#এক্কা_দোক্কা – ১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
-” তা আর কি কি শুনলে তুমি? ”
জুভানের ঠোঁট টিপে কথাটা বলে শ্বাস আটকে বসে রইলো। অন্তঃস্থলে প্রবাহিত চিন্তার নহর তার শ্বাস রোধ করে রেখেছে।
ঐশী অকপটে বললো
-” আপনি ফোনে কাউকে ভালোবাসেন,তাকে ছাড়া আপনার চলবে না! এসব বলছিলেন। এবার বলুন ত, কাকে ভালোবাসেন আপনি? চিন্তা নেই, আমি আপনাদের ভালোবাসায় থার্ড পারসন হবো না। ”
জুভান ছোট্ট করে দম ফেললো। ঐশী আর দু সেকেন্ড এই ধোঁয়াশা রাখলে আজ বোধহয় জুভান ছোটখাটো হার্টএ্যাটাক করে বসতো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। জুভান কফির কাপটা চেয়ার সংলগ্ন টেবিলে রাখলো। অতঃপর ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” কারো নাম শুনেছ? ”
-” নাহ, তা শুনিনি। কিন্তু এবার আপনার মুখ থেকে শুনবো।”
-” সরি, আমি নামটা বলতে পারছি না। ”
-” কেন বলবেন না? ”
-” তার নাম শুনলে তুমি ভালো থাকবে না। ”
-” নাম শোনার সাথে আমার ভালো থাকা আসছে কোথা থেকে? ”
-” ঐশী, আমরা কি এই টপিক বাদ দিয়ে অন্য টপিকে কথা বলতে পারি? ”
জুভানের কণ্ঠ অধৈর্য্য। কেননা ঐশী আর কিছুক্ষণ জুভানের মন ধরে টানাটানি করলে, জুভান হয়ত নামটা বলেই দিত। কিন্তু এখন সব খোলাসা করার সময় না। সময় আসলে সে ঠিকই বলে দেবে ঐশীকে, তার গোপন অনুভূতির কথা। তবে এখন শুধু অপেক্ষা দ্বারা নিজেকে সংযত করতে হবে। জুভানের কঠোর কণ্ঠে বলা কথায় ঐশী আর অমত করলো না। জুভান যখন একবার বলেছে, সে ওই মেয়ের নাম বলবে না, তাহলে শত চেষ্টায় জুভানের কণ্ঠ থেকে সেই মেয়ের নাম বের করা যাবে না। অসম্ভব! তবে কোথায় না কোথায় ঐশীর অবাধ্য মনে সূক্ষ্ম এক খারাপ লাগা থেকেই গেল। ঐশী চাইছিল, জুভান তার শোনা কথাকে মিথ্যে বলুক। যেভাবেই হোক, ঐশী জুভানের বিবাহিত স্ত্রী। আর একজন স্ত্রী কখনোই চাইবে না, তার স্বামীর ঘরের বাইরে কোনো প্রেমিকা থাকুক। ‘ প্রেমিকা’ ঐশী মনেমনে কথাটা ভেবেই আশ্চর্য্য হলো। তাদের এই অনিশ্চিত সম্পর্কে এতটা অধিকারবোধ কোথা হতে এল? ঐশী নিজের চিন্তায় নিজেই হতবম্ব হয়ে পড়ল। মাথাচাড়া দিল আত্মসম্মানের ধারালো সূচ।
ঐশী সমস্ত চিন্তাকে একপাশে ঠেলে হেসে বললো,
-” ঠিকাছে, বাদ দিলাম আপনার নাম টপিক। অন্য কথা বলি এখন? ”
-” বলো। ”
-” আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছেন? ”
জুভান মৃদু হাসল। বললো,
-” মেলায়। ”
-” মেলায়? ”
ঐশী খুব অবাক হলো। জুভান বললো,
-” হ্যাঁ। ”
-” কবে?”
-” আজ থেকে এক বছর আগে। ”
-” এক বছর আগে? কিন্তু আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় এক মাস আগে। আপনি এক বছর থেকে আমায় চিনতেন? এখন এটা বলবেন না যে আপনি আমায় সে এক বছর থেকে ফলো করতেন। ”
জুভানের ঠোঁটে বাঁকা হাস। বললো,
-” যদি বলি হ্যাঁ? ”
– ” কিন্তু কেন? এত আগে থেকে ফলো করার কারণ কি? ”
ঐশী বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেল। ঠোঁট কাপছে তার। জুভান বললো,
-” আপাতত এতটুকুই জানো। একদিন সময় করে বাকিটুকু জানাবো। এখন, অন্য টপিক! ”
ঐশী চোখ ছোট করে চেয়ে রইল জুভানের দিকে। বললো,
-” আপনি খুব কঠিন করে কথা বলছেন। ”
-” হয়তো! ”
ঐশী চুপ করে গেল। জুভানের পায়ের কাছে গিটার রাখা ছিল। জুভান হাত বাড়িয়ে গিটার নিজের কাছে আনলো। গিটারের তার ঠিক করতে করতে ঐশীকে বললো,
-” গান শুনবে, ঐশী? ”
ঐশী নিরুত্তর। জুভানের একটু আগে বলা কথাগুলো ভাবতে বসেছে ঐশী। কথার পসরাগুলো পরপর সাজিয়ে কাঙ্ক্ষিত অর্থ গঠন করার চেষ্টায় মত্ত এ নারী। মন চাচ্ছে, জুভানের বুকটা ছিড়ে তার পুরুশালী বক্ষে চট করে ঢুকে চেটে। তারপর…বুকের মধ্যকার এমন ধোঁয়াশা ভরা কথাগুলো ঠুস করে জেনে ফেলতে। এ কাজ সম্ভব কি? সম্ভব হলে বোধহয় ভালো হতো! ঐশীকে নিরুত্তর থাকতে দেখে জুভান মুচকি হাসল। নিজেই গিটারের সুরে গান ধরলো,.
একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দু চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি
কন্যার চিরল বিরল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা কন্যা করলো ভুল
কন্যা ভুল করিস না,
কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না
জুভান চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। মনে হচ্ছে প্রতিটা শব্দ, কথা যেন তার প্রেমিকার নামে লেখা। এত আবেগ মিশে আছে তার কণ্ঠে, ঐশী সেই গানের সুরে হারিয়েই যাচ্ছে। ঐশীর বুকের ভেতর ধুকপুক করছিল। ঐশী বুকের বা পাশ খামচে ধরে বসে রইল। কেন এমন হচ্ছে তার? কেন এক সূক্ষ্ম ব্যথা তার হৃদয়টাকে ছিদ্র করে দিচ্ছে? এই বিষাক্ত ব্যথার উৎপত্তি কোথায়?
জুভান গান থামালো। ঐশী নিজেকে সামলে হেসে বললো
-‘ আপনি খুব সুন্দর গান করেন। ”
জুভান মৃদু হেসে বললো,
-” ধন্যবাদ। ”
ঐশী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-” অনেক হলো। আমি এখন আসি। ”
ঐশী দরজার পানে পা এগুতে চাইলে জুভান দুষ্টুমী করে পা দিয়ে ঐশীকে আটকে দেয়। ভারসাম্য বজায় না রাখতে পেরে ঐশী হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যেতে নেয়। তবে জুভান সঙ্গেসঙ্গে ঐশীর কোমড়ে হাত গলিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নেয়। কোমড়ে জুভানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই ঐশীর দেহে যেন বিদ্যুত শক লাগলো। ঐশী ভয়ার্ত চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান চোখ টিপে বলল,
-” সাবধানে, মিস ঐশী। আপনি হোচট খাচ্ছেন। ”
ঐশী দৃষ্টিসীমা সংকুচিত করলো। চটপট জুভানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জুভানের দিকে। জুভানের ঠোঁটে মুচকি হাসি। ঐশী বিড়বিড় করে কি যেন বললো। অতঃপর সেই বারান্দা থেকে গটগট করে বেড়িয়ে গেল। ঐশী চলে যেতেই জুভান মাথা চুলকে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল।
_______________________
রিয়াদ তালুকদারের খুনের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর গোল মিটিংয়ে বসেছেন। আজ সবাই প্রস্তুত হয়েই এসেছেন। মিটিং শুরু করা হলো।
সিলেটের ইন্সপেক্টর তার বক্তব্য রাখলেন,
-” রিয়াদ তালুকদারের শরীরে আমরা এ মেয়ের চুল পেয়েছি। ওই চুলের ডিএনএ টেস্ট করে এটা জানা গেছে যে, মেয়েটা মন্ত্রী আমজাদ হোসেনের ছোট মেয়ে কেয়া। ”
ইন্সপেক্টর বিজয়ের কথা শুনে গোল মিটিংয়ে বসা সমস্ত পুলিশ অফিসারদের মধ্যে একপ্রকার হইচই লেগে গেছে। সবাই অবাক হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। মন্ত্রী আমজাদ হোসেনের মেয়ের সাথে রিয়াদ তালুকদারের কি শত্রুতা? ঢাকা সদরের ইন্সপেক্টর চিন্তায় অস্থির হয়ে মাথার ক্যাপ খুলে টেবিলে রাখলেন। চুলবিহীন মাথা চুলকে বললেন,
-” এটা কেমন করে সম্ভব? এটা হতেই পারে না। আমজাদ হোসেনের মেয়ে রিয়াদকে কেন খুন করবে? ”
-” সম্ভব স্যার। কারণ রিয়াদ তালুকদারের সাথে মিসেস কেয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ”
#চলবে
পেইজের রিচ অনেক কম। তাই গল্পের সকল পাঠকদের কাছে আমার অনুরোধ, রিয়েক্ট এবং কমেন্ট করবেন প্লিজ।
লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri