এক্কা দোক্কা পর্ব-৫

0
883

#এক্কা_দোক্কা – ৫
আভা ইসলাম রাত্রি

জুভান আনমনে বলে ফেললো,
-” এটা হাত নাকি মাখন? মনে হচ্ছে ধরে জাস্ট চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। ঐশী, কি মাখো এই হাতে?
ঐশী হতবম্ব হয়ে গেলো। দ্রুত জুভানের থেকে নিজের হাতখানা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” পাগল হয়ে গেছেন? কি সব বাজে বকছেন? ”
ঐশীর কথায় জুভাজের উবে যাওয়া হুশ ফিরে এলো। আসলেই তো, সে এসব কি বলছিলো? জুভান তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস নাকি? অতঃপর সে একটু নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে পুনরায় নিজের ফর্মে ফিরে এলো। ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে ব্যাগগুলো আনতে বলে ঐশীকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো সে।
লিভিং রুমে জুভানের অনেকগুলো বন্ধু বসে ছিল। জুভানদের ফিরতে দেখে তাদের সবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দুজন মেয়ে এসে ঐশীকে জড়িয়ে ধরে সোফায় বসালো। পুষ্পিতা জুভানকে চোখ টিপে বলে উঠলো,
-” ভাই, সেই কিন্তু! ”
অথচ জুভান এ কথার উত্তরে কোনোরূপ অনুভূতি দেখালো না। সে আনমনে মোবাইলে নিয়ে ব্যস্ত। ওপাশ থেকে কোনোরূপ জবাব না পেয়ে পুষ্পিতার বেশ রাগ হলো। এ গম্ভীরমুখোকে যে কেনো যে মেয়েটা বিয়ে করলো? ইস, সারাজীবন ধরে মেয়েটার জীবন থেকে মজা-মাস্তিই উবে যাবে। অপর্ণা ঐশীর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
-” দেখো তো, জুভান হুট করে এসে লুট করে তোমায় বিয়ে করে নিল। কাল অব্দি জানতাম না এ যে এই কাণ্ড ঘটাবে। রাবিশ একটা! কাজের তালে তোমার নামটাই জানা হলো না। নাম কি, হু? ”
ঐশী স্পষ্টকণ্ঠে বললো,
-” ঐশী খন্দকার। ”
-” বাহ, খুব সুন্দর নাম। এই জুভান, রাতে কিছু খেয়েছিলি তোরা? ”
জুভানকে প্রশ্নটা করতেই জুভান মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিলো। জুভানের উত্তরে মেয়েদুটো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তারা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পা চালালো রান্নাঘর অব্দি।
জুভানিয়ে আরেক বন্ধুর নাম অনল। আর সেও জুভানের বিয়ের কথা শুনে তার বাসায় এসেছে। একটু আগ অব্দি অনল এই বিয়েতে মহাখুশি হতে পারলেও এখন সেই খুশি ক্রমশ ওর কাছে অভিশাপ মনে হচ্ছে। চোখে জ্বলে উঠছে, কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। আজ নিজের চোখকেও বড্ড নিমকহারাম মনে হচ্ছে তার। বিশ্বাস হচ্ছে না, এতদিন যেই মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে অনল সম্পূর্ণ শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছে, আজ সেই মেয়েই তার প্রিয় বন্ধুর বউ হয়ে তার চোখে সামনে বসে আছে। এই দৃশ্য দেখার আগে অনল মরে গেলেও তো পারতো! অনলের চোখ ছলছল করছে। যেকোনো মুহূর্তে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়বে। অনল জুভানের দিকে ফিরে বললো,
-” তুই ভাবির খোঁজ কোথা থেকে পেয়েছিস, জুভান? ”
জুভান মোবাইল পকেটে পুড়ে নিল। সোফায় সম্পূর্ণ গা এলিয়ে বললো,
-” প্রশান্তপার আশ্রমে! ”
অনল ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলো। বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। এখানে আর এক মুহূর্তও বসে থাকা তার দ্বারা সম্ভব না। অনল সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অন্য কক্ষে চলে যেতে নিলে জুভান পেছন থেকে প্রশ্ন করে বসে,
-” কি রে? কোথায় যাচ্ছিস? বস এখানে। ”
অনল পেছন ফিরলো। ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” চোখে আবার অ্যালার্জি হচ্ছে রে। পানি ছিটিয়ে আসি। তোরা বস অ্যান্ড ইনজয়! ”
অনল চলে গেলো। জুভান এখনো ভ্রু কুঁচকে চেয়ে! হঠাৎ করে অনলের এরূপ চলে যাওয়া তার বেশ খটকা লাগছে। সে স্পষ্ট দেখেছে, অনলের চোখে জল। কিসের এত কষ্ট তার? জুভান ভাবলো খুব!

বিশাল এক বারান্দা! বারান্দায় স্থাপিত সুন্দর কারুকাজ করা দোলনা। অনল ধপ করে সে দোলনায় বসে পড়লো। চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলো না সে। ছেড়ে দিল তাদের, মুক্ত করল নিজের কষ্ট! তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদতে। সম্পূর্ণ পৃথিবীকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে, ‘ দেখো হ্যাঁ দুনিয়া, আমি হেরে গেছি। নিজের ভালোবাসাটাকে, নিজের প্রাণকে, নিজের জীবনকে প্রিয় বন্ধুর হয়ে যেতে দেখছি। এর থেকে বিশ্রী অনুভূতি জগতে আর একটাও নেই, একটাও নেই! আমি কি করবো এখন? কি করা উচিৎ এখন? তার থেকে কেড়ে নিবো আমার ভালোবাসাকে? না, না! আমি এতটা খারাপ কি করে হতে পারবো? খোদা, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। কি করবো আমি, কোথায় যাবো? ”
অনল আর ভাবতে পারলো না। দুহাতে খামচে ধরলো নিজের ঘন চুল। তার শক্ত হাত ছিঁড়ে ফেললো কয়েকটা চুল। তবুও কষ্ট কমছে না। অনল পকেট থেকে তার মানিব্যাগ বের করলো। মানিব্যাগ খুলতেই এক মায়াবী চেহারা নজরে এলো তার। সম্পূর্ণ গা শুভ্র রঙে ঢাকা, শুভ্র রঙের কামিজে মেয়েটাকে অপ্সরীর চেয়ে একটুও কম লাগছে না। মেয়েটা আর কেউ নয়, স্বয়ং ঐশী। এ ছবি অনল এক মেলায় তুলেছিল। সেদিন মেলায় ঐশী কয়েকটা মেয়ের সাথে ঘুরতে এসেছিল। সে মেলায় জুভান নিজেও থাকলেও, ঐশীর দিকে নজর কাটে অনলের। ঐশীর অগোচরে অন্যায়ভাবে একটা ছবিও তুলে ফেলে সে। ভেবেছিল মেলা থেকে পিছু নিয়ে ঐশীর বাড়ি অব্দি পৌঁছাবে। তবে তার আগেই ঐশী মেলার ভিড়ে হারিয়ে যায়। সম্পূর্ণ মেলা তন্নতন্ন করে খুঁজেও ঐশীর দেখা মেলেনি। অনল সেদিন পাগল হয়ে গেছিলো। পাগলের মত ব্যবহার করছিল। এরপর সম্পূর্ণ শহর খুঁজেও ঐশীর খোঁজ মেলেনি। আর আজ যখন ঐশীর দেখা মিললেও, তখন সে অন্য কারো! অন্য কারোর বুকের পাঁজরের হাড়, অন্য কারো স্ত্রী, তার অর্ধাঙ্গিনী। সে অন্য কেউ স্বয়ং তারই প্রিয় বন্ধু জুভান। জুভানের কথা মনে পড়তেই অনলের খুব রাগ হলো। পায়ের তলায় পিষে ফেলতে চাইলো এতদিনের পুরনো বন্ধুকে। পরক্ষনেই তার হুশ এলো। এ কি ভাবছিল সে? এতটা অধঃপতন কি করে হলো তার? ছিঃ, নিজের উপরই ঘেন্না হচ্ছে! তবে তার কি দোষ! ভালোবাসা হারানোর অনুভূতিটাই এত যন্ত্রণার! যে ভুগে, সেই ন্যায়-অন্যায় ভুলে পাপী হয়ে উঠে! অনলও তার ব্যতিক্রম নয়।
______________________________
রাতের খাবার পর্ব সুস্থভাবে সম্পন্ন হলো। তবে রাতের খাবারে অনলের দেখা মিলল না। জুভান অনেকবার বলেছে, তবে অনলের একটাই উত্তর ‘ তার পেট ভরা। শরীর খারাপ লাগছে। এখন সে খাবে না। ‘ জুভান কিছুটা অবাক হয়েছে বটে। তবে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপচাপ সে কক্ষ থেকে চলে এসেছে।
বন্ধুরা মিলে জুভান আর ঐশীকে নিয়ে একটা কক্ষে এলো। কক্ষটা সম্পূর্ণ ফুল দিয়ে সাজানো। খুব সুন্দর করে জুভানের বন্ধুরা ঘরটা সাজিয়েছে। বিছানাটাও বেশ সুন্দর করে সাজানো। বিছানার উপর ফুল দিয়ে লেখা,
‘JUVAN’S OISHEE’
কক্ষের এরূপ সাজসজ্জা দেখে জুভানের ভ্রু কুঁচকে এলো। ঐশী নিজেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। জুভান গম্ভীর সুরে বললো,
-” পাগল তোরা? এসব কেনো সাজিয়েছিস? জানিস আমি এসব পছন্দ করি না। তবুও? ”
পুষ্পিতা হাসলো। বললো,
-” বিয়ে একবারই হয়। আর বাসরও কিন্তু একবারই হয়। সো এনজয় দিস মোমেন্ট, গাঁধা! আজকের পর তোর আর ফুকে অ্যালার্জি থাকবে না, বন্ধু। ফুলের সাথে আপনার জন্ম জন্মান্তরের ভাব হয়ে যাবে। বুঝেছেন? এখন ঢুকেন ঘরে। বাকি নিয়ম পালন করতে হবে। ”
বন্ধুদের এরূপ কাজে জুভান বেশ বিরক্ত হলো। না চাইতেও ঐশীকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো সে।

#চলবে
গল্পটা যারা পড়বেন, রেসপন্স করার অনুরোধ!
কিছু কারণবশত গল্প লেখার মানুষিকতার আগের ন্যায় নেই। তার গল্পটা দিতে একটু দেরি হচ্ছে।

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here