একটু_একটু_ভালোবাসি পর্ব ১১

0
1952

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন

সেদিনের মতো সাবির আর তার মা চলে গেলো। জসিরাতের বাবা বিয়েতে মত দিয়ে দিয়েছেন। তিনি সাবিরকে মেয়ে জামাই করতে রাজি। শুধু তাই নয়, আগামী মাসেই সাবিরের মা সিরাতকে বউ করে ঘরে তুলতে চান। সাবির’রা চলে যাওয়ার পর সিরাতের মা পুরো বিল্ডিংয়ে মিষ্টি বিলি করলেন।
অন্যদিকে সব শুনে সিরাত তব্দা মেরে বসে পড়ল ফ্লোরে। কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না দেখে তানিশা তার হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলো। তবুও সিরাত নির্বিকার। হুট করে বলে বসলো,
—- আন্টি আমাকে মেরে ফেলো। আমি ঐ পাগলকে বিয়ে করতে পারবো না। শুধু ঐ পাগলকো বিয়ে কেনো, আমি এখন বিয়েই করবো না। আমি পালিয়ে যাবো।

তানিশা ব্যাপারটাকে হালকাভাবেই নিলো। কারণ, সিরাত মুখে অনেক বড় বড় কথায় বলে কিন্তু কাজের বেলায় ফাঁকা।
—– পাগল হয়ে গেছিস?

—- আন্টি তুমি খেয়াল করেছো? বাবা-মা কেউই আমার কোনো মত নেয়নি। আমার কি কোনো কথা থাকতে পারে না? আমি এতো পর হয়ে গেছি? আমি পালিয়ে যাবো আন্টি। সত্যিই পালিয়ে যাবো।

—- তুই যা-ই বলিস ভাই, সাবিরের কিন্তু দম আছে মানতে হবে। ভাবা যায়? সেদিন তোকে একপলক দেখার জন্য একেবারে গ্রামে গিয়ে হাজির হয়েছিলো। যাকে তুই ঠিকমতো চিনতিসই না, সেই ছেলেটাই আজ তোর হবু বর। তুই যেমন বিহেভ করিস, ছেলেটা কিন্তু মোটেও খারাপ না। ভালোবাসে তোকে..

সিরাত এবার চোখ গরম করে তাকালো,
— আন্টি আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে না। ধ্যাত! তুমিও আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছো না….

———————-
আরো কয়েকটা দিন গেলো। সিরাত সেদিনের পর থেকে আর কলেজে যায়নি। না, কেউ মানা করেনি। ইচ্ছে করেই যাচ্ছে না। শেষমেশ থাকতে না পেরে তার মা বললো,
—- কীরে কলেজে যাচ্ছিস না কয়দিন?

সিরাত গলা নিচু করে বললো,
— কলেজে গিয়ে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।

—-পড়ালেখা থেকে মন উঠে গেছে তাহলে?

—- মন থেকে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।

—–সাবির তোকে কল করলে রিসিভ করিস না কেন?

— কথা বলে কি হবে মা? এমনিতেও বিয়ে হয়ে যাবে।

কথাটা বলেই জিভ কাটলো সিরাত। কি বলতে কি ফেলেছে ইশশ! মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে এলো। তানিশা মাত্রই তার বরের সাথে কথা বলে বারান্দা থেকে এসেছে। সিরাতকে লজ্জা পেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো তার। মাথায় টোকা দিয়ে বললো,
—– কি ব্যাপার?

— ব্যাপার হলো তোমরা আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছো না। আমি সত্যিই পালিয়ে যাবো।

তানিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—- দেখা যাবে।

—- সে কথা বাদ দাও। তুমি নাকি চলে যাবে বলেছো? শুনো তুমি এখন যেতে পারবে না। গ্রামে গিয়ে কি করবে?

তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেললো একটা,
—- আপাও তাই বললো। দেখি তোর খালু যদি অনুমতি তাহলে থাকবো।

—-আমি উনাকে বুঝিয়ে বলবো। তুমি চিন্তা করো না।

—-আচ্ছা।

পরদিন সকাল,
সিরাত সুযোগসন্ধানী দৃষ্টিতে সবার মতিগতি পর্যবেক্ষণ করছে। আজও সে কলেজে যায়নি। বাবা অফিসে, ইফতিও স্কুলে। মা গেছে পাশের বাড়িতে। আর তানিশা ঘুমোচ্ছে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো সিরাত। তার কথাকে আজ কাজে পরিণত করবেই করবে। আজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবেই যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের জমানো টাকা যা আছে তা নিয়ে একেবারে রেডি হয়ে রাস্তায় পর্যন্ত চলে এলো। মোবাইলটা সুইচড অফ করে ভাবতে লাগলো, কোথায় যাবে এখন। লাইব্রেরিতে যাওয়া যায়। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।
ফুরফুরে মেজাজে লাইব্রেরিতে গেলো সিরাত। একটা ইংরেজি নভেল বুক হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সিরাতের চিন্তা হচ্ছে। মা নিশ্চয় এতোক্ষণে বাড়িতে চলে এসেছে। তানিশা আন্টি জেগে গেছে। বাবাকে কল করে বলে দিয়েছে। ইফতি হয়তো কান্না শুরু করে দিয়েছে। থানায় গিয়ে ডায়রী করেছে। পত্রিকায়ও তার ছবি দিয়ে নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হয়েছে। ধূর! এসব কি ভাবছে সে। একটু বেশি হয়ে গেলো না? একরাশ দ্বিধা নিয়ে নিয়ে মোবাইলটা অন করলো। বিশ মিনিট পার হয়ে গেলো কিন্তু কেউ কল করলো না। কি ব্যাপার! এতোক্ষণে তো শ’খানেক কল আসার কথা। ভেবেচিন্তে আবার মোবাইলটা অফ করে আশেপাশে তাকালো। লাইব্রেরিয়ান ছেলেটা কেমন চোখে যেন তাকাচ্ছে। এদিকে খিদেয় পেড় চুঁচুঁ করছে। দুপুর তো সেই কখন পেরিয়ে গেছে।
একটা স্বস্তা রেস্টুরেন্টে ঢুকে সিরাত দুপুরের আহার সারলো৷ রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো, এখন কি করা যায়? কেনো যে পালিয়ে এলাম!!! বাড়িতে সবাই কি আমাকে ভুলে গেছে? কোথায় যাবো এবার? ইয়েস! শিলার বাড়িতে যাওয়া যায়। আন্টি আমাকে অনেকদিন হলো যেতে বলেছে। শিলার সাথেও কথা হয়না অনেকদিন। এই ফাঁকে ওখানে থেকেই ঘুরে আসি বরং!
একটা রিকশায় চেপে সিরাত এবার শিলার বাড়িতে চলে গেলো। দুই বান্ধবী মিলে অনেকক্ষণ গল্প করলো। শিলার মা সিরাতকে ভীষণ পছন্দ করেন। এমন শান্তশিষ্ট মেয়ে আর একটা ম্যাগনিফাইন গ্লাস দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। সেই শান্তশিষ্ট লেজহীনবিশিষ্ট সিরাত নামের মেয়েটা যে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে শুনলে, এই বুড়ো বয়সে হার্টঅ্যাটাক করতে হতো উনাকে।

সন্ধ্যার সময়,
সিরাত এবার গাঁইগুঁই শুরু করেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। মনের ভেতর কু ডাকছে। বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। মা আজ ওর ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে নির্ঘাত। বাবা মিনিটে মিনিটে একটা করে চড় মারবে। তানিশা আন্টিও হয়তো রাগ করে কথা বলবে না। রাগে দুঃখে সিরাত কেঁদে দিলো।
আকাশসম রাগ নিয়ে সিরাত এক ভয়ংকর কান্ড করে বসলো। মোবাইল অন করে সরাসরি সাবিরকে কল করলো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বোকাসোকা কণ্ঠে বললো,
—- শুনেন? আপনারা জন্য আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। সব আপনার দোষ। এখন আপনি এর দায়ভার নিবেন। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবেন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here