একটু_একটু_ভালোবাসি পর্ব ৮

0
2106

#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৮
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার। সকালের দিকে সিরাতের মাথা ব্যাথা করছিলো ভীষণ। তাই সে আর কলেজে গেলো না। বেলা বারোটার ঘরে আসতেই তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলো। ইফতি স্কুল থেকে ফেরার পর সে, তানিশা আর ইফতি মিলে বেশ মজা করে সময় কাটালো। ভ্যাপসা গরমে সিদ্ধ হওয়া উপক্রম। মা রান্নাঘরে ঢোকার আগেই তানিশা গরম গরম পাকোড়া আর পেঁপে জোস বানিয়ে পরিবেশন করলো। হাফটাইম হওয়ায় সিরাতের বাবাও আজ তাড়াতাড়ি চলে এলেন। সবাই মিলে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর্বও শেষ হলো।

বিকেলে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। এক প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ইয়া বড় বড় কার্টনে নাস্তা, ফ্রুট আর কোমল পানীয় নিয়ে সিরাতদের ফ্লাটের দরজার সামনে হাজির। সিরাত’রা পরিবারের সবাই মিলে তখন টিভি দেখছিলো ড্রয়িংরুমে। বাড়িতে হঠাৎ করে আগাম কোনো কথা ছাড়া মেহমান আসায় সিরাতরা বেশ এলোমেলো হয়ে পড়লো। ভেবেছিলো পাশের বাড়ির কোনো মানুষ। দরজার সামনে অপরিচিত মহিলাকে দেখে তাড়াতাড়ি মাথা ওড়নায় ঢেকে সালাম দিয়ে দরজার কর্ণারের সোফায় বসে থাকা মা’কে ইশারা করলো । সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি প্রস্থান গমন করলো সে। তানিশা আর ইফতিও ট্রে আর গ্লাস উঠিয়ে সিরাতের পেছন পেছন দ্রুতপায়ে চলে গেলো। আর সিরাতের বাবাও টিভি বন্ধ করে নিজের রুমে চলে এলেন। উৎসবমুখর পরিবেশটা হঠাৎ করে কেনো যেন থমথমে নীরবতায় ছেয়ে গেলো।

দরজার সামনে দাঁড়ানো ভদ্রমহিলাকে দেখেই সিরাতের মা’র মুখে হাসি ফুটলো। মহিলাকে তিনি চেনেন না। ভুল করে আসলো নাকি? মুখে হাসি এঁটে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
—- আপনি কি এখানেই আসছেন? ভুল ঠিকানায় আসেন নাই-তো?

—– আমি মাহফুজা আইভি। আপনি কি সিরাতের মা? আমি আনজুমান সিরাতের বাড়ি এসেছি। আমি যদি ভুল না করি, এটা কি সিরাতের বাড়ি নয়?

মহিলার কথা বলার ধরন দেখে সিরাতের মা চমকে গেলেন। ধারণা করলেন মহিলা বেশ শিক্ষিত এবং মার্জিত। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়লেও কণ্ঠ শুনলে মনে হবে ষোড়শী কিশোরী। চমকিত চোখে তিনি আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন। পায়ের কাছে নাস্তার বহর দেখে চোখ গোলগোল আকার ধারন করলো উনার। কৌশলী চোখে বোরকাটা দেখে অনুমান করলেন, মহিলা বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের। একহাতে কালো চকচকে ঘড়ি দিয়ে ভাবলেন, মহিলা হয়তো শৌখিন নয়তো সময়জ্ঞান সচেতন মানুষ। তিনি মুখে আবারো একগাল হাসি নিয়ে বললেন,
—- আমি সিরাতের মা। এটাই আমাদের বাসা। আপনি ভেতরে আসেন…..

—- আমি জানতাম এটাই সিরাতের বাসা। চলুন তাহলে, ভিতরে যাওয়া যাক।

—-আসেন….

সিরাতের মায়ের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। এই মহিলা সিরাততের জন্য সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে নিশ্চিত। কি মার্জিত ব্যবহার, ধনীও মনে হয় এমন একটা ঘরে যদি সিরাতটার বিয়ে দিতে পারি আর কোনো চিন্তা থাকবে না।

জৈনক ভদ্রমহিলা মাহফুজা আইভি সিরাতের মায়ের সাথে খেজুরে আলাপ শুরু করে দিলেন। যেকোনো মানুষকে কয়েকমিনিটের মধ্যে আপন করে নেওয়ার অভাবনীয় ক্ষমতা আছে তাঁর। সিরাতের মা’কে খুব সহজেই নিজের ভক্ত বানিয়ে নিলেন। তবে তিনি কোনো খেজুরে আলাপ করতে আসেননি। স্বয়ং নিজের একমাত্র ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন। ছেলে তার সিরাতকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে। সিরাতের বাবার সাথে আলাপে বসলেন এবার। কয়েক মিনিটের মধ্যে সিরাতের বাবা খুব ভেবে-চিন্তে, কাল ছেলেকে সহ দাওয়াত করলেন। স্বামীর সম্মতিসূচক ইঙ্গিত পেয়ে সিরাতের মা আহ্লাদে আটখানা যেন। সিরাতের জন্য হঠাৎ এতবড় বাড়ি থেকে সম্বন্ধ আসা, সিরাতের বাবার গোপন সম্মতি, কাল ছেলেসহ নিমন্ত্রণ সব যেন কেমন কাকতালীয় ভাবে ঠিক হয়ে গেলো।

অন্যদিকে এসব শোনে সিরাতের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো। এ কি শুনছে ও? এটা কীভাবে সম্ভব? সব না শোনেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো সে। কাল ছেলে আসবে শুনে ভয়ে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। কি হবে এবার? হুট কটরে এসব কি হয়ে গেলো!

#চলবে…
#Sadiya_Chowdhury_Noon

(আগামী পর্ব বড় করে দেওয়া চেষ্টা করবো। গল্পটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here