একটু_একটু_ভালোবাসি পর্ব ১৩

0
2148

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃশাদিয়া_চৌধুরী_নোন

সময় বহমান। সিরাত আর সাবিরের বিয়ের দিন দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলো সবে। তাদের বিয়ে তেমন একটা জাঁকজমকপূর্ণভাবে হবে না। ইসলামিক শরীয়তে যেমন কম খরচে সাদামাটা বিয়ের কথা বলা আছে ঠিক সেভাবেই হবে। সাবিরের বাবা দেশে নেই। বিয়েতে থাকতে পারবেন না। তিনি দেশে ফিরলেই রিসেপশন করা হবে বড়সড় করে।
সিরাত এখন প্রায়সময় মনমরা হয়ে বসে থাকে। ঠিকমতো খায় না। কলেজেও যায় না। সাবিরের সাথে ইচ্ছে করেই কথা বলে না। ভয়ে দিনদিন কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাবিরকে সে ভয় পায়। খুবই ভয় পায়। তাদের যে বিয়ে হবে, একই বাড়িতে-একই ছাদের তলায় থাকবে সে এটা মেনে নিতে পারছে না। সাবির কল করলে কেটে দেয়। সাবিরের সাথে কথা বলার জন্য বোধহয়, বাবা তার বাটন ফোনটা নিয়ে একটা বেশ দামী মোবাইল কিনে দিয়েছে। একদিন হলো কি, রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমোনোর সময় সাবিরের কল এলো। সিরাত প্রতিদিনের ন্যায় কল কেটে ঘুমোতে ব্যস্ত। এদিকে লাগাতার কল আসতে শুরু করলো। একটার পর একটা। সিরাত অবাক হলো ভীষণ। ফোনটা সাইলেন্ট করে পাশের বালিশের উপর রেখে, চোখ পিটপিট করে ভাষাহীন চোখে তাকিয়ে রইলো। ফোনটা নিঃশব্দে বেজেই চলেছে। একবার কল কেটে যাওয়ার আবার এলো, আবার, আবার…. মোবাইলের স্ক্রিনে স্পষ্ট লিখা আসছে বারবার, সাবির ইজ কলিং ইউ। সিরাত মনে মনে বললো, আপনার একটুও বিরক্ত লাগছে না এভাবে কল করতে? আসলেই আপনি পাগল। একসময় সিরাত ঘুমিয়ে গেলো। রাতটা ওইভাবেই কাটিয়ে দিলো। সকালে ঘুম ভাঙতেই সিরাতের নজর গেলো, পাশের বালিশের উপর রাখা ফোনটার দিকে। ভালো করে তাকাতেই আৎতে উঠলো সে। এখনো সাবির কল করে চলেছে। কল কেটে গেলেই সিরাত ফোন চেক করলো, একহাজার সাতশো ছাপ্পান্নটা মিসডকল। বেকুব বনে হা করে তাকিয়ে রইল সিরাত। আবার ভয়ও হলো কোনো বিপদে পড়েনি তো আবার? ব্যতিব্যস্ত সে কল রিসিভ করলো। অবাক কণ্ঠে বললো,
—- আপনি কি পাগল?

ওপাশ থেকে সাবিরের ক্লান্তমাখা কণ্ঠ কানে এলো তার,
—- কেনো এতো কষ্ট দাও আমাকে? হুয়াই রাত? লাভ ইউ। প্লিজ একবার দেখা করো….

সিরাত কলটা কেটে দিয়ে থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো। এরপর আর কোনো কল এলো না। ভাবতেও অবাক লাগে, সারারাত একনাগাড়ে কল করে চলেছে ছেলেটা। কি ভীষণ জেদি!

গ্রাম থেকে আত্মীয়রা আসতে শুরু করেছে। সারাদিন গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে ডুবে আছে সবাই। অথচ যাদের ঘিরে এতো আয়োজন, তাদের ভেতরে কিছুই ঠিক নেই। মা ইদানীং সিরাতের ভীষণ যত্ন করছে। শাড়ি পড়া শিখাচ্ছেন, যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন, রান্না করাচ্ছেন, কাঁচা হলুদ মাখিয়ে সিরাতকে নিজের সামনে বসিয়ে রাখেন, রোদে তো বেরই হতে দেননা। সিরাতের গায়ের রং খুলে যাচ্ছে দিনদিন। যদিও আগে থেকেই সে সুন্দর, তবুও এখন যেন অন্যরকম লাগে। মামীমা বলেছে, বিয়ের ফুল ফুটলে মেয়েদের অন্যরকম সুন্দর লাগে। সিরাত লজ্জায় এতোটুকু হয়ে যায়।
রাতে খাওয়ার সময় সিরাতের মা বললেন, আগামীকাল সাবির আর সাবিরের মা আসবে। এখান থেকে সিরাতকে নিয়ে শপিংমলে গিয়ে, সিরাতের পছন্দসই গয়না আর কিছু জামা-কাপড় কিনবে। সিরাতের গলায় খাবার আটকে গিয়ে খুকখুক করে কাশতে লাগলো। তারমানে সাবিরের সাথে কাল দেখা হবে! তানিশা তাকে বুঝালো,
—- দেখ সিরাত! যথেষ্ট হয়েছে। কোনো ছেলেই এসব মেনে নেবে না। সাবির তোকে আগে থেকে ভালোবাসলেও এটা একটা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। দুজন দুজনকে সময় দিতে হবে, চিনতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে। ছেলেটা আসলেই তোকে ভালোবাসে নাহলে তোর এই ব্যবহার মানতো না। ভেবে দেখেছিস, তোর এতো অবহেলার পরও সাবির কোনো প্রতিবাদ করেনি। তার মা বা এই বাড়ির কাউকেই কিছু জানায়নি। তোর ভাগ্য ভালো বলে এতোকিছু করতে পারছিস।

তানিশা আরও অনেককিছুই বোঝালো কিন্তু কাজ হলো না। সিরাত থম মেরে বসে রইলো। আসলে, সে নিজেও বুঝতে পারছে না, তার এমন কেন হচ্ছে? সাবিরকে সে মেনে নিতে পারছে৷ এই বিয়ের ব্যাপারটাই সে মেনে নিতে পারছে না। সাবিরের প্রতি কোনো আক্ষেপ, ঘৃণা, অবহেলা বা অতীতের কোনো খারাপ স্মৃতি, কিছুই নেই। নিজেকে কেনো যেন এসবের প্রতি অপ্রস্তুত লাগে। তার আরো সময় প্রয়োজন।

#চলবে
#Sadiya_Chowdhury_noon

( খুব ঝামেলার মধ্যে আছি। বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে দেরি করছি না৷ প্লিজ রাগ করবেন না কেউ। আমি প্রতিদিন ছোট করে হলেও কন্টিনিউ করার চেষ্টা করবো। অবশ্যই দোয়া করবেন। পাশে থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here