকুরী করছেন আর এদিক দিয়ে আমার জান যায় যায় অবস্হা।
কুহু কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো। কলরব অনুনয় করে বলল,
– কুহু তুমি প্লিজ কেঁদো না। তোমাকে কাঁদতে দেখলে বড্ড বেশি যন্ত্রণা হয়।
কুহু কান্না না থামিয়েই বলল,
– কেনো আসলেন এখন? না আসতেন। কূজনের অত্যাচারে মরে যাওয়ার পর আসতেন। আমি কূজনকে কম বুঝিয়েছিলাম? ভালোবাসা কি জোর করে হয়? উনাকে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না কতোটা ডেস্পারেট।
– কুহু এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখো আমি কিন্তু বাসায়ও যাইনি সরাসরি এখানে চলে এসেছি।
– কিছু ঠিক হবার দরকার নেই। আপনি ঢাকা যাবেন নাকি বাসায় যাবেন যান।
– ফুলটুশী আমি তো তোমার কথায় এসেই পড়লাম।
– আর আসা লাগবে না।
কুহু কথাটা বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর দরজা খুলতে নিতেই কলরব পিছন থেকে দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কুহু দরজা টেনেও খুলতে পারলো না। কুহু বিরক্ত হয়ে কলরবের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই কলরব বলল,
– তোমাকে না বললাম কেঁদো না। তোমাকে কাঁদতে দেখলে অনেক বেশি কষ্ট হয়। এখন কিন্তু তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে। পরে আমাকে কিন্তু কোনো দোষ দিবে না।
– একদম ঢং করবেন না। মিথ্যাবাদী, ফাঁকিবাজ লোক কোথাকার! এখন কীভাবে চলে এলেন? চলে আসাটা না অসম্ভব?
– আরে ফুলটুশী বহু কষ্টে চাচা,মামার জোর খাটিয়ে এসেছি।
– চাকুরীটা গেছে না আছে?
– আছে সুরভীর খালু হেল্প করেছে তাই আসতে পেরেছি।
কুহু ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে বলল,
– সুরভীটা কে?
কুহুর এমন ভয় পাওয়া দেখে কলরব গগণবিহারী হাসি হেসে বলল,
– আরে আমার ব্যাচমেট। তাছাড়া ও ম্যারেড আমার বন্ধু রঞ্জুর উয়াইফ।
কুহু সামান্য কেশে বলল,
– এতে এতো হাসার কি আছে?
কলরব আহ্লাদী স্বরে বলল,
– নাহ্ নেই তবে প্রেম জাগার আছে গো!
কুহু এবার আস্তে করে বলল,
– আপনি আজকেই ঢাকা চলে যাবেন আমার সমস্যা নেই।
– হায় খোদা এখনো ফুলটুশীর রাগ ভাঙলো না?
– ভেঙেছে! আপনার গগণবিহারী হাসি দেখেই ভেঙে গেছে।
– তাহলে চলে যেতে বলছো যে?
– নাহ্ মানে আজকেই বিয়েটা সেড়ে ফেলুন তারপর আপনি ঢাকা ব্যাক করুন সমস্যা নেই। পারলে আমাকেও সাথে নিয়ে চলুন আর না নিতে পারলেও কোনো সমস্যা নেই। আপনার বউ হতে পারলেই হলো। আমার সব টেনশন কমে যাবে।
– আরে নাহ্ ম্যানেজ করেই এসেছি সমস্যা নেই।
কুহু নাছোড়বান্দার মতন বলল,
– প্লিজ কলরব এতো ঘটা করে বিয়ের দরকার নেই। পরে বড্ড বেশি দেরি না হয়ে যায়! আমার খুব ভয় হচ্ছে কলরব। কূজন আমাদের বিয়েটা কোনোভাবেই হতে দিবে না। প্লিজ কলরব কিছু একটা করুন।
কলরব কুহুর দিকে আরো এগিয়ে এসে বলল,
– কিছু একটা না অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কুহু কলরবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
– সবসময় ফাজলামি ভালো লাগে না।
কলরব বলল,
– তুমি একটু আগে আমাকে তিনবার কলরব বললে।
কলরবের কথায় কুহু পাত্তা না দিয়েই বলল,
– বললে বলেছি এখন প্লিজ বলুন বিয়েটা তাড়াতাড়ি করবেন নাকি?
– এতো তাড়াহুড়া কিসের তোমার?
– কেনো জানেন না?
– আচ্ছা বাবা দেখি কি করা যায়।
– একদম দেখি কি করা যায় এমন কথা বলবেন না। শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
– ইশ্ ফুলটুশীর নাকের ডগায় রাগ ঝরে ঝরে পড়ে। এত্তো রাগ?
কুহু দরজা ঢেলে বের হতে হতে বলল,
– কত্তো রাগ জানেনও না।
– কোথায় যাচ্ছো?
– চুড়ি আনতে যাচ্ছি।
কলরব অবাক হয়ে বলল,
– মানে?
কুহু অপরাধীর মতন বলল,
– বেশি রাগ উঠে গিয়েছিল তাই আপনার দেওয়া চুড়িগুলো ফেলে দিয়েছিলাম।
– কিহ্?
কুহু অসহায়ের মতন কলরবের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কুহুর চোখজোড়ায় পানি টলমল করতে দেখে কলরব বলল,
– এই বোকা মেয়ে আমি রাগ করিনি।
– আমি এখনি নিয়ে আসছি। আপনাদের ছাদে ফেলেছিলাম। সেগুলো সেখানেই থাকবে। কেউ তো আর নিতে আসবে না। আপনি প্লিজ রাগ করবেন না।
কলরব হেসে বলল,
– আমার কি ফুলটুশীর মতন এতো রাগ আছে নাকি? ওগুলো আর আনা লাগবে না আমি নতুন কিনে দিব।
– নাহ্ লাগবে।
– বললাম তো লাগবে না। পুরোনো জিনিসের দিকে ফিরে তাকাতে নেই। আমার ফুলটুশীর জন্য নতুন এনে দিব।
– নাহ্ আমার নতুন কিছু লাগবে না কিন্তু ঐ চুড়িগুলোই লাগবে।
– তুমি আমার কোনো কথা শুনো না কুহু।
– আচ্ছা বাবা ঐগুলোও লাগবে না। আমার না কিছুই লাগবে না শুধু মিসেস ইবনাত কলরব হতে পারলেই চলবে।
কুহুর কথায় কলরব আর কুহু দুজনেই একসাথে হাসতে লাগলো। কবরী তা দেখে শান্তি পেলেন। কুহুর এরকম রাগের কারণেই কুহুকে নির্ভেজাল কূজনের কাছে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যাতে সংসারে চলতে কষ্ট না হয় কিন্তু আজ কলরবকে দেখে মনে হলো কলরব কুহু আর তার পরিবারের মাঝে সবসময় ব্যালেন্স রেখে চলতে পারবে,ভবিষতে তেমন কোনো সমস্যা নেই।
চলবে…