একটুখানি পর্ব : ৬৪

0
907

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ৬৪
কলরব কুহুর কথায় সত্যি সত্যি দুদিনের মাঝে বিয়ের
ব্যবস্হা করলো। কবরী আর তৈয়ব সাহেবের মাথায়
যেন বাজ পড়লো। কি থেকে কি করবে না করবে
কিছুই বুঝতে পারছে না। সাহরা তো বেশ কয়েকদিন
আগে থেকেই প্ল্যানিং করা শুরু করে দিয়েছিলেন
তাই বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না। কিন্তু কুহুর মা বাবা
ভেবেছিলেন কলরব ফিরে এলে তারপর সব
আয়োজন করবে। কলরবের ফিরে আসার পরও
হাতে সপ্তাখানেক এর সময় ছিল কিন্তু হঠাৎ করে
কলরব ফিরে এসে দুদিন এর মাঝে বিয়ের প্রস্তুতি
নিতে বলল। তৈয়ব সাহেব মানতে চাইলেন না কিন্তু
কবরী রাজি করিয়ে ফেলেছে। কলরব কুহুদের
বাসা থেকে ফিরেই সাহরাকে বুঝিয়ে ম্যানেজ
করে নিয়েছে। আর সাহরা রাজি করিয়েছে
কবরীকে। তারপর শপিং শুরু করে দিয়েছে। পরের
দিন হলুদ আর এরপরই বিয়ে। তৈয়ব সাহেবের মন
বেজায় খারাপ। খুব ধুমধাম করে বড় মেয়ের বিয়ে
দিবে ভেবেছিলেন কিন্তু তা আর হলো কোথায়।
তারপরো মনকে মানিয়ে নিয়েছেন। মেয়ে
চোখের সামনেই থাকবে আর কলরবকে তো
তিনি প্রথম থেকেই খুব বেশি পছন্দ করেন। কলরব
যেহেতু চাচ্ছে তাই আর বেশি জোর খাটালেন না।
ইরিনের তো উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। শপিং এর সময়
কুহু যেতে চায়নি কিন্তু সাহরা জোর করে সাথে
নিয়েছেন। কুহু আবার পিহুকে ছাড়া যাবে না তাই পিহুও
সাথে গেল। কলরবকে বলতে হয়নি সে নিজ
থেকে সেধেই সাথে গিয়েছে। সাহরা কূজনকে
সাথে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কূজন আসেনি,
কলরবও বেশি কিছু বলেনি। কুহুর খুব শখ ছিল
বিয়েতে লাল বেনারসি পরবে কিন্ত কলরব চাচ্ছিল
মেরুন লেহেঙ্গা তাই কুহু লেহেঙ্গাই নিলো।
কলরব আবার মশকারা করে বলেছেও,
– ফুলটুশী! তোমার ইচ্ছাটা তোমার ননদিনীর উপর
চাপিয়ে দিয়ো।
ইরিন রাগত স্বরে বলেছে,
– কেনো আমাকেই সবসময় খোঁচাও তুমি? পিহু
আপুকে পাও না?
কলরব গগণবিহারী হাসি হেসে বলে,
– মৌটুশী! কি বলো তোমারটা আমি চয়েজ করতে
পারলে কেমন হতো?
পিহু উত্তরে শুধু হাসলো বেশি কিছু বললো না। সবার
সাথে কথা বলে তার এতো অভ্যাস নেই। কিন্তু যার
সাথে বলে তার আবার কান শেষ করে ফেলে।
কলরব এর পছন্দেই সব কেনাকাটা হয়েছে। তবে
কলরবের শেরওয়ানি আবার ইরিন পছন্দ করে
নিয়েছে। কূজনের জন্যও ইরিন একটা শেরওয়ানি
নিয়েছে। কলরবকে পেয়ে কুহু কূজনের কথা
প্রায় ভুলেই গেছে। কুহুর জন্য নতুন গহনা গড়ে
ফেলেছিলেন তাই সাহরাকে আর গহনা নিয়ে
টেনশন করতে হয়নি। কুহুর মাও বিয়ে ঠিক হওয়ার পরই
এ কাজ সেড়ে ফেলেছিলেন। তাই ঝামেলা কিছুটা
হলেও কম ছিল। হাসনাদ সাহেব না এলেও জাহরা
হলুদের দিন এসে পড়েছেন। হাসনাদ সাহেবকে
ইফতেখার সাহেব অনেক বলার পরও আসেননি
তবে পিড়াপিড়ির জ্বালায় বলেছেন বিয়ের দিন
আসবেন, বিজনেসের কাজে ব্যস্ত তাই হলুদে
অাসতে পারবেন না। কলরবদের ছাদে কলরবের
হলুদ এর অনুষ্ঠান হচ্ছে, বেশ ধুমধাম করেই হচ্ছে।
আত্মীয়পরিজন, ব্বন্ধু-বান্ধব,পাড়া প্রতিবেশী সবার
উপস্হিতিতে কলরবদের বাড়ি মুখোরিত। ইরিন,সাহরা
এমনকি কূজনের গানেও হলুদ সন্ধ্যা মেতে
উঠেছে। সোনার হরিণের আবদারের কাছে
কূজনকে হেরে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও গান গাইতে
হয়েছে। অন্য দিকে কুহুর হলুদ হচ্ছে খুব
সাধারণভাবে। ছাদে হলুদের অনুষ্ঠান করতে কুহুর
সম্মতি ছিল না। বাসায় খুব সাধারণভাবেই কুহুর গায়ে হলুদ
সম্পন্ন হয়েছে। সুরভী,ইরিন, রঞ্জু, কলরবদের
বাড়ি থেকে কুহুর জন্য গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে
এসেছিল। সাহরা আর ইরিনের জোরাজুরিতে
কূজনকেও আসতে হয়েছে। কূজনকে দেখেই
কুহুর চেহারা মলিন হয়ে গিয়েছিল। কূজন যতক্ষণ ছিল
কুহু আর পিহু দুজনই আতঙ্কে ছিল। কুহু পিহুকে
একবারের জন্যও কাছ ছাড়া হতে দেয়নি আর পিহুও
বোনের গা ঘেঁষেই বসে ছিল। মেয়েরা সবাই
হলুদ ছোঁয়ানোর পর সুরভী সবার আগে কূজনকে
আর রঞ্জুকে নিয়ে এলো। কুহুকে হলুদ
ছোঁয়ানোর কথা বলতেই কুহু নীচু স্বরে স্পষ্ট
ভাষায় বলল,
– সুরভী আপু মনে কিছু করবেন না। ভুল হলে দয়া
করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসলে ধর্ম
সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে আসেনি বরং পরিশুদ্ধ করতে
এসেছে। অনেকে বলে হলুদের অনুষ্ঠান হিন্দু
সংস্কৃতি তবে আমি বলি কি এটা হলো বাঙালি সংস্কৃতি।
আরবীদেরও বিয়ে নিয়ে কিছু সংস্কৃতি আছে।
যেমন ধরুন ওয়ালিমা অনেকটা বউভাতের মতন তবে
সেখানে নববধূ নিজ হাতে রান্না করে সব মানুষকে
খাওয়ায়। আবার বিয়ের আগে মেয়ে তার পরিবার সহ
তার হবু বরের পুরো বাড়ি দেখে আসে এরকম
অনেক কিছুই আছে। এগুলো কিন্তু ইসলামের
রীতি নয় আরবদেশের রীতি। তবে ইসলাম এখানে
কিছু পরিশুদ্ধ নিয়ম বেঁধে দিয়েছে যেমন মেয়ে
একা হবু বরের বাড়ি যেতে পারবে না মারহাম সহ
যেতে পারবে। তাই আমি মনে করি আমি একজন
বাঙালি তাই আমার বিয়েটাও বাঙালী রীতিতেই হোক।
আমি কিন্তু অনেকের মতন বলবো না হলুদ আমাদের
ধর্মে নেই বা নিষিদ্ধ তবে ধর্ম মেনে মারহাম
ব্যতীত অন্য কাউকে হলুদ ছোঁয়াতে দিব না। আমি
আমার কাজিনদেরও দেইনি। আমরা হয়তো অনেক
কিছুই মেনে চলি না তবে যা মানতে পারি তাই বা কম
কিসে? আপু আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন?
সুরভী ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলেছে,
– তুমি আসলেই অন্যরকম, কলরব ঠিকই বলেছিল।
কুহুর কথাগুলো শুনে বাড়ির মালিকের বউ কুহুর মাকে
গিয়ে বললেন,
– ভাবী আমার ছেলেগুলো এখনো উপযুক্ত হয়নি
নয়তো কখনো আপনার মেয়েকে হাত ছাড়া করতাম
না। যাক বড়টা না হোক ভাগ্যে যদি ছোটজনকেও পাই।
কবরী ভিতরে ভিতরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে
গেলেন কিন্তু সামনাসামনি হেসে কথাটা উড়িয়ে
দিলেন। মেয়ের মায়েরা কোনো এক অজানা
কারণেই কেনো যেন মেয়ের জন্য বিয়ের
সমন্ধ আসলে খুশি হয়ে যান, সে বিয়ে দিক আর না
দিক। এটা যেন সব মেয়ের মায়েদের রক্তে
মিশে আছে। কবরীও এর ব্যতিক্রম নন। সুরভী
তো কুহুদের বাসা থেকে যেয়েই কলরবকে
বলল,
– বাব্বা দোস্ত তোর ফুলটুশীর যে এতো রাগ
বুঝাই যায় না। কি সুন্দর করে কথা বলে!
কলরব মুচকি হেসে বলল,
– ফুলটুশী সবার সাথে রাগ দেখায় না যাদের খুব বেশি
ভালোবাসে শুধু তাদের সাথে দেখায়।
– দোস্ত তুই না ঠিক বলেছিলি কুহুকে প্রথম দেখায়
আহামরি মনে হয়নি। কিন্তু কুহু যখন কথা বলল তখন
তাকে সত্যি আহামরি মনে হয়েছে। আসলেই
তোর ফুলটুশী ভারী মিষ্টি। দেখতেও কিন্তু
বেশ।
– ঝালও বটে।
সুরভী কলরবের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে
করে বলল,
– দোস্ত টেস্ট করেছিলি নাকি?
– নারে করিনি। মন খালি আঁকুপাঁকু করে কিন্তু ঐ যে
ফুলটুশী হলো ফুলটুশী তাই স্পর্ধা দেখাতে পারি
না।
– আহারে আমি তোকে বীরপুরুষ ভাবতাম।
কলরব কলার নাচিয়ে বলে,
– নিজেকে যেভাবে গুটিয়ে রাখি তাতে শতভাগ
বীরপুরুষ আমি।
সুরভী হেসে বলে,
– কথার তেজ তোর কোনেকালেই কমেনিরে
ভাই।
সুরভীর কথায় কলরব গগনবিহারী হাসি হাসে, সুরভীও
সে হাসিতে যোগ দেয়।

ব্যস্ততার কারণে কুহু মোবাইল পিহুর কাছে দিয়ে
রেখেছে। তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে মোবাইল জিনিসটা
মোটেও সেইফ না। তাই পিহুর কাছে গচ্ছিত
রেখেছে। আগের মোবাইল ভেঙে
ফেলেছে শুনে কলরবই নতুন মোবাইল কিনে
দিয়েছে। কুহু নিতে চায়নি কিন্তু কলরব গগণবিহারী হাসি
হেসে বলেছে,
– তোমার বিয়ের উপহার ফুলটুশী।
কুহু কলরবেরর কথায় অনেক্ষণ হেসেছিল তারপর
আর না করেনি নিয়ে নিয়েছে। কলরবই তো! অন্য
কেউ তো আর না। পিহু মোবাইলে গেমস
খেলে চার্জ শেষ করে ফেলেছে তাই
মোবাইল চার্জে দিলো। চার্জারের পিন
মোবাইলের সাথে কানেক্ট করতেই আননোউন
নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এলো। পিহু
মেসেজ পড়ে হতবাক হয়ে আছে। কূজনের
মেসেজ। শুধু এক লাইনই লিখেছ।
” কুহু তুমি বউবেশে ঐ বাড়িতে পা রাখবে আর আমার
লাশ বেরুবে”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here